Connecting You with the Truth

গাজীপুরে অপ্রতিরোধ্য সজিব গ্যাং: ৯ মামলা, বারবার গ্রেপ্তার, তবুও থামছে না অপরাধ

গাজীপুর সংবাদদাতা:
গাজীপুরে গত এক যুগে ৯টি মামলার আসামি হয়েও অপ্রতিরোধ্য সজিব গ্যাং। ডাকাতি, খুন ও অস্ত্র আইনের মতো গুরুতর অভিযোগে বারবার গ্রেপ্তার হলেও আইনের ফাঁক গলে জামিনে বেরিয়ে এসে আরও ভয়ংকর হয়ে উঠছে এই চক্রটি। পুলিশের লাগাতার অভিযান সত্ত্বেও তাদের দৌরাত্ম্য না কমায় গাজীপুরের কোনাবাড়ী, বাসন ও কালিয়াকৈর এলাকার জনমনে নিরাপত্তা নিয়ে তীব্র শঙ্কা তৈরি হয়েছে।

পুলিশ সূত্রে জানা যায়, ময়মনসিংহ জেলার নান্দাইল থানার সংগ্রামকেলী গ্রামের মৃত আবু সিদ্দিকের ছেলে মোঃ সজীব হোসেন (৩৪) গাজীপুর মহানগরীর কোনাবাড়ী এলাকায় গড়ে তুলেছে তার অপরাধ সাম্রাজ্য। তার নেতৃত্বে একটি সংগঠিত চক্র কোনাবাড়ী ও বাসন থানা এলাকায় ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে নিয়মিত ছিনতাই, ডাকাতিসহ নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড চালিয়ে আসছে। ২০১২ সাল থেকে তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় খুন, ডাকাতি, দস্যুতা ও অস্ত্র আইনে মোট ৯টি মামলা দায়ের হয়েছে।

সর্বশেষ গত ১৭ জুলাই কোনাবাড়ী থানা পুলিশ সজিবসহ তার চক্রের আট সদস্যকে দেশীয় অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার করে। কিন্তু গ্রেপ্তারের মাত্র ৪৩ দিন পর সেপ্টেম্বরের শুরুতে সবাই জামিনে মুক্তি পায়। জামিনে বেরিয়েই সজিব গ্যাং আরও বেপরোয়া হয়ে ওঠে। সেপ্টেম্বরেই বাসন থানা এলাকায় ছিনতাইকালে হামিদ নামের এক ব্যক্তিকে তারা হত্যা করে। এই হত্যাকাণ্ডে জড়িত রুহুল আমিন নামে সজিবের এক সহযোগীকে পুলিশ পুনরায় গ্রেপ্তার করে আদালতে সোপর্দ করে।

গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের কোনাবাড়ী থানা কয়েক মাসের ব্যবধানে তিনবার অভিযান চালিয়েও সজিব গ্যাংয়ের এই চক্র ভাঙতে হিমশিম খাচ্ছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, “আমরা গ্রেপ্তার করে আদালতে পাঠাই, কিন্তু তারা অল্প দিনের মধ্যেই জামিনে বেরিয়ে এসে আবার একই অপরাধে জড়িয়ে পড়ে।”

কোনাবাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোঃ সালাউদ্দিন বলেন, “আমরা আসামিদের গ্রেপ্তার করে মামলা দিই। কিন্তু জামিনে বেরিয়ে তারা পুনরায় অপরাধ জগতে ফিরে যায়। এতে পুলিশের অভিযান সাময়িক সাফল্য পেলেও অপরাধের টেকসই সমাধান হচ্ছে না, যা সাধারণ মানুষের নিরাপত্তাকে বিঘ্নিত করছে।”

এলাকাবাসীর অভিযোগ, বারবার অভিযান ও মামলা সত্ত্বেও সজিব গ্যাংয়ের দৌরাত্ম্য না কমায় তারা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন।

আইন বিশ্লেষকদের মতে, সজিব গ্যাংয়ের মতো অপরাধী চক্রগুলো বারবার গুরুতর অপরাধ করেও জামিন পেয়ে যাচ্ছে। আইনের ফাঁকফোকর এবং বিচারিক প্রক্রিয়ার দুর্বলতার কারণেই এমনটা ঘটছে। তারা আরও বলেন, “গুরুতর অপরাধে অভিযুক্তদের জামিন প্রক্রিয়া আরও কঠোর না হলে এবং বিচার দ্রুত সম্পন্ন না হলে পেশাদার অপরাধীরা আইনকে ভয় পাবে না। এর ফলে বিচার ব্যবস্থার প্রতি সাধারণ মানুষের আস্থা কমে যাওয়ার ঝুঁকি তৈরি হয়।”

Leave A Reply

Your email address will not be published.