Connect with us

Highlights

বিটিআরসির নির্দেশ: বিজয় কিবোর্ড বাধ্যতামূলক করার বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন

Avatar photo

Published

on

ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার প্রতিষ্ঠিত ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের কিবোর্ড স্মার্টফোনে বাধ্যতামূলকভাবে ব্যবহারের নির্দেশের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, কি–বোর্ড বা অ্যাপ বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশনের (বিএসটিআই) বাধ্যতামূলক তালিকার কোনো পণ্য নয়। তাই এটি ব্যবহার বাধ্যতামূলক করার সুযোগ নেই। কোনো নির্দিষ্ট প্রতিষ্ঠানের পণ্য বা সেবার নাম উল্লেখ করে কোনো সরকারি সংস্থা বাধ্যতামূলকভাবে ব্যবহারের নির্দেশ দিতে পারে না।

বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) ১৩ জানুয়ারি মুঠোফোন উৎপাদনকারী ও আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলোকে চিঠি দিয়ে বলেছে, আমদানি করা ও স্থানীয়ভাবে উৎপাদন করা সব অ্যান্ড্রয়েড স্মার্টফোনে বিজয় কি–বোর্ড ব্যবহারের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। এ জন্য সংস্থাটির কাছ থেকে বিনা মূল্যে বিজয় কিবোর্ডের অ্যান্ড্রয়েড প্যাকেজ কিট (এপিকে) ফাইল নিয়ে মুঠোফোনে স্থাপন করতে হবে। নইলে মুঠোফোন বিক্রির অনাপত্তি দেওয়া হবে না।

বিজয় কিবোর্ডের আবিষ্কারক ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার। তাঁর প্রতিষ্ঠিত আনন্দ কম্পিউটার্স বিজয় কিবোর্ড সরবরাহ করে। আনন্দ কম্পিউটার্সের ওয়েবসাইটের তথ্য অনুসারে, এটির মেধাস্বত্ব মোস্তাফা জব্বারের নামে। উল্লেখ্য, ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের অধীন প্রতিষ্ঠান বিটিআরসি।

বিটিআরসির দেওয়া চিঠিতে বিজয় কিবোর্ড বাধ্যতামূলক করার ক্ষেত্রে ‘সরকারের নির্দেশনা’র কথা বলা হয়েছে। তবে সরকারের কোন নির্দেশনা, কোন আইনে এই নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে, তা স্পষ্ট করা হয়নি। বিষয়টি নিয়ে গত দুই দিন বিটিআরসির বক্তব্য জানার চেষ্টা করা হয়। তবে সম্ভব হয়নি।

ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বারের সঙ্গে গতকাল বুধবার যোগাযোগ করা হলে তিনি বিষয়টি নিয়ে একটি ব্যাখ্যা দেন। তা হলো, বিজয় কিবোর্ডকে ভিত্তি ধরে মুঠোফোনের জন্য কিবোর্ডের মানকাঠামো (স্ট্যান্ডার্ড) তৈরি করেছে তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি (আইসিটি) বিভাগের অধীন সংস্থা বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল (বিসিসি)। ২০১৮ সালে সেটা গ্রহণ করেছে বিএসটিআই। বিটিআরসি আইসিটি বিভাগের সেই মানটিই মুঠোফোনে বিনা মূল্যে বিতরণের সিদ্ধান্ত নেয়। বিটিআরসি আইসিটি বিভাগের মান মেনে চলতে বাধ্য।

টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, সরকার একটা মান ঠিক করে দিয়েছে। তাই সরকারি কাজ করতে গেলে সরকারের দেওয়া মান মেনে চলতে হবে।

কোনো একজন মন্ত্রীর প্রতিষ্ঠানের পণ্য বা সেবা তাঁর অধীন সংস্থা ব্যবহার বাধ্যতামূলক করার নির্দেশ দিলে স্বার্থের দ্বন্দ্ব হয় কি না, জানতে চাইলে মোস্তাফা জব্বার বলেন, কোনো স্বার্থের দ্বন্দ্ব নেই। মন্ত্রী হিসেবে সরকারের ঠিক করে দেওয়া মান প্রয়োগ করা তাঁর দায়িত্ব।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, তথ্যপ্রযুক্তি–সংক্রান্ত পণ্য ও সেবার মান নির্ধারণে কারিগরি কাজের দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থা বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল। সংস্থাটি যে মানকাঠামো তৈরি করে সেটি পর্যালোচনা শেষে ‘বাংলাদেশ মান’ হিসেবে ঘোষণার ক্ষমতা রয়েছে কেবল বিএসটিআইয়ের। সংস্থাটির সাড়ে চার হাজারের বেশি মান রয়েছে। তবে বাধ্যতামূলক পণ্য তালিকায় রয়েছে ২২৯টি পণ্য ও সেবা। অর্থাৎ এসব পণ্য ও সেবা বিক্রি করতে হলে বিএসটিআইয়ের কাছ থেকে লাইসেন্স নিতে হয় ও জাতীয় মান মেনে চলতে হয়। বাকিগুলোর ক্ষেত্রে বাধ্যবাধকতা নেই।

বিএসটিআইয়ের সিএম (সার্টিফিকেশন মার্কস) শাখার উপপরিচালক মো. রিয়াজুল হক প্রথম আলোকে বলেন, তাঁদের বাধ্যতামূলক পণ্য তালিকায় স্মার্টফোনের কিবোর্ড নেই।

বিটিআরসির চিঠিতে সরাসরি বিজয় কিবোর্ডের কথা উল্লেখ করে তা ব্যবহার বাধ্যতামূলক করার কথা বলা হয়েছে। এমনকি মুঠোফোন উৎপাদন ও আমদানিকারকদের চিঠি দেওয়ার তিন দিনের মধ্যে বিটিআরসির কাছ থেকে বিজয় কিবোর্ডের এপিকে ফাইল সংগ্রহ করে মুঠোফোনে স্থাপনের ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।

বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মুস্তাফিজুর রহমান খান প্রথম আলোকে বলেন, কোন আইনের ভিত্তিতে নির্দেশ দেওয়া হয়, তা নির্দেশনায় থাকতে হয়। আর সরকারি কোনো সংস্থা কোনো প্রতিষ্ঠানের পণ্য বা সেবার নাম উল্লেখ করে নির্দেশনা জারি করতে পারে না। প্রয়োজনে তারা শুধু নির্দিষ্ট মানের কথা বলতে পারে। সেই মান মেনে চললে যেকোনো প্রতিষ্ঠান পণ্য ও সেবা সরবরাহের যোগ্য হতে পারে।

অ্যাপ স্টোরে যত কিবোর্ড-

বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান গুগল (অ্যালফাবেট) মুঠোফোনের অপারেটিং সিস্টেম (ওএস) অ্যান্ড্রয়েড তৈরি করে। মুঠোফোন উৎপাদনকারীরা গুগলের এই অপারেটিং সিস্টেম ব্যবহার করে মুঠোফোন তৈরি করে বাজারে ছাড়ে। এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের অ্যাপল ইনকরপোরেশনের তৈরি আইফোন পরিচালিত হয় তাদের নিজস্ব অপারেটিং সিস্টেম আইওএস দিয়ে।

গুগলের প্লে স্টোরে বাংলা কিবোর্ডের বেশ কিছু অ্যাপ রয়েছে। গতকাল সন্ধ্যা সাড়ে সাতটা পর্যন্ত হিসাবে, রিদমিক নামের একটি কিবোর্ড ডাউনলোড হয় পাঁচ কোটির বেশি বার। রিদমিক ক্ল্যাসিক কিবোর্ড ডাউনলোড হয়েছে এক কোটির বেশি। ‘বাংলা কিবোর্ড: বাংলা টাইপিংয়ের’ ডাউনলোড সংখ্যা এক কোটি। ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার প্রতিষ্ঠিত আনন্দ কম্পিউটার্সের বিজয় অ্যান্ড্রয়েড কিবোর্ড ডাউনলোড হয়েছে এক লাখের বেশি। তার মানে হলো, জনপ্রিয়তার দিক দিয়ে বিজয় কিবোর্ড অনেক পিছিয়ে। এদিকে অ্যাপলের আই-স্টোর ঘেঁটে দেখা যায়, বিজয় কিবোর্ড নেই। রিদমিক আছে।

বিজয় কিবোর্ড ডাউনলোড করে মুঠোফোনে স্থাপন করতে গিয়ে দেখা যায়, গুগল একটি সতর্কতামূলক বার্তা দিচ্ছে। তাতে বলা হচ্ছে, এই অ্যাপটি স্থাপন করলে এই আশঙ্কা আছে যে অ্যাপটি সব লেখা (টেক্সট) সংগ্রহ করার সক্ষমতা রাখে। এর মধ্যে ব্যক্তিগত উপাত্ত (পাসওয়ার্ড, ক্রেডিট কার্ড নম্বরও হতে পারে) থাকতে পারে।

ইউনিভার্সিটি অব মালয়ার আইন বিভাগের জ্যেষ্ঠ প্রভাষক মুহাম্মদ এরশাদুল করিম প্লে স্টোরে পাওয়া বিজয় কিবোর্ডের ব্যক্তিগত গোপনীয়তার নীতি বিশ্লেষণ করে প্রথম আলোকে বলেন, যেকোনো মুঠোফোন অ্যাপ ব্যবহার করার ক্ষেত্রে গোপনীয়তার নীতিমালা খুব গুরুত্বপূর্ণ, যেখানে একজন ব্যবহারকারীর অধিকার এবং সেবাদাতার দায়দায়িত্ব বর্ণনা করা থাকে। বিজয়ের গোপনীয়তার নীতিতে মৌলিক অনেক বিষয় নেই। কিবোর্ডটির নিরাপত্তাব্যবস্থা পুরোপুরি নিশ্ছিদ্র নয়, সেটা তারা নিজেদের গোপনীয়তার নীতিতেই উল্লেখ করেছে। নীতিটি মূলত বিনা মূল্যের একটি ওয়েবসাইট থেকে নেওয়া, সেটাও বলা আছে। তিনি বলেন, ‘এ ধরনের একটি কিবোর্ড গ্রাহক বা ভোক্তা হিসেবে আমি কেন নিতে চাইব, আমাকে কেন বাধ্য করা হবে। আমার তথ্যের নিরাপত্তার দায় কে নেবে?’

প্রযুক্তিবিদেরা জানান, মুঠোফোনের অ্যান্ড্রয়েড ভার্সনে গুগলের নিজস্ব কিবোর্ড স্থাপিত থাকে, যেটির নাম জি-বোর্ড। সেটি দিয়ে বাংলাসহ বিভিন্ন ভাষায় লেখা যায়। আলাদা করে অন্য কোনো অ্যাপ ডাউনলোড না করলেও চলে। তবে ব্যবহারের স্বাচ্ছন্দ্যের জন্য অনেকে বিভিন্ন কিবোর্ড ব্যবহার করেন। কোনো কিবোর্ড চাইলে মুছে দেওয়া (ডিলিট) যায়।

মোস্তাফা জব্বার বলছেন, বিটিআরসি বিজয় কিবোর্ড বিনা মূল্যে দিচ্ছে। তবে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, অন্য কিবোর্ডও বিনা মূল্যে পাওয়া যায়। আর সব মুঠোফোনে কোনো কিবোর্ড বাধ্যতামূলক করার সঙ্গে প্রচার ও প্রসারের বিষয় থাকে।

ঝক্কি ও ব্যয় ‘বাড়বে’-

দেশে ১৪টির মতো প্রতিষ্ঠান স্মার্টফোন উৎপাদন করে। আবার কেউ কেউ মুঠোফোন আমদানিও করে। বছরে স্মার্টফোন বিক্রি হয় এক কোটির মতো। এ খাতের কয়েকটি প্রতিষ্ঠান বলেছে, মুঠোফোনে বিজয় কিবোর্ড স্থাপন করে বাজারে ছাড়তে গেলে তাদের ঝক্কি বাড়বে।

বাংলাদেশ মোবাইল ফোন ম্যানুফ্যাকচারিং অ্যাসোসিয়েশনের সহসভাপতি ও ট্রানশান বাংলাদেশ লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) রিজওয়ানুল হক প্রথম আলোকে বলেন, ‘সারা বিশ্বে অ্যান্ড্রয়েডের জন্য একই এপিকে প্যাকেজ থাকে। কোনো নির্দিষ্ট দেশের জন্য আলাদা করা হয় না।’ তিনি বলেন, প্রতিটি অ্যাপকে প্যাকেজের আওতায় আনতে গেলে গুগলের অনুমতি নিতে হয় এবং নির্দিষ্ট ফি দিতে হয়। এখন বিজয়কে এই প্যাকেজের অন্তর্ভুক্ত করতে গেলে ফির পরিমাণও বাড়বে।

সংবাদসূত্র : প্রথম আলো

Continue Reading
Click to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Highlights

How to Choose the Most Effective Essay Writing Service

Avatar photo

Published

on

If you are looking to know what the best online essay writing services are I’ve compiled some guidelines for you. There are many websites on the web that claim to offer quality essay writing assistance, however they’re often frauds. Be aware of the scams to avoid being swindled. Read and study as much information as you can on each website. Check (more…)

Continue Reading

Highlights

অধিকার আদায়ে শেরপুর প্রেসক্লাবে তালা দিয়ে সাংবাদিকদের অবস্থান কর্মসূচি পালন

Avatar photo

Published

on

শেরপুর প্রতিনিধি:

শেরপুর প্রেসক্লাবের মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি বাতিলসহ ৬ দফা দাবী আদায়ের লক্ষে অধিকার বঞ্চিত জেলায় কর্মরত সাংবাদিকরা শেরপুর প্রেসক্লাবে তালা ঝুলিয়ে অবস্থান ও প্রতিবাদ কর্মসূচী পালন করেছে। পরে পুলিশ প্রশাসনের অনুরোধে উভয়পক্ষ ও প্রশাসনের হস্তক্ষেপে জেলায় কর্মরত শতাধিক সাংবাদিক প্রথম দিনের অবস্থান কর্মসূচী তুলে নেয়।

কর্মসূচিতে বক্তারা বলেন, পেশাজীবী সংগঠন পেশার মান উন্নয়ন, নিপীড়িত কর্মীদের পাশে দাঁড়ানো, তাদের বিপদে সহযোগিতা এবং পেশায় কর্মরতদের দক্ষতা বৃদ্ধিতে কাজ করার কথা। কিন্তু প্রেসক্লাবের মত একটি স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠান কিছু ব্যক্তির জন্য কুলুষিত হচ্ছে। যা এই শেরপুরের জন্যেও লজ্জাজনক। দেশের প্রথম সারির মিডিয়াতে কাজ করা কিছু সাংবাদিকের বিরুদ্ধে হিংসা বসবত হয়ে কালো তালিকার ঘটনাও ঘটিয়েছে। এছাড়াও বিএনপি জামাত নেতৃবৃন্দের হাত থেকে প্রেসক্লাব মুক্ত করার দাবিও জানান তারা।

এসময় দৈনিক ভোরের চেতনা পত্রিকার স্টাফ রিপোর্টার ও মানবাধিকার সংস্থা আমাদের আইনের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সম্পাদক নূরে আলম চঞ্চলের সঞ্চালনায় কর্মসূচিতে যমুনা টেলিভিশনের স্টাফ রিপোর্টার আদিল মাহমুদ উজ্জল, দেশ টিভির জেলা প্রতিনিধি আব্দুর রফিক মজিদ, আনন্দ টিভির জেলা প্রতিনিধি মারুফুর রহমান মারুফ, দেশ রুপান্তর পত্রিকার জেলা প্রতিনিধি শফিউল আলম সম্রাট, দৈনিক আমাদের নতুন সময় পত্রিকার জেলা প্রতিনিধি ইসমাইল হোসেন ও দৈনিক কালবেলা পত্রিকায় জেলা প্রতিনিধি তারিকুল ইসলাম প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।

এসময় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অপস), শেরপুর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বছির আহমেদ বাদল সহ উভয়পক্ষের তিনজন প্রতিনিধি নিয়ে বৈঠক হয়। এসময় শেরপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি মো. শরিফুর রহমান, সাবেক সভাপতি রফিকুল ইসলাম আধার, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আদিল মাহমুদ উজ্জাল, মহিউদ্দিন সোহেল, সাংগঠনিক সম্পাদক মারুফুর রহমান মারুফ ও বাংলাদেশ প্রেসক্লাবের সভাপতি নুরে আলম চঞ্চল বৈঠকে বসেন। বৈঠকে প্রাথমিক সিদ্ধান্ত হিসেবে আগামীকাল পর্যন্ত আন্দোলন স্থগিত করা হয়। এছাড়াও পরবর্তিতে এ বিষয়ে জেলার শীর্ষ স্থানীয় প্রশাসনিক কর্মকতা ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দদের নিয়ে পরবর্তীতে বৈঠক করে সমাধানের সিদ্ধান্ত নেয়া হয় বলে জানা যায়।

Continue Reading

Highlights

কর্মচারী ‘নয়ন সিন্ডিকেটের’ দাপটে তটস্থ রমেক হাসপাতাল

Avatar photo

Published

on

রংপুর মেডিকেল কলেজ (রকেম) হাসপাতালে সেবা নিতে আসা রোগী ও রোগীর স্বজনদের হয়রানি নতুন কিছু নয়। বিষয়টি সেবাগ্রহীতাদের মধ্যে স্বাভাবিক বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। এবারে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রোগী, রোগীর স্বজন, চাকুরি প্রত্যাশীদের হয়রানি, কথায় কথায় হাসপাতালের নিরীহ কর্মচারীদের নানাভাবে হয়রানি, হাসপাতাল প্রশাসনকে দাপটের সাথে দাবিয়ে রাখাসহ নানা অভিযোগ উঠেছে ‘নয়ন সিন্ডিকেট’র বিরুদ্ধে।

জানা যায়, নয়ন সিন্ডিকেটের প্রধান নয়ন হাসপাতাল থেকে বরখাস্ত হলেও ‘কর্মচারি ইউনিয়নের সাইনবোর্ড’ এর সাধারণ সম্পাদক এর পদ ব্যবহার করে সব পর্যায়ের কর্মকাণ্ডকে জিম্মি করে রেখেছে। তার বিস্তর অপরাধের কাহিনী এখন ভুক্তভোগীসহ চিকিৎসাসেবীদেরও মুখে মুখে। এদের দৌরাত্মের নিকট অসহায়ত্ব প্রকাশ করেছেন স্বয়ং হাসপাতালের বিদায়ী পরিচালক ডা. শরিফুল হাসানও। এক সাক্ষাতকারে এই নয়ন সিন্ডিকেটের কাছে আত্মসমর্পণ করে বিদায় নিতে বাধ্য হয়েছেন বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি।

সূত্র জানায়, রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৪০টি ওয়ার্ড রয়েছে। যার প্রতিটি ওয়ার্ডে বহিরাগত লোকবল নিয়োগ দিয়ে তাদের কাছে ওষুধের দালালিসহ সরকারি বরাদ্দকৃত ওষুধ ও সার্জিক্যাল যন্ত্রপাতি চুরি করার মোটা কমিশন হাতিয়ে নেয় নয়ন সিন্ডিকেট। এমন কি নয়নের সিন্ডিকেটের সদস্যরা হাসপাতালের নিয়মনীতি তোয়াক্কা না করে অবৈধভাবে বহিরাগত মাদকসেবীদের দিয়ে বিভিন্ন ওয়ার্ডের ডিউটি করান। যেসব মাদকসেবীদের দিয়ে অবৈধভাবে ডিউটি করান দিন শেষে তাদের হাজিরা না দিয়ে উল্টো তাদের কাছ থেকে নেয়া হয় সারাদিনের কু-কর্মের ভাগ বাটোয়ারার হিস্যা।

সেবাগ্রহীতা, স্বজন ও সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে জানা যায়, নয়ন ও তার গ্রুপের লোকেরা একক কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করে সেবা নিতে আসা রোগীর স্বজদের সামান্য বিষয় নিয়ে লাঞ্ছিত, রোগী ও চিকিৎসাসেবীদের সাথে দুর্ব্যবহার, ওষুধ-সরঞ্জামাদি চুরি, চাঁদাবাজিসহ নানা অভিযোগ তার সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে। এছাড়ও হাসপাতাল প্রশাসনকে দাপটের সাথে দাবিয়ে রাখাসহ এমন কোনো অপরাধ নেই যা নয়ন সিন্ডিকেটের মাধ্যমে সংঘঠিত হয় না। বরখাস্ত হওয়া সত্ত্বেও হাসপাতালের কর্মচারি ইউনিয়নের সাইনবোর্ড এর খুঁটির নামে হাসপাতালের সব পর্যায়ের কর্মকাণ্ডকে জিম্মি করে রাখছে তার সিন্ডিকেট। প্রতিনিয়ত এই সিন্ডিকেটের নানামুখি অনৈতিক কর্মকাণ্ডে অসহায় ও উদ্বিগ্ন রমেক কর্তৃপক্ষও। এদের হয়রানি ও অত্যাচারের ভয়ে ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে তাদের বিরুদ্ধে কেউ মুখ খুলতে সাহস পায়না বলেও জানান অনেক ভুক্তভোগী।

আরও জানা যায়, নয়ন চাঞ্চল্যকর হত্যা ও অস্ত্র মামলার আসামি। হাসপাতালেও অভ্যন্তরে হত্যা, হত্যার উদ্দেশে মারপিট, গুরুত্বর জখম, চুরি, চাঁদাবাজিসহ নানা অপকর্মের হোতা ও হুকুমদাতার অপরাধে আসামী নয়নের বিরুদ্ধে রংপুর মেট্রোপলিনের কোতয়ালী থানায় একাধিক মামলা রয়েছে। এছাড়াও নানাবিধ ন্যাক্কারজনক অপরাধ অব্যাহতভাবে সংঘটিত করে আসছে এরা। নয়ন সিন্ডিকেটের এমন অপকর্ম রোধে দক্ষ প্রশাসনিক দায়িত্বের কোনো পরিচালক রংপুর মেডিকেল হাসপাতালে বেশিদিন টিকতে পারেন না বলে একটি কথা এখন কর্মচারীদের মুখে মুখে প্রচলিত হয়েছে।

অভিযোগ রয়েছে, সম্প্রতি বদলি হওয়া রমেক হাসপাতালের পরিচালক ডা. শরিফুল হাসান সরকারের নির্দেশে হাসপাতালে আউর্সোর্সিংয়ের মাধ্যমে কিছুসংখ্যক জনবল নিয়োগের প্রক্রিয়া শুরু করেছিলেন। বিদায়ী ওই পরিচালককে সেই নিয়োগ নয়ন সিন্ডিকেট মনোনীত ঠিকাদারকে দিতে চাপ প্রয়োগ করেন যা বিধিবহির্ভূত হওয়ায় হাসপাতাল প্রশাসন তা মানেন নি। পরে তাদের মনগড়া ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে জনবল নিয়োগ বানিজ্যের সুযোগ করে না দেয়ায় সেই সূত্রপাত ধরে তৎকালীন পরিচালকের বিষয়ে নানা মিথ্যা অপবাদ তুলে অযৌক্তিক আন্দোলনের ধোয়া তুললে পরিচালক বদলি হন।

কথা বলতে চাইলে বিদায়ী পরিচালক ডা. শরিফুল হাসান টেলিফোনে জানান, ‘যুদ্ধে আমি পরাজিত সৈনিক। অনেক চেষ্টা করেও রমেক হাসপাতালের দীর্ঘদিন থেকে গড়ে ওঠা দুর্নীতিবাজ অপশক্তি নয়ন সিন্ডিকেটের কাছে অসহায় আত্মসমর্পণ করে বিদায় নিতে বাধ্য হয়েছি। যতদিন এই সিন্ডিকেটের হাত থেকে হাপাতালকে মুক্ত করা না হবে, ততোদিন উত্তরাঞ্চলের মানুষ স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্ছিত হতেই থাকবে।’

এদিকে প্রশ্ন উঠেছে বরাদ্দ ছাড়াই সাময়িক বরখাস্ত হওয়া নয়ন একজন চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী হয়ে কর্মকর্তাদের জন্য বরাদ্দ রমেক ক্যাম্পাসের ১০নং কোয়ার্টারে থাকেন কিভাবে? এছাড়াও শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত যন্ত্র (এসি) সহ গৃহস্থালি নানা রকম ইলেক্ট্রিক সরঞ্জাম ব্যবহার করে সরকারি বিদ্যুৎ অপচয় করছেন নির্বিঘ্নে। বিষয়টি নিয়ে হাসপাতালে কর্মচারীদের মধ্যেও কানাঘোষা চলছে কিছুদিন ধরে।
এ বিষয়ে রমেক হাপাতালের কর্মচারি ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক নয়ন এর সাক্ষাতকার নিতে চাইলেও তাদের দেখা মেলেনি। পরে টেলিফোনে অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে সাংবাদিকের পরিচয় পেয়ে অসুস্থতার কথা বলে ফোন কেটে দেন নয়ন। কর্মচারি ইউনিয়নের সভাপতি শাহিনের সাথে রোববার (২৮ মে’ ২৩) তার মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল দিলেও তিনি রিসিভ করেনি।

হাসপাতালের বর্তমান পরিচালক ডা. মোহাম্মদ ইউনুস আলী জানান, দীর্ঘদিন থেকে জিইয়ে রাখা অযুত সমস্যাগুলো সমাধানে কাজ করছেন তিনি। তিনি আরও বলেন, সময় ও সবার সহযোগিতা পেলে হাসপাতালের উন্নত স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করবেন বলে তিনি আশাবাদী। তবে সংঘবদ্ধ নয়ন সিন্ডিকেটের ব্যাপারে বলেন, আমি সদ্য যোগ দিয়েছি। এখনও ভালো করে বুঝে উঠতে পারিনি। যথাযথ অভিযোগ পেলে দায়িদের ব্যাপারে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

Continue Reading