Connecting You with the Truth

শাবনূর চোখে সালমান শাহ

Eidin_Seidin_Video_Song_Shopner_Thikana_Movie
বিনোদন ডেস্ক:
১৯৯৩ সালে ‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’ সিনেমার মধ্য দিয়ে ঢাকাই চলচ্চিত্রে অভিষেক হয় সালমান শাহর। চলচ্চিত্রের সাথে তিনি জড়িত ছিলেন মাত্র চার বছর। এই অল্প সময়ের মধ্যেই তিনি মোট ২৭টি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন। সবগুলোই ছবিই ছিল ব্যবসাসফল। কিন্তু হুট করেই সবাইকে ছেড়ে চলে যান তিনি। ১৯৯৬ সালের এই দিনে তথা ৬ সেপ্টেম্বর অকালে মৃত্যুবরণ করেন সালমান শাহ। সালমান শাহ অভিনীত সিনেমার অধিকাংশ ছবিরই নায়িকা ছিলেন শাবনূর। বর্তমানে সপরিবারে অস্ট্রেলিয়ায় অবস্থান করছেন তিনি। সালমান শাহকে নিয়ে গতকাল শুক্রবার বাংলাদেশের একটি গণমাধ্যমকে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন শাবনূর। সাক্ষাৎকারটি ঢাকা টাইমস এর পাঠকদের জন্য এখানে তুলে ধরা হল…

সালমানের চোখে আমি…
সালমান শাহ আর আমাকে নিয়ে অনেকে অনেক ধরনের কথাই বলেছেন। তাদের উদ্দেশে বলতে চাই, এসবের কোনোটিই সত্য নয়। সালমানের
কোনো বোন ছিল না। তাই সে আমাকে তাঁর ছোট বোন হিসেবেই দেখত। আমাকে সে পিচ্চি বলে ডাকত। সালমানের মা-বাবাও আমাকে খুবই
আদর করতেন। সালমানের কারণে তারা আমাকে তাদের মেয়ে হিসেবেই দেখতেন।

আমার চোখে সালমান…
সালমান যেহেতু আমাকে ছোট বোনের মতো দেখত আমিও তাঁকে সেভাবেই সম্মান করতাম। তবে আমাদের মধ্যে কিন্তু বন্ধুত্বপূর্ণ একটা সম্পর্কও
ছিল। সালমানের বউ সামিরাও কিন্তু আমার ঘনিষ্ঠ বন্ধু। সালমান নাচ একটু কম পারত। সে তুলনায় আমি নাচে বেশি পারদর্শী ছিলাম। সালমান
আমাকে প্রায়ই বলত, আমাকে একটু নাচ দেখিয়ে দে তো। আমিও আগ্রহ নিয়ে কাজটা করতাম।

প্রথম দেখা…
সালমানকে প্রথম দেখি এফডিসিতে। মৌসুমী আপুর সঙ্গে শ্যুটিং করছিল। আসা-যাওয়ার মধ্যেও দেখা হত। তবে খুব একটা কথা হতো না। তখন শুনেছি, ফিল্মে সালমান শাহ নামে নতুন একজন হিরো এসেছে। আনুষ্ঠানিক পরিচয় ‘তুমি আমার’ ছবিতে অভিনয় করার সময়। তখন কাজের কারণে বন্ধুত্ব হয়। আমাদের প্রথম ছবি ‘তুমি আমার’ মুক্তি পাওয়ার পর সুপারহিট হয়।

স্মৃতিতে সালমান…
সালমানের কথা এখন অনেক মনে পড়ে। সালমান যদি বেঁচে থাকতো তাহলে সে কী হত, তা শুধু সে নিজেই জানে। আমি মনে করি, কলকাতার উত্তম কুমার আর সুচিত্রা সেনের জুটিটা যেমন জনপ্রিয়তা পেয়েছিল আমাদের দুজনকেও সবাই সেভাবেই গ্রহণ করত। বাংলা চলচ্চিত্রের অবস্থাও এখনকার মতো দুর্দশাগ্রস্ত হতো না।

সালমান-শাবনূর প্রেমের গুঞ্জন…
এটা একেবারে সত্যি কথা, সালমানকে আমি ভাই ছাড়া আর অন্য কোনও চোখে দেখতাম না। সালমানের মৃত্যুর পর কিছু লোকজন আমাকে জড়িয়ে ব্যবসা করতে চেয়েছে। কিছু সাংবাদিকও আমাদের সম্পর্ক নিয়ে নানা ধরনের মুখরোচক গল্প ছেপেছেন। এটা করে কী লাভ হয়েছে আমি জানি না। আমি আমার ক্যারিয়ারটা অনেক কষ্ট করে তৈরি করেছি। তিল তিল করে গড়ে তুলেছি। কিছু সংখ্যক লোক গুজব ছড়িয়ে অহেতুক আনন্দ পাওয়ার চেষ্টা করেছে।

যেমন দেখেছি সালমানকে…
সালমান অনেক বড় মনের মানুষ। বয়সে বড় সবাইকে সে যথেষ্ট সম্মান করত। তার মধ্যে কোনও অহংকার ছিল না। অনেক বেশি ভালো ছিল। সহশিল্পীদের সবার প্রতি খুব আন্তরিক আর কাজ পাগল একটা ছেলে ছিল। আমাদের দুজনের বোঝাপড়াটা ছিল চমৎকার। বলতে পারেন- আমরা একে অন্যের চোখের ইশারা বুঝতে পারতাম।

সালমানের স্ত্রী সামিরার সঙ্গে স্মৃতি…
শ্যুটিংয়ে সব সময় সালমানের বউ সামিরা সঙ্গে থাকত। সামিরা আমি ও সালমান খুবই ঘনিষ্ঠ ছিলাম। এটা দেখে অনেকে অনেক কথা বলেছে। কিন্তু সামিরা সত্যিকার অর্থেই আমার ভালো বন্ধু ছিল। আমরা একসঙ্গে কত অসাধারণ সময় কাটিয়েছি তার কোনো হিসেব নাই। এমনও সময় গেছে, শ্যুটিংয়ের সময় সামিরা আমাকে চুঁড়ি পরিয়ে দিয়েছে। কোন পোশাকে আমাকে ভালো মানাবে সেটাও প্রায়ই সে বলে দিত। কানের দুলগুলো ম্যাচিং করে পরিয়ে দিত। আমাদের মধ্যে কোনওদিন মনোমালিন্য হয়নি।

সালমানের মৃত্যু সংবাদ জানার পর…
সালমানের মৃত্যু সংবাদটা যখন পাই তখন আমি বাসায় ছিলাম। হঠাৎ করে কে যেন ফোন করে জানায় সালমান শাহ মারা গেছে। আমি উল্টো ধমক দিয়ে বলি কী বলে এসব! আমার ছোট বোন বাইরে গিয়ে সালমানের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত হয়ে আসে। আমি তখন পুরোপুরি হতবাক হয়ে যাই। এরপর এফডিসিতে সালমানকে দেখতে যাই।

সালমানকে আবার ফিরে পেলে যা জানতে চাইতাম…
আমার সঙ্গে যদি কোনওদিন দেখা হয় তখন সালমানকে জিজ্ঞেস করব, সালমান তুমি কেন মরে গেলে। তোমার কী কষ্ট ছিল। তুমি কীসের দুঃখে মরে গেলে। তোমার এতোকিছু থাকা সত্ত্বেও কেন তুমি মরে গেলে। তোমারতো কোনো কিছুরই অভাব ছিল না। এসব আমার খুব জানার ইচ্ছা। যদি কখনো সালমানের দেখা পাই তাহলে আমি তাঁকে এই কথাগুলো জিজ্ঞেস করব।

Comments
Loading...