মামলার জালে আবদ্ধ চসিকের বহু সিদ্ধান্ত
চট্টগ্রাম প্রতিনিধি:
মামলার কারণে ঝুলে আছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের নিয়োগ-পদোন্নতিসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত। করপোরেশনের বিরুদ্ধে কমপক্ষে ৩৬টি মামলা দায়ের করেছেন স্বয়ং কর্মকর্তারাই। মামলার কারণে অধিকাংশ বিভাগীয় প্রধানের পদও রয়েছে খালি। অতিরিক্ত দায়িত্বপ্রাপ্তদের দিয়ে সমন্বয়হীনভাবে চলছে করপোরেশনের বিভাগগুলো। কর্মকর্তাদের অভিযোগ, করপোরেশনের আইন কর্মকর্তাদের উদাসীনতার কারণে এসব মামলা দ্রুত নিষ্পত্তি হচ্ছে না। করপোরেশন সূত্রে জানা যায়, ২০০৯ সাল থেকে করপোরেশনের বিভিন্ন সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে করপোরেশনের কর্মকর্তারাই ৩৬টি মামলা দায়ের করেছেন। এসব মামলার বাদি প্রায় ৯৫ জন কর্মকর্তা। এদের মধ্যে করপোরেশনের কর্মকর্তা, প্রকৌশলী ও শিক্ষকরা রয়েছেন। ২০১২ সালে একটি প্রকল্পের ফাইল গায়েব নিয়ে গণমাধ্যমে শৃঙ্খলা বহির্ভূত মন্তব্য করায় সাময়িক বহিষ্কার করা হয় করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী মোখতার আলমকে। কর্তৃপক্ষের এ সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা দায়ের করেন তিনি। যার নং -৩৮৮১/১২। বহিস্কারাদেশ প্রত্যাহারের জন্য করপোরেশনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন তৎকালীন প্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা বর্তমানে উপ সচিব সাইফুদ্দীন মাহমুদ কাতেবী। যার মামলা নং ২৮৭/১০। বহিষ্কারাদেশের প্রত্যাহার চেয়ে মামলা করেন তৎকালীন ভূমি কর্মকর্তা বর্তমানে ভারপ্রাপ্ত প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা আহমেদুল হক। যার মামলা নং ২৬০৩/০৯। চাকরির মেয়াদ বৃদ্ধির জন্য মামলা দায়ের করেন স্বয়ং আইন কর্মকর্তা সরওয়ার-ই-আলম। যার মামলা নং ১৮৭৭/১২। চাকরি স্থায়ীকরণের জন্য মামলা দায়ের করেন সহকারি শিক্ষক উম্মে মুসলেমা । যার নং ৪৫৮/১৩। সকল প্রকার নিয়োগ পদোন্নতি বন্ধের জন্য মামলা দায়ের করেন ১০ জন উপ সহকারি প্রকৌশলী। যার নং ৮৭৯/১৪। চাকরি স্থায়ীকরণ চেয়ে ৩ জন উপ সহকারি প্রকৌশলী মামলা দায়ের করেন। যার নং ৯৩১১/১২। চাকরির মেয়াদ বৃদ্ধির জন্য মামলা দায়ের করেন কর কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম। যার নং ১২৫২৭/১২। চাকরি স্থায়ী করার জন্য মামলা দায়ের করেন উপ সহকারি প্রকৌশলী জাহিদুর রশিদ। যার মামলা নং ৯৩১১/১২ । জানা যায়, অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা দিয়ে পরিচালিত হচ্ছে করর্পোরেশনের আইন শাখা। ২০১১ সালের ১৩ নভেম্বর অবসরে যান প্রধান আইন কর্মকর্তা সরওয়ার ই আলম। পরবর্তীতে এ অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে অস্থায়ী ভিত্তিতে প্রধান আইন কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। করপোরেশনের এক কর্মকর্তা বলেন, “করপোরেশনের আইনজীবীদের উদাসীনতার কারণে মামলাগুলো আদালতে ঝুলে আছে। মামলার নির্দিষ্ট তারিখে তারা আদালতে উপস্থিতও হন না। এ কারণে বাদিরা তাদের পক্ষে মামলার রায় পেয়ে যান।” মামলা পরিচালনায় অবহেলার অভিযোগ অস্বীকার করে আইন কর্মকর্তা সরওয়ার ই আলম বলেন, “কর্মকর্তারা করপোরেশনের বিরুদ্ধে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে মামলা দায়ের করেছেন। এসব মামলা আমরা যথাসময়ে এবং নিয়মিত পরিচালনা করে আসছি। কিছু মামলা ইতিমধ্যে নিষ্পত্তি হয়েছে। আমরা চেষ্টা করি আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে মামলাগুলো দ্রুত নিষ্পত্তি করতে।”
জানা যায়, কর্মকর্তাদের করা মামলায় ঝুলে আছে করপোরেশনের সকল প্রকার নিয়োগ পদোন্নতিসহ গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত। বিভিন্ন বিভাগীয় প্রধান পদগুলোও রয়েছে খালি। নিয়োগ বা পদোন্নতি দিতে না পারায় শিক্ষা, প্রকৌশল ও স্বাস্থ্য বিভাগে চলছে স্থবিরতা। প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা, প্রধান হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তা, প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা, প্রধান পরিচ্ছন্নতা কর্মকর্তা, প্রধান আইন কর্মকর্তা, জনসংযোগ কর্মকর্তা, সহকারি ভূমি কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করছেন ভারপ্রাপ্ত ও চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পাওয়া কর্মকর্তারা। প্রধান প্রকৌশলী অবসরে চলে যাওয়ায় ৩ মাস ধরে খালি রয়েছে প্রধান প্রকৌশলীর পদও। সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ বলেন, নিয়োগ দিতে না পারায় করপোরেশন পরিচালিত প্রায় ১২টি কলেজে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ দিয়ে চালাতে হচ্ছে। একইভাবে প্রায় ৭টি স্কুলেও ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ দায়িত্বপালন করছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক প্রকৌশলী বলেন, “প্রধান প্রকৌশলীর পদটি খালি থাকায় এ বিভাগের কর্মকাণ্ড সমন্বয়হীনভাবে চলছে।” করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আলী আহমেদ বলেন, “মামলা চলমান থাকার কারণে করপোরেশনের কোনো পদে নিয়োগ ও পদোন্নতি দেওয়া যাচ্ছে না। এসব মামলা নিষ্পত্তি হলে পদোন্নতি ও নিয়োগ প্রক্রিয়া স্বাভাবিক হবে।”