Connect with us

Highlights

৭ থেকে ১২ আগস্ট পর্যন্ত ৩২ লাখ মানুষ পাবেন করোনার টিকা

Published

on

স্টাফ রিপোর্টার:
আজ শনিবার থেকে সারাদেশে ভ্যাকসিনেশন ক্যাম্পেইন পরিচালনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। দেশজুড়ে করোনা ভ্যাকসিনেশন ক্যাম্পেইনের আওতায় প্রায় ৩২ লাখ মানুষকে টিকা দেওয়া হবে। গতকাল শুক্রবার রাজধানীর মহাখালীতে বাংলাদেশ কলেজ অব ফিজিশিয়ানস অ্যান্ড সার্জনসে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ডা. আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম।

ভ্যাকসিনেশনের আওতায় কতজনকে টিকা দেওয়া হবে- সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের উত্তরে ডা. এবিএম খুরশীদ আলম বলেন, ক্যাম্পেইনের আওতায় টিকা পাবেন ৩২ লাখ মানুষ। তারা যথাসময় টিকার দ্বিতীয় ডোজও পাবেন। দ্বিতীয় ডোজ রেখেই টিকা কার্যক্রম পরিচালিত হবে। সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ৭ আগস্ট থেকে শুরু হওয়া ক্যাম্পেইনের মাধ্যমে মূলত ২৫ বছর তদূর্ধ্ব জনগোষ্ঠী, পঞ্চাশোর্ধ জনগোষ্ঠী, নারী, শারীরিক প্রতিবন্ধী এবং দুর্গম ও প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষকে করোনার টিকার আওতায় নিয়ে আসব। সারাদেশের চার হাজার ৬০২টি ইউনিয়ন, এক হাজার ৫৪টি পৌরসভা, সিটি করপোরেশন এলাকার ৪৩৩টি জায়গায় ৪৮ হাজার ৪৫৯ জন স্বেচ্ছাসেবীর মাধ্যমে এই টিকাদান ক্যাম্পেইন করা হবে। ১২ আগস্ট পর্যন্ত এই ক্যাম্পেইন চলবে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বলেন, বর্তমানে সারাদেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণ আশঙ্কাজনক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাই নানা সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও আমরা দেশের সব জনগোষ্ঠীকে টিকার আওতায় নিয়ে আসতে চাই। বিশেষ করে বয়স্কদের ক্ষেত্রে আমরা বেশি গুরুত্ব দিচ্ছি। তিনি বলেন, গত ৭ ফেব্রুয়ারি থেকে কুর্মিটোলা হাসপাতালে টিকা কার্যক্রমের উদ্বোধন করা হয়। সেই থেকে এখন পর্যন্ত এক কোটি নয় হাজার ৯৫৩ জনকে প্রথম ডোজ এবং ৪৪ লাখ ১৬ হাজার ১৩১ জনকে দ্বিতীয় ডোজ দেয়া হয়েছে। এখন এই টিকা নেয়ার কার্যক্রম আরও দ্রুত করতে চাই। কোভিড-১৯ ভ্যাকসিনের বিষয়ে অনেকেই অনেক জায়গা থেকে নানা রকম কথা বলছেন উল্লেখ করে ডা. আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশিদ আলম বলেন, সেটার সবটুকুর দায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের না।

তিনি বলেন, আপনারা দেখেছেন নানান জায়গা থেকে নানান মন্তব্য এসেছে। নানান বিষয় এসেছে। আমরা সে ব্যাপারগুলোর বিষয়ে সজাগ আছি। আমরা চেষ্টা করবো ভবিষ্যতে যাতে এই ব্যাপারগুলোর পুনরাবৃত্তি না হয়। সংবাদ সম্মেলনে ৭ থেকে ১২ আগস্ট সারাদেশে টিকা ক্যাম্পেইন করে ৩২ লাখ মানুষকে করোনা ভাইরাস প্রতিরোধী টিকার প্রথম ডোজ দেওয়া হবে বলেও জানানো হয়েছে। ২৫ বছর বা এর বেশি বয়সী জনগোষ্ঠী এই টিকা পাবেন। তবে এ ক্ষেত্রে পঞ্চাশোর্ধ্ব ব্যক্তি, নারী ও শারীরিক প্রতিবন্ধী ব্যক্তি অগ্রাধিকার পাবেন। এ ছাড়া এবার দুর্গম ও প্রত্যন্ত এলাকার মানুষকে করোনার টিকা দেওয়া হবে বলেও জানিয়েছেন অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার মোহাম্মদ খুরশিদ আলম। টিকা নেওয়ার বয়সসীমা ১৮ থেকে কেন আবার ২৫ বছর করা হলো জানতে চাইলে তিনি বলেন, ১৮ বছর বয়সী অনেকের এনআইডি নেই। আমরা পর্যালোচনা করে দেখেছি, এই এনআইডি ছাড়া ১৮ বছর বয়সীদের টিকার আওতায় আনতে যাই, মাঠে যে বিশৃঙ্খলা তৈরি হবে সেটাকে আমরা সামাল দিতে পারবো না। সে জন্য অনেক আলোচনা করে আমরা ঠিক করেছি বয়সসীমা ২৫ বছর হবে। আমরা চিন্তা করেছিলাম, যদি আমরা ম্যাসিভ আকারে ক্যাম্পেইন না করতে পারি বা মানুষের মধ্যে উদ্দীপনা তৈরি করতে না পারি তাহলে সারা দেশে যেখানে আমাদের ৮০ শতাংশ মানুষকে টিকা দিতে হবে এত মানুষকে আমরা কীভাবে কাভার করবো? এটা পাইলট প্রজেক্ট বলা যেতে পারে। আমরা নিজেদের সক্ষমতা যাচাই করতে চাই। আমরা দেখতে চাই, আমাদের লোকেরা, প্রান্তিক পর্যায়ে এক দিনে কী পরিমাণ টিকা নিতে পারেন, বলেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক।

এদিকে ভ্যাকসিনেশন ক্যাম্পেইন পরিচালনার ক্ষেত্রে টিকাগ্রহণ ও টিকা নেয়ার পর করণীয় কী সে বিষয়ে নির্দেশনা দিয়েছে সরকার। নির্দেশনাগুলো হলো-

১. ৭ আগস্ট থেকে ১২ আগস্ট পর্যন্ত ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ে নির্ধারিত টিকাকেন্দ্রে সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত কোভিড-১৯ টিকা দেয়া হবে।
২. সিটি করপোরেশন ও পৌরসভা এলাকায়ও প্রতি ওয়ার্ডে ৭ থেকে ১২ আগস্ট পর্যন্ত টিকা দেয়া হবে।
৩. যাদের বয়স ১৮ বা তদূর্ধ্ব তাদের জাতীয় পরিচয়পত্রসহ নির্ধারিত টিকাকেন্দ্রে এসে ভ্যাকসিন গ্রহণ করার অনুরোধ করা হয়েছে।
৪. প্রথম দুই ঘণ্টা শুধু নারী ও ৫০ বছরের উর্ধ্বে সকল পুরুষকে টিকা দেয়া হবে।
৫. যারা ইতোমধ্যে অনলাইনে নিবন্ধন করেছেন তাদের নিবন্ধনের সময় উল্লিখিত টিকাকেন্দ্রে এসে টিকা গ্রহণ করার অনুরোধ করা হয়েছে।

কোভিড-১৯ টিকা নেয়ার পরে করণীয়-

১. টিকা নেয়ার পর টিকাকেন্দ্রে ৩০ মিনিট অপেক্ষা করুন।
২. টিকা নেয়ার পর যেকোনো রকম শারীরিক অসুবিধা হলে সাথে সাথে টিকাদানকর্মীকে খবর দিন।

প্রয়োজনে নিকটস্থ স্বাস্থ্যকেন্দ্রে যোগাযোগ করুন। মনে রাখবেন কোভিড-১৯ টিকা নেয়ার পরও জরুরি কাজে ঘরের বাইরে গেলে অবশ্যই সঠিকভাবে মাস্ক ব্যবহার করতে হবে। একে অপর হতে অন্তত ছয় ফুট শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখতে হবে। সাবান ও পানি দিয়ে ঘন ঘন ২০ সেকেন্ড ধরে দুই হাত ধুতে হবে। হাঁচি-কাশির সময় হাত/রুমাল দিয়ে নাকমুখ ঢেকে নিতে হবে।

এদিকে দেশে এ পর্যন্ত এসেছে ২ কোটি ৫৬ লাখ ৪৩ হাজার ৯২০ টিকা। ভারত, চীন, যুক্তরাষ্ট্র ও জাপান থেকে এসেছে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকা, সিনোফার্ম, মডার্না ও ফাইজারের টিকা। ভারত থেকে এসেছে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার ১ কোটি ৩ লাখ টিকা। চীন থেকে সিনোফার্মের ৮১ লাখ টিকা এসেছে। কোভ্যাক্সের আওতায় যুক্তরাষ্ট্র মডার্না ও ফাইজারের ৫৬ লাখ ৬২০ টি টিকা বাংলাদেশকে উপহার দিয়েছে। আর জাপান কোভ্যাক্সের আওতায় দিয়েছে ১৬ লাখ ৪৩ হাজার ৩০০ অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা।

ভারতের টিকা: ভারত থেকে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা এসেছে ১ কোটি ৩ লাখ। এর মধ্যে ভারতের উপহারের টিকা ৩৩ লাখ। আর ভারত থেকে কেনা টিকা এসেছে ৭০ লাখ। চলতি বছর ২৫ জানুয়ারি ভারত থেকে কেনা ৫০ লাখ টিকার প্রথম চালান আসে। আর দ্বিতীয় দফায় ২৩ ফেব্রুয়ারি ভারত থেকে কেনা টিকার দ্বিতীয় চালান আসে। মোট ৭০ লাখ কেনা টিকার চালান এসেছে ভারত থেকে। এরপর ভারত থেকে কেনা টিকার চালান আর আসেনি। এদিকে ভারত বাংলাদেশকে তিন দফায় ৩৩ লাখ টিকা উপহার দেয়। ভারত প্রথম দফায় চলতি বছর ২১ জানুয়ারি বাংলাদেশকে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার ২০ লাখ টিকা উপহার দেয়। দ্বিতীয় দফায় ২৬ মার্চ ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ঢাকা এসে ১২ লাখ টিকা উপহার দেন। আর তৃতীয় দফায় ভারতের সেনা প্রধান জেনারেল মনোজ মুকুন্দ নরভানে ৮ এপ্রিল ঢাকায় এসে এক লাখ টিকা উপহার দেন।

চীনা টিকা: চীন থেকে মোট ৮১ লাখ টিকা এসেছে। এর মধ্যে কেনা টিকা ৭০ লাখ। আর উপহারের টিকা ১১ লাখ। চীন থেকে প্রথম দফায় ১ জুলাই বাণিজ্যিকভাবে কেনা ২০ লাখ টিকা এসেছে। আর দ্বিতীয় দফায় ১৭ জুলাই আরো ২০ লাখ কেনা টিকা এসেছে। তৃতীয় দফায় ২৯ জুলাই চীন থেকে কেনা আরো ৩০ লাখ টিকা ঢাকায় আসে। এদিকে বাংলাদেশকে দুই দফায় ১১ লাখ টিকা উপহার দিয়েছে চীন। প্রথম দফায় গত ১২ মে চীন বাংলাদেশকে সিনোফার্মের ৫ লাখ ডোজ টিকা উপহার দেয়। দ্বিতীয় দফায় ৬ লাখ ডোজ টিকা উপহার দেয় চীন।

যুক্তরাষ্ট্রের টিকা: যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে মোট ৫৬ লাখ ৬২০ টি টিকা উপহার দিয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে মডার্নার ৫৫ লাখ আর ফাইজারের ১ লাখ ৬২০ টি টিকা। প্রথম দফায় ২ জুলাই যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে মডার্নার ২৫ লাখ টিকা উপহার দেয়। ১৯ জুলাই দ্বিতীয় দফায় যুক্তরাষ্ট্রের ৩০ লাখ টিকা ঢাকায় আসে। এছাড়াও ৩১ মে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে ১ লাখ ৬২০ টি ফাইজারের টিকা উপহার পাঠায়।

জাপানের টিকা: জাপান বাংলাদেশকে কোভ্যাক্সের আওতায় ৩০ লাখ টিকা উপহার দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে। এর মধ্যে দিয়েছে ১৬ লাখ ৪৩ হাজার ৩০০ টিকা। গত ২৪ জুলাই জাপান থেকে ২ লাখ ৪৫ হাজার ২০০ টিকার প্রথম চালান ঢাকায় আসে। গত ৩১ জুলাই ৭ লাখ ৮১ হাজার ৩২০ টিকার দ্বিতীয় চালান আসে। আর ৩ আগস্ট জাপান থেকে আসে ৬ লাখ ১৬ হাজার ৭৮০ টিকা। চলতি আগস্ট মাসের মধ্যেই জাপান থেকে বাকী টিকা ধাপে ধাপে আসবে বলে আশা করা হচ্ছে।

বিভিন্ন দেশের কাছ থেকে টিকা আনতে কূটনৈতিক তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছেন পররাষ্ট্র মন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন। তিনি টিকা সংকট কাটিয়ে উঠতে আশার কথাও শুনিয়েছেন। ড. মোমেন জানিয়েছেন, টিকা পেতে বিভিন্ন দেশের সঙ্গে আমরা আলোচনা অব্যাহত রেখেছি। যুক্তরাষ্ট্র, চীন, রাশিয়া ও ভারতের কাছ থেকে টিকা পেতে জোর তৎপরতা চলছে। অন্যান্য দেশের সঙ্গেও আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছি। যে দেশ থেকে টিকা পাবো, তাদের কাছ থেকে নেব। এরই মধ্যে চালু হচ্ছে টিকাদান কর্মসূচি।

Continue Reading
Click to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *