কিশোরগঞ্জের স্বামীর দেয়া আগুনে মৃত্যুমুখে নূরুন্নাহার
এখলাছ উদ্দিন (রিয়াদ), কিশোরগঞ্জ :
রগচটা স্বামীকেই খুব ভালবাসতেন নূরুন্নাহার (৩২)। ১২ বছরের বিবাহিত জীবনে বারবার স্বামী দ্বীন ইসলামের নির্যাতনের শিকার হয়েছেন তিনি। রাগে-ক্ষোভে পিতার বাড়ি চলেও গিয়েছিলেন কয়েকবার। তরপরও ভালবাসার টানে সেই স্বামীর ঘরেই ফিরে এসেছেন তিনি। কিন্তু এবার আর শেষ রক্ষা হলো না। স্বামীর ঘর করতে গিয়ে চরম মূল্য দিতে হয়েছে নূরুন্নাহারকে। স্বামীর দেয়া আগুন ঝলসে গিয়ে নূরুন্নাহার এখন ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছেন। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, তার শরীরের অন্তত ৬০ ভাগ পুড়ে গেছে। কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জের জাফরাবাদ ইউনিয়নের মাঝিরকোণা গ্রামে এ ঘটনা ঘটেছে। প্রতিবেশীরা জানায়, গত বুধবার রাত সাড়ে ১২টায় তার হাত-পা, মুখ বেঁধে বর্বর স্বামী দ্বীন ইসলাম নূরুন্নাহারের শরীরে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয়।
শরীরের আগুন নিয়ে জীবন বাঁচাতে বাড়ির পাশের একটি পুকুরে ঝাঁপ দিয়েছিলেন নূরুন্নাহার। পরে স্থানীয় লোকজন পুকুর থেকে অজ্ঞান অবস্থায় হতভাগ্য এ নারীকে উদ্ধার করে কিশোরগঞ্জ জেলা হাসপাতালে নিয়ে যায়। পরে ওইদিন রাতেই তাকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। স্বজনরা জানিয়েছে, অগ্নিদগ্ধ নূরুন্নাহার এখনও জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে রয়েছেন। জেলা হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, নূরুন্নাহারের দুই হাতের সবটুকু, মুখ, পিঠ, কোমর, উরু মারাত্মকভাবে ঝলসে গেছে। স্থানীয়রা আমাদের কিশোরগঞ্জ জেলা প্রতিনিধি মো. এস. হোসেন আকাশকে জানিয়েছেন, নূরুন্নাহারকে তিন বছরের কোলে রেখেই পিতা মগল মিয়া মারা যান।
মা জামেনা খাতুন অন্যের বাড়িতে কাজ করে কন্যাকে লালন পালন করে প্রায় ১২ বছর আগে একই গ্রামের মৃত দুলাল মিয়ার ছেলে দ্বীন ইসলামের কাছে বিয়ে দেন। বিবাহিত জীবনে তাদের একটি পুত্র ও একটি কন্যাসন্তান রয়েছে। মায়ের এ অবস্থায় ছেলে চান মিয়া (৯) ও মেয়ে কবিতাকে (৬) তার মামা শাহাবুদ্দিন নিয়ে গেছেন। ঘটনার পর থেকে স্বামী দ্বীন ইসলাম পলাতক রয়েছে। অগ্নিদগ্ধ নূরুন্নাহারের মা জামেনা খাতুন জানান, তিনি এখন ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পাঁচ তলার ৮ নম্বর শয্যায় মেয়ের সঙ্গে আছেন। কিন্তু টাকার অভাবে মেয়ের চিকিৎসা করাতে পারছেন না। তিনি এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর সুদৃষ্টি কামনা করেছেন। মেয়েটি যেন চিকিৎসা ও ওষুধপত্রের অভাবে মারা না যায়। তাছাড়া সমাজের বিত্তবান মানুষ যদি এগিয়ে আসেন তাহলে তার মেয়ের চিকিৎসাটা হয়ে যায়। জাফরাবাদ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান সোনা মিয়া বলেন, খবর পেয়ে রাতেই আমি ঘটনাস্থলে গিয়ে অগ্নিদগ্ধ মেয়েটিকে হাসপাতালে পাঠানোর ব্যবস্থা করি।