Connecting You with the Truth

হারিয়ে যাচ্ছে ঐতিহ্যবাহী মাছ ধরা ‘চারো’!

 শাহজাদপুর, সিরাজগঞ্জ:
বর্তমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি নির্ভর সভ্যতার প্রস্তর প্রাচীর ডিঙ্গিয়ে অন্তুঃপুরে প্রবেশ করতে না পেরে আবহমান গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী অনেক কিছুই কালাবর্তনে পুরোপুরি বিলুপ্ত হয়ে গেছে। কিছু জিনিস অতি কষ্টে তাদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখলেও গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যের ধারক বাহক অনেক কিছুই হারিয়ে গেছে দৃশ্যপট থেকে। তেমনি মান্ধাতা আমল থেকে গ্রাম বাংলার প্রায় সকল এলাকাতেই মাছ ধরার কাজে বহুল ব্যবহৃত হচ্ছে ‘চারো’ নামক একটি যন্ত্র। এর অনন্য নির্মাণশৈলী ও অব্যর্থ কার্যোদ্ধার একে বাংলার সকল এলাকাতেই দিয়েছে এক অনন্য পরিচিতি। কিন্তু অতীব দুঃখের বিষয় হচ্ছে এই চারো এখন প্রায় বিলুপ্তির পথে, সাথে সাথে বিলুপ্ত হতে চলেছে এর সাথে সম্পৃক্ত চারো শিল্পের পল্লী শিল্পীরা। অনুসন্ধানে জানা গেছে, ‘চারো’ তৈরির প্রধান উপকরণ বাঁশ, বেত ও নাইলনের দড়ির দাম অস্বাভাবিক বৃদ্ধি পাওয়ায় প্রতিটি ‘চারো’ তৈরিতে ব্যয়ও বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে মৎস্য শিকারীরা উচ্চমূল্যের এসব ‘চারো’ না কিনে প্লাস্টিক সুতার তৈরি কারেন্ট জালের প্রতি আজকাল বেশি আকৃষ্ট হয়ে পড়েছে। বিভিন্ন এলাকার ‘চারো’ তৈরির কারিগররা তাদের কাক্সিক্ষত সংখ্যক বিক্রয়ের অভাবে ‘চারো’ তৈরির পেশা ছেড়ে দিতে বাধ্য হচ্ছে। আর এ কারণে গ্রাম বাংলা থেকে মাছ ধরার চারো ক্রমশ দুর্লভ হয়ে উঠছে। শাহজাদপুর উপজেলার চিথুলিয়া গ্রামের এক মাছ শিকারী আসান সরকার। তিনি জানান, আগের চেয়ে এখন ‘চারো’র দাম দুই তিন গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। ১শ’ থেকে ২শ’ টাকার ‘চারো’ ৪শ’ থেকে ৫শ’ টাকায় কিনতে হচ্ছে। ‘চারো’র উচ্চমূল্যের কারণে তারা এ দিয়ে মাছ শিকারে আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে। পক্ষান্তরে আধুনিক যান্ত্রিক উপায়ে প্রস্তুতকৃত বিভিন্ন ধরনের অবৈধ কারেন্ট জাল ও বাদাইজাল, মশারিজালসহ বিভিন্ন ধরনের জালের ভারে ন্যুব্জ হয়ে পড়েছে দেশীয় পদ্ধতিতে তৈরি ‘চারো’র মত ঐতিহ্যবাহী ও শিল্পগুণ সম্পন্ন মাছ ধরার যন্ত্র।

Comments
Loading...