কল্যাণপুরে নিহত জঙ্গি আব্দুল্লার গ্রামের বাড়ি নবাবগঞ্জে ঘৃণাসহ প্রতিবাদের ঝড়
রুহুল আমিন, নবাবগঞ্জ (দিনাজপুর) থেকে: ঢাকার কল্যাণপুরে জঙ্গি আস্তানায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর জঙ্গি বিরোধী অভিযানে নিহত দিনাজপুরের নবাবগঞ্জ উপজেলার ৭নং দাউদপুর ইউনিয়নের বল্লভপুর গ্রামের সোহরাব আলীর পুত্র আব্দুল্লারগ্রামের বাড়িতে ঘৃণাসহ প্রতিবাদের ঝড় উঠেছে। নবাবগঞ্জের মাটিতে জঙ্গি সদস্যের অন্যতম। এ সদস্যের দাফনের বিপক্ষে গড়ে উঠেছে জনমত।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, উপজেলা সদর থেকে ১ কিলোমিটার পূর্ব-উত্তরে বল্লভপুর গ্রামে ১৯৯৩ সালে জন্মগ্রহণ করে জঙ্গি শীর্ষ এ সদস্য।
তার পিতা সোহরাব হোসেন ও মা মোসলেমা বেগম জানায়, আব্দুল্লা ওই গ্রামের বল্লভপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া শেষে পাশ্ববর্তী হাকিমপুর উপজেলার কওমী মাদ্রাসায় লেখাপড়া শুরু করেন। ছোট থেকেই বাহিরে লেখাপড়ার সুবাদে থাকত। এক পর্যায়ে নওগাঁ জেলার সাপাহার থানায় অবস্থিত আলাউদ্দিন মাদ্রাসা থেকে দাওরা ডিগ্রি অর্জন করে। সেখান থেকে নারায়নগঞ্জ জেলার রুপগঞ্জ উপজেলার দেবই কাজিরাবাগ আলিম মাদ্রাসা থেকে দাখিল ও আলিম পাশ করে। বিগত এক বছর থেকে আব্দুল্লা বাড়িতে ফিরে আসেনি। তার মা মোসলেমা বেগম জানান, তার পাঁচ ছেলে ও এক মেয়ে।
তবে তার বড় ভাই নুরুল ইসলাম জানান, মাঝেমধ্যে মুঠোফোনে বাড়ির খোঁজ খবর নিত। লেখাপড়ার অর্থ বাড়ি থেকে নিত না। তাকে কে কোথা থেকে অর্থ যোগান দিতো তারও সঠিক তথ্য ছিল না তাদের কাছে।
এক সপ্তাহ আগে মুঠোফোনে বড় ভাইকে জানায়, আমাকে নিয়ে চিন্তা করবেন না। ঢাকায় চাকুরির চেষ্টা করছি।
ওই গ্রামের বাসিন্দা বিএনপি নেতা ও বল্লভপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক মো. আবু তাহের জানান, দীর্ঘদিন যাবৎ সমাজের অন্যান্য মানুষের তার আচরণ ছিল না।
ওই গ্রামে বসবাস করা নবাবগঞ্জ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের (অবসর প্রাপ্ত) শিক্ষক মাওলানা তোয়াব আলী জানান, আব্দুল্লার সহপাঠী হিসেবে আমার পুত্র আব্দুস সামাদ (২৫) ও আব্দুল মজিদের পুত্র আব্দুস সামাদ (২৬) এই দুজন একই সাথে ছোট বেলা থেকেই আব্দুল্লার সাথে লেখাপড়া করেছে। সেও এক বছর যাবৎ পরিবারের সাথে কোন প্রকার যোগাযোগ রক্ষা করছে না।
তবে মজিদের পরিবার সূত্রে জানা গেছে, সে বাহিরে অবস্থান করলেও মাঝে মধ্যে গ্রামের বাড়িতে আসে। মাওলানা তোয়াব আলী সাংবাদিকদের জানান, তার সন্তান তার নিয়ন্ত্রণের বাহিরে চলে গেছে। গত বৃহস্পতিবার সকাল থেকে সমস্ত দিন ওই গ্রামে নারী-পুরুষ ঘৃণা ও ক্ষোভের সাথে জানান, এই জঙ্গির লাশ বল্লভপুরের মাটিতে দাফন করতে দেওয়া হবে না।
বল্লভপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ নইমুদ্দিন জানান, ছেলেটির মৃত্যুর খবর শুনে আমরা হতবাক হয়েছি। সে লেখাপড়া করা অবস্থায় নিজের নাম পরিবর্তন করেছে। বিদ্যালয়ে তার নাম আব্দুল মোতালেব আর বাহিরে গিয়ে জঙ্গিদের সংস্পর্শে এসে নাম পরিবর্তন করে আব্দুল্লা পরিচয় দেয়। ওই বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক মোঃ শামসুল আলম অভিযোগ করে জানান, এ ধরণের ছেলে দেশ ও জাতির শত্রু।
থানা অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোঃ ইসমাইল হোসেন জানান, আব্দুল্লাহর নিহতের ঘটনায় তার পিতা সোহরাব হোসেন ও বড় ভাই নুরুল ইসলাম কে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ডিএনএ টেস্টের জন্য পুলিশ স্কোয়াডে পাঠানো হয়েছে। তিনি আরো জানান, আব্দুল্লা এক বছর যাবৎ বাহিরে থাকার কারণে তার পরিবারের লোকজন থানায় কোন জিডি বা অভিযোগ করেন নি।