অধ্যাপক জাফর ইকবালের ওপর হামলা, হামলাকারী আটক
জনপ্রিয় লেখক, বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ অধ্যাপক ড. মুহম্মদ জাফর ইকবালের ওপর দেশীয় অস্ত্র নিয়ে হামলা চালিয়েছে এক যুবক । গতকাল শনিবার বিকেলে সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের মুক্তমঞ্চে ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিকস ইঞ্জিনিয়ারিং (ইইই) বিভাগের উৎসবের সমাপনী অনুষ্ঠানে বিরতির ফাঁকে বিকেল ৫টা ৪০ মিনিটে এক যুবক দেশীয় অস্ত্র নিয়ে ইইই বিভাগের প্রধান জাফর ইকবালের মাথার পেছন দিকে তিন-চারটি আঘাত করে।
হামলার পরপরই জাফর ইকবালকে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরে রাত সাড়ে ১০টার দিকে তাঁকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিমানবাহিনীর বিশেষ হেলিকপ্টারযোগে ঢাকায় সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) পাঠানো হয়। রাত ১২টার দিকে তাঁকে ঢাকা সিএমএইচে ভর্তি করা হয়েছে। সাড়ে ১২টার দিকে হাসপাতালে তাঁকে দেখতে যান পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) জাবেদ পাটোয়ারী।
আর ঘটনার সময়ই হামলাকারীকে আটক করে পিটুনি দেয় শিক্ষার্থীরা। পরে তাকে আটক করে চিকিৎসার ব্যবস্থা নেয় পুলিশ। তবে হামলার পরপরই এক যুবককে মোটরসাইকেলে পালিয়ে যেতে দেখেছে প্রত্যক্ষদর্শী শিক্ষার্থীরা। তাকে হামলাকারীর সহযোগী বলে সন্দেহ করা হচ্ছে।
আটক হামলাকারী বহিরাগত বলে জানা গেছে। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে ঢাকা থেকে পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিসিটিসি) ইউনিটের একটি দল সিলেটে যাচ্ছে।
ড. জাফর ইকবালের ওপর হামলার ঘটনায় দেশজুড়ে তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদের ঝড় বইছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই হামলার নিন্দা জানিয়ে দোষীদের খুঁজে বের করে আইনের আওতায় আনার নির্দেশ দিয়েছেন।
জাফর ইকবালকে ঢাকায় নিয়ে আসার আগে রাত সাড়ে ৯টায় ওসমানী হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ কে মাহবুবুল হক সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘ড. জাফর ইকবালের অপারেশন হয়েছে। তিনি আশঙ্কামুক্ত। উন্নত চিকিৎসার জন্য তাঁকে ঢাকার সিএমএইচে পাঠানো হচ্ছে।’
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্র জানায়, বিকেল ৩টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের মুক্তমঞ্চের সামনে প্রতিযোগিতা শুরু হয়। ড. জাফর ইকবাল অতিথিদের সারিতে বসে ছিলেন। বিকেল ৫টা ৪০ মিনিটে এক যুবক এসে পেছন দিক থেকে ছুরির মতো কিছু একটা দিয়ে জাফর ইকবালের মাথায় চারটি আঘাত করে। হামলাকারী যুবককে পুলিশ ও উপস্থিত শিক্ষার্থীরা মুহূর্তেই আটক করে ফেলে। এ সময় দ্রুত মোটরসাইকেলযোগে একজনকে ক্যাম্পাস ছেড়ে চলে যেতে দেখা যায় বলে শিক্ষার্থী সূত্রে জানা গেছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর জহির উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘মঞ্চের পেছন থেকে এসে এক ছেলে ছুরি মারে মাথার পেছন দিকে। সঙ্গে সঙ্গে পুলিশসহ অন্যরা তাকে আটক করে।’ কী কারণে জাফর ইকবালের ওপর এই হামলা হয়েছে, সে বিষয়ে তাত্ক্ষণিক কিছু জানা যায়নি বলে তিনি জানান।
জালালাবাদ থানার ওসি শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘ক্যাম্পাসে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবেলায় আমরা প্রস্তুত আছি।’
সন্ধ্যা ৭টা ৫৫ মিনিটে সিলেট সফররত শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ জাফর ইকবালকে দেখতে হাসপাতালে যান এবং দীর্ঘক্ষণ পাশে অবস্থান করেন। পরে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘এ ঘটনায় আমরা ক্ষুব্ধ। প্রধানমন্ত্রী বিষয়টি সরাসরি দেখছেন। তাঁর নির্দেশেই ওনাকে ঢাকায় নেওয়া হচ্ছে।’
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মুহম্মদ জাফর ইকবালের ওপর হামলার ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক। তিনি বলেছেন, যেকোনো শিক্ষকের ওপর হামলা শুধু নিন্দাজনক নয়, একটি ঘৃণ্য অপরাধ। তাই অপরাধীদের খুঁজে বের করে উপযুক্ত শাস্তি দেওয়া হবে।