ইয়েমেনে হাউথি বিদ্রোহীদের অভ্যুত্থানের চেষ্টা
ইয়েমেনের শক্তিশালী হাউথি বিদ্রোহীরা দেশটির প্রেসিডেন্ট প্রাসাদের কাছে সেনাবাহিনীর সঙ্গে কামান লড়াই শুরুর পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন ঘিরে ফেলেছে। রাজধানী সানা’য় শিয়া বিদ্রোহী গোষ্ঠীটির এসব কার্যকলাপে তাদের বিরুদ্ধে অভ্যুত্থান প্রচেষ্টার অভিযোগ উঠেছে। এতে আগে থেকেই রাজনৈতিকভাবে দুর্বল আরব রাষ্ট্রটি গভীর সঙ্কটে পড়েছে। সোমবার সারাদিন ধরে প্রচণ্ড বিস্ফোরণে রাজধানী বারবার কেঁপে উঠেছে ও শহরের নিচু অঞ্চলে থাকা ভবনগুলো ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন হয়ে ছিল। বিদ্রোহীরা সানা দখল করে নেয়ার পর থেকে এদিন সরকারি বাহিনীর সঙ্গে তীব্রতম লড়াইয়ে জড়িয়ে পড়লেও সন্ধ্যার পর থেকে দুপক্ষের মধ্যে অস্ত্রবিরতি শুরু হয়েছে বলে সরকারি ভাষ্যে জানানো হয়েছে। সোমবার সন্ধ্যায় ইয়েমেন সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, সানার কেন্দ্রীয় অংশে প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন বিদ্রোহীরা ঘিরে ফেলেছে এবং হাউথি প্রতিনিধিরা প্রেসিডেন্টের সঙ্গে বৈঠক করছেন। নিজের ট্যুইটার একাউন্টে তথ্যমন্ত্রী নাদিয়া আল-সাক্কাফ বলেছেন, “সংবিধান ও জাতীয় কর্তৃপক্ষ পরিবর্তনের শর্তে সেনাপ্রধানকে মুক্তি দেয়া নিয়ে প্রেসিডেন্টের সঙ্গে আলোচনা করছেন হাউথিরা।”
সেপ্টেম্বরে রাজধানী দখলের পর থেকেই হাউথিরা ইয়েমেনের ক্ষমতার প্রধান নিয়ন্ত্রক হয়ে উঠেছে। হাউথিদের প্রস্তাবিত একটি নতুন সংবিধান প্রশ্নে প্রেসিডেন্ট আবদ-রাব্বু মনসুর হাদি’র সঙ্গে হাউথি জনপ্রতিনিধিদের তীব্র বির্তক চলছে। এরই মধ্যে শনিবার বিদ্রোহীরা সেনাপ্রধান আহমেদ আওয়াদ বিন মুবারককে অপহরণ করে। এরপর থেকে প্রেসিডেন্টপন্থি ও হাউথি বিদ্রোহীদের মধ্যে বাড়তে থাকা উত্তেজনা সোমবার চরম আকার ধারণ করে। সোমবার সকালে প্রেসিডেন্ট হাদি ও তার এক হাউথি উপদেষ্টার সঙ্গে আলোচনা শেষে ফেরার সময় প্রধানমন্ত্রী খালেদ বাহাহ’র মোটরবহরের উপর হাউথিরা গুলিবর্ষণ করেছে বলে অভিযোগ করেছেন নাদিয়া। সেনা সাঁজোয়া বহরের পাহারার মধ্যে থাকা বাহাহ’র গাড়িবহরের উপর হাউথিদের এই গুলিবর্ষণকে প্রধানমন্ত্রীর প্রাণনাশের চেষ্টা বলে দাবি করেছেন সরকারি মুখপাত্র রাজেহ বাদি। এই ঘটনার পর প্রধানমন্ত্রী নিজ বাসভবনে ফেরার পর প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন রিপাবলিকান প্যালেস ঘিরে ফেলে বিদ্রোহী যোদ্ধারা। পরে ভবনটির সমস্ত যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়া তারা। সরকারি মুখপাত্র বাদি বলেছেন, “প্রধানমন্ত্রী ভিতরে থাকা অবস্থায় বন্দুকধারীরা তার বাসবভন ঘিরে ফেলেছে।” দুজন প্রত্যক্ষদর্শীও রিপাবলিকান প্যালেস ঘেরাও করা হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন। এর আগে প্রেসিডেন্টের প্রাসাদে “সরাসরি হামলা” চালানো হয়েছে বলে তথ্যমন্ত্রী নাদিয়া অভিযোগ করেছিলেন। ওই সময় প্রেসিডেন্ট হাদি অন্য একটি এলাকায় তার নিজের বাসভবনে ছিলেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে নাদিয়া বলেছেন, “প্রেসিডেন্ট প্রাসাদে হামলা একটি আক্রমণাত্মক ঘটনা, অবশ্যই এটি একটি অভ্যুত্থান প্রচেষ্টা।” সোমবার বিকেলে হাউথি বিদ্রোহীরা দেশটির রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা ও টেলিভিশন স্টেশন দখল করে নেয়। এর কিছুক্ষণ পর সন্ধ্যা থেকে একটি অস্ত্রবিরতি শুরু হয় বলে জানিয়েছে দেশটির মন্ত্রিসভা। হাউথি বিদ্রোহী ও সেনাবাহিনীর লড়াইয়ে নয়জন নিহত ও ৯০ জন আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী রিয়াদ ইয়াসিন। তবে শেষ পর্যন্ত হতাহতের সংখ্যা আরো বেশি হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।