ঘাম নামের বিপত্তি
রকমারি ডেস্ক:
দেখতে দেখতে পড়ে গেল গরম। আর গরম মানেই ঘামে ভিজে যাবার দিন। প্রত্যেক সুস্থ মানুষই ঘামে। প্রতি বর্গ সেন্টিমিটার ত্বকে প্রায় ৪০০টি ঘর্মগ্রন্থি বা সোয়েট গ্ল্যান্ড থাকে, ত্বকের বিভিন্ন স্তর ভেদ করে ঘর্মনালী বের হয়। শেষ হয় ত্বকের একদম উপরিভাগে ছোট ছোট ঘর্মছিদ্র বা সোয়েট পোর-এ। এই ছিদ্রগুলো দিয়ে ঘাম ত্বকের ওপর আসে, বাষ্পীভূত হয়ে বাতাসে মিশে যায়। একজন পূর্ণবয়স্ক মানুষের ত্বকে প্রায় ৩০ লক্ষ ঘর্মগ্রন্থি থাকে। বেশি থাকে হাতের তালু ও পায়ের পাতায়। এক্রিন ও অ্যাপোক্রিন – এই দুই ধরনের ঘর্মগ্রন্থি থাকে আমাদের ত্বকে। এক্রিন গ্রন্থি সারা দেহ জুড়েই থাকে। বেশি থাকে হাতের তালু আর পায়ের তলায়। আর অ্যাপোক্রিন গ্রন্থি বেশি থাকে বগলে ও জঙ্ঘাতে। বয়ঃসন্ধিক্ষণে হরমোনের প্রভাবে এদের ক্ষরণ বেশি হয়। ঘামের শতকরা ৯৯ ভাগই পানি। বাকি ১ ভাগের মধ্যে থাকে নানা ধরনের লবণ, অ্যাসিড, ইউরিয়া, প্রোটিন, অ্যামোনিয়া ইত্যাদি। ঘামকে আমরা বিপত্তি হিসেবে দেখলেও ঘাম আমাদের দেহের নানা উপকার করে। দেহের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ, দেহে পানির পরিমাণ ঠিক রাখা, ত্বককে আর্দ্র রাখা, রোগজীবাণু প্রতিরোধ ও অ্যাসিড ও ক্ষারের সমতা নিয়ন্ত্রণ ইত্যাদি অনেক কিছুই করে এই ঘাম। ঘামের পরিমাণ কমে গেলে নানা ক্ষতিকর পদার্থ দেহে জমে থাকে, বের হতে পারে না। ফলে অস্বস্তি শুরু হয়, ত্বকের স্বাভাবিক কাজকর্মও ব্যাহত হয়। অনেকের বেশি ঘাম হয়। এটা কোনো অসুখ নয়। কোনো ওষুধ খেয়ে ঘাম কমানোর চেষ্টা করা ঠিক নয়। বাজারে নানা রকম ঘাম নিরোধক অ্যান্টিপার্সপিরান্ট ক্রিম, স্প্রে, লোশন, পাউডার ইত্যাদি পাওয়া যায়। এদের অধিকাংশের মধ্যেই থাকে অ্যালুমিনিয়াম সল্ট, যা ঘর্মছিদ্রকে আটকে দিয়ে ঘামকে দেহের বাইরে আসতে দেয় না। অনেকের ঘামে বেশ দুর্গন্ধ হয়। আসলে দেহত্বকের নানা ব্যাকটেরিয়াই এ জন্য দায়ী। এই দুর্গন্ধ দূর করতে বাজারে নানা ধরনের সুগন্ধি ডিওডোরেন্ট পাওয়া যায়, যেগুলোতে ব্যাকটেরিয়া নাশক নানা রাসায়নিক মেশানো থাকে। তবে ঘামের অস্বস্তি দূর করতে কিছু স্বাস্থ্যবিধি আপনাকে মানতেই হবে।
– গরমে একাধিকবার গোসল করলে ঘামের অস্বস্তি থেকে অনেকটাই রেহাই মেলে।
– দেহত্বক সবসময় পরিষ্কার রাখুন। দেহে ঘাম জমে থাকতে দেবেন না।
– স্যাঁতস্যাঁতে বা গুমোট আবহাওয়া এড়িয়ে চলুন।
– পেঁয়াজ, রসুন, মাংস কম খেলে ঘামেও দুর্গন্ধ কম হবে।