ক্যারিবিয়দের বিরুদ্ধে চার উইকেটের জয়ে আবারও চমকে দিল আইরিশরা
স্পোর্টস ডেস্ক:
নিউজিল্যান্ডের সেক্সটন ওভাল, নেলসন স্টেডিয়ামে বিশ্বকাপের এবারের আসরের ৫ম ম্যাচেই বড় ধরণের চমক দেখলো বিশ্ববাসী। ২০০৭ সালে বিশ্বকাপ শুরু করা আইরিশরা গত কাল ফেভারিট ক্যারিবিয়দের বিরুদ্ধে সামর্থের প্রমান দিয়ে চার উইকেটের সহজ জয় তুলে নেয়। এবারের আসরে গত চারটি ম্যাচেই প্রথম ইনিংসে ব্যাট করা দলের জয় হলেও নিজেদের অসাধারণ নৈপুন্যে গত কাল এ ছন্দটি নতুন করে রচনা করেন আইরিশ দলের ক্রিকেটারা।
বাংলাদেশ সময় ভোর চারটায় শুরু হওয়া ম্যাচের প্রথম ইনিংসে ব্যাট করতে নেমে নির্ধারিত ৫০ ওভার শেষে ৭ উইকেট হারিয়ে ৩০৪ রান করে ক্যারিবীয়রা। টস হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে শুরুর দিকে হোঁচট খেলেও সিমন্স-স্যামির কল্যাণে বড় সংগ্রহই গড়েছিল ক্যারিবীয় দল। আয়ারল্যান্ডের সামনে ৩০৫ রানের বিশাল টার্গেট দেয় তারা।
মূলতঃ লেন্ডল সিমন্সের ব্যাটে চড়েই হোঁচট খাওয়া ক্যারিবীয়দের বড় সংগ্রহ অর্জনটা সম্ভব হয়েছিল। সিমন্সের ৮৪ বলে করা ১০২ রানের ইনিংসটি হতাশার কুপ থেকে আশা জাগায় দলের অন্যান্যদের। শতকের পরের বলেই (৪৯.৫ বলে) ম্যাক্স সোরেনসেনের বলে আউট হন তিনি। এছাড়া ৬৭ বলে ৮৯ রানে আউট হয়ে সাজঘরে ফেরেন আরও এক সফল ক্যারিবিয় ব্যাটসম্যান ড্যারেন স্যামি।
ম্যাচের শুরুতে মাত্র ৮৭ রানে ৫ ইউকেট হারিয়ে বেকায়দায় পড়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। পরে সপ্তম উইকেট জুটিতে সিমন্স-স্যামি যোগ করেন ১৫৪ রান। আর এতেই ক্যারিবীয়দের ভিত্তি অনেকটা মজবুত হয়ে যায়। খেলার শেষ পর্যন্ত (৫০ ওভার) ক্রিজে থেকে অপরাজিত মাঠ ছাড়েন আন্দ্রে রাসেল ও অধিনায়ক জেসন হোল্ডার। শেষ মুহূর্তে দর্শকদের এক ঝড়ো ইনিংস উপহার দেন আন্দ্রে রাসেল। ১৩ বলে ২৭ রান তার সংগ্রহ। এর আগে, ম্যাচের ২২তম ওভারের দ্বিতীয় বলে জর্জ ডকরেল ফেরান ওয়েস্ট ইন্ডিজের সবচেয়ে বড় ভরসা ক্রিস গেইলকে। হাওয়ায় উড়িয়ে মেরে ক্যাচ আউট হন গেইল। ৬৫ বল খেলে ৩৬ রান করে গেইল যেন নিজের চরিত্রের বিপরীতমুখী একটা ইনিংসই খেললেন। তার পরের বলেই ডকরেল লেগবিফোর ফাঁদে ফেলেন স্যামুয়েলসকে। ৪১ বলে ২১ রান করে আউট হন তিনি। এরপর আবার ২৪তম ওভারের তৃতীয় বলে ডকরেল ‘লেগ বিফোর দ্যা উইকেট’ করেন দিনেশ রামদিনকে। তিনি ৬ বল খেলে করেন ১ রান। তারও আগে ৭ ওভার ৩ বলে প্রথম উইকেট পতন হয় ওয়েস্ট ইন্ডিজের। আউট হন ডুয়ান স্মিথ। স্মিথ ফিরেন ২৪ বলে ১৮ রান করে। এরপর ওভারের শেষ বলে গেইলের সঙ্গে ভুল বুঝাবুঝিতে রান আউট হন ড্যারেন ব্রাভো। তবে তিনি কোনো বলই খেলার সুযোগ পাননি।
ম্যাচে আয়ারল্যান্ড ছয়জন বোলার ব্যবহার করে। এরা হলেন- জন মুনি (৭ ওভারে ৫৯ রানে ১ উইকেট)। ম্যাক্স সোরেনসেন (৮ ওভারে ৬৪ রানে ১ উইকেট), অ্যাড্রু ম্যাকব্রাইন (১০ ওভারে ২৬ রান), কেভিন ও’ ব্রায়েন (৯ ওভারে ৭১ রানে ১ উইকেট), জর্জ ডকরেল (১০ ওভারে ৫০ রানে নেন সর্বোচ্চ ৩টি উইকেট) এবং পল স্টার্লিং (৬ ওভারে ৩৩ রান)।
মধ্যবিরতীর পর ক্যারিবীয়দের ৩০৫ রানের বিশাল টার্গেট তারা করতে মাঠে নামে আয়ারল্যান্ড দল। কিন্তু আয়ারল্যান্ড যে বরাবরই চমক দেখিয়েছে বিশ্বকাপ আসরে। টার্গেট পাহাড়সম হলেও মাত্র ৬ উইকেট হারিয়ে, ২৫ বল বাকি থাকতে অনায়াসেই জয়ের লক্ষ্য ছুঁয়ে ফেলে আয়ারল্যান্ড।
আইরিশদের জয়ে বড় ভূমিকা রাখেন মাত্র ৮৪ বলে ৯২ রান করা পল স্টারলিং। এছাড়া এড জয়েস খেলেন ৬৭ বলে ৮৪ রানের এক শৈল্পিক ইনিংস। এছাড়া অপাজিত থেকে দলের জয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন নেইল ও’ ব্রায়েন। তিনি করেছেন ৬০ বলে ৭৯ রান। তার সঙ্গে অপাজিত থাকেন জন মুনি। এছাড়াও আইরিশদের হয়ে আরও রান করেন- উইলিয়াম পোর্টারফিল্ড (৪৩ বলে ২৩ রান), অ্যান্ড্রুু বালবিরনি (৯ বলে ৯ রান), গ্যারি উইলসন (৬ বলে ১ রান)।
বিশ্বকাপ শুরুর আগে প্রস্তুতি ম্যাচে বাংলাদেশকে চার উইকেটে হারায় এই আয়ারল্যান্ড। তাই ক্যারিবীয়দের বিপক্ষে আত্মবিশ্বাস নিয়েই মাঠে নামে আইরিশরা। নিজেদের প্রথম ম্যাচেই যার ফল তারা দেখালো।
ওয়েস্ট ইন্ডিজ অধিনায়ক এ ম্যাচে মোট ৮ জন বোলার ব্যবহার করেন। তবে কোনো হাতিয়ারই তাদের কাজে আসেনি। আইরিশ ব্যাটসম্যানদের কাছে পাত্তা পায়নি ক্যারিবীয় কোনো বোলারই। ম্যাচে ওয়েস্ট ইন্ডিজের পক্ষে বলার মতো পারফর্ম করেছেন একমাত্র টেইলর। তিনি নিয়েছেন ৩ উইকেট। তবে খরচা করেছেন ৭১ রান।
৩৯ ওভার ২ বলে টেইলরের বলে এড জয়েস আউট হন। এরপর ৪১ ওভার ৩ বলে টেইলরের দ্বিতীয় শিকার হন অ্যান্ড্রু বালবিরনি। আউট হওয়ার আগে তিনি দলের খাতায় যুক্ত করেন ৯ রান। এর আগে ম্যাচের ২৭তম ওভারের পঞ্চম বলে শতক বঞ্চিত হয়ে ব্যক্তিগত ৯২ রান করে মারলন স্যামুয়েলসের বলে প্যাভিলিওনে ফেরেন পল স্টারলিং। তবে দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে দলকে শক্ত অবস্থানে নিয়ে যেতে ১০৬ রানের পার্টারশিপ গড়েন পল স্টারলিং এবং এড জয়েস। তবে সর্বপ্রথম দলীয় ৭১ রানের মাথায় ম্যাচের ১৩ ওভার ৩ বলে গেইল আউট করেন ওপেনার উইলিয়াম পোর্টারফিল্ডকে। উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেন পোর্টারফিল্ড। তিনি করেছেন ২৩ রান।
ওডিআই ইতিহাসের ৩ হাজার ৬শ’ ৩ নম্বর ম্যাচ ছিল এটি।ক্রিকেট মহাযজ্ঞে আইরিশদের পদচারণা শুরু হয় ২০০৭ সালে। ওয়েস্ট ইন্ডিজে অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপে পাকিস্তানের বিপক্ষে জয় তুলে নিয়েছিলেন আইরিশরা। এ ছাড়া ‘ডি’ গ্র“পের খেলায় জ্যামেইকায় জিম্বাবুয়ের সঙ্গে রোমাঞ্চকর ড্র ও করেছিল তারা। একের পর এক চমকপ্রদ ম্যাচের সাক্ষী হওয়ার পাশাপাশি ভক্তদের মনে নতুন করে জায়গা করে নিতেও সক্ষম হয়েছিল তারা। এরপর ২০১১ সালেও ভারতের বেঙ্গালুরুতে অনুষ্ঠিত গ্র“প পর্বের ম্যাচে ইংল্যান্ডকে ৩ উইকেটে হারিয়েছিল আয়ারল্যান্ড। সংক্ষিপ্ত স্কোর:
ওয়েস্ট ইন্ডিজ: ৫০ ওভারে ৩০৪/৭ (স্মিথ ১৮, গেইল ৩৬, ব্র্যাভো ০, স্যামুয়েলস ২১, রামদিন ১, সিমন্স ১০২, স্যামি ৮৯, রাসেল ২৭*, হোল্ডার ০; ডকরেল ৩/৫০, মুনি ১/৫৯, সরেনসেন ১/৬৪, কেভিন ১/৭১)।
আয়ারল্যান্ড: ৪৫.৫ ওভারে ৩০৭/৬ (পোর্টারফিল্ড ২৩, স্টার্লিং ৯২, জয়েস ৮৪, নায়াল ৭৯*, ব্যালবারনি ৯, উইলসন ১, কেভিন ০, মুনি ৬*; টেইলর ৩/৭১, স্যামুয়েলস ১/২৫, গেইল ১/৪১)।