কুবি’তে ছাত্রলীগের দু’গ্রুপের সংঘর্ষে নিহত ১, কলেজ বন্ধ ঘোষণা
কুমিল্লা প্রতিনিধি: কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষে রক্তাক্ত হয়েছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল। রবিবার দিবাগত রাত সাড়ে ১২টা থেকে দুইটা পর্যন্ত বিবাদমান দুই পক্ষের মধ্যে থেমে থেমে সংঘর্ষ চলে। এতে কবি কাজী নজরুল ইসলাম হল শাখার ছাত্র লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সাইফুল্লাহ খালিদ গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হয়েছেন। এ সময় আহত হয়েছেন ১৫ জন। এ পরিস্থিতিতে ক্যাম্পাসে পুলিশ মোতায়ন করা হয়েছে।
প্রতক্ষ্যদর্শীরা জানিয়েছেন, শোকবহ আগস্টের প্রথম রাতে (১ আগস্ট) বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে মোমবাতি প্রজ্জ্বলনে অংশগ্রহণ করে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের বিবাদমান দুইটি পক্ষ। এতে কাজী নজরুল ইসলাম হলের প্রাধক্ষ্য মেহেদী হাসান ও আবাসিক শিক্ষক মোহাম্মদ নাসির হুসেইন, সহকারী প্রক্টর আজমাইন মোহতাসিম মীরসহ কয়েকজন শিক্ষক অংশ গ্রহণ করেন। মোমবাতি প্রজ্জ্বলন শেষে শিক্ষকরা চলে গেলে শাখা ছাত্রলীগ সভাপতি নাজমুল হাসান আলিফ ও সাধারণ সম্পাদক রেজা-ই-এলাহীর পক্ষ এবং ছাত্রলীগ নেতা ইলিয়াস হোসেন সবুজ সমর্থিত সহ-সভাপতি রুপম দেবনাথ ও যগ্ম-সাধারণ সম্পাদক রেজাউল ইসলাম মাজেদের পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ বাঁধে। এতে নজরুল ইসলাম হলের আবাসিক ও মার্কেটিংয়ের ৭ম ব্যাচের শিক্ষার্থী সাইফুল্লাহ খালিদের মাথায় গুলিবিদ্ধ হলে প্রথমে তাকে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়। পরবর্তীতে অবস্থার অবনতি হলে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিলে সাইফুল্লাহকে মৃত ঘোষণা করা হয়। ঢামেক হাসপাতালে খালিদের সহকর্মী এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
এ ঘটনায় আহত হয়েছেন অন্তত ১৫জন শিক্ষার্থী। এদের মধ্যে গুরুতর আহত হন আসাদুল ইসলাম রনি (বাংলা ৮ম ব্যাচ)। এ ছাড়া ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ায় দোতলা ও তিনতলার বারান্দা দিয়ে ঝাপ দিয়ে নিচে পড়লে মাথা ভেটে গুরুতর আহত হন রিয়াজ উদ্দিন (ইংরেজি ৪র্থ ব্যাচ), নওশাদের (বাংলা ৮ম ব্যাচ) পায়ে গুরুতর আঘাত পান। তাদেরকে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
থেমে থেমে প্রায় দুই ঘণ্টা ধরে চলে সংঘর্ষ। রামদা, ছুরি, চাপাতি, ছোড়াসহ নানান দেশীয় ও আস্ত্রেয় অস্ত্র নিয়ে চলে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার রক্তাক্ত সংঘর্ষ। সংঘর্ষের সময় ৩০৫, ২০৫ ও ২০৯ সহ বেশ কয়েকটি কক্ষে ভাংচুড় ও লুটপাট চালান হয়। এর মধ্যে রয়েছে ২০৫ নং কক্ষ হল ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক রোজা-ই-এলাহীর এবং ২০৯ নং কক্ষ যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক সোহেল রানার।
এদিকে যখন বঙ্গবন্ধু হলের সংঘর্ষ থামাতে প্রক্টরিয়াল বডিসহ হলের প্রশাসন কাজ করছে তখন কাজী নজরুল ইসলাম হলে অস্ত্র-সস্ত্র নিয়ে হামলা চালায় বহিরাগতরা। ব্যাপকভাবে ভাংচুরও চালান হয়। খবর পেয়ে নজরুল হলের প্রাধক্ষ্যসহ শিক্ষকরা গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন।
বিশ্ববিদ্যালয়েল প্রক্টর মো. আইনুল হক সাইফুল্লাহ খালেদের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করে বলেন, ‘এখন পরিস্তিতি নিয়ন্ত্রণে আছে। ক্যাম্পাসে পুলিশ মোতায়ন করা হয়েছে।’ আজ সোমবার সকাল ৭টায় এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন জরুরি সিন্ডিকেট সভা ডেকেছে বলে সূত্রে জানা যায়।
এদিকে ছাত্রলীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষে এক শিক্ষার্থী নিহত হওয়ার ঘটনায় কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় অনির্দিষ্টকালের বন্ধ ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ। একই সঙ্গে হল ত্যাগের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
সিন্ডিকেটের জরুরি সভায় এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। আজ সোমবার বেলা ১১টার মধ্যে ছাত্রদের ও দুপুর ২টার মধ্যে ছাত্রীদের হল ত্যাগের নির্দেশ দেয়া হয়।