স্বাধীনতার ৪৫ বছরে ও স্বীকৃতি মেলেনি নগরকান্দার মুক্তিযোদ্ধা আঃ সালামের

ফরিদপুর , নগরকান্দা প্রতিনিধি ঃ স্বাধীনতার ৪৫ বছর অতিবিাহিত হলেও মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি মেলেনি ৭১ এর রনাঙ্গনে জীবন বাজি রেখে স্বাধিনতা সংগ্রামে অংশগ্রহন করা এক অকতোভয় বীর মুক্তিযোদ্ধা আঃ সালাম শরীফের। ফরিদপুর জেলার নগরকান্দা উপজেলার শশা গ্রামের মরহুম ইয়াসিন শরীফের ছেলে আঃ ছালাম শরীফ মহান মুক্তিযুদ্ধে সফল একজন যোদ্ধা হিসেবে বিজয়ী হলেও আজ তিনি জীবন যুদ্ধে এক পরাজিত সৈনিক। এই প্রতিবেদক সহ কয়েকজন সাংবাদিক মঙ্গলবার মোটর সাইকেলেসংবাদ সংগ্রহে যাবার পথে নগরকান্দা-ফরিদপুর সড়কের শশার ব্রীজের উত্তর পাশে একটি মোটর সাইকেলের প্লাগে ময়লা জমায় তা পরিস্কার করার সময় ৭০ বছরের বৃদ্ধ মুক্তিযোদ্ধা আঃ সালাম কোদাল হাতে অন্যর জমিতে কামলা দিয়ে ফিরছিলেন। সাংবাদিক পরিচয় পাওয়ার সাথে সাথে তিনি বললেন আমার কিছু কথা আছে । তিনি কান্না জড়িত কন্ঠে বললেন আমি ৭১ এর মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহন করে জীবনবাজি রেখে যুদ্ধ করেছি অথচ মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তালিকায় আমার নাম নেই। এক পর্যায়ে একটু দাড়ান বলে দৌড়ে নিজের বাড়ীতে গিয়ে দুটি জরাজীর্ন সার্টিফিকেট নিয়ে এসে হাতে দিলেন। দুটি সার্টিফিকেটের একটি যুদ্ধের পরে মুক্তিযোদ্ধা আঃ সালাম অস্ত্র জমা দিয়েছে সেই সনদ এবং আর একটি মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক জেনারেল আতাউল গনি ওসমানীর সাক্ষর করা মুক্তিযুদ্ধের সার্টিফিকেট।
১৯৭১ এ টগবগে যুবক ছালাম এখন বয়সের ভারে কাবু হয়ে গেছেন । তিন ছেলে এবং দুই মেয়ের জনক হলেও ছেলেরা বিয়ে করে আলাদা থাকেন এবং দুই মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন। এই বৃদ্ধ বয়সে অন্যর জমিতে কামলা দিয়ে সংসার চালায়। নগরকান্দায় অনেক অমুক্তিযোদ্ধা বিভিন্ন কৌশলে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তালিকাভুক্ত হলেও এই বীর মুক্তিযোদ্ধা যার অস্ত্র জমা দেয়ার সনদ রয়েছে ,জেনারেল আতাউল গনী ওসমানীর সাক্ষরিত সনদ রয়েছে সেই মুক্তিযোদ্ধা কেন তালিকাভুক্ত হয় নি এই প্রশ্ন নগরকান্দার সচেতন মহলের। আপনি কেন এতদিন তালিকাভুক্ত হতে পারেন নি সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের উত্তরে বলেন , আমার কাছে টাকা চেয়েছিল আমি গরীব মানুষ সংসার চালাতেই হিমশিম খাচ্ছি টাকা দিব কিভাবে তাছাড়া বঙ্গবন্ধুর ডাকে সাড়া দিয়ে জীবনবাজি রেখে যুদ্ধ করে স্বাধীনতা এনেছি আর সেই স্বাধীন দেশে আমি কেন টাকা দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের তালিকায় নাম দিব ?
মুক্তিযোদ্ধা আঃ সালাম শরীফ আক্ষেপ করে বলেন, “আমি মুক্তিযদ্ধে জীবনবাজি রেখে যুদ্ধ করেছি মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহনের প্রয়োজনীয় কাগজপত্র আমার নিকট থাকা সত্বেও আজ পর্যন্ত আমাকে দেয়া হয় নি মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি। অথচ যারা মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহন করেনি যাদের কোন কাগজপত্র নেই এমন অনেকেই তালিকাভুক্ত হয়ে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে সকল সুযোগ সুবিধা পাচ্ছেন। আমি মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তালিকাভুক্ত হতে অনলাইনে আবেদন করেছি এবার আমি শতভাগ আশাবাদি যে এইবার তালিকাভুক্ত হতে পারব কারন যেই মহান নেতার ডাকে সাড়া দিয়ে মুক্তিযুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়েছিলাম সেই মহান নেতার মেয়ে জননেত্রী শেখ হাসিনা এখন দেশের প্রধান মন্ত্রী ।তাছাড়া আমাদের সংসদ সদস্য মাননীয় সংসদ উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরীও মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক। আমাদের ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক বেগম উম্মে সালমা তানজিয়া একজন বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তান।
আঃ ছালাম শরীফের মত একজন প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা কেন তালিকাভুক্ত হয় নি এই প্রশ্নের উত্তরে নগরকান্দা উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডের সাবেক কমান্ডার লিয়াকত আলী লস্কর বলেন আঃ ছালাম একজন প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা কিন্তু তার প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ছোট ভাই বীর মুক্তিযোদ্ধা মরহুম আবুল কালাম শরীফের নিকট থাকায় এবং সময়মত জমা না দেয়ায় তালিকাভুক্ত হয় নি। নগরকান্দা উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মোঃ ফজলুল হক বলেন, আঃ সালামের মত যে সকল প্রকৃতি মুক্তিযোদ্ধা তালিকাভুক্ত হয় নি তাদেরকে খুব শীঘ্রই যাচাই বাছাইয়ের মাধ্যমে তালিকাভুক্ত করা হবে। নগরকান্দা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোবাশ্বের হাসান বলেন, কোন প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা যদি তালিকাভুক্ত না হয়ে থাকেন তাহলে যাচাই বাছাইয়ের মাধ্যমে তাদেরকে তালিকাভুক্ত করা হবে।

 

 

 

Comments
Loading...