উত্তরায় গৃহকত্রীর নির্মম নির্যাতনের শিকার পাটগ্রামের তাজিন
জাহাঙ্গীর আলম রিকো, লালমনিরহাট: শিশু গৃহকর্মী তাজিন আক্তার। বয়স মাত্র ৯ বছর। পেটের দায়ে ঢাকার পরিচিত এক বাসায় গৃহকর্মীর কাজ করছিল। কিন্তু সেখানে নির্মম নির্যাতনের শিকার হয়ে এখন হাসপাতালের বেডে কাতরাচ্ছে শিশুটি। শিশুটির সারা শরীর জুড়ে রয়েছে অসংখ্য নির্যাতনে দাগ। বাড়ি লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলার জগতবেড় ইউনিয়নের টংটংঙ্গীর ডাংগা গ্রামে।
পাটগ্রাম হাসপাতাল সুত্রে জানা যায়, সোমবার রাতে শিশুটিকে গুরতর অসুস্থ অবস্থায় ভর্তি করা হয়। পুরো শরীরে তার নির্যাতনের চিহ্ন। শরীর এতটাই দুর্বল যে, কথা বলার শক্তি পর্যন্ত নেই শিশুটির। তাই তাকে বাঁচাতে উন্নত চিকিৎসার প্রয়োজন বলে জানায় চিকিৎসক।
মঙ্গলবার দুপুরে ওই হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, নির্যাতনের শিকার অসুস্থ শিশুটির পাশে কাঁদছে মা আয়শা বেগম। শিশুটির পা থেকে মাথা পর্যন্ত গোটা শরীরে শুধুই নির্যাতনের দাগ । কোথাও ছ্যাঁকা দেয়া মত দাগ, কোথাও আবার পিটিয়ে ক্ষত করা হয়েছে। নির্যাতনের কারণে তার ডান হাত ভেঙে গেলে তাতে রড বসানো হয়েছে বলে মনে করছেন চিকিৎসকরা। আর পেটের ডান দিকে নিচের অংশে কেঁটে দেয়া ক্ষতের চিহ্ন স্পষ্টভাবে ফুটে উঠেছে।
শরীর জুড়ে এত আঘাতের চিহ্ন কি করে হলো? এমন প্রশ্নে গুরতর অসুস্থ শিশু তাজিন বলে, ‘এমি আপা আমাকে মেরেছে। তার বাসায় কাজ করি। কাজ করতে দেরী হলে আমাকে খুব মারে। খেতে দেয় না। ঘরের মধ্যে তালা বন্ধ করে রাখে”। বলতে বলতে কেঁদে উঠে শিশুটি।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, লালমনিরহাটের হাতীবান্ধার মেয়ে এমির বিয়ে হয় ঢাকার উত্তরায়। সেখানে স্বামী শিমুলসহ নিজ ফ্ল্যাটে বসবাস করেন তারা। প্রায় ৮ মাস আগে পার্শ্ববর্তী উপজেলার পাটগ্রামের নয় বছরের শিশু তাজিন আক্তারকে বাসার কাজের মেয়ে হিসেবে ঢাকায় নিয়ে যায় এমি। কিন্তু সেখানে যাওয়ার পর অবুঝ ওই শিশুটিকে কারণে অকারণে বেধড়ক মারপিটসহ নির্মম নির্যাতন করে আসছে এমি ও তার স্বামী শিমুল।
এই অবস্থায় মেয়েটি গুরতর অসুস্থ পড়লে গত শুক্রবার রাজু নামের এক যুবককে দিয়ে তাকে হাতীবান্ধায় এমির বাবার বাড়িতে পাঠানো হয়। সেখানে এমির ভাই ও পরিবহন ব্যবসায়ী শরীফুল ইসলাম রুবেল শিশুটির বেহাল অবস্থা দেখে তাকে হাতীবান্ধা হাসপাতালে ভর্তি করায়। প্রায় ৩ দিন পর শিশুটির পরিবার খবর পেয়ে সোমবার রাতে এসে সেখান থেকে নিয়ে গিয়ে পাটগ্রাম হাসপাতালে ভর্তি করান।
জানতে চাইলে শিশুটির মা আয়শা বেগম বলেন, মানুষ এতটা নিষ্ঠুর হতে পারে, তা আগে কখনো দেখিনি। ওরা (এমি ও তার পরিবারের লোকজন) আমার শিশুটিকে যেভাবে মেরেছে, তাতে সে বাঁচবে কিনা আল্লায় জানে! বলতে বলতে ডুকরে কেঁদে উঠেন আয়শা বেগম।
হাতীবান্ধা উপজেলা স্বাস্থ্য ও প.প, কর্মকর্তা ডা. রমজান আলী বলেন, শিশুটিকে প্রথমে ডায়রিয়া রোগী বলে ভর্তি করা হয়েছিল। কিন্তু তার শরীরের অসংখ্য নির্যাতনের ক্ষত ছিল। তার উন্নত চিকিৎসার প্রয়োজন হওয়ায় তার পরিবারের লোকজন এসে শিশুটিকে নিয়ে গেছে বলে জানান তিনি।
পাটগ্রাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. মুসা আলী জানান, শিশুটির শরীরে ব্যাপক নির্যাতনের ক্ষত রয়েছে। তাই এক্সরে ও এসিজি ছাড়া নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না । তবে শিশুটির উন্নত চিকিৎসার জন্য মঙ্গলবার দুপুরে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার ছাড়পত্র দেয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।
পাটগ্রাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা( ওসি) অবনী শংকর কর বলেন, ‘নির্যাতনের শিকার শিশুটিকে আমি দেখিছে। তার শারীরিক অবস্থা খুবই খারাপ”। তবে শিশু নির্যাতনের ঘটনাস্থল ঢাকার উত্তরা পশ্চিম থানায় হওয়ায় প্রয়োজনী ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্ট থানায় যোগযোগ করা হচ্ছে বলে জানান তিনি।