Connecting You with the Truth

পঞ্চগড়ে পাহাড়ি ঢলে নতুন নতুন গ্রাম প্লাবিত, পানিবন্দি হাজার হাজার পরিবার

Pancgagarh  (1)পঞ্চগড়ে পাহাড়ি ঢলে প্লাবিত হচ্ছে নতুন নতুন গ্রাম

ডিজার হোসেন বাদশা, পঞ্চগড় : গত কয়েক সপ্তাহের টানা বর্ষণ আর ভারতের উজান থেকে আসা পাহাড়ি ঢলে পঞ্চগড়ের করতোয়াসহ নদীর পানি দুকুল ছাপিয়ে যাওয়ায় নদীর তীরবর্তী গ্রামগুলোর হাজার হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। পানিতে তলিয়ে গেছে আবাদি জমি, বসতবাড়ি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ রাস্তাঘাট। কোথাও কোথাও গ্রামরক্ষা বাঁধ ভেঙে গেছে, বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে যোগাযোগ ব্যবস্থা। তবে এখনো পানিবন্দি হাজার হাজার বাসিন্দারা কোন সরকারি ত্রান সহায়তা পাননি বলে জানিয়েছেন তারা। পানিবন্দি হাজার হাজার বাসিন্দা এখন চরম দুর্ভোগে দিন পাড় করছেন।
সোমবার খবর নিয়ে জানা গেছে করতোয়া, মহানন্দাসহ সকল নদীর পানি মাত্রাতিরিক্ত হারে বৃদ্ধি পাওয়া তা দুকুল ছাপিয়ে লোকালয়ে প্রবেশ করেছে। এতে জেলার পঞ্চগড় পৌর এলাকার রামেরডাঙ্গা, মীরগড়, নিমনগড়, রাজনগড়, তুলারডাঙ্গা, খালপাড়া, জালাসী ও তেঁতুলিয়া উপজেলার ভজনপুর বাজার, ভেলুপাডা, গোলাপদীগছ, গনাগছ, শিপাইপাড়া, ভদ্রেশর, শান্তিনগর, কীত্তনপাড়া, কলেজপাড়া, বালুবাড়ির, সিবচন্ডী, কালিয়ামনি, ঝালেংঙ্গি, ধানসুকা, নিজবাড়ি, পাথরঘাটা, আঠোরখারী, শেকগছ, ময়নাগুড়ি, সরদার পাড়া, রনচন্ডী, খয়খাটপাড়া, তিরনইহাট, কাশেমগঞ্জ, বাংলাবান্ধাসহ জেলার কয়েক শত গ্রামের বাসিন্দারা পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন। Pancgagarh  (2)
জেলার উপর দিয়ে প্রবাহিত করতোয়া নদীর পানি বিপদসীমা উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। মহানন্দার উজানে ভারতের বাঁধ খুলে দেয়ায় নদীর পানি বেড়েই চলেছে। প্রবাহমান নদীর পানি দুকুল ছাপিয়ে তীরবর্তী গ্রামগুলো প্লাবিত করেছে। ফলে পানি বন্দি হয়ে পড়েছেন ওই সকল গ্রামের হাজার হাজার বাসিন্দা। পানিতে তলিয়ে গেছে আবাদি জমি, বসতবাড়ি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ রাস্তাঘাট। প্লাবিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে তাৎক্ষণিক সাময়িক ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। সময়ের সাথে সাথে নদীর পানিও বাড়ছে পাল্লা দিয়ে।
সরেজমিনে জেলা সদরের পৌর এলাকার ও তেঁতুলিয়ার পানিবন্দি এলাকা ঘুরে দেখা গেছে হাজার হাজার পানিবন্দি মানুষ ঘরবাড়ি ছেড়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে আশ্রয় নিয়েছেন। এর মধ্যে আশ্রয় নেয়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পানি উঠতে শুরু করলে তারা আবার নিজেদের আত্মিয় স্বজনদের বাড়িতে আশ্রয় নেয় । পানিবন্দি হয়ে পড়ায় তারা চরম দুর্ভোগে পড়েছেন। রান্না করার কোন ব্যবস্থা না থাকায় অর্ধাহারে অনাহারে তাদের দিন কাটছে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা তাৎক্ষণিক তাদের মাঝে শুকনো খাবার বিতরণ করেছেন। তবে এখনো জেলা প্রশাসনের ত্রান সহায়তা তারা পায়নি বলে জানিয়েছেন।
পঞ্চগড় তেঁতুলিয়ার ভজনপুর এলাকার আইয়ুব আলী (৪০) জানান, পানির ¯্রােতে আমার ঘরবাড়ি ভেসে গেছে। আমরা এখন আত্মীয় স্বজনদের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছি। ইউনিয়ন পরিষদের চেয়াম্যানরা আমাদের জন্য শুকনো খাবারের ব্যবস্থা করেছে। তবে এখনো আমরা প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোন ত্রান সহায়তা পাইনি।
পঞ্চগড় পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী রবীন্দ্র চন্দ্র সোম জানান, করতোয়াসহ অন্যান্য নদীর পানি অনেক বেড়ে গিয়ে গ্রামগঞ্জে প্রবেশ করেছে। জলের তোরে কয়েকটি গ্রামরক্ষা বাঁধ ভেঙে গেছে। নদীর পানির বৃদ্ধি বিষয়ে আমরা সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণ করছি।
পঞ্চগড় পৌরমেয়র তৌহিদুল ইসলাম জানান, গত কয়েক বছরে এভাবে মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েনি। এবার উজানের ঢলে নদীর পানি পৌর এলাকার ১০ টি গ্রামে প্রবেশ করেছে। আমরা পানিবন্দি মানুষদের জন্য কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আশ্রয় ক্যাম্প স্থাপন করেছি। পৌরসভার পক্ষ থেকে তাদের জন্য শুকনো খাবার সরবরাহ করা হয়েছে।
পঞ্চগড় জেলা প্রশাসক অমল কৃষ্ণ মন্ডল জানান, জেলার নিম্নাঞ্চলের হাজার হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। আমরা স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে পানিবন্দি মানুষের তথ্য সংগ্রহ করছি। তাদের জন্য বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আশ্রয় ক্যাম্প স্থাপন করা হয়েছে। দ্রুত তাদের মাঝে ত্রান সরবরাহ করা হবে।

Comments
Loading...