যাত্রী পরিবহনকালে ৪১ শতাংশ চালক ঘুমিয়ে পড়েন
স্টাফ রিপোর্টার:
যাত্রী পরিবহনের সময় ৪১ শতাংশ চালক গাড়িতে ঘুমিয়ে পড়েন। ২০ শতাংশের বেশি চালক অতিরিক্ত শ্রমে প্রচণ্ডভাবে পিষ্ট। তারা সপ্তাহের ছয় থেকে সাতদিন দৈনিক ১৩ থেকে ১৬ ঘণ্টা গাড়ি চালানোর মধ্যে থাকেন। সড়ক দুর্ঘটনা সম্পর্কে সম্প্রতি পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসিপেশান রিসার্স সেন্টার (পিপিআরসি) এবং ব্র্যাক পরিচালিত একটি গবেষণায় এ তথ্য উঠে এসেছে। বুধবার রাজধানীর কাওয়ানবাজারে ডেইলি স্টার ভবনে ‘বাংলাদেশ সড়ক নিরাপত্তা: বাধা ও বাস্তবতার প্রেক্ষাপট’ শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। যোগাযোগমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত রয়েছেন। পিপিআরসি ও ব্র্যাকের যৌথ গবেষণায় দেখা গেছে, চালকদের আট শতাংশ পুরোপুরি নিরক্ষর, ৪৮ শতাংশের মাধ্যমিক পর্যন্ত শিক্ষা রয়েছে, ৭০ শতাংশ চালক পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী ব্যক্তি। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ৪১ শতাংশ দুর্ঘটনা ঘটছে বাসস্ট্যান্ডে, ২৮ শতাংশ রাস্তার ধারে গড়ে ওঠা হাটবাজারে এবং ১৮ শতাংশ ঘটছে বিভিন্ন মোড়ে। ২০১১ থেকে ১২ সাল পর্যন্ত সরকারি হিসেবে দেখা গেছে, তিন হাজার একশ ৩২ জন সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছেন। হাসপাতালে নেয়ার পর ও হাসপাতাল থেকে ছাড়া পাওয়ার পর মৃত্যু যোগ করে সংখ্যাটি পাঁচ হাজার একশ ৬২ তে দাঁড়িয়েছে। তবে গত এক দশকে গাড়ির বিপরীতে মৃত্যুর হার হ্রাস পেয়েছে। যেখানে ২০০০ সালে প্রতি দশ হাজার গাড়ির বিপরীতে দুর্ঘটনায় মৃত্যু ছিল ৭৫টি, ২০১১ সালে সেটি নেমে দাঁড়িয়েছে ২০টিতে। দুর্ঘটনায় নিহতদের মধ্যে ৪১ শতাংশ পথচারী। ৪২ শতাংশ দুর্ঘটনার ধরন ধাক্কা মেরে পালিয়ে যাওয়া। মুখোমুখি সংঘর্ষ ঘটেছে ১৯ শতাংশ। দুর্ঘটনার জন্য দায়ীদের মধ্যে বাস ও ট্রাক প্রথম। গবেষণায় দেখা গেছে, দেশের নয়টি জাতীয় মহাসড়কের মধ্যে মোট ৫৭ কিলোমিটার জায়গায় দুর্ঘটনা ঘটছে। এসব স্থানকে ‘ব্ল্যাক স্পট’ হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। বিভিন্ন স্থানে এমন স্থান রয়েছে ২০৮টি। জরিপ পরিচালনাকালে ২০ শতাংশ চালক স্বীকার করেছেন যে তারা পরীক্ষা দেয়া ছাড়াই লাইসেন্স পেয়েছেন। লাইসেন্স পাওয়ার ক্ষেত্রে ৯২ শতাংশ বলেছেন তারা লাইসেন্স পেতে কোনো না কোনোভাবে ঘুষ দিয়েছেন এবং ৫৪ শতাংশ অসহনীয় বিলম্বের অভিযোগ করেছেন। ৮১ শতাংশ চালক ড্রাইভিং শিখেছেন অপ্রাতিষ্ঠানিক ‘ওস্তাদের’ প্রক্রিয়ায়। গবেষণায় আরো দেখা গেছে, ৪২ শতাংশ চালক দুর্ঘটনায় কোনো শাস্তি পাননি। জরিপকৃতদের ২২ শতাংশ ২০১৩ সালে কোনো না কোনো দুর্ঘটনার সঙ্গে জড়িত ছিলেন। দুর্ঘটনার জন্য সংস্থা দুটি যেসব কারণ খুঁজে পেয়েছে এর মধ্যে বেপরোয়া গাড়ি চালানো, চালকদের প্রশিক্ষণের অভাব, ক্রুটিপূর্ণ যানবাহন, মোটরচালিত যান ও ধীরগতির যানের একই সঙ্গে চলাচল, রাস্তার ধারে ঝুঁকিপূর্ণ কর্মকাণ্ড, রাস্তার নকশায় ত্রুটি, ট্রাফিক আইনের দুর্বল প্রয়োগ ও সড়ক নিরাপত্তা বিষয়ে সচেতনতার অভাব ও পথচারীর ঝুঁকিপূর্ণ আচরণ অন্যতম।