বাঘায় আম বাগানে হচ্ছে মাছের চাষ
বাঘা প্রতিনিধি, রাজশাহী:
নদীমাতৃক এই দেশে একসময় পুকুর এবং নদ-নদীর পাশাপাশি খাল-বিলেও অনেক মাছ পাওয়া যেত। জেলেরা সারাদিন ব্যস্ত থাকত জাল আর নৌকা নিয়ে। কিন্তু বিশ্বায়নের এই যুগে উন্নত দেশের নিষ্ঠুর কার্বননীতির ফলে ওজন স্তরে দেখা দিচ্ছে ফাটল। ফলশ্র“তিতে পৃথিবী দিনদিনেই হয়ে উঠছে উত্তপ্ত। বৃষ্টি যখন হওয়ার কথা তখন না হয়ে হচ্ছে আগে কিংবা পরে। আর কলকারখানার বজ্র নদী-নালায় আসার কারণে দেশি মাছ (শিং, টাকি, রুই, মৃগেল ইত্যাদি) এর কথাতো অনেকেই ভুলতে বসেছে। একদিকে কার্বননীতির কারণে বৃষ্টি না হওয়ায় পানির অভাবে মাছ হচ্ছে না। অন্যদিকে যেটুকু জায়গা আছে তাতেও আবার বজ্র পরে দিনদিনই মাছের আবাদ অনুপোযোগী হয়ে পড়ছে। ফলে দিনদিনই দেশি মাছের অস্তিত্ব যখন হারিয়ে যাচ্ছে ঠিক তখনই রাজশাহীর বাঘা উপজেলার নিশ্চিন্তপুর, নওটিকা এবং আরিপুরের কয়েকজন যুবক আলাদাভাবে আম বাগানে মাছ চাষের উদ্যোগ নেয়। বাঘার নিশ্চিন্তপুর গ্রামের মো. মিলন ইসলাম (৩৭) নওটিকা গ্রামের রহিদুল ইসলাম (৩২) এবং আরিপুর গ্রামের মো. তুফান (২৯) ও আনোয়ার (৩২) নামের চার ব্যক্তি আম বাগানে মাছ চাষের পরিকল্পনা নিয়েছে। গত কয়েক বছরে রাজশাহী অঞ্চলে বৃষ্টির পরিমাণ কম থাকলেও এবছর বৃষ্টির পরিমাণ খুব বেশি। চারিদিকে যখন বৃষ্টির পানিতে পরিপূর্ণ ঠিক এই সুযোগটাই ওই চার নবীন মৎস্যচাষি ভালই কাজে লাগিয়েছেন। তার মূলত পেশায় মাছচাষি না।
আরিপুরের তুফান আলী নামের ঐ মৎস্যচাষি জানান, কয়েকদিন আগের অতিরিক্ত বৃষ্টিতে চারিদিকে পানিতে ভরে যাওয়ার পাশাপাশি তার বাড়ির পাশের আম বাগানটিতেও ৩ ফিট পানি বেঁধে যায়। আর তখনই তুফানের মাথায় মাছ চাষের বুদ্ধিটা আসে। যেই পরিকল্পনা সেই কাজ, পরের দিনই মাছ ছাড়েন। তার মাছের মধ্যে বেশির ভাগ মাছেই হল মৃগেল এবং রুই। পাশাপাশি কিছু কার্প জাতীয় মাছও ছেড়েছেন। বাঘা থেকে মাত্র পাঁচ কিলোমিটার উত্তরে আরিপপুর গ্রামের চারাবটতলা নামক স্থান ঘেষে তার এই আম বাগানটির অবস্থান।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, আম বাগানটি অন্যান্য জমির তুলনায় একটু নিচু হওয়ার কারণে বেশ ভালই পানি জমেছে। আর তাই আম বাগানের মধ্যে এই অভিনব কায়দায় মাছ চাষ করার ফলে সেটি দেখতে বিকেল হলেই সেখানে অনেক মানুষের জমায়েত হয়। তুফান বলেন, “আমি এবিরই প্রথম মাছ চাষ করতিচি ভাই। সব খরচ-বরচ দিয়া আমার এ যাবৎ খরচ হয়চে প্রায় ২৫ হাজার টেকা। আমি আশা করতিচি এই বাগান থাইকি প্রায় ৫০ হাজার টেকার মাছ বেচব।”
বাঘা উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা বলেন, “বিষয়টি আমি আপনার মাধ্যমেই প্রথম শুনলাম। তবে ওই চার যুবক চাইলে আমরা তার মাছ চাষে সব ধরনের সহযোগিতা প্রদান করব। উল্লেখ্য, তুফান আলী আরিপুরে মাছ চাষ করলেও মিলন ইসলাম করছেন বাঘার বারখাদিয়া বাজারস্থ একটি আমবাগানে এবং আরিপুরের আনোয়ার ও নওটিকার রহিদুল ইসলাম করছেন আরিপুর এবং ঢাকা চন্দ্রগাঁতি গ্রামের মাঝামাঝি জায়গায় অবস্থিত একটি আমবাগানে। এই বাগানগুলোতে হয়ত বৃষ্টির এই পানি বেঁধে থাকবে মাত্র ৬০-৭০দিন। কিন্তু দু মাসের এই সময়টিতে প্রতি বছরই যেখানে এই বাগানগুলো পতিত পড়ে থাকত, সেখানে চার যুবকের এই অভিনব উদ্যোগের ফলে এবার ঐ পতিত জমি থেকে একেক জনের লাভ হবে প্রায় ২৫ হাজার টাকা। উল্লেখ্য, তাদের ঐ বাগানগুলো থেকে প্রতি বছর প্রায় লক্ষাধিক টাকার আম বিক্রি হয়ে থাকে। তাই দেশের অন্যান্য দিকে বন্যা হলেও আমের পাশাপাশি মাছ থেকে এই অতিরিক্ত লাভবান হওয়ায় খুবই ফুরফুরে মেজাজে বাঘার এই চার নবীন মৎস্যচাষি।