পদ্মায় চলছে ফিটনেসহীন লঞ্চ, ঝুঁকিতে যাত্রীরা
রাজবাড়ি প্রতিনিধি:
একের পর এক দুর্ঘটনার পরও পদ্মায় পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া ও পাটুরিয়া-কাজীরহাট নৌ-রুটে চরম ঝুঁকি নিয়ে চলছে ফিটনেসহীন লঞ্চ। রাজধানীর সঙ্গে দক্ষিণাঞ্চলের ২১ জেলার যোগাযোগের গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম এসব নৌ-রুট। এ রুটে প্রতিদিন প্রায় ৫০ হাজার যাত্রী যাওয়া আসা করেন। এর মধ্যে অধিকাংশ লঞ্চে যাতায়াত করেন। বাকিরা যান গাড়িতে করে ফেরি পার হয়ে। গতকাল সরেজমিন দেখা যায়, উত্তাল পদ্মায়ও নিয়ম-নীতি মানছে না লঞ্চ ও ইঞ্জিন চালিত ট্রলার মালিকরা। মটর লঞ্চগুলো (এমএল) উত্তাল নদীতে চালানো নিষেধ থাকলেও এটি মানছেন না কোনো মালিকই। বরং অতিরিক্ত যাত্রী নিয়ে প্রতিনিয়ত নদী পার হচ্ছে এই লঞ্চগুলো। স্থানীয়রা জানান, এর ফলে মাঝে মধ্যেই এসব রুটে নৌ-দুর্ঘটনায় পড়ছে সাধারণ মানুষ।
পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া ও পাটুরিয়া-কাজীরহাট নৌ-রুটে ৩৭টি লঞ্চ চলাচল করে। এর মধ্যে এমএল নার্গিস, এমএল মিজানুর, এমএল পর্বত, এমএল পাংসী, এমএল খেয়া, এমএল আরাফাত, এমএল নজির, এমএল হিরোক ও এমএল ফাতেহানূরসহ মোট নয়টি লঞ্চ অন্যতম। বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) সূত্র জানায়, এসব রুটে মটর ভ্যাসেল (এমভি) ও মটর লঞ্চ (এমএল) চলাচল করে। মটর ভ্যাসেল অর্থাৎ এমভি লঞ্চ উত্তাল নদীতে ধারণক্ষমতা যাত্রী নিয়ে চলাচল করা সম্ভব। কিন্তু মটর লঞ্চ অর্থাৎ এমএল লঞ্চ উত্তাল নদীতে ধারণক্ষমতা যাত্রী নিয়েও চলাচল করা সম্ভব নয়। কিন্তু এই রুটে চলাচলরত যাত্রীদের অভিযোগ সব সময় অতিরিক্ত যাত্রী নিয়েই চলাচল করে থাকে লঞ্চগুলো। বিভিন্ন উৎসবের সময় ধারণক্ষমতার চেয়ে তিন থেকে চারগুণ বেশি যাত্রী নিয়ে নদী পার হয়ে থাকে। এদিকে বিআইডব্লিউটিএ-এর দেওয়া প্রতিটি লঞ্চের জন্য ছাড়ার সময় ১৫ মিনিট নির্ধারণ করা থাকলেও অতিরিক্ত যাত্রী না হওয়া পর্যন্ত ছেড়ে যায় না কোনো লঞ্চই। প্রতিটি লঞ্চে তিন গাড়ি অর্থাৎ ১৫৬ জন এবং লোকাল আরো শতাধিক যাত্রীসহ আড়াই শত যাত্রী নিয়েই পার হচ্ছে। ২০০৫ সালে ১৭ মে পাটুরিয়া-কাজীরহাট নৌরুটে ২৫০ যাত্রী নিয়ে লঞ্চ এমভি রায়পুরা ডুবে যায়। পাঁচ দিন চেষ্টা করেও লঞ্চটি উদ্ধার করতে পারেনি কর্তৃপক্ষ। তবে ৫৫টি লাশ উদ্ধার করা হয়েছিল এবং সরকারি হিসেবে আরো ১০৯ জন যাত্রী নিখোঁজ ছিল। পাটুরিয়া নৌ-রুটের এক সুকানি নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, বেশির ভাগ লঞ্চে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত মাস্টার নেই, লাইফ বয় নেই, আবওহাওয়ার খবর জানার জন্য রেডিও নেই। শুধু আকাশে মেঘ দেখে অনুমানের ওপর নির্ভর লঞ্চ চালানো হয়। তিনি বলেন, কোনো উপায় না পেয়ে আমরা জীবনের তাগিদে মালিকের নির্দেশ মেনে চলি। মালিকের নির্দেশ না মানলে এক মুহূর্তের মধ্যে চাকরি হারাতে হবে। চাকরি হারানোর ভয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বাধ্য হয়েই লঞ্চ চালাতে হয়। দৌলতদিয়া লঞ্চ ঘাটের ম্যানেজার আনোয়ার হোসেন মিলন জানান, কিছু কিছু মালিকের জন্য নৌ-রুটে দুর্ঘটনা ঘটে। তিনি বলেন, ঈদের দুই দিন আগে এমএল পর্বত অযোগ্য মাস্টার দিয়ে চালানোর কারণে অন্য একটি লঞ্চে আঘাত করে। এ সময় ওই লঞ্চে থাকা একজন যাত্রী নিহত হন। এমএল পর্বত লঞ্চের মালিক খন্দকার মিজানুর রহমানকে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি সাংবাদিক পরিচয় দেওয়া মাত্রই সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন। বিআইডব্লিউটিএ আরিচা ঘাটের বন্দর কর্মকর্তা মো. কবির হোসেন বলেন, পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া ও পাটুরিয়া-কাজীরহাট নৌ-রুটে ৩৭টি লঞ্চে মধ্যে ৯টি এমএল আছে। তবে নদীতে প্রচণ্ড ঢেউ থাকলে লঞ্চগুলোর চলাচল বন্ধ রাখা হয়।