কুড়িগ্রামে বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি
শাহ্ আলম, কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি : কুড়িগ্রাম জেলায় বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি হয়েছে। ধরলা নদীর পানি বিপদসীমার ৩০ সেন্টিমিটার ও ব্রহ্মপুত্রের পানি বিপদসীমার ১১ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। জেলার ৫৫ ইউনিয়নের প্রায় ২৫০ গ্রামের দেড় লক্ষাধিক মানুষ গত ৪ দিন ধরে পানিবন্দি জীবন যাপন করছে। জেলার নাগেশ্বরী পৌর এলাকার ডুবাছড়ি ব্রীজ ও সংযোগ সড়ক ভেঙ্গে যাওয়ায় বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে ডায়নারপাড়, দীঘিরপাড়, জামতলা, চৌবাড়ী, বাবুরহাট, ডাকনিরপাট, ভগিরভিটা, আরাজীকুমরপুরসহ ১০ গ্রামের প্রায় ৩০ হাজার মানুষ। অপর দিকে জেলার ৯ উপজেলার গ্রামাঞ্চলের কাঁচাপাকা সড়ক তলিয়ে থাকায় গ্রামাঞ্চলের যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়েছে।
কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার ব্রহ্মপুত্রের অববাহিকার ঝুনকার চরের বাসিন্দা আনোয়ার জানান, বন্যার পানিতে ঘর-বাড়ী সব তলিয়ে আছে। আর থাকার মতো অবস্থা নাই। বউ, বাচ্চ, হাস-মুরগী নিয়ে উচু বাধে আশ্রয় নিয়েছি। খাবার নাই, শুকনো খাবার খেয়ে কোন রকমে দিন পার করছি।
সদরের যাত্রাপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান, আব্দুল গফুর জানান, আমার ইউনিয়নে পানিবন্দি পরিবারের সংখ্যা প্রায় ৫ হাজার। এসব পরিবারের জন্য মাত্র ৩ টন চাউল বরাদ্দ পেয়েছি। তালিকা তৈরি হচ্ছে। কাল অথবা পৌষ্যদিন বিতরন করা হবে।
নাগেশ্বরী পৌরসভার মেয়র আব্দুর রহমান জানান, পানির প্রবল স্রোতে ডুবাছড়ি ব্রীজটি ভেঙ্গে ১০টি গ্রামের মানুষের যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। আমি ব্রীজটি পরিদর্শন করেছি। দ্রুত যোগাযোগের বিকল্প ব্যবস্থা করাসহ ব্রীজটি নির্মাণের জন্য চেষ্টা করা হবে।
কুড়িগ্রাম কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোঃ শওকত আলী জানান, বন্যার পানিতে গত ৪ দিন ধরে নিমজ্জিত হয়ে আছে জেলার প্রায় ৪৬ হাজার হেক্টর জমির আমন ক্ষেত।
দুর্গত এলাকায় ত্রান না পৌছায় দুর্ভোগে পড়েছে বানভাসীরা। দেখা দিয়েছে বিশুদ্ধ খাবার পানি ও গবাদি পশুর খাদ্য সংকট। জেলা প্রশাসন থেকে বন্যা দুর্গতদের জন্য ৮০ মেট্রিক টন চাউল বরাদ্দ দেয়া হলেও তা এখনও বিতরন শুরু হয়নি।
জেলা প্রশাসক খান মোঃ নুরুল আমীন জানান, বন্যা দুর্গতদের জন্য ৮০ মেট্রিক টন চাউল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। যা উপজেলা প্রশাসন ও ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানদের মাধ্যমে দ্রুত বিতরনের কাজ চলছে। আরো বরাদ্দ চেয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রনালয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে।
কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মাহফুজুর রহমান জানান, গত ২৪ ঘন্টায় চিলমারী পয়েন্টে ব্রহ্মপুত্রের পানি ৭ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার ১১ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। অপরদিকে সেতু পয়েন্টে ধরলার পানি ৩ সেন্টিমিটার কমলেও বিপদসীমার ৩০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। নুনখাওয়া পয়েন্টে ব্রহ্মপুত্রের পানি ৬ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার সামান্য নীচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
বাংলাদেশেরপত্র/এডি/আর