Connecting You with the Truth

রংপুর বিভাগীয় রাজস্ব সংলাপ ও প্রশিক্ষণ কর্মশালার উদ্বোধন

rangpur-nbr-chairman-news-06-10-2016-1

নিজস্ব প্রতিবেদক, রংপুর: রংপুর চেম্বার অব কমার্স এ্যান্ড ইন্ডাষ্ট্রি’র আয়োজনে রাষ্ট্রের সর্বক্ষেত্রে একটি রাজস্ব বান্ধব সংস্কৃতি গড়ে তোলার চলমান প্রয়াসের ধারাবাহিকতায় রংপুর বিভাগের সর্বস্তরের অংশীজনের সাথে এক রাজস্ব সংলাপ ও প্রশিক্ষণ কর্মশালা রংপুর চেম্বার ভবনের আরসিসিআই অডিটরিয়ামে অনুষ্ঠিত হয়।
বৃহস্পতিবার রংপুর চেম্বারের সভাপতি মো. আবুল কাশেম এর সভাপতিত্বে রাজস্ব সংলাপ ও প্রশিক্ষণ কর্মশালার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের সিনিয়র সচিব ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান মো. নজিবুর রহমান।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন রংপুর বিভাগীয় কমিশনার কাজী হাসান আহমেদ, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সদস্য মো. ফরিদ উদ্দিন, পারভেজ ইকবাল, ব্যারিস্টার জাহাঙ্গীর হোসেন, রেজাউল হাসান, পুলিশের রংপুর রেঞ্জের ডিআইজি খন্দকার গোলাম ফারুক বিপিএম পিপিএম, বিজিবির উত্তর পশ্চিম রিজিয়ন ডেপুটি ডিরেক্টর জেনারেল ও সেক্টর কমান্ডার কর্ণেল মো. মোয়াজ্জেম হোসেন, বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সাধারন সম্পাদক জামাল উদ্দিন আহমেদ পিএইচডি এফসিএ, রংপুর চেম্বারের সাবেক সভাপতি মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বাবু, রংপুর কর অঞ্চলের কমিশনার হারুন-অর রশীদ, কাস্টমসের এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেট এর কমিশনার আহসানুল হক।
সংলাপ অনুষ্ঠানে ব্যবসায়ী ও শিল্পপতিদের কর ও ভ্যাট সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয় নিয়ে বক্তব্য রাখেন এফবিসিসিআই এর সাবেক সহ-সভাপতি ও সাবেক পরিচালক এবং রংপুর চেম্বারের সাবেক সভাপতি মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বাবু, সনিক প্রাইম গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডা. আক্কাছ আলী সরকার, রংপুর চেম্বারের সাবেক জুনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট গোলাম মর্তুজা হানিফ, মাছরাঙ্গা টেলিভিশনের সিনিয়র স্টাফ রিপোর্টার রফিক সরকার, জনতা ট্রেডিং এর স্বত্বাধিকারী ও রংপুর চেম্বারের সাবেক পরিচালক আলহাজ্ব এমদাদুল হোসেন ও গাইবান্ধা চেম্বারের সভাপতি।
চেম্বার ও ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দরা তাদের বক্তব্যে বলেন যে, রংপুর বিভাগের ব্যবসায়ীরা কর ও ভ্যাট প্রদানে অত্যন্ত আগ্রহী ও আন্তরিক। রংপুর বিভাগে গ্যাস নেই, জ্বালানি নেই, অবকাঠামোগত সুবিধা নেই তাই অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে পড়া রংপুর বিভাগে সহনীয় পর্যায়ে কর ও ভ্যাট আদায়ের ব্যাপারে প্রধান অতিথির দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।
বক্তারা বলেন, রংপুর বিভাগে রয়েছে কৃষি পণ্যের সহজলভ্যতা, স্বল্প মূল্যে জমি ও সস্তা শ্রমের বিশাল বাজার। তাই রংপুর বিভাগের জন্য আলাদা কর ও ভ্যাট নীতি প্রণয়ন করা হলে এ অঞ্চলে দেশি -বিদেশী শিল্পোদ্যোক্তারা বিনিয়োগে আকৃষ্ট হবে বলে ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ মতামত ব্যক্ত করেন।
তবে রংপুর বিভাগের ব্যবসায়ীরা যাতে কর ও ভ্যাট কর্মকর্তাদের হাতে অহেতুক হয়রানির শিকার না হন সে দিকে দৃষ্টি রাখার পাশাপাশি কর ভীতি দূর করে ব্যবসায়ীদের সাথে কর কর্মকর্তাদের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখার আহ্বান জানান।
এছাড়া শুধু মাত্র জেলা শহরের ব্যবসায়ীদেরকে কর ও ভ্যাটের আওতায় না রেখে নতুন নতুন কর ও ভ্যাটদাতা সনাক্ত করার জোর দাবি জানান। এর ফলে নতুন নতুন কর ও ভ্যাটদাতা সৃষ্টি হবে এবং যারা নিয়মিত কর ও ভ্যাট প্রদান করে থাকেন তাদের ওপর কর ও ভ্যাটের বোঝা কিছুটা হলেও লাঘব হবে বলে মতামত ব্যক্ত করেন।
এছাড়া পশ্চাৎপদ রংপুর বিভাগে প্যাকেজ ভ্যাট হার দেশের অন্যান্য বিভাগের চেয়ে সহনীয় করার পাশাপাশি আলু ও পাট চাষে কৃষকদের উৎসাহিত করার লক্ষ্যে আলু রপ্তানিতে ২০% ও পাট শিল্পের জন্য ১০% হারে ইনসেনটেটিভ ধার্য্য করার অনুরোধ জানান।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের সিনিয়র সচিব ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান মো. নজিবুর রহমান বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর রূপকল্প ২০২১ ও রূপকল্প ২০৪১ বাস্তবায়নের জন্য জাতীয় রাজস্ব বোর্ড দেশে একটি ব্যবসা, শিল্প ও বিনিয়োগ বান্ধব পরিবেশ সৃষ্টির অব্যাহত প্রয়াস চালাচ্ছে। আজকের এ সংলাপ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে আপনারা আপনাদের অঞ্চলের যে সমস্যা ও সম্ভাবনা যেভাবে আমাদের কাছে তুলে ধরলেন তা আগামীতে উন্নয়ন পরিকল্পনায় সন্নিবেশিত হবে এবং এর ভিত্তিতে রংপুর বিভাগের উন্নয়ন নিয়ে একটি মহাপরিকল্পনা গ্রহণ করা হবে।
তিনি বলেন, রংপুর একটি সম্ভাবনাময় উজ্জ্বল এলাকা, রংপুর বিভাগে কিভাবে অর্থনৈতিক উন্নয়নের গতি ত্বরান্বিত ও গতিশীল করা যায় সে ব্যাপারে আমাদের প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে। আমরা আগামীতে যে রাজস্ব নীতি তৈরি করবো অবশ্যই সেখানে রংপুর বিভাগের জন্য আলাদা কিছু থাকবে।
তিনি বলেন, রংপুর বিভাগ দিয়ে শুধু বিবিআইএন নয়, এ বিভাগ দিয়ে যে অতি সহজে চীনের সাথে পণ্য আমদানি-রপ্তানি করা যাবে তা রংপুর সফরে না আসলে জানতাম না। রংপুর বিভাগ থেকে চীনের স্থলবন্দরের দূরত্ব প্রায় ১৯৩ কিলোমিটার। একটি রাজস্ব ও উন্নয়ণ বান্ধব পরিবেশ বজায় রাখার ক্ষেত্রে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ও করদাতাগণ একে অপরের পরিপূরক হিসেবে কাজ করে যাচ্ছে।
রাজস্ব সংলাপে চেম্বার ও ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দের পক্ষ থেকে কর ও ভ্যাট প্রদানের ক্ষেত্রে যে সব সমস্যা ও প্রতিবন্ধকতা তুলে ধরা হয়েছে তা পর্যায়েক্রমে সমাধান করবেন মর্মে তিনি আশ্বাস প্রদান করেন।
এছাড়া ব্যবসায়ী ও শিল্পপতিদের কর ও ভ্যাট সংক্রান্ত সমস্যা নিরুপনে ও রংপুর বিভাগে বিনিয়োগ উৎসাহিত করতে রংপুর চেম্বারের প্রস্তাবনাসমূহ যথাযথ সহানুভূতির সাথে বিবেচনা করা হবে বলে উপস্থিত চেম্বার ও ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দকে আশ্বস্ত করেন। পরিশেষে তিনি কেক কাটার মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে রংপুর বিভাগ থেকে ভ্যাট এডুকেশন ফোরাম ও ট্যাক্স এডুকেশন ফোরামের উদ্বোধন করার পাশাপাশি কর ও ভ্যাট আদায়ে ব্যবসায়ীদের হয়রানি বন্ধের লক্ষ্যে রংপুর বিভাগ থেকে ব্যবসায়ীদের গণশুনানি কার্যক্রম শুরু করার ঘোষণা প্রদান করেন।
সভাপতির বক্তব্যে রংপুর চেম্বারের সভাপতি মো. আবুল কাশেম বলেন, অংশিদারিত্ব ছাড়া যেমন ব্যবসা-বাণিজ্য ও দেশের উন্নয়ন সম্ভব নয় তেমনি সঠিক পরিকল্পনা ও যথাযথ দায়িত্ব পালন করা না হলে সবকিছু ব্যর্থতায় পর্যবশিত হয়। এক্ষেত্রে ব্যবসায়ীদের সাথে কর ও ভ্যাট কর্মকর্তাদের সৌহার্দ্যপূর্ণ মনোভাব ও আন্তরিক সমন্বয় ও সহযোগিতা অত্যন্ত জরুরী। ভ্যাট ও ট্যাক্স আদায়ের মাধ্যমে দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক উন্নয়নের গতি ত্বরান্বিত হোক এটাই ব্যবসায়ীদের প্রত্যাশা। তাই দেশের উন্নয়নে আমাদের সকলের ভ্যাট দেয়া উচিত। কিন্তু আমাদেরকে অযৌক্তিকভাবে কিছু চাপিয়ে দেয়া হলে তা মানতে আমাদের অনেকটা কষ্ট হয়।
নতুন ভ্যাট আইন বিষয়ে চেম্বার সভাপতি বলেন, নতুন আইন কেবলমাত্র প্রণয়ন নয়, বরং মানুষকে ভ্যাট বা কর প্রদানে উদ্বুদ্ধ করার পাশাপাশি জনসচেতনতামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করার আহ্বান জানান। পরিশেষে তিনি ব্যবসায়ী ও শিল্পপতিদের কর ও ভ্যাট সংক্রান্ত সমস্যা নিরসনে ও রংপুর বিভাগে বিনিয়োগ উৎসাহিত করতে কতিপয় প্রস্তাব সম্বলিত একটি স্মারকলিপি অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের সিনিয়র সচিব ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান মো. নজিবুর রহমানের নিকট প্রদান করেন।
সংলাপ অনুষ্ঠানে রংপুর চেম্বার পরিচালনা পর্ষদের বর্তমান ও সাবেক কর্মকর্তা এবং পরিচালকবৃন্দ, রংপুর বিভাগের ৯টি চেম্বারের নেতৃবৃন্দ, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও শিল্পপতিবৃন্দ, বিভিন্ন স্তরের ব্যবসায়ী সমিতির নেতৃবৃন্দ, কর অঞ্চল রংপুরের কর্মকর্তাবৃন্দ, কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেট এর কর্মকর্তাবৃন্দ, সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তাবৃন্দ, প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

Comments
Loading...