Connecting You with the Truth

পুঠিয়ায় ৪ মাসে ১১ অপহরণ

জেলা প্রতিনিধি, রাজশাহী:
রাজশাহীর পুঠিয়া উপজেলা ও নাটোর সীমান্ত এলাকায় গড়ে উঠেছে কয়েকটি অপহরণকারী চক্র। ব্যবসায়ী ও বিত্তশালীদেরকে ট্রাপে ফেলেতে এই চক্রটি কৌশলগতভাবে ব্যবহার করছে সুন্দরী মেয়েদের। বিভিন্ন নির্জন বাড়িতে ডেকে নিয়ে তাদের অপ্রতীকর অবস্থায় মারধর ও ছবি তুলে ২ থেকে ৫ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে চক্রটি।
প্রথমে টাকা দিতে অপারগতা প্রকাশ করলে বিভিন্ন পত্রিকা-অনলাইনে এবং থানা পুলিশে সোপর্দ করার হুমকি দেয় তারা। পরিবার ও মান-সম্মান রক্ষা করতে অনেকেই অপহরণকারী চক্রটির চাহিদা মোতাবেক টাকা দিচ্ছে। আর এই টাকাগুলো লেনদেন হচ্ছে বিকাশের মাধ্যমে। বেশির ভাগ অপহরণের শিকার ও তার পরিবারের লোকজন পুলিশি হয়রানির হাত থেকে বাঁচতে থানায় মামলা থেকে বিরত থাকছেন। এই চক্রটি রাজশাহী জেলার চারঘাট, পুঠিয়া, দুর্গাপুর ও নাটোর জেলার বাগাতিপাড়া উপজেলায় প্রভাব বিস্তার করেছে। গত ৪ মাসে একই পন্থায় ১১টি অপহরণের ঘটনা ঘটেছে রাজশাহী-নাটোর সীমান্ত এলাকায়। আর এ সকল ঘটনায় আশেপাশে ৪ উপজেলা জুড়ে অপহরণ আতঙ্ক বিরাজ করছে।
জানা গেছে, গত ১৬ মে সকালে পুঠিয়া বাস স্ট্যান্ড থেকে পুঠিয়া উপজেলার শিলমাড়িয়া এলাকার কাচাঁমাল ব্যবসায়ী মুনসুর আলী অপহরণের শিকার হয়। ঘটনার দিন দুপুরে মুনসুর আলীর ব্যবহৃত ফোন থেকে তার বাড়িতে কল করে ৩ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে অপহরণকারীরা। দু’ঘণ্টার মধ্যে টাকা না দিলে তার লাশ বস্তাবন্দি করে পুতে ফেলার হুমকি দেয় সে চক্রটি। টাকাগুলো বিকাশের কয়েকটি নাম্বারে দিতে বলা হয়। পরে অনেক দর কষাকষি শেষে ১ লাখ ৫০ হাজার টাকায় সুরাহা করে মুক্তি পায় মুনসুর আলী। গত ৩ মাস আগে পুঠিয়া সদর এলাকা ডেন্টাল চিকিৎসক মিলন কুমারকে বানেশ্বর বাজার থেকে প্রলোভনে অপহরণ করা হয়। পরে ২ লাখ টাকা মুক্তিপণ দিয়ে তাকে ছাড়িয়ে নেয় পরিবারের লোকজন। গত ২৮ জুন চারঘাট উপজেলার এক সরকারি কর্মকর্তার শ্বশুরকে নিমপাড়া বাজার থেকে মোটরসাইকেলে করে নিয়ে যায় অপহরণকারীরা। পরে ১ লাখ টাকার বিনিময় সেনভাগ এলাকায় তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়। এর ১৩ দিনের মাথায় নিমপাড়া এলাকার আশাদুল ইসলাম নামে এক শিক্ষককে অস্ত্রের মুখে তুলে নিয়ে গিয়ে ৫০ হাজার টাকায় ছেড়ে দেয়।
গত জুলাই মাসে পুঠিয়ার সীমান্ত নাটোর বাগাতিপাড়া এলাকার ব্যবসায়ী জাফর আলী নামে একজনকে অপহরণ করে ৭৫ হাজার টাকার বিনিময় পুঠিয়ার শিলমাড়িয়া এলাকার নলডাঙ্গা সীমান্ত থেকে উদ্ধার করে তার পরিবারের লোকজন। দু’মাস পূর্বে একই এলাকার অপর এক ব্যবসায়ীকে একই কায়দায় অপহরণ করে ১ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয় চক্রটি।
গত ৫ সেপ্টেম্বর দুপুরে পুঠিয়া বাজার এলাকার ডা. আকবর আলীকে অপহরণ করা হয়। পরে ৫০ হাজার টাকার বিনিময় চারঘাটের ভাটপাড়া এলাকা তাকে পাওয়া যায়। গত ৮ সেপ্টেম্বর দুপুরে বানেশ্বর বাজার ট্রাফিক মোড় থেকে অপহরণ হয় দুর্গাপুর উপজেলার স্থানীয় ব্যবসায়ী এন্তাজ আলী মেম্বার। দেড় লাখ টাকার বিনিময় তাকে নাটোর পিটিআই মোড় থেকে ২ কি.মি. দূরে ফেলে রেখে যায় অপহরণকারীরা।
পরে খবর পেয়ে এনাজের পরিবারের লোকজন মুমূর্ষু অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে। গত দু’মাস পূর্বে পানানগর এলাকার দু’মোটরসাইকেল আরোহী অপহরণের শিকার হয়। পরে দেড় ঘণ্টা পর অপহরণকারীদের চোখে ধূলা দিয়ে পালিয়ে যেতে সক্ষম হয় দু’মোটরসাইকেল আরোহী।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, নাটোর জেলায় দু’টি, পুঠিয়ায় দু’টি ও চারঘাট উপজেলায় একটি অভিনব অপহরণকারী চক্র গড়ে উঠেছে। অপহরণকারীর সাথে জড়িত এক শ্রেণির সুন্দরী মেয়েরা পুঠিয়া, বানেশ্বর বাসস্ট্যান্ড এলাকায় সন্দেহজনক ভাবে ঘুরাফেরা করতে দেখা যায়। তারা ব্যবসায়ী ও চাকুরি জীবী লোকদেরই বেশি টার্গেট করে। চক্রটি প্রথমে সুন্দরী মেয়েদের ব্যবহার করে তাদের প্রেমের ফাঁদে ফেলে। নির্জন এলাকায় তাদের যৌন মিলনের অফার দেয় সুন্দরী মেয়েরা। তাদের কথামত দাবিতে গেলেই ফেঁসে যাচ্ছে ব্যবসায়ী ও চাকুরিজীবীরা। মান-সম্মানের দিকে পুলিশি ঝামেলা এড়াতে চাচ্ছে বেশীর ভাগ ভূক্তভোগীরা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে অপহরণের শিকার একজন জানান, নাটোর এলাকার প্রতারক চক্রের প্রধান শিরিনা বেগমের সাথে চুক্তি মোতাবেক গেলাম। সেখানে প্রথমে মেয়েরা তাকে ঘরে ডেকে নেয়। এর কিছুক্ষণের মধ্যে ৭/৮ জনের একটি সন্ত্রাসী বাহিনীর দল এসে ঐ মেয়ে ও অপহরণকারীকে এক সঙ্গে উলঙ্গ করে ভিডিও এবং ছবি তোলা হয়। এরপর পিটুনি দিয়ে নিজের নম্বর দিয়ে বাড়িতে ফোন করিয়ে সন্ত্রাসীদের চাহিদা মোতাবেক টাকা দাবি করে। দু থেকে ৩ ঘণ্টা সময় বেঁধে দিয়ে টাকাগুলো বিকাশের মাধ্যমে দিতে বলা হয়। টাকা না দিলে প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি দেয়। তিনি আরো জানান, বিষয়টি নিয়ে আইনিভাবে ব্যবস্থা নিলে সমাজে নিজেরই সম্মানহানি হবে।
এ ব্যাপারে স্থানীয় প্রশাসন ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী জানায়, এ সকল বিষয়ে আমাদের নিকট কোনো অভিযোগ না আসলে আমরা কিভাবে পদক্ষেপ নেব।

Comments
Loading...