হেযবুত তওহীদের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে রাজধানীর উত্তরায় আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত
নিজস্ব প্রতিবেদক: রাজধানীর উত্তরায় হেযবুত তওহীদের ২১তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল রাষ্ট্রে পরিণত করার নানামূখী ষড়যন্ত্র মোকাবেলায় ‘’সন্ত্রাস দমনে জনসম্পৃক্ততার বিকল্প নেই’’ শীর্ষক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। আজ শুক্রবার বিকেল সাড়ে ৩ টায় ঢাকার উত্তরা ১৪ নং সেক্টরের কল্যাণ সমিতির মাঠে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি ও মূখ্য আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলে হেযবুত তওহীদের এমাম হোসাইন মোহাম্মদ সেলিম।
মুখ্য আলোচকের বক্তব্যে হেযবুত তওহীদের এমাম হোসাইন মোহাম্মদ সেলিম বলেন, সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ জীব মানুষ হিসাবে আমাদের কিছু দায়িত্ব রয়েছে। পশুর ন্যায় শুধু খাওয়া আর বংশবৃদ্ধি করলে চলবে না। শুধু নিজেকে নিয়ে, নিজের পরিবারকে নিয়ে ভাবলেই চলবে না, আমাদেরকে অবশ্যই সমাজ, রাষ্ট্র ও বিশ্বকে নিয়ে ভাবতে হবে। এ সমাজকে শান্তিময় করার জন্যই আল্লাহ আমাদেরকে তাঁর রুহ থেকে ফুঁকে দিয়ে তাঁর খলিফা হিসাবে এ পৃথিবীতে প্রেরণ করেছেন। আমরা যেন ভালো-মন্দ দেখতে পারি, শুনতে পারি অত:পর চিন্তা করে উত্তম সিদ্ধান্ত নিতে পারি সে জন্যই আল্লাহ আমাদের চোখ, কান ও মস্তিষ্ক দিয়েছেন। তিনি বলেন, আমাদেরকে জানতে হবে বর্তমান পৃথিবী মহাযুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে উপনীত হয়েছে যে জঙ্গিবাদকে ইস্যু করে সেই জঙ্গিবাদের উৎস কোথায়, কারা এর জন্ম দিল, কেন জন্ম দিল। আসলে বিশ্বের পরাশক্তিধর রাষ্ট্রগুলোই এই জঙ্গিবাদের জন্ম দিয়েছে। আফগান যুদ্ধের সময় আমেরিকা মুসলমানদেরকে রাশিয়ার বিরুদ্ধে নিজেদের পক্ষে কাজে লাগানোর জন্য এই জঙ্গিবাদের সৃষ্টি করে। ধর্মবিশ্বাসী সাধারণ মুসলমানদেরকে ধর্মীয় অপব্যাখ্যা দ্বারা জেহাদের নামে জঙ্গিবাদে আকৃষ্ট করে। সেখান থেকেই বর্তমান জঙ্গিবাদের উদ্ভব এবং বিশ্বব্যাপী তার বিস্তার। এই যে মানুষের ঈমানকে ভুল খাতে প্রবাহিত করে জঙ্গিবাদের বিস্তার ঘটানো হলো এর প্রধান কারণ হলো এই ধর্মবিশ্বাসী মানুষের ইসলাম সম্পর্কে সঠিক আকিদা না থাকা। সাধারণ মানুষ যদি ইসলামের সঠিক আকিদা জানত তবে আর কেউ তাদের ধর্মবিশ্বাসকে ভুল পথে ব্যবহার করতে পারতো না।
একটা বিষয় বুঝতে হবে যে, আকিদা বিহীন ঈমানের কোনো দাম নেই আর ঈমান বিহীন আমলেরও কোনো মূল্য নেই। ইসলামের সঠিক আকিদা হলো ইসলাম সম্পর্কে সঠিক ও সম্যক ধারণা। ইসলাম আসলে কেন এসেছে, এর উদ্দেশ্য কী, রসুলাল্লাহ কেন উম্মতে মোহাম্মদী নামক জাতি গঠন করে গেলেন ইত্যাদি বিষয় আমাদেরকে বুঝতে হবে। ইসলাম শব্দের অর্থ হলো শান্তি। সমগ্র পৃথিবী থেকে সমস্ত অন্যায়, অবিচার, অশান্তি দূর করে ন্যায়, সুবিচার ও শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্যই ইসলামের আগমন। ইসলাম অশান্তিপূর্ণ সমাজকে শান্তিপূর্ণ করে। আর ঈমানের মূল বিষয় হলো কলেমা- লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ অর্থাৎ ‘আল্লাহর হুকুম ছাড়া অন্য কিছু না মানা’ এর উপর বিশ্বাস স্থাপন করা এবং আমল হলো সালাহ (নামাজ), যাকাত, হজ্ব, সওম (রোজা) ইত্যাদি এক কথায় সেই সমস্ত কাজ যা মানুষের কল্যাণ করে, সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠা করে তা সবই আমল। কিন্তু নিজের জীবন-সম্পদ উৎসর্গ করে সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠার সর্বাত্মক প্রচেষ্টা না করলে কারও আমলই কবুল হবে না।
আজ পৃথিবীময় আমল হচ্ছে কিন্তু ইসলাম সম্পর্কে সঠিক আকিদা না থাকার কারণে ইমান ও আমল সবই অর্থহীন হয়ে যাচ্ছে। আসন্ন সঙ্কট থেকে আজ দেশ ও জাতিকে রক্ষা করতে হলে আমাদের সকলকে উদ্যোগী হয়ে ইস্পাতকঠিন ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। কারণ এটি একদিকে আমাদের ঈমানী দায়িত্ব অপরদিকে সামাজিক কর্তব্য। আমরা যারা ধর্মে বিশ্বাস করি তাদেরকে বুঝতে হবে মানুষের শান্তির জন্য কাজ করাই হলো প্রধান ইবাদত। কাজেই মানুষ যখন কষ্টে থাকে, সমাজ যখন অন্যায়-অবিচারে পূর্ণ হয়ে যায় তখন প্রধান ঈমানী দায়িত্বই হয়ে পড়ে মানুষের কষ্ট লাঘব করা ও সমাজ থেকে অন্যায়-অবিচার দূর করা। অপরদিকে এই সমাজে বসবাসকারী প্রত্যেকের সামাজিক কর্তব্য হলো সমাজের শান্তি নিশ্চিত করা, ধ্বংসের হাত থেকে সমাজকে বাঁচানো। এই কথা সবাইকে উপলব্ধি করতে হবে যে, আমার সমাজ, আমার দেশ যদি ধ্বংস হয়ে যায় তবে আমিও বাঁচব না, আমাদের কারোরই কোনো অস্তিত্ব থাকবে না।
বক্তব্যের শেষ পর্যায়ে তিনি দেশবাসীর প্রতি ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, ধর্মব্যবসায়ীদের দ্বারা প্রচারিত ধর্মের অপব্যাখ্যা থেকে বের হয়ে আমদের ধর্মের প্রকৃত চেতনা দ্বারা জাতিকে উদ্বুদ্ধ করতে হবে। তবেই চলমান ষড়যন্ত্র থেকে দেশকে বাঁচানো সম্ভব হবে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত অতিথিবৃন্দ
হেযবুত তওহীদের আমির মো. মসীহ উর রহমানের সভাপতিত্বে আয়োজিত উক্ত অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশেরপত্র ডটকমের নির্বাহী সম্পাদক ও হেযবুত তওহীদের সাহিত্য বিষয়ক সম্পাদক মো. রিয়াদুল হাসান, দৈনিক বজ্রশক্তির প্রকাশক ও সম্পাদক এস এম সামসুল হুদা, জাতীয় শ্রমিক লীগের সাবেক সাধারন সম্পাদক মো. বরকত খান, ৪৯ নং ওয়ার্ড আ’লীগের সভাপতি মো. ইয়াহহিয়া মাহমুদ, কাজী আরেফ ফাউন্ডেশনের সভাপতি কাজী মাসুদ আহম্মেদ, মতিঝিল থানা শ্রমিক লীগের কার্যনির্বাহী সভাপতি আবুল কালাম আজাদপ্রমুখ।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত সাধারন জনগণ।
এছাড়াও প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়াকর্মীসহ সর্বস্তরের সাধারন জনগণ অনুষ্ঠানে অংশগ্রহন করেন। অনুষ্ঠানে মিডিয়া পার্টনার হিসেবে সহযোগিতা করে দৈনিক বজ্রশক্তি, জেটিভি অনলাইন ও বাংলাদেশেরপত্র ডটকম।
টিভি নিউজ: