Connecting You with the Truth

প্রতারণাকারীর মামলার প্রতিবাদে পথে পথে অবস্থান ধর্মঘটে এক শিক্ষানবীস আইনজীবী

আহম্মদ ফিরোজঃ
বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন বোর্ডের অধীন ক্ষুদ্র কৃষক উন্নয়ন ফাউন্ডেশনের ডেপুটি রিজিওনাল ম্যানেজার পদে চাকরি করতেন পাবনার সুজানগর উপজেলার রায়পুর ক্ষেতুপাড়া গ্রামের রজব আলীর ছেলে আতাউর রহমান খান। এক প্রতারক নারীকে বিয়ে করে এখন তিনি নি:স্ব। প্রতারক স্ত্রীর প্রতারণায় খুইয়েছেন ২৫ লাখ টাকা। এরপর টাকা ও গহনা ফেরত চাওয়ার অপরাধে গুন্ডাবাহিনী ও পুলিশ দিয়ে পিটিয়ে তাকে কারাগারে পাঠান হয়। দায়ের করা হয় একের একের পর মিথ্যা মামলা। কারাগারে ১২৬ দিন বন্দি থাকার পর সম্প্রতি মুক্তি পেয়েছেন জামিনে। তবে তিনটি মামলায় আদালতে হাজিরা দিতে হচ্ছে ক’দিন যেতে না যেতেই । কারাগারে বন্দি থাকা অবস্থায় ২০১৬ সালের ২০ এপ্রিল তার পিতার মৃত্যু হয়। পিতা রজব আলী খান ছিলেন প্রাইমারী স্কুলের প্রধান শিক্ষক। জন্মদাতা পিতা, চাকরী বাকরী, সহায় সম্বল সব হারিয়ে নি:স্ব আতাউর এখন পথে পথে ঘুরছেন। বিভিন্ন জনবহুল স্থানে করছেন অবস্থান ধর্মঘট। এ দাবিতে আতাউর গত শনিবার সকালে ব্যানার টাঙিয়ে অবস্থান ধর্মঘট করেন ফরিদপুর প্রেসক্লাবের সামনে। এর আগে তিনি রাজেন্দ্র কলেজ সহ বিভিন্নস্থানে একইভাবে অবস্থান করেন।
স্ত্রীর প্রতারণার শিকার আতাউর রহমান খান এখন দেশের পুরুষ নির্যাতনের জ¦লন্ত স্বাক্ষি হয়ে উঠেছেন আতাউর রহমান খান। তার দাবি, দেশে নারী নির্যাতন আইন রয়েছে। রয়েছে এর ব্যাপক অপব্যবহার। এই অপব্যহারের কবল হতে মুক্তির লক্ষ্যে চাই পুরুষ নির্যাতন আইন। একইসাথে তিনি প্রতারক স্ত্রীর দায়ের করা মামলা হতে মুক্তি চান। ফেরত চান শেষ সম্বল হিসেবে বিক্রি করা জমি ও চাকরীস্থল হতে পাওয়া নগদ টাকা।
ঢাকা কলেজ হতে এলএলবি ও অনার্স-মাষ্টার্স শেষ করে আতাউর সরকারী চাকরী পেয়েছিলেন। এখন সেই চাকরী হারিয়ে একজন আইনজীবীর অধীনে শিক্ষানবীস আইনজীবী হিসেবে কাজ করছেন।
প্রাপ্ত অভিযোগে জানা যায়, রাজবাড়ির কালুখালী উপজেলার আখরজানি গ্রামের জনৈক ওহাব মন্ডলের মেয়ে সাবিনার সাথে ২০১৫ সালের ২৪ মে আতাউরের বিয়ের কাবিন হয়। তখন সাবিনা নিজেকে কুমারী হিসেবে ঘোষনা দেয়। তারা দুজ’না এরপর স্বামীস্ত্রী হিসেবে মেলামেশাও করে। একই বছরের ২৩ সেপ্টেম্বর আবারও নিজেকে কুমারী হিসেবে ঘোষনা দিয়ে মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার জনৈক জহুরুল ইসলামের সাথে বিয়ের কাবিন করে। আতাউরকে তালাক না দিয়েই জহুরুলকে বিয়ে করে সাবিনা।
আতাউরের বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে ২০১৫ সালের ৩০ অক্টোবর মেহেরপুরের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে একটি মামলা করা হয়। মামলার কাগজপত্র পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, সাবিনা স্বামীর বন্ধুর মিথ্যা পরিচয়ে আতাউর কর্তৃক সাবিনাকে নানা প্রলোভন দিয়ে তার সম্ভ্রম নষ্ট ও পতিতালয়ে বিক্রির সম্ভাবনার অভিযোগ করেন। এরপর ২০১৬ সালের ২ মার্চ সাবিনা মেহেরপুরের নোটারী পাবলিক কর্তৃক একটি হলফনামা স্বাক্ষর করেন। সেখানে সাবিনা ঘোষনা করে যে, আতাউরের সাথে ভুল বোজাবুঝির কারণে সে তার বিরুদ্ধে আদালতে ধর্ষণ চেষ্টার মামলা দায়ের করে। আতাউরের প্রশ্ন, এ কেমন ভুল বোঝাবুঝি যার কারণে তার মতো যুবকের সম্ভাবনাময় একটি জীবন আজ এভাবে ধ্বংসের সম্মুখিন। এর কি কোন প্রতিকার নেই?
সাবিনার দায়ের করা মামলার নথি পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, ২০১৫ সালের মে মাসে আতাউরের সাথে বিয়ে হয় সাবিনার। আর মামলা হয় অক্টোবর মাসে। সেখানে আতাউরকে সাবিনা স্বামী হিসেবে স্বীকার করেননি।
আতাউর বলেন, সাবিনার ছোটবোন ইতি ডিবি লটারি পেয়ে আমেরিকাপ্রবাসী। সাবিনার মাধ্যমে ইতি তাকে আমেরিকা যাওয়ার প্রলোভন দেখায়। সবকিছু মিলিয়ে ২৫ লাখ টাকায় আমেরিকা যেতে পারলে সেখানে পিএইচডি করা যাবে। পাশাপাশি লাখ টাকা বেতনে চাকরীও করা যাবে। সৌভাগ্যের হাতছানি যেনো তার দরজায় কড়া নাড়ছিল। এই লোভে অফিস হতে ৭ লাখ টাকা ঋণ নিয়ে, দেশের বাড়ি হতে জমি বিক্রি করে, আর হাতে নগদের ৩ লাখ টাকায় সবমিলিয়ে গুছিয়ে ফেলেন ২৫ লাখ টাকা। এর সবই তুলে দেন সাবিনার পরিবারের হাতে। তাদের হাতে তুলে দেন নিজের পাসপোর্টও। আতাউরের ভাষ্যে, ১০ লাখ টাকা ইতি ও সাবিনা এবং বাকি ১৫ লাখ টাকা তিনি তুলে দেন তাদের পিতা ওহাব মন্ডলের হাতে।
আতাউর বলেন, তার জীবনের সব তিনি হারিয়ে তিনি এখন নিঃস্ব এই প্রতারক নারীর কারণে। পুরুষদের ঠকিয়ে এপর্যন্ত ৩টি বিয়ে করেছে এই সাবিনা। প্রত্যেকবারই সে নিজেকে কুমারী হিসেবে উল্লেখ করেছে। ২০১৫ সালের ২৪ মে আতাউরের সাথে বিয়ের পর তালাক না দিয়েই পুনরায় বিয়ে করে জহুরুল ইসলামকে। এরপর ২০১৬ সালে জহুরুলকে ডিভোর্স দেয়। এখন আবার সেই জহুরুলের সাথেই স্বামী-স্ত্রী হিসেব মেলামেশা করছে। শুধুমাত্র নারী হওয়ার সুযোগে সে পুরুষদের দূর্বলতা কাজে লাগিয়ে একের পর এক পুরুষের জীবন ধ্বংস করছে।
এব্যাপারে জানতে সাবিনার সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তার সন্ধান পাওয়া যাযনি। রাজবাড়ির প্রতিবন্ধী সংস্থায় যোগাযোগ করা হলে জানা যায়, সাবিনা অফিসে নেই। সেখানকার এক কর্মকর্তা জানান, বিষয়টি নিয়ে আমরা বিব্রত অবস্থায় রয়েছি। ক্ষমতা থাকলে তাকে এই শাখা থেকে অন্যত্র বদলি করে দিতাম। এবিষয়ে প্রতিবন্ধী সংস্থার উদ্যোগে কেন্দ্রিয় অফিস হতে একটি তদন্ত হয়েছে। তদন্ত রিপোর্ট জানা যায়নি বলে ওই কর্মকর্তা জানান।
এব্যাপারে সাবিনার বাবা ওহাব মন্ডলের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি কোন প্রশ্নের জবাব না দিয়ে উল্টো রেগে শুধু জিজ্ঞাসা করতে থাকেন এই নম্বর আপনি কোথায় পেলেন? এই নম্বর আপনি কোথায় পেলেন? এ প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করতে করতে তিনি মোবাইল সংযোগটি কেটে দেন।

Leave A Reply

Your email address will not be published.