যেখানে দেবী বরণ করেন মুসলমান পুরোহিত
অনলাইন ডেস্ক: মরুভূমির শুকনো রূপ আর মীরার কথা এখানে একইসঙ্গে আলোচিত হয়। মীরার কৃষ্ণ বন্দনা (মতান্তরে প্রেম) রাজপুতনার চারণ কবিদের অন্যতম অবলম্বন। আবার কোনও এক বালি মাখা গ্রামে শোনা যায় সন্ত কবীরের দোঁহা- ‘কৃষ্ণ-করিম এক হ্যায় নাম ধরায়া দোয়ে, কাশী-কাবা এক হ্যায় এক রাম রহিম…’
ধর্মীয় সহাবস্থানের এমনই নজির ছড়িয়ে রয়েছে রাজস্থানের বিভিন্ন প্রান্তে। যেমন যোধপুরের ভোপালগড়ের বাগোরিয়া গ্রাম। এখানে দেবী দুর্গার আরাধনা করেন মুসলিমরা। এটাই রীতি। বাবরি থেকে দাদরি অনেক কিছুই ঘটেছে দেশে। সেসব অন্ধকারকে দূরে রেখে বাগোরিয়ার মুসলিম পুজারীরা নিষ্ঠা নিয়ে দেবী বন্দনা ও নামাজ পাঠ করে চলেছেন।
কতদিন আগের ঘটনা। তা কেউ বলতে পারেন না। অন্তত ৬০০ বছর ধরে লোকমুখে ছড়িয়ে রয়েছে একটা কাহিনী। যেদিন সিন্ধ প্রদেশ (পাকিস্তান) থেকে মধ্য ভারতে আসতে গিয়ে এক ব্যবসায়ী মরুভূমির মধ্যে বিপদে পড়েছিলেন। জল ও খাদ্যের অভাবে মরতে বসা সেই সিন্ধি ব্যবসায়ীকে দেবী দুর্গা দেখা দিয়েছিলেন। তাঁর আশীর্বাদে প্রাণ বেঁচেছিল সবার। পরে দেবীর জন্য একটি মন্দির তৈরি করান ওই ব্যবসায়ী। শুরু হয় দুর্গা বন্দনা। বংশ পরম্পরায় গত ১২টি প্রজন্ম ধরে এই কাহিনী চলে এসেছে জামালউদ্দিন খানের পরিবারে। তিনি বংশের ১৩তম প্রজন্ম। দেখেছেন দেশের মাটিতে সাম্প্রদায়িক রঙের ভয়াবহ রূপ। আর প্রচলিত কাহিনীকে আঁকড়ে ধরে সেই ভয়াল সাম্প্রদায়িকতাকে ঠেকিয়ে যাচ্ছেন।
বাগোরিয়া গ্রামের দুর্গা মন্দির একটি পাহাড়ের উপরে অবস্থিত। চারশো সিঁড়ি ভেঙে দর্শনার্থীরা মন্দিরে প্রবেশ করেন। মন্দিরের প্রধান পুরোহিত জামালউদ্দিন খান। আসে পাশের সব গ্রামের বাসিন্দারা তাঁর কাছে অসুর বধের কাহিনী শুনতে আসেন। মন্দিরের পাশেই রয়েছে মসজিদ। দুর্গা আরতির মতো সেখানেও নিয়মিত নামাজ পাঠ হয়। জামালউদ্দিনের ছেলে মেহেরউদ্দিন খান জানিয়েছে, রমজানের সময় একমাস রোজা রাখা যেমন রীতি তেমনই নবরাত্রির সময় ন দিন উপবাসও পালন করা হয়। যুগ যুগ ধরে এই নিয়ম চলে আসেছে।
ধর্মীয় উসকানিমূলক ইস্যুতে অনেক কিছু ঘটে দেশে। সেসব দূরে রেখেই ধর্মীয় সহাবস্থানের নজির তৈরি করে চলেছেন বাগোরিয়াবাসী।