খুলনায় নাগরিক ভাবনা গোলটেবিল বৈঠক: প্রবাসীরা হারাবেন সাংবিধানিক ও নাগরিক অধিকার
প্রেস বিজ্ঞপ্তি: প্রস্তাবিত নাগরিকত্ব আইন পাস হলে প্রবাসীরা সাংবিধানিক ও নাগরিক অধিকার হারাবেন বলে মনে করেন সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা। গত বছর ১লা ফেব্রুয়ারি ‘বাংলাদেশ নাগরিকত্ব আইন-২০১৬’-এর খসড়া মন্ত্রিপরিষদের নিয়মিত বৈঠকে অনুমোদন লাভ করে। প্রস্তাবিত এ খসড়া আইন কোনো ব্যক্তির বাংলাদেশের নাগিরকত্ব লাভ, নাগরিকত্ব পেতে যোগ্যতা, অযোগ্যতা, নাগরিকত্ব বাতিল এবং তা নিয়ন্ত্রণের জন্য প্রথমবারের মতো প্রণীত পূর্ণাঙ্গ আইন। ইতিপূর্বে বাংলাদেশে নাগরিকত্ববিষয়ক বিধি-বিধান নিয়ন্ত্রিত হতো ‘দি সিটিজেনশিপ অ্যাক্ট ১৯৫১ এবং ‘দি বাংলাদেশ সিটিজেনশিপ টেম্পোরারি প্রভিশন্স অর্ডার-১৯৭২’র মাধ্যমে। প্রস্তাবিত আইনটি বাংলাদেশ নাগরিকত্ব অধ্যাদেশ, ১৯৭২ এবং আইন কমিশনের ২০০৫ ও ২০১২ সালের সুপারিশের ভিত্তিতে চূড়ান্ত করা হয়েছে। এ আইনে ৬ অধ্যায় ও ২৮টি ধারা রয়েছে। খসড়া আইনটি এখনো জাতীয় সংসদে বিল আকারে উপস্থাপন করা হয়নি। খুলনা মহানগর বিএনপি আয়োজিত বাংলাদেশ নাগরিকত্ব আইন,২০১৬ (খসড়া) ‘নাগরিক ভাবনা’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে বক্তারা এসব কথা বলেছেন।
বৈঠকে বক্তারা বলেন, প্রস্তাবিত এ আইনে প্রবাসী বাংলাদেশি নাগরিক, দ্বৈত নাগরিকত্ব অর্জনকারী বাংলাদেশি এবং বাংলাদেশে অবস্থানকারী অভিবাসীদের নাগরিকত্ব অর্জনের বিধানের সমালোচনা করছেন আইনজ্ঞ, অভিবাসী বিশেষজ্ঞ, মানবাধিকার নেতৃবৃন্দসহ সংশ্লিষ্টরা। বিশেষজ্ঞরা আরো বলেন, এ আইন কার্যকর হলে যারা প্রবাসী নাগরিক তারা বেশকিছু সাংবিধানিক ও নাগরিক অধিকার হারাবেন। তাদের মতে, আইনটি কার্যকর হলে প্রবাসী বাংলাদেশিরা দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিকে পরিণত হবেন। একই সঙ্গে প্রবাসে বসবাসরত দ্বিতীয় ও তৃতীয় প্রজন্মের বাংলাদেশের নাগরিকত্ব অর্জনের পথ রুদ্ধ করে দেয়া হবে এ আইনের মাধ্যমে। তাই আইনটি জাতীয় সংসদে পাস হওয়ার আগে এ নিয়ে আরো পর্যালোচনা ও বিবেচনার দাবি জানিয়েছেন।
প্রস্তাবিত নাগরিকত্ব আইনের ৬ ধারায় প্রবাসীগণের নাগরিকত্ব বিষয়ে বলা হয়েছে, বিদেশে বসবাসকারী কোনো ব্যক্তি বিধি দ্বারা নির্ধারিত পদ্ধতি ও শর্তে সরকারের কাছে তার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব লাভ করতে পারবেন, যদি তার পিতা বা মাতা বা পিতামহ বা মাতামহ তিনি বিদেশি নাগরিকত্ব গ্রহণের পূর্বে বাংলাদেশের নাগরিক হয়ে থাকেন। বক্তারা বলছেন এভাবে শর্ত সাপেক্ষে কোনো ব্যক্তির নাগরিকত্ব লাভের সিদ্ধান্ত যেমন সময়সাপেক্ষ তেমনি তা আমলাতান্ত্রিক জটিলতার কবলে পড়তে পারে। একই সঙ্গে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে এটি ব্যবহৃত হতে পারে বলে মনে করেন তারা।
আইনের ৭ নং ধারায় প্রবাসী নাগরিকদের ক্ষেত্রে নানা সীমাবদ্ধতার কথা বলা হয়েছে। যেমন ধারা ৬ এর অধীন নাগরিকত্ব প্রদান এবং বহাল রাখার ক্ষেত্রে সরকার, সরকারি গেজেটে প্রজ্ঞাপন দ্বারা, যে কোনো শর্ত আরোপ করতে পারবে। প্রস্তাবিত আইনের ৭ এর (২) উপধারা অনুযায়ী ধারা ৬-এর অধীন নাগরিকত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা বিভিন্ন সাংবিধানিক ও নাগরিক অধিকার হারাবেন। যেমন জাতীয় সংসদ সদস্য পদে নির্বাচন, প্রেসিডেন্ট পদে নির্বাচন, সুপ্রিম কোর্টের বিচারকসহ প্রজাতন্ত্রের কোন কর্মে নিয়োগ লাভ, স্থানীয় সরকারসহ যে কোনো পদে নির্বাচন এবং কোনো রাজনৈতিক সংগঠন করা। ৮ ধারার ১ উপধারা অনুযায়ী সুপ্রিম কোর্টের বিচারক, জাতীয় সংসদ সদস্য বা সাংবিধানিক পদে অধিষ্ঠিত, শৃঙ্খলা বাহিনীতে বা প্রজাতন্ত্রের অসামরিক কর্মে নিয়োজিত কোনো ব্যক্তি তাহার কর্মে বা পদে নিয়োজিত থাকাকালিন সময়ে দ্বৈত নাগরিকত্ব গ্রহণ করতে পারবেন না। প্রস্তাবিত আইন বিশ্লেষণ করে বক্তারা বলছেন, এ আইন দ্বারা প্রবাসের তৃতীয়, চতুর্থ প্রজন্মকে বাংলাদেশের নাগরিক হওয়ার পথ রুদ্ধ করা হচ্ছে। একই সঙ্গে দ্বৈত নাগরিকত্ব যাদের থাকবে তারা সরকারি চাকরি, সংসদ সদস্য পদে নির্বাচনসহ সরকারি নানা সুবিধা থেকে বঞ্চিত হবেন। এছাড়া দ্বৈত নাগরিকত্ব, বংশসূত্রে ও সম্মানসূচক নাগরিকত্বসহ বৈবাহিক সূত্রে নাগরিকত্ব যারা গ্রহণ করবেন, তারা বিভিন্ন সাংবিধানিক অধিকার থেকে বঞ্চিত হবেন এই আইনের মাধ্যমে। এতে করে সংবিধানের ২৭, ২৮ ও ২৯ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী নাগরিকের মৌলিক অধিকার হরণ করা হবে বলে মনে করেন তারা।
মহানগর বিএনপির সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য নজরুল ইসলাম মঞ্জুর সভাপতিত্বে এবং ব্যারিষ্টার কায়সার কামালের সঞ্চালনায় গতকাল শনিবার সকালে স্থানীয় একটি অভিজাত হাটেলে অনুষ্ঠিত গোলটেবিল বৈঠকে মুল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর ড. বোরহান উদ্দিন। বৈঠকে প্যানেল আলোচক ছিলেন সাবেক মন্ত্রী ও বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. মঈন খান, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু, এড. নিতাই রায় চৌধুরী, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা এম নুরুল ইসলাম দাদুভাই, সিনিয়র সাংবাদিক মাহফুজউল্লাহ, বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ও সুপ্রীমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক ব্যারিষ্টার মাহবুব উদ্দীন খোকন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক প্রফেসর ড. আক্তার হোসাইন, প্রফেসর ড. ওবায়েদুল ইসলাম, প্রফেসর ড. মোস্তফা কামাল, কেন্দ্রীয় বিএনপির আইন বিষয়ক সম্পাদক এড. সানাউল্লাহ মিয়া, সহ আইন বিষয়ক সম্পাদক এড. ইকবাল হোসাইন, খুলনা সিটি মেয়র মনিরুজ্জামান মনি। এছাড়া মুক্ত আলোচনায় অংশগ্রহন করেন আজিজুল বারী হেলাল, এড. আসাদুজ্জামান, অনিন্দ্র ইসলাম অমিত, শহিদুল ইসলাম বাবুল, এড. শফিকুল আলম মনা, ব্যারিষ্টার রাগিব রউফ চৌধুরী, এড. ওহিদুজ্জামান দিপু, এড. আনিছুর রহমান, এড. নাসির উদ্দীন খান স¤্রাট, অধ্যক্ষ মাজাহারুল হান্নান, এড. আব্দুল মালেক, এড. কদরত-ই-খুদা, ডা. জাফরুল্লাহ, স ম বাবর আলী, রফিকুল ইসলাম খোকন, এড. মোমিনুল ইসলাম, মুহাম্মাদ নুরুজ্জামান প্রমূখ। এছাড়াও আইনজীবী, শিক্ষক, মানবাধিকার কর্মী, সাংবাদিক, জনপ্রতিনিধি, সমাজকর্মী, উন্নয়নকর্মী, রাজনীতিবিদ ও নাগরিক নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।