চুনারুঘাটে এক মুক্তিযোদ্ধার নীরব কান্না ও মানবেতর জীবনযাপন
চুনারুঘাট (হবিগঞ্জ) প্রতিনিধি: হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলার মিরাশী ইউনিয়নের বড়াব্দা গ্রামের মৃত আমিন আলীর পুত্র বীর মুক্তিযোদ্ধা আকছির মিয়া মানবেতর জীবনযাপন করছেন। মুক্তিযুদ্ধের চেতনাই ছিল মুক্তিযুদ্ধে প্রেরণা আর এ মনোবল থেকে নিজের জীবন বাজি রেখে পাকিস্তানী দোসর হানাদার বাহিনীর হাত থেকে স্বাধীনতা ছিনিয়ে আনার লক্ষ্যে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েন।
১৯৫২ সালে ১১ই ডিসেম্বর মিরাশী ইউনিয়নের বড়াব্দা গ্রামে মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। নির্যাতন অসম বৈষম্য শুরু করে পূর্ব পাকিস্তানের উপর পশ্চিম পাকিস্তান। প্রতিবাদী মুখর হয়ে ওঠে পূর্ব পাকিস্তানের যুব, বৃদ্ধ, আবালবনিতা। মা, বোনদের ইজ্জতের উপর চলে নির্যাতনের স্টিম রুলার।
এই পৈশাচিক জুলুম, বৈষম্যের প্রতিবাদে দেশকে হানাদার বাহিনীর হাত থেকে মুক্ত করার লক্ষ্যে মাত্র ১৮ বছর বয়সে আকছির মিয়া মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েন। জনৈক ভারতীয় সৈনিকের তত্তাবধানে প্রশিক্ষণার্থী ছিলেন টগবগে আকছির মিয়া তিন মাস প্রশিক্ষণ সমাপ্ত করে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। তার কোম্পানী কমান্ডার ছিলেন হায়দর আলী। ট্রেনিং চলাকালীন সময়ে সহ যোদ্ধাদের কথা এখনও স্পষ্ট বলতে না পারলেও অনেকের কথা যথেষ্ট চেষ্টার সমন্বয়ে বলা সম্ভব হয়েছে।
যেমন- বীর মুক্তিযোদ্ধা মস্তু মিয়া, আঃ মজিদ, ছালেক মিয়া, ইদ্রিছ মিয়া সহ অনেকের নাম বলেও বলতে পারছেন না আকছির মিয়া। বীর মুক্তিযোদ্ধা নিজের জীবনের মৃত্যু জেনেও যুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়েন ৩নং সেক্টরে সেক্টর কমান্ডার এম. সাফিউল্লার নেতৃত্বে হানাদার বাহিনীর দখলে থাকা তৎকালীন হবিগঞ্জ জেলার চুনারুঘাটে পাকিস্তানী দোসরদের প্রতিহত করে ৬ই ডিসেম্বর স্বাধীন মুক্তির বার্তা নিয়ে চুনারুঘাটে আগমন করেন। বীর মুক্তিযোদ্ধা আকছির মিয়া ৪৪ বছর ধরে দেশ স্বাধীন হওয়ার পরও তিনি মুক্তিযোদ্ধা ভাতা সহ সরকারি সকল সুযোগ-সুবিধা হতে বঞ্চিত। বীর মুক্তিযোদ্ধা আকছির মিয়ার মুক্তিযোদ্ধা তালিকা অর্ন্তভূক্তি নম্বর- ৭৫।
আকছির মিয়ার সাথে আলাপ করলে তিনি জানান, তার সহযোদ্ধা ইদ্রিছ মিয়া, গ্রাম- মহদিরকোনা, রফিক মিয়া, গ্রাম- মহদিরকোনা, মতিন মিয়া গ্রাম- নিশ্চিন্তপুর তারা মুক্তিযোদ্ধা ভাতাসহ সকল সুযোগ-সুবিধা পেয়ে আসছে। কিন্তু মুক্তিযোদ্ধা আকছির মিয়া এখন পর্যন্তও কোন প্রকার ভাতাদি পাচ্ছেন না। মুুক্তিযোদ্ধার যাবতীয় কাগজপত্র থাকার পরও তিনি মুক্তিযোদ্ধার ভাতা থেকে বঞ্চিত।
বীর মুক্তিযোদ্ধার বয়স বর্তমানে ৬৫ বছর হওয়ায় বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে ভুগছেন। পরিবারের অন্যান্য সদস্যরাও অত্যন্ত অসহায়ভাবে দিনযাপন করছে। এই বৃদ্ধ বয়সে তিনি মুক্তিযোদ্ধা হয়েও ভাতা না পাওয়ার কারণে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। তিনি মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের কাছে মুক্তিযোদ্ধা ভাতা পাওয়ার ব্যবস্থা করে দেওয়ার জন্য সুদৃষ্টি কামনা করেন।