কাউনিয়ায় এক কলেজে দুই অধ্যক্ষ : শিক্ষাসহ কর্মকান্ড মারাত্বক ভাবে বিঘ্নিত
মিজান,কাউনিয়া প্রতিনিধিঃ রংপুরের কাউনিয়া উপজেলার টেপামধুপুর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ও মহাবিদ্যালয়ের পরিচালনা কমিটির হটকারী সিদ্ধান্তে এক কলেজে এখন দুই অধ্যক্ষ। ইতিপূর্বে নানা নাটকীয়তার মাঝে অধ্যক্ষের চেয়ার দখলকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের মধ্যে টান-টান উত্তেজনার ঘটনা ঘটে। পরে স্থানীয় নেতাকর্মীদের মাধ্যমে বিষয়টি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও স্থানীয় সাংসদ বীর মুক্তিযোদ্ধা টিপু মুনশি্ পর্যন্ত গড়ায়। তিনি সমাধান করবে আশ্বাস পেলে দু’পক্ষ শান্ত হয়। কিন্তু আশানুরূপ স্থায়ী সমাধান না আসায় বর্তমানে এক কলেজে দুইজন অধ্যক্ষের অবস্থান। এতে করে প্রতিষ্ঠানের দৈনন্দিনের কর্মকান্ড ও শিক্ষাক্ষেত্র আজ মারাত্মক ভাবে হুমকির মূখে। এদ্বন্দ্বকে কেন্দ্র করে আবারো যে কোনো সময় ঘটে যেতে পারে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের ঘটনা।
সুত্র জানায়, টেপামধুপুর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ও মহাবিদ্যালয় এর তৎকালীন অধ্যক্ষ হোসেন আলী অবসর গ্রহন করলে কলেজের সিনিয়র শিক্ষক সোহরাব হোসেনকে লিখিত দায়িত্বভার অর্পন করেন। এই দায়িত্বকে চ্যালেঞ্জ করে আরেক সিনিয়র শিক্ষক রবিউল করিম লিটন কোর্টে মামলা দায়ের করেন, সেই মামলা এখনো চলমান। পরবর্তীতে দীর্ঘ ৫মাস শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন বন্ধ থাকায় সকলের সম্মতিক্রমে প্রতিষ্ঠানটির সভাপতি স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান শফিকুল ইসলাম শফি জুনিয়র শিক্ষক হাসিনা বুলবুলকে বিগত ২৫ এপ্রিল’২০১৫ ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব দিলে তিনি সুষ্ঠু ভাবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন।
কিন্তু সভাপতির কথা মোতাবেক ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ প্রতিষ্ঠানের নিয়োগ কার্যক্রম পরিচালনা না করলে স্বার্থের ব্যাঘাত লাগায় গত ১৬ আগষ্ট’২০১৮ হাসিনা বুলবুল এর নানা অনিয়মের অভিযোগ তুলে তাকে সরানোর জন্য কমিটির সভাপতি সূ-কৌশলে মনগড়া ভাবে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ও শিক্ষক প্রতিনিধিদের বাদদিয়ে গোপনে নতুন একটি রেজুলেশন খাতায় কমিটির কতিপয় সদস্য নিয়ে রেজুলেশন করে সিনিয়র শিক্ষক শাহজাহান মিয়াকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব দেন। তখন থেকেই শুরু হয় নানা জটিলতা ও নাটকীয়তা।
অতঃপর এসমস্যা নিরসনে গত ৩ সেপ্টেম্বর’১৮ উপজেলা নির্বাহী অফিসার এসএম নাজিয়া সুলতানা উভয় পক্ষকে ডেকে নিয়ে তার অফিসে বসেও অজ্ঞাত কারনে কোনো সিদ্ধান্ত না দিয়ে তিনি জানান এমপি সাহেব সমাধান করবেন। শেষে এমপি মহোদয় ৪ সেপ্টেম্বর’১৮ তারিখ রাতে নির্বাহী অফিসার এসএম নাজিয়া সুলতানা, থানা অফিসার ইনচার্জ মামুন অর রশীদ ও মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার জাকির হোসেনকে নিয়ে বসে কলেজ বিষয়ে আলোচনা করেন। কিন্তু তিনি এখনো কোনো সমাধান না দেয়ায় এবং কলেজে দুইজন অধ্যক্ষ অবস্থান করায় প্রতিষ্ঠানের কর্মকান্ড প্রায় বন্ধ, বিব্রত আর হতাশার মাঝে অভিভাবক ও শিক্ষার্থীরা। সেই সাথে শিক্ষার পরিবেশে মারাত্মক বিঘ্ন ঘটায় শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বিগ্ন অভিভাবকসহ এলাকাবাসী। ইতোমধ্যে এঘটনায় হাসিনা বুলবুল রংপুরের বিজ্ঞ সহকারী জজ আদালতে একটি মামলা দায়ের করেছেন। যার মামলা নং- ১০৩/১৮, তারিখ-৩০ আগষ্ট’১৮।
এবিষয়ে হাসিনা বুলবুল জানান, আমি দায়িত্ব ছেড়ে দিতে রাজি আছি তবে অবশ্যই তা হতে হবে নিয়মতান্ত্রিক ভাবে। আর প্রতিষ্ঠানটির সভাপতি শফিকুল ইসলাম শফি বলছেন, হাসিনা বুলবুলের নানা অনিয়মের কারনে তাকে সরিয়ে সিনিয়র শিক্ষক শাহজাহান মিয়াকে প্রতিষ্ঠানের স্বার্থে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।
অপরদিকে বর্তমানে অধ্যক্ষের চেয়ার নিয়ে উভয় দলের মধ্যে আবারো টান-টান উত্তেজনা দেখা দিয়েছে, যে কোনো মূহুর্তে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ বেঁধে যাওয়ার আশংকা করছেন অনেকে। সূনামধন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষার পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়, শিক্ষামন্ত্রী ও শিক্ষা বোর্ডের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেন শিক্ষার্থী, অভিভাবকসহ এলাকাবাসী।