সরকারকে খালেদার হুশিয়ারি- আমাকে বন্দী করার আগে পালানোর পথ খুঁজুন
ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি:
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি ও গ্রেফতারের ষড়যন্ত্র করছে অভিযোগ করে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বলেছেন, “আমাকে বন্দী করার আগে নিজের পথ পরিষ্কার করে রাখুন। পাসপোর্ট-টাসপোর্ট লাগিয়ে রাখুন, যেন তাড়াতাড়ি যাওয়া যায়। নয়তো জনগণ রাস্তা বন্ধ করে রাখবে। পালানোর পথ পাবেন না।” গতকাল ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নিয়াজ মোহাম্মদ উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে ২০ দলের জনসভায় এ কথা বলেন। জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট শফিকুল ইসলামের সভাপতিত্বে বিএনপি ও জোটের কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতারা বক্তব্য দেন। বিকেল সাড়ে চারটার দিকে খালেদা জিয়া সড়কপথে ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌঁছান। এর আগে বৈরি আবহাওয়া উপেক্ষা করে আশপাশের এলাকা থেকে জোটের নেতাকর্মীরা সভাস্থলে উপস্থিত হন।
প্রায় পৌনে এক ঘণ্টার বক্তব্যে খালেদা জিয়া আওয়ামী লীগের নানা কর্মকাণ্ডের সমালোচনা করেন। বিশেষ করে সংসদে সম্প্রচার নীতিমালা ও অভিসংশন আইনের কড়া সমালোচনা করেন। পাশাপাশি ঈদের পরে সরকার বিরোধী আন্দোলনে নেতাকর্মীদের অংশ নেয়ার আহ্বান জানান তিনি। বর্তমান সরকারকে অবৈধ আখ্যায়িত করে খালেদা জিয়া বলেন, “আপনাদের কাছে জানতে চাই, দেশে কোনো নির্বাচিত সরকার আছে? নাই। যারা ক্ষমতায় আছে তারা অবৈধ। এরা অবৈধ সরকার হয়ে কীভাবে সংসদে বসে লম্বা লম্বা কথা বলেন। আবার আইন পাস করেন। এরা সংবিধানের কথা বলে আর নিজেরাই সংবিধান লঙ্ঘন করে চলছেন।” তিনি বলেন, “আওয়ামী লীগের লোকেরা একের পর এক অন্যায় করছে। ছাত্রলীগ-যুবলীগকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না। তারা সন্ত্রাস করছে, খাল-বিল-নদীনালা দখল করছে। অথচ বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দেয়া হচ্ছে।” সরকার খুনি মন্তব্য করে খালেদা বলেন, “বিডিআরের ৫৭ জন অফিসারকে হত্যা করা হয়েছে, তার সুষ্ঠু তদন্ত হয়নি। তখন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী সুদাসদন থেকে হেয়ার রোডের বাড়ি কেন পাল্টেছিলেন, দেশের মানুষ তা বোঝে।” হেফাজতে ইসলামের আলেম ওলামা ও ইয়াতিম শিশুদের ওপর হামলা করা হয়েছে। অনেক আলেমকে হত্যা করা হয়েছে। অনেকে বডি গুম করা হয়েছে। কোরআন শরীফ পুড়িয়েছে। কোনো মুসলমান কোরআন পোড়াতে পারে না। আওয়ামী লীগ বেঈমান, মোনাফেক। এদের কাছে টাকা আর ক্ষমতা হলো আসল। যাদের হাতে এতো মানুষের রক্ত ঝড়েছে তারা অবৈধ ও খুনি সরকার। তাদের ক্ষমতায় থাকার অধিকার নেই।” আগামী দিনে আওয়ামী লীগ ভোট চাইতে গেলে এসব বিষয় মনে রাখতে জনগনের প্রতি তাগিদ দেন তিনি।
খালেদা জিয়া বলেন, “বিচারপতিদের ভয়ে রেখে রায় নিজেদের পক্ষে নেয়ার জন্য আওয়ামী লীগ অবৈধ সংসদের মাধ্যমে অভিসংশন আইন পাশ করেছে। বিচারবিভাগ এমনিতেই স্বাধীন নয়, তারা স্বাধীনভাবে রায় দিতে পারছেন না। অভিসংশন আইনের মাধ্যমে তাদের আরো হাত-পা বেঁধে ফেলা হবে।” তিনি বলেন, “আওয়ামী লীগ সংবিধানের কথা বলে অথচ নিজেরাই সংবিধান লঙ্গন করে চলছেন।” এ সময় তিনি নারায়ণগঞ্জের ঘটনা উল্লেখ করে বলেন, “সাত খুনের ঘটনা শেখ হাসিনা জানতেন। তার যোগসাজস রয়েছে এবং র্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক জিয়া জড়িত।” বিএনপি চেয়ারপারসন প্রধানমন্ত্রীকে চ্যালেঞ্জ দিয়ে বলেন, “হাসিনা, আমরা গ্রেফতারের ভয় পাই না।”
এর আগে বিকেল ৪টা ৪৩ মিনিটে মঞ্চে উপস্থিত হয়ে নিজের আসন গ্রহণ করেন খালেদা জিয়া। বক্তব্য রাখা শুরু করেন বিকেল সোয়া ৫টায়। প্রায় ৪৫ মিনিট বক্তব্য রাখেন তিনি। জনসভায় সভাপতিত্ব করেন জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক ও পৌর বিএনপির সভাপতি অ্যাডভোকেট শফিকুল ইসলাম। খালেদার আগমন উপলক্ষ্যে সাড়া পড়ে যায় ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিএনপি ও এর অঙ্গ সংগঠনসহ স্থানীয় ২০ দলীয় জোটের নেতাকর্মীদের মাঝে। এ সময় কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে ওঠে সমাবেশের মূল ভেন্যু নিয়াজ মোহাম্মদ উচ্চ বিদ্যালয় প্রঙ্গণ এবং এর আশপাশের এলাকা। খালেদার আগমন উপলক্ষ্যে সকাল থেকেই ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিভিন্ন উপজেলা এবং আশপাশের জেলা থেকে খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে আসেন নেতাকর্মীরা। সমাবেশস্থলের আশপাশের সড়ক ও অলি-গলিতে তোড়ন, ব্যানার, ফেস্টুন ও বেলুন উড়িয়ে খালেদা জিয়ার আগমনকে স্বাগত জানান নেতাকর্মীরা। এছাড়া ঢাকার সায়েদাবাদ থেকে রূপগঞ্জ পর্যন্ত খালেদা জিয়ার যাত্রাপথে প্রিয় নেত্রীকে স্বাগত জানাতে মহাসড়কের দুই ধারে রং-বেরংয়ের ব্যানার ও ফেস্টুন নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন হাজার হাজার নেতাকর্মী। ¯ে¬াগানে-¯ে¬াগানে ও ফুলের পাপড়ি ছিটিয়ে তারা স্বাগত জানান খালেদা জিয়াকে। সন্ধ্যা ছয়টায় জনসভা শেষে সার্কিট হাউজে বিশ্রাম নেন খালেদা জিয়া। পরে সন্ধ্যা ৭টায় ঢাকার উদ্দেশে রওনা হন তিনি।