খালেদার সিদ্ধান্তে কি ভাবছে তৃণমূল বিএনপি?
১৯৯৩ সাল থেকে ১৫ই অগাস্টে খালেদা জিয়ার জন্মদিন পালন শুরু হয়েছিল।
ডেস্ক রিপোর্ট: বিএনপি যদিও বলছে এই সিদ্ধান্তের পেছনে দেশের বন্যা পরিস্থিতি এবং রাজনৈতিক সংকটের কারণ রয়েছে, তবে কর্মীদের অনেকে মনে করছেন এর পিছনে ভিন্ন-বৃহত্তর কোনা দৃষ্টিভঙ্গি থাকতে পারে। বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমানকে স্ব-পরিবারে হত্যা করা হয়েছিল ১৯৭৫সালের ১৫ই অগাস্ট।
সেই দিনেই ঘটা করে খালেদা জিয়ার জন্মদিন পালনের বিষয়টি নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে সমালোচনা-বিতর্ক ছিল। ঢাকার নয়াপল্টনে বিএনপি’র কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, এবার ১৫ই অগাস্টের প্রথম প্রহরে দলটির নেত্রী খালেদা জিয়ার জন্মদিনের কোনো কেক কাটা হয়নি।
রাজনৈতিক সংকট এবং বন্যা পরিস্থিতির কারণে বেগম খালেদা জিয়া উৎসব করে জন্মদিন পালন করতে চাননি। দিনেও অন্য কোনো আনুষ্ঠানিকতা নেই।ভিড় নেই দলের নেতাকর্মীদের।হাতে গোনা কয়েকজন নেতাকর্মীকে দেখা যায়।তারা তাদের নেত্রীর সিদ্ধান্তকে ইতিবাচক হিসেবে বলছেন।
গুলশানে বিএনপি চেয়ারপার্সনের কার্যালয়ে খালেদা জিয়া গত রাত সাড়ে দশটা থেকে ঘণ্টা দুয়েক ছিলেন। সেখানেও কোনো কেক কাটা হয়নি। নেতাকর্মী যারা ফুল বা ফুলের তোড়া নিয়ে এসেছিলেন,সেই ফুল কার্যালয়ে প্রবেশের গেটে রেখে তারপর তারা ভিতরে যেতে পেরেছিলেন।
এমন সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে দেশের রাজনৈতিক এবং বন্যা পরিস্থিতি ও খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত বিষয়কে ব্যাখ্যা হিসেবে তুলে ধরেছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগির।
তিনি বলছিলেন, “রাজনৈতিক সংকট এবং বন্যা পরিস্থিতির কারণে বেগম খালেদা জিয়া উৎসব করে জন্মদিন পালন করতে চাননি।এছাড়া তাঁর ছেলে আরাফাত রাহমান যে মারা গেছেন।সে কারণে দু’দিন আগে তাঁরও জন্মদিন পালন করা হয়নি।এসব বিবেচনায় নিয়ে নেত্রী জন্মদিনে কোনো অনুষ্ঠান করা সমীচীন মনে করেন নি।”
মি: আলমগির বলেছেন, “কারও মৃত্যুর দিন বা কারও জন্মদিন থাকতে পারে। এটা স্পর্শকাতর বিষয়। এসব বিষয় না দেখে উনি যেভাবে ব্যাখ্যা দিয়েছেন, সেটা হচ্ছে,বর্তমান পরিস্থিতিতে তিনি কোনো আনুষ্ঠানিকতা করতে চাননি।”
বিএনপি
আজ নেতাকর্মীরা ফুল বা ফুলের তোড়া বিএনপি কার্যালয়ের বাইরে রেখে প্রবেশ করেছেন।
এই ব্যাখ্যা গ্রহণযোগ্য বলে মনে করেছেন ঢাকায় দলটির মাঠ পর্যায়ের নেতাকর্মীরা। তবে তাদের অনেকে ভিন্নভাবেও ভাবার চেষ্টা করেছেন। তারা মনে করেন, শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার দিনটিতে খালেদা জিয়ার জন্মদিন পালন নিয়ে যে সমালোচনা আছে, সেখান থেকে বেরিয়ে আসার জন্য বড় দৃষ্টিভঙ্গিও হতে পারে।
ঢাকার বাইরেও অনেক এমন ধারণা করছেন। উত্তরের একটি বিভাগীয় শহর রাজশাহীতে বিএনপি শক্ত অবস্থান রয়েছে।
সেখান থেকেও দলের একজন নেতা শাহীন শওকত বলছিলেন, “আসলে অনেক প্রেক্ষাপট,সময় অনেক কিছু বদলে দেয়।সব কিছু মিলিয়ে এখন নতুন প্রেক্ষাপট তৈরি হয়েছে।আর এই নতুন প্রেক্ষাপটে নেত্রী যদি কোনো নতুন দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করে থাকেন, সেটাকে আমরা তৃণমূলে স্বাগত জানাবো।”
জেনারেল এরশাদ সরকারের পতনের পর ১৯৯১ সালে খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে বিএনপি প্রথম ক্ষমতায় এসেছিল।
সেই সরকারের সময়ই ৯৩সাল থেকে ১৫ই অগাস্টে খালেদা জিয়ার জন্মদিন পালন শুরু হয়েছিল। এ নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে সমালোচনার কারণে বিএনপিতেও এক ধরণের অস্বস্তি ছিল। সেখান থেকে বিএনপি বেরিয়ে আসতে চাইছে বলে দলটির তৃণমূলেরই অনেক নেতা কর্মি মনে করছেন।
বিএনপি চেয়ারপার্সনের সহকারী প্রেস সচিব শায়রুল কবির খান বলেছেন, প্রতিক্রিয়া কি হয় সেটাও বিএনপি পর্যালোচনা করতে পারে।
“তিনি কেন আনুষ্ঠানিকতা পরিহার করলেন, সেটা যদি সকলে উপলব্ধি করেন। তাহলে তিনিও তা মেইনটেইন করবেন।”
বিএনপি নেতাদের অনেকে এটাও বলেছেন, দেশে সাম্প্রতিক জঙ্গি হামলার প্রেক্ষাপটে বিএনপি যে জাতীয় ঐকমত্যের কথা বলছে, তাও বিবেচনার নেয়া হয়েছে খালেদা জিয়ার এমন সিদ্ধান্তের পিছনে। বিবিসি বাংলা।