নিরাপত্তার কারণেই ড্রোনে আপত্তি বাংলাদেশের
অনলাইন ডেস্ক: আকাশ থেকে ভিডিও চিত্র ধারণ করতে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ড্রোন এখন বেশ জনপ্রিয়। দেশে নাটক, বিজ্ঞাপনসহ নানা কাজের চিত্র ধারণের জন্য ড্রোনের চাহিদা বাড়ছে। কিন্তু দেশে ড্রোন আমদানী সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। গত ছয় মাসে ঢাকার বিমান বন্দরে অন্তত ৬৫টি ড্রোন জব্দ করেছে কর্তৃপক্ষ। তাছাড়া ড্রোন ব্যবহারের জন্য অনুমতি পাওয়াও বেশ জটিল ও সময়-সাপেক্ষ প্রক্রিয়া।
প্রযুক্তির উৎকর্ষকতার এ যুগে চিত্র ধারণের জন্য ড্রোন যখন সহজলভ্য হচ্ছে, তখন বাংলাদেশে এ পরিস্থিতি কেন? ‘ড্রোন’ শব্দটি শুনলেই অনেকের মনে ছবি ভেসে উঠে তা হচ্ছে, পাকিস্তান-আফগানিস্তান সীমান্তে আমেরিকার চালকবিহীন বিমানের বোমা হামলা। এক দশকেরও বেশি সময় আগে এই ড্রোন হামলার সাথে মানুষ পরিচিত হয়ে উঠে।
কিন্তু প্রযুক্তির উৎকর্ষকতার যুগে খেলনার ড্রোন তৈরি হয়েছে। নাটক, সিনেমা, বিজ্ঞাপন ও সাংবাদিকতার ফুটেজের জন্য ক্যামরো সংযুক্ত ড্রোন দিয়ে আকাশ থেকে ভিডিও চিত্র ধারণ করা হচ্ছে।
ড্রোন সারা বিশ্বে জনপ্রিয় হচ্ছে কিন্তু বাংলাদেশে এর ব্যবহারের অনুমতি পাওয়া কঠিন
এসব কাজের জন্যই পৃথীবির বিভিন্ন দেশে ড্রোন এখন বেশ জনপ্রিয়। বাংলাদেশেও এই ড্রোনের চাহিদা বাড়ছে। কিন্তু দেশে ড্রোন আমদানী সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। গত ছয় মাসে ঢাকার বিমান বন্দরে অন্তত ৬০টিরও বেশি ড্রোন জব্দ করেছে কর্তৃপক্ষ। তাছাড়া ড্রোন ব্যবহারের জন্য অনুমতি পাওয়াও বেশ জটিল ও সময়-সাপেক্ষ প্রক্রিয়া।
কাস্টমস কর্তৃপক্ষ বলছে, নিরাপত্তার ইস্যুতে ড্রোন আমদানীর উপর নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে। ঢাকা কাস্টমসের কমিশনার মো. লুৎফর রহমান জানিয়েছেন, গত ছয় মাসে ঢাকার বিমানবন্দরে তিনি অন্তত ৬৫টি ড্রোন জব্দ করেছেন।
তিনি আরও বলেন, “এটা খেলনা হোক বা যাই হোক না কেন, এটার বহুবিধ ব্যবহার আছে। এটা যদি সমাজের কল্যাণের বিপরীতে ব্যবহার হয়, তাহলে এটার আমদানী বন্ধ করাটাই যুক্তিসঙ্গত। কারণ এটা নিত্যপ্রয়োজনীয় কোন বিষয় না।”
তবে টেলিভিশনের সংবাদ পরিবেশন বা সরকারি-বেসরকারি প্রয়োজনীয় কাজে অনুমতি নিয়ে ড্রোন আমদানীতে কোন বাধা নেই বলে জানান তিনি।
কর্মকর্তারা বলছেন, আগের তুলনার ড্রোনের দাম সস্তা হওয়ায় অনেকে বিদেশ থেকে আসার সময় ড্রোন নিয়ে আসছে।কিন্তু বাংলাদেশে অনুমতি ছাড়া যে ড্রোন আমদানী নিষিদ্ধ সেটি অনেকেরই জানা নেই।
অনেকে বিদেশ থেকে ড্রোন আনার পর এয়ারপোর্টে এসে জানতে পারছেন এটি আমদানী নিষিদ্ধ। কর্মকর্তারা ধারণা করছেন, বর্তমানে যেসব উন্নত প্রযুক্তির ড্রোন আসছে সেগুলো নানা ধরনের অপরাধ তৎপরতায় ব্যবহার করা হতে পারে।
বাংলাদেশে অবাধে ড্রোন আমদানী যেমন নিষিদ্ধ তেমনি ড্রোন ব্যবহারের অনুমতি পাওয়াও বেশ জটিল ও দীর্ঘ মেয়াদী প্রক্রিয়া। সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন প্রকল্পে ড্রোন ব্যবহার করে কাজ করেন নাইমুল ইসলাম অপু।নাইমুল ইসলাম অপু
তিনি বলেন, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান আকাশ থেকে ভিডিও চিত্র ধারনের জন্য ড্রোন ব্যবহারের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেন। অপু জানান, ভিডিওচিত্র ধারণের জন্য ড্রোন ব্যবহারের অনুমতি পেতে ছয় মাস পর্যন্ত সময় লাগে।
তিনি বলেন, ড্রোন ব্যবহারের ক্ষেত্রে বাংলাদেশে সুনির্দিষ্ট কোন আইন না থাকায় এ পরিস্থিতির তৈরি হয়েছে। ড্রোন ব্যবহারের জন্য আবেদন করতে হয় বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের কাছে। তারপর সেটি প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়।
কর্মকর্তারা বলছেন, ড্রোন ব্যবহারের জন্য মূল অনুমোদনটি আসে প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা সংস্থা বা ডিজিএফআই থেকে। আবেদন যাচাই-বাছাই করে এ অনুমোদন দেয়া হয়।
সিভিল এভিয়েশন কর্তৃপক্ষ বলেছে, ড্রোন ব্যবহারের অনুমতি পেতে দু’মাস পর্যন্ত সময় লাগে। বাংলাদেশে অনেকে ড্রোন ব্যবহার করতে চাইলেও সেটি পরিচালনার মতো দক্ষতা আছে কিনা সে বিষয়টি যাচাই বাছাই করা হয়। বিমানবন্দরের আশপাশ এবং বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার আশপাশে ড্রোন ব্যবহার করার উপর বিধি-নিষেধ আছে।
বাংলাদেশে সিভিল এভিয়েশন অথরিটির সাবেক চেয়ারম্যান অবসরপ্রাপ্ত এয়ার কমডোর ইকবাল হোসেন মনে করেন, বিশেষ কিছু জায়গায় ড্রোন ব্যবহারের নিষেধাজ্ঞার যৌক্তিকতা আছে।
মি: হোসনে বলেন, “এটা তো রিমোর্ট কন্ট্রোল দিয়ে চলে। এয়ারপোর্টে একটা বিমান উড্ডয়নের সময় আপনি যদি কোন ক্ষতি করতে চান তখন আপনি ড্রোনটাকে উঠিয়ে দেবেন তার সামনে। ছোট্ট একটা পাথর বা পাখিও যদি ঢুকে ইঞ্জিনে, তাহলে এটা বিধ্বস্ত হতে পারে। ”
কর্তৃপক্ষ বলছে, আকাশ থেকে ভিডিওচিত্র ধারনের জন্য ড্রোন ব্যবহারের অনুমতি দেয়া হচ্ছে। তবে অনুমতি পেতে এখন যে দীর্ঘ সময় লাগছে সেটি কমিয়ে আনার চেষ্টা করছে কর্তৃপক্ষ।