গ্রিসের বেলআউট প্রশ্নে সমঝোতায় ইউরোজোন
আন্তর্জাতিক ডেস্ক : গ্রিসের অর্থনৈতিক সংকট নিরসনে গ্রিক নেতাদের সঙ্গে সমঝোতায় পৌঁছেছেন ইউরোজোন নেতারা। এর অর্থ দাঁড়াচ্ছে, অর্থনৈতিক দেউলিয়াত্ব থেকে আপাতত বেঁচে যাচ্ছে গ্রিস। ঋণের অর্থ পেতে যাচ্ছে দেশটি। দু-এক দিনের মধ্যে চালু হবে গ্রিসের সব ব্যাংক।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) চেয়ারম্যান ডোনাল্ড টাস্ক বলেছেন, সমঝোতা আলোচনার মধ্য দিয়ে গ্রিসের বেইল-আউটের নীতিতে ইউরোজোন নেতারা সম্মত হয়েছেন। এর মানে গ্রিসকে দেওয়া সহায়তা অব্যাহত থাকছে।
ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট জেন ক্লড জাঙ্কার বলেছেন, ‘গ্রিক্সিট হচ্ছে না’। অর্থাৎ ইউরোজোন থেকে গ্রিস আর বের হয়ে যাচ্ছে না।
বেইল-আউট নিয়ে ইউরোজোন নেতারা গ্রিসের সঙ্গে যে সমঝোতায় পৌঁছেছেন, তা বুধবারের মধ্যে গ্রিসের পার্লামেন্টে বিল আকারে উত্থাপিত হবে এবং যেহেতু সরকার বিষয়টির সঙ্গে সরাসরি জড়িত, তা পাস হয়ে যাবে বলে আশা করা হচ্ছে।
এদিকে নতুন যেকোনো বেইল-আউট ছাড় করার আগে ইউরোজোনের কয়েকটি দেশের পার্লামেন্টে তা পাস করানোর বিধান রয়েছে। ফলে গ্রিসকে অর্থনৈতিক সহায়তা দিতে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে সংশ্লিষ্ট ইউরো দেশগুলোকে।
রোববার বেলজিয়ামের রাজধানী ব্রাসেলসে শুরু হওয়া শীর্ষ সম্মেলনে ইইউ নেতারা টানা প্রায় ১৭ ঘণ্টা বৈঠক করে সমঝোতায় পৌঁছাতে সক্ষম হয়েছেন। বৈঠকের সময় বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আশঙ্কা জোরালো হচ্ছিল, হয়তো ইউরোজোনের সঙ্গে কোনো চুক্তি হচ্ছে না গ্রিসের। ইউরো মুদ্রা ত্যাগ করে নিজস্ব মুদ্রাব্যবস্থায় ফিরে আসছে গ্রিস। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তা সত্য হয়নি। ইউরোজোনে গ্রিস ছিল, গ্রিস থাকছে।
এর আগে অনেক চড়াই-উতরাই পাড়ি দিতে হয়েছে গ্রিসকে। ঋণদাতাদের শর্তে রাজি না হওয়ায় বেইল-আউটের ডেডলাইন পার হয়ে যায়। এতে মারাত্মক অর্থনৈতিক সংকটে পড়ে গ্রিস, যা দেশটির ইতিহাসে আগে কখনো এমন অচলাবস্থা সৃষ্টি হয়নি। সেই চ্যালেঞ্জ নিয়েও বিশ্বের সবচেয়ে বড় আঞ্চলিক জোট ইইউর ইউরোজোনের নেতাদের সঙ্গে দর-কষাকষি শুরু করে গ্রিস। দাতাদের শর্ত মানা হবে কি না, তা জানতে চেয়ে গণভোট দেয় গ্রিসের বামপন্থি সরকার। প্রধানমন্ত্রী অ্যালেক্সিস সিপরাসের আহ্বানে সাড়া দিয়ে গণভোটে যে রায় দেন গ্রিকবাসী, তাতে হতবাক হয় গোটা ইউরোপ।
গণভোটে ঋণদাতাদের প্রস্তাব নাকচ হয়ে যাওয়ার পর নতুন করে আলোচনা শুরু করে গ্রিস ও ইউরোজোন। এর ধারাবাহিকতায় অর্থনৈতিক সংস্কারের প্রস্তাব দেয় গ্রিস। যা অনেকটাই সংশোধন করতে হয়েছে। গ্রিসকে প্রতিশ্রুতি দিতে হয়েছে, দাতাদের সঙ্গে সবশেষ যে সমঝোতা হয়েছে, তার শর্তগুলো তারা মেনে চলবে।
সমঝোতার খবরে গ্রিসের আনন্দের বন্যা বইছে। মুহূর্তে আনন্দ র্যালি বের করে গ্রিকরা। ব্যবসা-বাণিজ্যসহ সরকারি সব কার্যক্রম শুরু হবে শিগগিরই। অনিশ্চয়তার অন্ধকার থেকে আশার আলোর পথে হাঁটার সুযোগ পেল গ্রিসবাসী।
তথ্যসূত্র : বিবিসি ও আলজাজিরা অনলাইন।