আন্তর্জাতিক মাদকবিরোধী দিবস আজ
নিজস্ব প্রতিনিধি : আজ ২৬ জুন, আন্তর্জাতিক মাদকবিরোধী দিবস। মাদকসেবন, পরিবহণ, পাচার ও চোরাচালানের বিরুদ্ধে সচেতনতা সৃষ্টিতে প্রতি বছর বিশ্ব জুড়ে দিবসটি পালন করা হয়।
আন্তর্জাতিক মাদকবিরোধী দিবসে জাতিসংঘের সদস্য দেশগুলোতে সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে সচেতনতামূলক কর্মসূচি পালন করা হয়। শোভাযাত্রা, লিফলেট, হ্যান্ডবিল, পোস্টার, ক্রোড়পত্র এবং আলোচনা সভার মাধ্যমে এসব কর্মসূচি হয়ে থাকে। আজ বাংলাদেশেও মাদকের বিরুদ্ধে সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে নানা কর্মসূচি পালন করা হচ্ছে।
জাতিসংঘের তথ্যমতে, বিশ্বে মাদকসেবীর সংখ্যা বেড়ে চলেছে। এর সঙ্গে জড়িয়ে যাচ্ছে অপরাধ। আন্তর্জাতিক মাদক চোরাচালানের মুনাফায় সৃষ্টি হচ্ছে মাফিয়াদের। মাদক সমস্যা এখন তাই কোনো দেশের একক সমস্যা নয়। এর বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক উদ্যোগ গ্রহণ ও তা বাস্তবায়নে সুফল না এলে বিশ্ব জুড়ে মাদক সমস্যা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবে।
১৯৮৭ সালের ৭ ডিসেম্বর জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে ৪২/১১২ প্রস্তাবনা অনুযায়ী ২৬ জুনকে আন্তর্জাতিক মাদকবিরোধী দিবস হিসেবে ঘোষণা করা হয়। এরপর ১৯৮৮ সাল থেকে প্রতি বছর দিবসটি পালন করে আসছে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ও জাতিসংঘের সদস্য দেশগুলো।
জাতিসংঘের তথ্যমতে, বিশ্বে প্রতি বছর প্রায় সাড়ে ৩০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার সমমূল্যের মাদক ব্যবসা হয়, পুরোটাই অবৈধ উপায়ে। এ ছাড়া মাদক সেবীর সংখ্যা বিশ্বে প্রায় ২৫০ মিলিয়ন। এর মধ্যে নিয়মিত মাদকসেবীর সংখ্যা কয়েক কোটি।
আন্তর্জাতিক মাদকবিরোধী দিবসে যেসব সচেতনতামূলক কর্মসূচি পালিত হচ্ছে, তা যেমন গুরুত্বপূর্ণ, সেই সঙ্গে দরকার সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও পারিবারিক সচেতনতা বৃদ্ধি। মাদকসেবন থেকে সন্তানকে দূরে রাখার জন্য প্রধান ভূমিকা রাখতে পারে পরিবার। যে পরিবার যতটা শৃঙ্খলিত, সে পরিবারের সদস্যদের মধ্যে মাদকসেবনের প্রবণতা খুবই কম।
এ ছাড়া মাদক থেকে দূরে থাকার জন্য ধর্মীয় অনুভূতি ও মানবিক মূল্যবোধকে গুরুত্ব দিতে হবে। শিশুদের মধ্যে ছোটবেলা থেকে মাদকের ক্ষতিকর দিক নিয়ে তথ্য দিতে পারলে এবং তাদেরকে বেড়ে ওঠার পরিপূর্ণ সুযোগ দিলে, শিশুরা মাদকের দিকে ঝুঁকবে না।
আমাদের দেশে পথশিশু ও বস্তিবাসীদের মধ্যে মাদক গ্রহণ ও ব্যবসার প্রবণতা সবচেয়ে বেশি। মূলত মাদক ব্যবসা টিকে আছে এ শ্রেণির মানুষের জন্যই। এ বিষয়ে সচেতনতা বাড়ানো সরকারের দায়িত্ব।
তরুণ প্রজন্মের মধ্যে মাদকগ্রহণ খানিটা ফ্যাশন হয়ে দাঁড়িয়েছে। যে ভ্রান্ত ধারণার ওপর দাঁড়িয়ে তারা এমন অভ্যাসে স্থায়ী হচ্ছে, তা দূর করতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো কাজ করতে পারে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মাদকবিরোধী প্রচারাভিযান অব্যাহত রাখা দরকার।
মাদকসেবীরা শুধু নিজের শরীরের ক্ষতি করে তাই নয়, তারা সমাজে নানা সমস্যার সৃষ্টি করে। চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, রাহাজানি ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত যারা, তাদের মধ্যে অধিকাংশ মাদকসেবী। কিন্তু এই মাদকসেবীদের ঘৃণা করলেই যে সব সমস্যার সমাধান, তা নয়।
মাদকসেবীদের পুনর্বাসন নিশ্চিত করে তাদেরকে সুস্থ জীবনে ফিরিয়ে আনতে হবে। তাদেরকে দৃষ্টান্ত হিসেবে দাঁড় করাতে পারলে অন্য মাদকসেবীরও তাদের দেখে সুস্থ জীবনে ফিরে আসার স্বপ্ন দেখতে পারে।
অবশ্য যেসব কথা বলা হলো, বাংলাদেশে তেমন কিছু কার্যক্রম সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে চালু রয়েছে। কিন্তু মাদকের মূল হোতা যারা, তারা থেকে যাচ্ছে ধরা ছোঁয়ার বাইরে। মাদক উৎপাদন, সরবরাহ, পরিবহণ ও ব্যবসার সঙ্গে যারা জড়িত, তাদেরকে নির্মূল করতে না পারলে, প্রকৃতপক্ষে মাদক সমস্যার কোনো সমাধান হবে না। এ বিষয়ে সরকারকে উদ্যোগ নিতে হবে, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কেও এগিয়ে আসতে হবে, যেন নতুন প্রজন্মের জন্য একটি সুন্দর আগামী নিশ্চিত হয়।