উত্তরাঞ্চলসহ সারাদেশে কালবৈশাখীর তাণ্ডবে ৩০ জনের মৃত্যু
নিজস্ব প্রতিনিধি:
কালবৈশাখীর তাণ্ডবে উত্তরাঞ্চলের ছয় জেলা লণ্ডভণ্ড হয়ে গেছে। শনিবার রাতে ও রোববার কালবৈশাখীর তাণ্ডবে এ পর্যন্ত ৩০ জনের প্রাণহানির খবর পাওয়া গেছে। গতকাল গভীর রাত পর্যন্ত এ সংখ্যা ছিল ১২। তা ছাড়া কয়েক কোটি কোটি টাকার ফসলের ক্ষতি হয়েছে। বিদ্যুৎসংযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে।
ঢাকা প্রতিদিনের প্রতিনিধিদের পাঠানো খবরে জানা গেছে, রাজশাহীতে ৫, নওগাঁয় ১, নাটোরে ২, বগুড়ায় ১৯, পাবনায় ১ ও সিরাজগঞ্জে ২ জনের মৃত্যু হয়েছে।
বগুড়ায়: কালবৈশাখীর তাণ্ডবে সবচেয়ে বেশি প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে বগুড়ায়। এ পর্যন্ত ১৯ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।
গতকাল শনিবার সন্ধ্যার ঝড়ে লণ্ডভণ্ড হয়ে যায় বগুড়ার বিভিন্ন এলাকা। রোববার জেলা পুলিশ সুপার মোজাম্মেল হক গণমাধ্যমকে জানান, নিহতদের মধ্যে চারজন বগুড়া সদরে মারা যান। তারা হলেন, আজিরুন বিবি (৪০), মিলা (৩ মাস), রজব আলী (১৫) ও পলাশ (১৮)।
শাহজাহানপুর উপজেলায় মারা গেছেন তিনজন। তারা হলেন, তামান্না (৩৫), রাবেয়া বেওয়া (৬৫) ও পায়েল (১৬)। সারিয়াকান্দিতে মারা গেছেন শান্তা বেগম (৫০) ও সুজন মিয়া (৩০)। কাহালুতে আজিজুল ইসলাম (১৯) ও ইসমাইল হোসেন (৩৮) মারা যান। ধুনটে আফজাল হোসেন (৬০) নামে এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে।
এ ছাড়া সোনাতলায় ফিরোজা বেগম (৫৫) ও গাবতলীতে সামিয়া বেগম (৩২) মারা যান।
রাজশাহী : বাঘা উপজেলার পাকুড়িয়া গ্রামে জাহানারা বেগম, ইমাজ উদ্দিন, পবা উপজেলায় বড়গাছিতে আবুল হোসেন, গোদাগাড়ী চর আষাঢ়িয়াদহে মনোয়ারা বেগম (৪০) ও আরও একজন মারা গেছেন।
নাটোর : জেলার গুরুদাসপুরে বজ্রপাতে খোকন হোসেন (২৮) ও সিংড়ায় রাবেয়া বেগম (৩০) নামে এক গৃহবধূর মৃত্যু হয়েছে।
পাবনা : শহরের চাঁদমারী এলাকায় ঝড়ে গাছের নিচে চাপা পড়ে জামউদ্দিন (৮০) নামে এক চা বিক্রেতার মৃত্যু হয়েছেন। শনিবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।
জামউদ্দিনের বাড়ি পাবনা পৌর সদরের চক গোবিন্দা মহল্লায়।
সিরাজগঞ্জ : জেলায় শনিবার সন্ধ্যায় বয়ে যাওয়া কালবৈশাখী ঝড়ে নৌকাডুবির ঘটনায় একজনের মৃত্যু হয়েছে। নিখোঁজ রয়েছেন একজন। এ ছাড়া বজ্রপাতে মারা গেছেন আরও একজন।
ঝড়ের সময় কাজীপুর উপজেলার চরাঞ্চল নাটুয়ারপাড়া হাট থেকে শ্যালো ইঞ্জিনচালিত নৌকাযোগে ২০/২৫ যাত্রী জামালপুর জেলার সরিষাবাড়ি উপজেলার সীমান্তবর্তী খাসরাজবাড়ি ইউনিয়নের পীরগাছার উদ্দেশে রওনা হন। প্রচণ্ড ঝড়ে মাঝ নদীতে নৌকাটি ডুবে যায়। রাতেই ঘটনাস্থলের ভাটি থেকে মোজাম্মেলের লাশ উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় একই গ্রামের আব্দুল খালেক নিখোঁজ হন।
কাজীপুর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা শাফিউল ইসলাম জানান, ঝড়ের সময় নৌকাডুবিতে পীরগাছা গ্রামের মোজাম্মল হক নিহত হন। নিখোঁজ হন একই গ্রামের আব্দুল খালেক। উপজেলা প্রশাসন নিহতের পরিবারকে ১০ হাজার টাকা অনুদান দিয়েছে।
এদিকে, উল্লাপাড়া উপজেলার দুর্গাপুর গ্রামের আব্দুস সবুরের ছেলে ফজলার রহমান (৪৫) বজ্রপাতে মারা যান।
ঝড় ও শিলা বৃষ্টিতে বিপুল পরিমাণ জমির ফসল নষ্টসহ অসংখ্য গাছপালা ভেঙে গেছে। শিলাবৃষ্টিতে আমেরও ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ঝড় শুরুর সঙ্গে সঙ্গে জেলার বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। প্রায় ছয় ঘণ্টা পর গভীর রাতে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হয়।
কাজীপুর উপজেলার চালিতাডাঙ্গা, সাতকয়া, শিমুল দাইড়, হরিনাথপুর, পাঁচগাছী, সোনামুখী এবং উল্লাপাড়া উপজেলার উধুনিয়া, সলপ, মোহনপুর ও পূর্ণিমাগাতী গ্রামের সদ্য গাছ থেকে বের হওয়া ব্রি-৫৮ ও ব্রি-২৮ ধানের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ঝড়ে জেলার বিভিন্ন এলাকার অসংখ্য গাছ উপড়ে পড়েছে।
এদিকে, লণ্ডভণ্ড ওইসব জেলার অধিকাংশ এলাকায় এখনও বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া সম্ভব হয়নি। টেলিফোন লাইনও বিচ্ছিন্ন রয়েছে। গাছপালা এবং কাঁচা আধাপাকা ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। ফসলেরও ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।