স্বাস্থ্যখাতের জন্য ট্রাস্টফান্ড গঠন করবে সরকার : প্রধানমন্ত্রী
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, সরকার পরিবর্তন হলে কমিউনিটিক্লিনিকগুলো যাতে বন্ধ হয়ে না যায় এজন্য তাঁর সরকার শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্ট তহবিলের ন্যায় কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোর জন্য একটি ট্রাস্টফান্ড গঠন করার উদ্যোগ নিয়েছে। শেখ হাসিনা বলেন, তাঁর সরকার শিক্ষাখাতে সহায়তা দিতে এবং স্নাতক পর্যায় পর্যন্ত বৃত্তি প্রদানের জন্য প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্ট ফান্ড গঠন করেছে।
তিনি বলেন, ‘কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো যাতে ভালভাবে চলতে পারে এবং জনগণের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে পারে এজন্য আমরা একইভাবে একটি ট্রাস্ট ফান্ড গঠন করবো। এটি জনগণের মৌলিক অধিকারের মাধ্যমে দেশ উন্নত হবে ও দারিদ্র্যের অভিশাপ থেকে মুক্তি যাবে।’
প্রধানমন্ত্রী আজ সকালে নগরীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে ‘শ্রেষ্ঠ কমিউনিটি ক্লিনিক-২০১৪’ পুরস্কার প্রদান এবং ‘ই-লার্নিং কর্যক্রম’ উদ্বোধন অনুষ্ঠানের ভাষণে একথা বলেন।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম, স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী জাহিদ মালেক, প্রধানমন্ত্রীর স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ বিষয়ক সাবেক উপদেষ্টা প্রফেসর ডা. সৈয়দ মোদাচ্ছের আলী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। স্বাস্থ্য সচিব সৈয়দ মঞ্জুরুল ইসলাম অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বাংলাদেশ প্রতিনিধি ড. এন পরানিথরান সম্মানিত অতিথি হিসেবে অনুষ্ঠানে যোগ দেন এবং রিভিটালাইজেশন অব কমিউনিটি হেলথ কেয়ার ইনিসিয়েটিভ ইন বাংলাদেশ ড. মাকদুমা নার্গিস স্বাগত বক্তব্য রাখেন। এর আগে প্রধানমন্ত্রী ৭টি বিভাগের নির্বাচিত সেরা কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোর মাঝে এ্যাওয়ার্ড বিতরণ করেন।
স্বাস্থ্যখাতে ট্রাস্ট ফান্ড গঠনে তাঁর পরিকল্পনা সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কমিউনিটি ক্লিনিকের জন্য একটি হিসাব থাকবে যা স্থানীয় লোকরা পরিচালনা করবে। ‘সম্পদশালী ব্যক্তি, বিভিন্ন সংস্থা এবং ক্লিনিক থেকে যারা সেবা গ্রহণ করবেন তাদের অনুদান গ্রহণ করা হবে।’
এ ব্যাপারে আওয়ামী লীগ সরকারের প্রতিষ্ঠিত কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো বিএনপি-জামায়াত সরকারের বন্ধ করে দেয়ার তিক্ত অভিজ্ঞতা বর্ণনা করে তিনি বলেন, এখন থেকে স্থানীয় লোকরা কমিউনিটি ক্লিনিক চালাবেন। ‘এভাবে কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো স্থায়ী ভিত্তি পাবে এবং অর্থনৈতিকভাবে এগুলো স্বাবলম্বী হয়ে উঠবে।’
এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রতিটি কাজে সরকারের ওপর নির্ভরশীলতা হ্রাসে জনগণকে মানসিকভাবে তৈরি হতে হবে। ‘প্রতিটি কাজে তাদের সরকারের ওপর নির্ভরশীলতার অভ্যাস থেকে বেরিয়ে আসতে হবে, বরং তাদের ভাবতে হবে, আমরা যা করতে চাই আমরা তা করতে পারি।’
শেখ হাসিনা কমিউনিটি ক্লিনিককে জনগণের ক্ষমতায়তনের একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, স্থানীয় জনগণ এই ক্লিনিকগুলো চালাচ্ছে এবং দেখ-ভাল করছে।
তিনি বলেন, সরকার ওষুধ ও জনবল সরবরাহ করছে। কমিউনিটির সংস্কার, রক্ষণাবেক্ষণ এবং উন্নয়ন করছে। প্রধানমন্ত্রী এ ক্ষেত্রে কেউ যেনো বিনামূল্যে জনগণকে দেয়া স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত করে ক্লিনিকের ওষুধ বাইরে বিক্রি করতে না পারে এ জন্য সতর্ক থাকতে জনগণের প্রতি আহবান জানান।
শেখ হাসিনা কমিউনিটি ক্লিনিকের ওপর গুরুত্বারোপ করে বলেন, এ সকল ক্লিনিকে সহজলভ্য ওষুধের তালিকাও টানিয়ে রাখতে হবে। তিনি কমিউনিটি ক্লিনিকের উন্নতির জন্য এগিয়ে আসতে বিভিন্ন দাতা সংস্থা, এনজিও এবং সমাজের স্বচ্ছল লোকদের এগিয়ে আসার আহবান জানান।
শেখ হাসিনা বলেন, তাঁর সরকার ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় আসার পর সাধারণ জনগণের দোরগোড়ায় প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দিতে সারাদেশে কমিউনিটি ক্লিনিক প্রতিষ্ঠার কাজ শুরু করে।
তিনি বলেন, তাঁর সরকার ১৯৯৬-২০০১ সাল পর্যন্ত মেয়াদে ১৮ হাজার ক্লিনিক প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে কাজ শুরু করে এবং সে সময়ে ১০ হাজার ৭২৩টি ক্লিনিক চালু করা হয়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপি-জামায়াত সরকার ২০০১ সালে ক্ষমতায় এসে রাজনৈতিক হীন উদ্দেশ্যে সকল ক্লিনিক বন্ধ করে দেয়। এতে দেশের মানুষ প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হয়।
শেখ হাসিনা বলেন, ২০০৯ সালে পুনরায় ক্ষমতায় এসে তাঁর সরকার বন্ধ কমিনউনিটি ক্লিনিকগুলো পুনরায় চালু করার উদ্যোগ নেয়। ১৩ হাজার ৫শ’রও বেশি ক্লিনিক প্রতিষ্ঠা করা হয় এবং এরমধ্যে ১২ হাজা ৬টিতে স্বাস্থ্যসেবা প্রদান করা হচ্ছে।
শেখ হাসিনা বলেন, কমিউনিটি ক্লিনিক থেকে বিনামূল্যে ৩০ ধরনের জরুরি ওষুধ সরবরাহ করা হচ্ছে এবং এ জন্য প্রতিটি ক্লিনিকের জন্য বছরে ১ লাখ ১০ হাজার টাকা বরাদ্দ রয়েছে। তিনি বলেন, এ সকল কমিউনিটি ক্লিনিক থেকে স্বাস্থ্যসেবা গ্রহণকারীদের ৮০ ভাগই নারী ও শিশু।
প্রধানমন্ত্রী স্বাস্থ্য খাতের উন্নয়নে তাঁর সরকার গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপের উল্লেখ করে বলেন, তাঁর সরকারই দেশে প্রথম মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেছে। চট্টগ্রাম ও রাজশাহীতে আরো দুটি মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার কাজ চলছে। তিনি বলেন, মেডিকেল শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষার জন্য আমরা প্রতিটি বিভাগীয় সদরে একটি করে মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করবো। প্রধানমন্ত্রী বলেন, তবে যেখানে সেখানে মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠা করা হবে না। যেখানে প্রয়োজন, কেবল সেখানেই করা হবে।
শেখ হাসিনা কমিনিউটি স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারীদের জন্য ই-লার্নিং প্রোগ্রাম সম্পর্কে বলেন, এই কর্মসূচি কমিউনিটি স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারীদের পেশাগত দক্ষতা উন্নয়ন করবে। তারা নতুন নতুন টেকনিক শিখতে পারবে এবং উন্নত স্বাস্থ্যসেবা প্রদান করবে। প্রধানমন্ত্রী কমিউনিটি ক্লিনিক এ্যাওয়ার্ড বিজয়ীদের অভিনন্দন জানিয়ে ক্লিনিকে সেবার মান বৃদ্ধিতে মনোনিবেশ করার আহ্বান জানান।