Connect with us

মতামত

রাজনীতির রোষানলে দেশ কোথায় যাচ্ছে?

Published

on

Ashulia bus fire picture

মশিউর রহমান, আশুলিয়া প্রতিনিধিঃ

তৎকালীণ এ দেশ দু’টি ভাগে বিভক্ত ছিল। একটি পূর্ব পাকিস্তান অন্যটি পশ্চিম পাকিস্তান। তখন রাষ্ট্র ভাষা উর্দু ভাষা থাকায় মানুষ পরস্পর মাতৃভাষায় কথা বলতে পারতো না। পশ্চিম পাকিস্তানীদের হাতে লুটতরাজ, অন্যায়-অবিচার, খুন, রাহজানী ধর্ষণের মত নানা অপরাধমূলক কর্মকান্ডের স্বীকার হতে হয়েছিল। তখন প্রতিটি মানুষকে সর্বত্রই সংশায়ের মধ্যে জীবন-যাপন করতে হতো। ১৯৭১ সালে মাতৃভাষা বাংলা ভাষা চাই এবং স্বাধীনভাবে মানুষ সুন্দরভাবে দু’মুঠো খেয়ে বাঁচর লড়াইয়ে এ দেশের মায়ের দামাল ছেলেরা তাদের বুকের তাজা রক্তের বিনিময়ে ছিনিয়ে এনেছিল বিজয়ের মুকুট। ৩০ লক্ষ প্রাণের বিনিময়ে এ দেশ স্বাধীনতা লাভ করে।
দু’দলের ক্ষমতার লড়াইয়ে ২০১৩ সালে শান্ত বাংলাদেশ যেমনি অশান্ত হয়ে উঠেছিল সেই অশান্ত রাজনীতির রেশ কাটতে না কাটতেই হঠাৎ আবারও দেশ অশান্ত হয়ে উঠেছে। রাজধানীসহ দেশের প্রতিটি মানুষের মনে বাড়ছে আতঙ্ক। জীবন-জীবিকার প্রয়োজনে রাস্তায় বের হলেও ঠিকমত নীড়ে ফিরতে পারবে কিনা এ নিয়ে সর্বত্রই মানুষের মধ্যে দেখা দিয়েছে চরম সংশয় ও অনিশ্চয়তা।
একদিকে গ্রেফতার আতঙ্ক, অন্যদিকে গুলি, ককটেল বিস্ফোরণ, অগ্নিসংযোগ, ভাঙচুর ও হামলার ভয়-ভীতি প্রতিটি স্তরে এর প্রভাব পড়ছে। কোনভাবেই প্রতিহত করা যাচ্ছে না রাজপথের নির্মম সহিংসতা। অস্থির রাজনীতি পরিবেশে জনমনে প্রতিনিয়ত বাড়ছে উদ্বেগ উৎকন্ঠা। কোন দল বা গোষ্ঠির কারণেই এ ধরনের পরিস্থিতি সৃষ্টি হবে এটা স্বাধীন বাংলার কারোই কাম্য নয়। দু’পক্ষের হানাহানিতে আবারও দেশ কোথায় যাচ্ছে?
এখনও এ সঙ্কট নিরাসনের উদ্যোগ নেয়া না হলে অচিরেই এ দেশ কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে । তখন গণতন্ত্র রক্ষা করা আরও কঠিন হয়ে পড়বে বলে জানান মুক্তিযোদ্ধা ওহাব আলী।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, শহর, বন্দর ও গ্রাম সর্বস্থানে বিরাজ করছে প্রতিহিংসা পরায়ণ রাজনীতির এ অস্থিরতা। এমনও কি আতঙ্কের বাইরে নেই প্রশাসনও। আয় কমে যাওয়া ও মূল্যস্ফীতির দরুন-নিদারুন কষ্টে আছে নিম্ন ও মধ্য আয়ের মানুষ। এ চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতার প্রভাব পড়েছে অর্থনীতিতে। প্রভাব পড়েছে শিক্ষাঙ্গনে, পোশাক ও ব্যাবসা খাতে।
এ অস্থির রাজনীতির প্রভাভে শিক্ষার্থীরা তাদের লেখা-পড়ায় মনোনিবেশ করতে পারছে না। স্কুল, মাদ্রাসা, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতির হার ক্রমেই কমে যাচ্ছে। টাঙ্গাইল রেসিডেনসিয়াল স্কুল এন্ড কলেজের চেয়ারম্যান মাসুদ রানা জানান, অবরোধে আর হরতালে যান্ত্রিক যানবাহনের সংখ্যা কম থাকা ও গাড়ি ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ এবং ককটেল বিস্ফোরণের এসম ভয়-ভীতির কারণেই স্কুলগামী শিক্ষার্থীরা স্কুলে আসতে চাচ্ছে না। যারফলে, তুলনামূলকভাবে শিক্ষার্থীর উপস্থিতি সংখ্যা একটু কম।
বর্তমানে সিংহভাগ অর্থ আসে পোশাক শিল্প থেকে। অবরোধের কারণে পোশাক শিল্পে ধ্বস নামতে শুরু করেছে। একদিকে সময় মত উৎপাদিত মাল শিপমেন্ট না দিতে না পারায় অতিরিক্ত টাকা ব্যায় করে এয়ারযোগে মাল পাঠাতে হচ্ছে। অন্যদিকে বহির্বিশ্ব বায়াররা এ দেশ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন। এ ব্যাপারে আশুলিয়াস্থ বাইপাইল এলাকার হ্যানারো ফ্যাশন্স লিমিটেডের জেনারেল ম্যানেজার (কবি ও গীতিকার-বিটিভি) নুর-এ-আলম জানান, ভিয়েতনাম ও চায়না এই দেশ থেকে বায়াররা বাংলাদেশে কাজ দিলে ১৫ দিন পর্যন্ত মাল শিপমেন্টের লিফট টাইম বেঁধে দেন। লাগাতর অবরোধ আর হরতালের কারণে সময় মত মাল শিপমেন্ট দিতে না পারায় একদিকে তারা এ দেশ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন। অনেক সময় এয়ারযোগে মাল শিপমেন্ট দিতে হচ্ছে। ফলে মালিকদের অতিরিক্ত টাকা গুনতে হচ্ছে। অন্যদিকে শ্রমিকদের মনে ভীত সঞ্চয় নিয়ে কারখানায় কাজ করছে এবং অনেক শ্রমিকদেরকে কারখানায় আসতে লেট হচ্ছে। যারফলে প্রডাকশনেও ব্যাঘাত ঘটছে। এতে করে পোশাক শিল্পে এক প্রকার ধ্বসে পরিণত হয়েছে। অবশেষে নিজেদের প্রয়োজনে রাজনীতিবিদের এ বিষয়টা অনুধাবন করতে হবে।
আশুলিয়াস্থ বাধাইল এলাকার মীম জেনারেল ষ্টোরের মালিক কামাল হোসেন জানান, আগে আমার এই ব্যাবসা প্রতিষ্ঠানে প্রতিদিন ১ লক্ষ টাকা ক্রয়-বিক্রয় হতো। এখন এই অবরোধের কারণে প্রতিদিন ২৫ হাজার টাকা ক্রয়-বিক্রয় হচ্ছে।  এ বিষয়ের প্রতি সুদৃষ্টি দেওয়ার জন্য তিনি রাজনীতিবিদদের প্রতি আহ্বান জানান।

Continue Reading
Click to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *