Connect with us

জাতীয়

বিভিন্ন জেলায় বন্যা পরিস্থিতির চরম অবনতি, বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধে ভাঙন, নেই পর্যাপ্ত ত্রাণ, ছড়িয়ে পড়ছে রোগবালাই

Avatar photo

Published

on

floof picদেশেরপত্র ডেস্ক:
দেশের বড় বড় নদীগুলোতে বেড়েই চলেছে পানি। অব্যাহত ভারী বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা নদীর পানিতে প্রতিদিনই নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। বিভিন্ন এলাকায় পানি নদীর দুই কূল ছাপিয়ে চলে এসেছে বসতবাড়িতে। ঘরে প্রবেশ করেছে পানি। গবাদি পশুর খাবার সঙ্কট দেখা দিয়েছে। খাবার পানির উৎস দূষিত পানির সাথে মিশে যাওয়ার ফলে দেখা দিয়েছে ডায়রিয়া, আমাশয়ের মতো রোগব্যাধি। মওসুমি বায়ু বাংলাদেশ ও বাংলাদেশ সীমান্তে ভারতের বিভিন্ন এলাকায় বেশ সক্রিয় রয়েছে। ফলে এসব স্থানে গত দুই সপ্তাহ মাঝারি থেকে ভারী বর্ষণ অব্যাহত আছে। বাংলাদেশের সব বড় নদীর উৎস ভারতে। শুষ্ক মওসুমে বাংলাদেশে এসে পড়েছে এমন প্রায় সব নদীতেই বাঁধ নির্মাণ করে পানি আটকে দিলেও বর্ষা মওসুমে ভারত সব নদীর বাঁধ খুলে দেয়। ফলে বর্ষা এলেই বাংলাদেশের নদীগুলো দ্রুত ভরে গিয়ে দুই কূল উপচে বন্যার সৃষ্টি করে। এবারো এর কোনো ব্যত্যয় ঘটেনি। বাংলাদেশের সব বড় নদীই বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
গাইবান্ধা, রংপুর, কুড়িগ্রাম, সিরাজগঞ্জ, বগুড়া, জামালপুরে বন্যা পরিস্থিতির চরম অবনতি হয়েছে। গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ, ফুলছড়ি, সাঘাটা ও সদর উপজেলার বন্যা পরিস্থিতি অবনতি হয়েছে। প্লাবিত হচ্ছে নতুন নতুন এলাকা। ব্রহ্মপুত্র ও করতোয়া নদীর পানি অপরিবর্তিত থাকলেও তিস্তার পানি গত ২৪ ঘন্টায় আবারও ২০ সে.মি. বেড়েছে। গতকাল সকালে ঘাঘট নদীর পানি বিপদসীমার ২৪ সে.মি. ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। ঐ সময়ে যমুনা নদীর পানি বগুড়ার সারিয়াকান্দি পয়েন্টে ৬৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। ধীর গতিতে পানি কমলেও, সারিয়াকান্দি, সোনাতলা ও ধুনট উপজেলায় বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত। বগুড়ার সারিয়াকান্দি উপজেলার ধলিরকান্দি থেকে রৌহাদহ পর্যন্ত পৌনে ৪ কিলোমিটার বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ঝুঁকির মুখে পড়েছে। বাঁধের ৫টি পয়েন্টে প্রায় ৩০০ মিটার ধসে গেছে। যমুনায় পানি অপরিবর্তিত থেকে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি থাকায় এ ঝুঁকি আরো বেড়ে গেছে। যেকোনো মুহূর্তে বাঁধ ভেঙে প্লাবিত হতে পারে নতুন নতুন এলাকা। পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সারিয়াকান্দির উপ বিভাগীয় প্রকৌশলী আব্দুল মোতালেব জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় যমুনার পানি বৃদ্ধি না পেলেও এখনো বিপদসীমার ৬৭ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। গতকাল সকালে বাঁধ এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, ৮ কোটি টাকা ব্যয়ে উপজেলার ধলিরকান্দি থেকে রৌহাদহ পর্যন্ত পৌনে ৪ কিলোমিটার বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ পুরোটাই হুমকির মুখে পড়েছে। বাঁধের ৫টি পয়েন্টে ৩০০ মিটার ধসে গেছে। টপ থেকে এখন যমুনার পানি ২মিটার উপরে রয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী নুরুল ইসলাম সরকার জানান, বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের চন্দনবাইশার শেখ পাড়া ও রৌহাদহ এলাকায় ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে।
জামালপুরে যমুনার পানি বাহাদুরাবাদ পয়েন্টে বিপদসীমার ৩৬ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ইসলামপুর, দেওয়ানগঞ্জ, মাদারগঞ্জ ও সরিষাবাড়ির ২৫টি ইউনিয়নের প্রায় লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি। জামালপুর জেলার বিভন্ন ইউনিয়নের ৩৫টি গ্রাম নতুন করে প্লাবিত হয়ে প্রায় ৫০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। এদিকে দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার বাহাদুরাবাদ, চুকাইবাড়ী, চিকাজানী ৩টি ইউনিয়নের অধিকাংশ এলাকা পানির নিচে। ইসলামপুর উপজেলার যমুনার তীরবর্তী ৭টি ইউনিয়ন, বিশেষ করে পার্থর্শী, কুলকান্দি, বেলগাছা, চিনাডুলী, নোয়ারপাড়া, ইসলামপুর সদর ও সাপধরী ইউনিয়নের প্রায় ৩৫টি গ্রাম প্লাবিত হয়ে অত্যন্ত ৫০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। এ সব ইউনিয়নের মধ্যে চিনাডুলী ও নোয়ারপাড়া ইউনিয়ন বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। যমুনার উলিয়ার পয়েন্টে ১২শ মিটার বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ পানিতে বিলিন হয়েছে। অপর দিকে যমুনার পানি বৃদ্ধির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়তে শুরু করেছে ব্রহ্মপুত্র নদের পানি। ইসলামপুর উপজেলার ১২টি ইউনিয়েনের মধ্যে ব্রহ্মপুত্র নদের তীরবর্তী ৫টি ইউনিয়ন রয়েছে। ইউনিয়ন গুলোর মধ্যে পলবান্ধা,গোয়ালের চর, গাইবান্ধা, চরগোয়ালিনী ও চরপুটিমারী ইউনিয়ন নতুন করে প্লাবিত হচ্ছে। বন্যার পানিতে তলিয়ে যাচ্ছে হাজার হাজার একর উঠতি ফসল রোপা আমন ধান, বীজতলা, তরিতরকারী, পুকুরের মাছ। এছাড়া জেলার বকসিগঞ্জ উপজেলার নিলক্ষিয়া, বগারচর, মেরুরচর ও সাধুরপাড়া ইউয়িন, মেলান্দহ উপজেলার মাহমুদপুর, ঘোষের পাড়া, ঝাউগড়া ইউনিয়ন নতুন করে প্লাবিত হয়েছে। জামালপুরের জেলা প্রশাসক শাহাব উদ্দিন খান এরইমধ্যে ইসলামপুর বন্যা দুর্গত এলাকা পরিদর্শন করে ২৪ মে. টন চাউল ও ৫ লাখ টাকার সমপরিমাণ শুকনা খাবর বিতরণ করেছেন।
গতকাল যমুনা নদীর পানি সিরাজগঞ্জ পয়েন্টে বিপদসীমার ১৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হতে দেখা যায়। সদর, কাজিপুর, বেলকুচি, চৌহালী, শাহজাদপুর ও তাড়াশ উপজেলার ২০টি ইউনিয়নের লক্ষাধিক মানুষ এখনো পানিবন্দি। এদিকে যমুনার প্রবল স্রোত ও ঘূর্ণাবাতে নদী গর্ভে বিলিন হয়ে গেছে এনায়েতপুরের সলিড ¯পার ও রিং বাঁধের প্রায় ২শ মিটার এলাকা। হুমকির মুখে উপমহাদেশের বৃহৎ এনায়েতপুর হাসপাতাল ও মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়সহ কয়েক হাজার ঘর-বাড়ী। পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে পানি গত ২৪ ঘণ্টায় দুই সেন্টিমিটার বেড়েছে। তবে গত ১২ ঘণ্টায় পানি বৃদ্ধি না পেয়ে স্থিতিশীল অবস্থায় রয়েছে। এদিকে জেলা জুড়ে নদী তীরবর্তী অঞ্চলে যমুনার ভাঙন অব্যহত রয়েছে। বন্যার পানিতে জেলার নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। বন্যায় সিরাজগঞ্জ জেলার দুই শতাধিক গ্রাম প্লাবিত হওয়ায় দুই লক্ষাধিক মানুষ এখন পানিবন্দী। কাজিপুর উপজেলার সাতটি ইউনিয়নেই অন্তত লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। কাজিপুরের মেঘাই-সোনামুখী আঞ্চলিক সড়কের ধারে বন্যার পানি স্থিতিশীল অবস্থায় রয়েছে। নদীর পানি আর সামান্য বাড়লেই এই সড়কে পানি উঠতে পারে বলে এলাকাবাসী জানায়। এই সড়কে পানি উঠলে কাজিপুর থেকে বগুড়া যাতায়াত বন্ধ হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। বন্যা কবলিত মানুষ তাদের সাধারন কাজকর্ম না করতে না পারায় কষ্টে জীবন যাপন করছে। বিশেষ করে ব্রক্ষ্মপূত্র বাঁধের ওপর আশ্রয় নেয়া মানুষ এখন বেশি কষ্টে রয়েছে। খাবার ও পানির অভাবের পাশাপাশি গবাদি পশু নিয়ে কোনো রকম তারা জীবন যাপন করছে। এখন পর্যন্ত তাদের কাছে ত্রাণ সামগ্রী পৌঁছেনি বলে অভিযোগ করেছে বন্যা কবলিত মানুষ। এদিকে অব্যাহত পানির প্রবল চাপে বেলকুচি উপজেলার কয়েকটি গ্রাম এখন প্রচণ্ড ভাঙনের কবলে পড়েছে। এই উপজেলার আগুরিয়া, রান্ধুনীবাড়ি, হরিনাথপুর, আগুরিয়াচর, বিল মহিষা গ্রামগুলো এখন প্রচণ্ড ভাঙনের মুখে পড়েছে। একই সঙ্গে চৌহালী উপজেলার নদীতীরবর্তী অঞ্চলেও শুরু হয়েছে ভাঙন। এসব এলাকার মানুষ একদিকে ভাঙন অন্যদিকে বন্যার মধ্য পড়ে নাজেহাল অবস্থায় জীবন যাপন করছে।
কুড়িগ্রামে বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে। চিলমারী পয়েন্টে ব্রহ্মপুত্রের পানি বিপদসীমার ৪ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। ধরলার পানি সামান্য কমলেও ১৬ সেন্টিমিটার বেড়েছে তিস্তার পানি। দুর্গত এলাকার প্রায় ৫০ হাজার পরিবার গত ৭ দিন ধরে পানিবন্দি জীবনযাপন করছেন। বন্যায় তলিয়ে আছে জেলার নয় উপজেলার ৫০ ইউনিয়নের চর, দ্বীপচর ও গ্রাম। অনেক পরিবার উঁচু মাচা ও কলা গাছের ভেলায় অবস্থান নিয়ে দুর্বিসহ দিন পার করছে। এসব পরিবারের মাঝে খাদ্য ও বিশুদ্ধ খাবার পানি তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। পাশাপাশি সংকট দেখা দিয়েছে গো-খাদ্যের। গ্রামীণ সড়ক তলিয়ে যাওয়ায় ভেঙ্গে পড়েছে যোগাযোগ ব্যবস্থা। কলা গাছের ভেলা ও নৌকাই তাদের এখন একমাত্র ভরসা। সরকারি ও বেসরকারি ত্রাণ সহায়তা না পাওয়া বানভাসী মানুষের মাঝে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। অনাহারে-অর্ধাহারে দিন কাটছে অনেক পরিবারের। সদর উপজেলার যাত্রাপুর ইউনিয়নের আছিয়া বেগম জানান, গত শনিবার থেকে খেয়ে না খেয়ে দিন পার করছি। কোন মেম্বার চেয়ারম্যান এ পর্যন্ত খোঁজ নিল না। এদিকে বন্যার পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় ৩০ হাজার হেক্টর জমির রোপা আমন, শাক-সবজি নষ্ট হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসক এবিএম আজাদ জানান, বন্যার্তদের জন্য ১০০ মেট্রিক টন চাউল ও এক লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে ৬০ মেট্রিক টন চাউল ও নগদ ৭০ হাজার টাকা বিতরণ করা হয়েছে। আরো বরাদ্ধ চেয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে। স্থানীয় পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-সহকারী প্রকৌশলী সবিবুর রহমান জানায়, গত ২৪ ঘন্টায় চিলমারী ব্রহ্মপুত্রের পানি সাত সেন্টিমিটার হ্রাস পেলেও এখনও বিপদসীমার চার সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। কাউনিয়া পয়েন্টে তিস্তার পানি ১৬ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়েছে। লালমনিরহাটে তিস্তা নদীর পানি কিছুটা বেড়ে বিপদসীমার ২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। সরকারি সহযোহিতা না পাওয়ায় ক্ষুব্ধ দুর্যোগ কবলিত এসব মানুষ। প্রথম দফা বন্যার ধকল কাটতে না কাটতেই রংপুরে দ্বিতীয় দফা বন্যা দেখা দিয়েছে। নতুন করে পানি বেড়ে যাওয়ায় তিস্তা তীরবর্তী গংগাচড়া, কাউনিয়া ও পীরগাছার বিস্তীর্ণ এলাকার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। বেড়েছে নদীভাঙ্গন।
এদিকে আবহাওয়া অফিস আগামী পাঁচ দিনের আবহাওয়া বার্তায় ভারী বর্ষণের পূর্বাভাস দিয়েছে। তার মানে আরো কিছু নদীর পানি বৃদ্ধি পাবে এবং বন্যা পরিস্থিতির অবনতি ঘটতে পারে।

Continue Reading
Click to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Highlights

কর্মচারী ‘নয়ন সিন্ডিকেটের’ দাপটে তটস্থ রমেক হাসপাতাল

Avatar photo

Published

on

রংপুর মেডিকেল কলেজ (রকেম) হাসপাতালে সেবা নিতে আসা রোগী ও রোগীর স্বজনদের হয়রানি নতুন কিছু নয়। বিষয়টি সেবাগ্রহীতাদের মধ্যে স্বাভাবিক বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। এবারে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রোগী, রোগীর স্বজন, চাকুরি প্রত্যাশীদের হয়রানি, কথায় কথায় হাসপাতালের নিরীহ কর্মচারীদের নানাভাবে হয়রানি, হাসপাতাল প্রশাসনকে দাপটের সাথে দাবিয়ে রাখাসহ নানা অভিযোগ উঠেছে ‘নয়ন সিন্ডিকেট’র বিরুদ্ধে।

জানা যায়, নয়ন সিন্ডিকেটের প্রধান নয়ন হাসপাতাল থেকে বরখাস্ত হলেও ‘কর্মচারি ইউনিয়নের সাইনবোর্ড’ এর সাধারণ সম্পাদক এর পদ ব্যবহার করে সব পর্যায়ের কর্মকাণ্ডকে জিম্মি করে রেখেছে। তার বিস্তর অপরাধের কাহিনী এখন ভুক্তভোগীসহ চিকিৎসাসেবীদেরও মুখে মুখে। এদের দৌরাত্মের নিকট অসহায়ত্ব প্রকাশ করেছেন স্বয়ং হাসপাতালের বিদায়ী পরিচালক ডা. শরিফুল হাসানও। এক সাক্ষাতকারে এই নয়ন সিন্ডিকেটের কাছে আত্মসমর্পণ করে বিদায় নিতে বাধ্য হয়েছেন বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি।

সূত্র জানায়, রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৪০টি ওয়ার্ড রয়েছে। যার প্রতিটি ওয়ার্ডে বহিরাগত লোকবল নিয়োগ দিয়ে তাদের কাছে ওষুধের দালালিসহ সরকারি বরাদ্দকৃত ওষুধ ও সার্জিক্যাল যন্ত্রপাতি চুরি করার মোটা কমিশন হাতিয়ে নেয় নয়ন সিন্ডিকেট। এমন কি নয়নের সিন্ডিকেটের সদস্যরা হাসপাতালের নিয়মনীতি তোয়াক্কা না করে অবৈধভাবে বহিরাগত মাদকসেবীদের দিয়ে বিভিন্ন ওয়ার্ডের ডিউটি করান। যেসব মাদকসেবীদের দিয়ে অবৈধভাবে ডিউটি করান দিন শেষে তাদের হাজিরা না দিয়ে উল্টো তাদের কাছ থেকে নেয়া হয় সারাদিনের কু-কর্মের ভাগ বাটোয়ারার হিস্যা।

সেবাগ্রহীতা, স্বজন ও সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে জানা যায়, নয়ন ও তার গ্রুপের লোকেরা একক কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করে সেবা নিতে আসা রোগীর স্বজদের সামান্য বিষয় নিয়ে লাঞ্ছিত, রোগী ও চিকিৎসাসেবীদের সাথে দুর্ব্যবহার, ওষুধ-সরঞ্জামাদি চুরি, চাঁদাবাজিসহ নানা অভিযোগ তার সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে। এছাড়ও হাসপাতাল প্রশাসনকে দাপটের সাথে দাবিয়ে রাখাসহ এমন কোনো অপরাধ নেই যা নয়ন সিন্ডিকেটের মাধ্যমে সংঘঠিত হয় না। বরখাস্ত হওয়া সত্ত্বেও হাসপাতালের কর্মচারি ইউনিয়নের সাইনবোর্ড এর খুঁটির নামে হাসপাতালের সব পর্যায়ের কর্মকাণ্ডকে জিম্মি করে রাখছে তার সিন্ডিকেট। প্রতিনিয়ত এই সিন্ডিকেটের নানামুখি অনৈতিক কর্মকাণ্ডে অসহায় ও উদ্বিগ্ন রমেক কর্তৃপক্ষও। এদের হয়রানি ও অত্যাচারের ভয়ে ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে তাদের বিরুদ্ধে কেউ মুখ খুলতে সাহস পায়না বলেও জানান অনেক ভুক্তভোগী।

আরও জানা যায়, নয়ন চাঞ্চল্যকর হত্যা ও অস্ত্র মামলার আসামি। হাসপাতালেও অভ্যন্তরে হত্যা, হত্যার উদ্দেশে মারপিট, গুরুত্বর জখম, চুরি, চাঁদাবাজিসহ নানা অপকর্মের হোতা ও হুকুমদাতার অপরাধে আসামী নয়নের বিরুদ্ধে রংপুর মেট্রোপলিনের কোতয়ালী থানায় একাধিক মামলা রয়েছে। এছাড়াও নানাবিধ ন্যাক্কারজনক অপরাধ অব্যাহতভাবে সংঘটিত করে আসছে এরা। নয়ন সিন্ডিকেটের এমন অপকর্ম রোধে দক্ষ প্রশাসনিক দায়িত্বের কোনো পরিচালক রংপুর মেডিকেল হাসপাতালে বেশিদিন টিকতে পারেন না বলে একটি কথা এখন কর্মচারীদের মুখে মুখে প্রচলিত হয়েছে।

অভিযোগ রয়েছে, সম্প্রতি বদলি হওয়া রমেক হাসপাতালের পরিচালক ডা. শরিফুল হাসান সরকারের নির্দেশে হাসপাতালে আউর্সোর্সিংয়ের মাধ্যমে কিছুসংখ্যক জনবল নিয়োগের প্রক্রিয়া শুরু করেছিলেন। বিদায়ী ওই পরিচালককে সেই নিয়োগ নয়ন সিন্ডিকেট মনোনীত ঠিকাদারকে দিতে চাপ প্রয়োগ করেন যা বিধিবহির্ভূত হওয়ায় হাসপাতাল প্রশাসন তা মানেন নি। পরে তাদের মনগড়া ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে জনবল নিয়োগ বানিজ্যের সুযোগ করে না দেয়ায় সেই সূত্রপাত ধরে তৎকালীন পরিচালকের বিষয়ে নানা মিথ্যা অপবাদ তুলে অযৌক্তিক আন্দোলনের ধোয়া তুললে পরিচালক বদলি হন।

কথা বলতে চাইলে বিদায়ী পরিচালক ডা. শরিফুল হাসান টেলিফোনে জানান, ‘যুদ্ধে আমি পরাজিত সৈনিক। অনেক চেষ্টা করেও রমেক হাসপাতালের দীর্ঘদিন থেকে গড়ে ওঠা দুর্নীতিবাজ অপশক্তি নয়ন সিন্ডিকেটের কাছে অসহায় আত্মসমর্পণ করে বিদায় নিতে বাধ্য হয়েছি। যতদিন এই সিন্ডিকেটের হাত থেকে হাপাতালকে মুক্ত করা না হবে, ততোদিন উত্তরাঞ্চলের মানুষ স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্ছিত হতেই থাকবে।’

এদিকে প্রশ্ন উঠেছে বরাদ্দ ছাড়াই সাময়িক বরখাস্ত হওয়া নয়ন একজন চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী হয়ে কর্মকর্তাদের জন্য বরাদ্দ রমেক ক্যাম্পাসের ১০নং কোয়ার্টারে থাকেন কিভাবে? এছাড়াও শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত যন্ত্র (এসি) সহ গৃহস্থালি নানা রকম ইলেক্ট্রিক সরঞ্জাম ব্যবহার করে সরকারি বিদ্যুৎ অপচয় করছেন নির্বিঘ্নে। বিষয়টি নিয়ে হাসপাতালে কর্মচারীদের মধ্যেও কানাঘোষা চলছে কিছুদিন ধরে।
এ বিষয়ে রমেক হাপাতালের কর্মচারি ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক নয়ন এর সাক্ষাতকার নিতে চাইলেও তাদের দেখা মেলেনি। পরে টেলিফোনে অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে সাংবাদিকের পরিচয় পেয়ে অসুস্থতার কথা বলে ফোন কেটে দেন নয়ন। কর্মচারি ইউনিয়নের সভাপতি শাহিনের সাথে রোববার (২৮ মে’ ২৩) তার মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল দিলেও তিনি রিসিভ করেনি।

হাসপাতালের বর্তমান পরিচালক ডা. মোহাম্মদ ইউনুস আলী জানান, দীর্ঘদিন থেকে জিইয়ে রাখা অযুত সমস্যাগুলো সমাধানে কাজ করছেন তিনি। তিনি আরও বলেন, সময় ও সবার সহযোগিতা পেলে হাসপাতালের উন্নত স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করবেন বলে তিনি আশাবাদী। তবে সংঘবদ্ধ নয়ন সিন্ডিকেটের ব্যাপারে বলেন, আমি সদ্য যোগ দিয়েছি। এখনও ভালো করে বুঝে উঠতে পারিনি। যথাযথ অভিযোগ পেলে দায়িদের ব্যাপারে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

Continue Reading

Highlights

শেরপুরে মিথ্যা মামলার প্রতিবাদে উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যানের সংবাদ সম্মেলন

Avatar photo

Published

on

শেরপুর প্রতিনিধি: শেরপুর সদর উপজেলার ভাইস চেয়ারম্যান মো. মিজানুর রহমানের স্ত্রী কর্তৃক আদালতে দায়ের করা যৌতুক মামলার প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন হয়েছে। ২৭ মে শনিবার দুপুরে সদর উপজেলার পোড়ার দোকান‘থই থই কফি পার্ক’ এ ওই সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।

এসময় উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান মো. মিজানুর রহমান লিখিত ও মৌখিক বক্তব্যে জানায়, আমি একজন নিরিহ ও সহজ সরল মানুষ। জনগন আমাকে উপজেলা নির্বাচনে বিপুল ভোটে ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত করেন। উপজেলা চেয়ারম্যান মো. রফিকুল ইসলাম হজব্রত পালনের জন্য সৌদি যাবার প্রাক্কালে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান নির্বাচনের জন্য গত ১৫ মে সদর উপজেলার ১৪ ইউনিয়নের মধ্যে ১১ ইউপি চেয়ারম্যানের উপস্থিতিতে সংরক্ষিত মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান সাবিহা জামান শাপলা এবং আমার মধ্যে ভোট অনুষ্ঠিত হয়। ওই নির্বাচনে মাত্র ৩ ভোট পেয়ে আমার সাথে পরাজিত হয়। এতে সে ক্ষিপ্ত হয়ে ওই দিনই আমাকে এবং উপস্থিত ইউপি চেয়ারম্যানদের অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ এবং আমাকে নানা ভাবে হয়রানী করার হুমকি দেন।

এসময় শাপলা আমাকে হুমকি দিয়ে জানায়, আমি একজন সাংবাদিক নেতাও, তাই আমাকে পরাজিত করার ফল পেতে হবে। এর পর ওই ভাইস চেয়ারম্যান ও সাংবাদিক শাপলা আমার পেছনে লেগে আছে। আমার স্ত্রী তানজিলা আক্তারের সাথে কিছু দিন যাবৎ বনিবনা হচ্ছিলো না। সেই সুযোগে ভাইস চেয়ারম্যান শাপলা আমার স্ত্রীকে ফুসলিয়ে আমার বিরুদ্ধে ২৪ মে আদালতে একটি যৌতুক মামলা দায়ের করে। এরপর শাপলা আমার স্ত্রীর কাছ থেকে লিখিত অভিযোগ নিয়ে স্থানীয় কিছু সাংবাদিকদের দিয়ে ভিত্তিহীন ও মানহানিকর সংবাদ পরিবেশন করেন। সমাজে এতে আমার মানসম্মান ক্ষুন্ন হয়েছে। ভাইস চেয়ারম্যান সাবিহা জামান শাপলা নিজে একাধারে জনপ্রতিনিধি, সাংবাদিক ও এমপিও ভুক্ত একটি মাদরাসার শিক্ষক হয়ে সকল স্থান থেকে বেতন-ভাতা উত্তোলন করে অনিয়ম ও দুর্নিতির আশ্রয় নিয়েছেন। এছাড়া তিনি জামায়াত পরিবারের সদস্য হয়ে আওয়ামীলীগে নাম লিখিয়ে ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে যাচ্ছে। তার মরহুম পিতা সুরুজ্জামান একজন তালিকাভুক্ত রাজাকার ছিলেন।

এসময় তিনি আরও বলেন, এযাবৎ কালে আমার বিরুদ্ধে কোন অপরাধ কার্মকান্ড ও দুর্নীতির অভিযোগ নেই। স্থানীয় জনগনের সর্বদা পাশে থাকার কারণে এলাকায় আমি গরিবের ভাইস চেয়ারম্যান হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেছি। অতএব আমার বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা সত্য প্রমান করতে পারবে না। আমার স্ত্রী একজন অর্থলোভি এবং ব্লেকমেইলার। সে আমাদের অন্তরঙ্গ সম্পর্কের ভিডিও ভাইরাল করার চেষ্টা করে আমাকে হেয় করার চেষ্টা করেছে। তাই আমার বিরুদ্ধে প্রকাশিত মিথ্যে সংবাদের প্রতিবাদ জানাই।

অভিযুক্ত ভাইস চেয়ারম্যান শাবিহা জামান শাপলা সাংবাদিকদের জানায়, আমি ভাইস চেয়ারম্যান মিজানের স্ত্রীর বিষয়ে ইতিপূর্বে বেশ কয়েকবার শালিস-দরবার করেছি। সেকারণে তিনি ন্যায় বিচারের জন্য তার ¯^ামীর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে আমার কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছে প্রতিকার চেয়ে। সেজন্য আমি নারী নেত্রী হিসেবে তাকে সহযোগীতা করেছি। এছাড়া আমার বিরুদ্ধে আনিত সকল অভিযোগ অসত্য, ভিত্তহীন।

এদিকে ভাইস চেয়ারম্যান মিজানুর রহমানের স্ত্রী তানজিনা আক্তার জানায়, আমি কারো প্ররোচনায় মামলা করিনি। এছাড়া আমার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগও মিথ্যে। ছবি সংযুক্ত

Continue Reading

জাতীয়

নৌকায় ভোট দিয়ে উন্নয়ন অব্যাহত রাখার আহ্বান সাংসদ সেলিমা আহমাদের

Avatar photo

Published

on

মোঃ প্রিন্স:
জননেত্রী শেখ হাসিনাকে এবং নৌকায় ভোট দিয়ে দেশের উন্নয়ন অব্যাহত রাখার আহবান জানিয়েছেন কুমিল্লা-২ আসনের সংসদ সদস্য সেলিমা আহমাদ। তিনি শনিবার ২নং ঘাগুটিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের উদ্যোগে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় এ আহ্বান জানান।

তিনি তার বক্তব্যে বর্তমান সরকারের উন্নয়ন ও অবদানের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন। সেলিমা আহমাদ আরও জানান, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আগামী প্রজন্মের জন্য স্মার্ট বাংলাদেশ গড়াতে কাজ করে যাচ্ছেন। যে স্মার্ট বাংলাদেশে প্রযুক্তির মাধ্যমে সবকিছু হবে। সেখানে নাগরিকেরা প্রযুক্তি ব্যবহারে দক্ষ হবে। বর্তমান সরকারের স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন বাস্তবায়ন ও উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে তরুণ প্রজন্মের কাছে নৌকা মার্কায় ভোট চেয়েছেন তিনি।

জনাকীর্ণ এই আলোচনা সভায় উপস্তিত ছিলেন- অ্যাডভোকেট মোঃ নজরুল ইসলাম ( সিনিয়র সহ-সভাপতি, হোমনা উপজেলা আওয়ামী লীগ ও মেয়র, হোমনা পৌরসভা, কুমিল্লা), মোঃ মফিজুল ইসলাম (গনি) ( চেয়ারম্যান, ২নং ঘাগুটিয়া ইউনিয়ন পরিষদ), মহিউদ্দিন খন্দকার (যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক, হোমনা উপজেলা আওয়ামী লীগ), গাজী মোঃ ইলিয়াছ (সাবেক যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক, হোমনা), মোঃ মহাসিন সরকার ( ভাইস চেয়ারম্যান, উপজেলা পরিষদ, হোমনা, কুমিল্লা), মোঃ মোয়াজ্জেম হোসেন মোছলেম)(যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক, হোমনা উপজেলা আওয়ামী লীগ), খন্দকার হান্নান মিয়া (সাংগঠনিক সম্পাদক, হোমনা উপজেলা আওয়ামী লীগ), নাছিমা আক্তার (রীনা) (মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান, উপজেলা পরিষদ, হোমনা, কুমিল্লা), মোঃ শাহনুর আহমেদ (সুমন) (সভাপতি, হোমনা পৌর আওয়ামী লীগ), মোঃ জসিম উদ্দিন সওদাগর (চেয়ারম্যান, ৩নং দুলালপুর ইউপি), মোঃ জালাল উদ্দিন (চেয়ারম্যান, ৬নং নিলখী ইউপি), মোঃ ছাদেক সরকার (চেয়ারম্যান, ৭নং ভাষানিয়া ইউপি), মোঃ তাইজুল ইসলাম মোল্লা (চেয়ারম্যান, ১নং জয়পুর ইউপি), মোজাম্মেল হক (চেয়ারম্যান, ৪নং চান্দেরচর ইউপি), মোঃ শিব্বির আহম্মেদ(প্যানেল চেয়ারম্যান, ৫নং আছাদপুর ইউপি)।

Continue Reading