Connecting You with the Truth

চুনারুঘাটে ভূয়া মুক্তিযোদ্ধা কর্তৃক সরকারি অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ

হবিগঞ্জেচুনারুঘাট (হবিগঞ্জ) প্রতিনিধি: হবিগঞ্জের চুনারুঘাটে ভূয়া মুক্তিযোদ্ধা কর্তৃক সরকারি ভাতা উত্তোলণ ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা গ্রহণ করে সরকারি অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ পাওয়া গেছে। অর্থ আত্মসাতের পাশাপাশি মহান মুক্তিযুদ্ধের সময়কালে ভূয়া তথ্য প্রদান করে দেশবাসীকে বিভ্রান্ত করার অপচেষ্টাকারী ভূয়া মুক্তিযোদ্ধার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় সহ বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত পত্র প্রেরণ করেছেন বলে জানা যায়। উপজেলার মিরাশী ইউনিয়নের লাদিয়া গ্রামের মৃত সৈয়দ মুসলিম মিয়ার পুত্র সৈয়দ ইদ্রিস মিয়া ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ না করেও বাংলাদেশ সরকার প্রদত্ত সকল প্রকার সুযোগ সুবিধা হাতিয়ে নিচ্ছেন। এমনকি ভূয়া মুক্তিযোদ্ধার সনদ ব্যবহার করে ইদ্রিস মিয়ার পুত্রের পল্লী বিদ্যুত, সুনামগঞ্জে চাকুরী পায়। মুক্তিযোদ্ধার ছেলে হিসেবে নাম প্রকাশ করে চাকুরী নেন।
এ ঘটনায় জনমনে বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবদিহিতা চলতে থাকে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের মাঝে। তারা বলেন যে, ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় ইদ্রিস মিয়া রাজাকার ছিল। এখন রাজাকার থেকে কিভাবে মুক্তিযোদ্ধা হয় এটা জনগণের মাঝে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। পাল্টা পাল্টি উভয়ের মাঝে উত্তেজনা বিরাজ করছে। এ ভূয়া মুক্তিযোদ্ধার মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ নিয়ে ইদ্রিসের ঘনিষ্ঠ আত্মীয় স্বজনদের মাঝে সন্দেহ আছে বলে তাদের মাঝে দফায় দফায় বিভিন্ন সময়ে ঝগড়া বিবাদ লেগে থাকে।
এলাকাবাসীরা জানান, সে কিভাবে তার ছেলেকে মুক্তিযোদ্ধার কোটা দিয়ে পল্লী বিদ্যুৎ অফিসে চাকুরী নেয়। এতে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের সুনাম নষ্ট করে আসছে ইদ্রিস মিয়া। মুক্তিযোদ্ধার নাম ব্যবহার করে স্থানীয় জনসাধারণের মাঝে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করার করণে শংকিত এলাকাবাসী। মুক্তিযোদ্ধা সংসদের চুনারুঘাট কমান্ডারের সাথে যোগাযোগ করলে আসল তথ্য বেরিয়ে আসে। প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধার সূত্র মতে ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় ভারতের ট্রেনিং সেন্টারের প্রশিক্ষণ প্রাপ্তদের তালিকায় ইদ্রিস মিয়ার নাম নেই এবং ইদ্রিস মিয়ার সাথে আরো ১৩৩ জন ভূয়া মুক্তিযোদ্ধার একটি তালিকা মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করা হয়েছে বলে জানান।
এ ব্যাপারে মুক্তিযোদ্ধা সংসদের ডেপুটি কমান্ডার লেঃ কর্পোঃ অবঃ আব্দুল হক জানান, প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধারা নিরীহ, সহজ, সরল চলাফেরা করলেও ভূয়া মুক্তিযোদ্ধাদের দাপটে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের মাঝে অস্থিরতা বিরাজ করছে। প্রতিদিনই এরকম অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে বলেও কমান্ডার লেঃ কর্পোঃ অবঃ আব্দুল হক জানান। তবে ভূয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করার অনুরোধ জানালে মন্ত্রণালয়ে পত্র প্রেরণ করা হয়েছে। শীঘ্রই ভূয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ও আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলেও তিনি জানান।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মুক্তিযোদ্ধা নাম ব্যবহার ও সৈয়দ বংশ লাগিয়ে ব্যবহার করে যাচ্ছে ভূয়া ইদ্রিস মিয়া সকল অপকর্মের হোতা হয়ে পরিচয় এলাকার জনগণের কাছে। সে বিভিন্ন অপকর্মে জড়িত থাকার কারণে গ্রামের সাধারণ মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে বিগত কিছুদিন পূর্বে দৌলত মিয়া ও হেনা আক্তার বাদী হয়ে ২টি চুরি ও ডাকাতির মামলা ইদ্রিস আলী সহ ৬/৭ জনের বিরুদ্ধে হবিগঞ্জ আদালতে দায়ের করেন। মামলা ২টি বিচারাধীন রয়েছে। ইদ্রিস মিয়া সহ ভূয়া মুক্তিযোদ্ধাদের দমন করতে না পারলে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মান ও মুক্তিযোদ্ধাদের আদর্শ ঠিকিয়ে রাখা খুবই কঠিন হয়ে পড়বে বলে জানান প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধারা।
উল্লেখ্য যে, ১৯৯৬ সালে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ ক্ষমতা গ্রহণের পর মুক্তিযোদ্ধার তালিকা প্রণয়নের নির্দেশ দেওয়া হয়। সেই নির্দেশে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিলের চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ আহাদ চৌধুরীর নেতৃত্বে সারা দেশে মুক্তিযোদ্ধা তালিকা প্রণয়নের জন্য ৩০ লক্ষ ফরম বিতরণ করা হয়। উক্ত ফরমের তথ্য মতে প্রায় ১ লক্ষ ৮২ হাজার মুক্তিযোদ্ধার তালিকা প্রণয়ন শুরু করা হয়। এরই মধ্যে প্রায় ১ লক্ষ ৫২ হাজার মুক্তিবার্তার তালিকায় অর্ন্তভূক্ত করা হয়। এরই মধ্যে প্রায় রাজাকার, আল বদর, আল শামস সহ যারা মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করে নাই তারাও ঐ তালিকায় নাম অর্ন্তভূক্ত হয়। ভূয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বিরুদ্ধে স্থানীয়ভাবে ১৯৯৭-৯৮ সালে বিভিন্ন দপ্তরে তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। বর্তমানেও তাদের বিরুদ্ধে ভূয়া মুক্তিযোদ্ধা সনাক্তকরণ ও তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য জন প্রশাসনকে দায়িত্ব দিলেও রহস্যজনক কারণে ভূয়া ও সঠিক মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা আজও জনসমক্ষে প্রকাশিত হয়নি। একজন মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার বলেন, সারা দেশে অধিকাংশ মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড ভূয়া মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ন্ত্রণে থাকায় ভূয়াদের তালিকা প্রকাশিত হচ্ছে না। এবং অবৈধভাবে ওইসব সরকারি সম্পদের অপচয় করছেন।

Comments
Loading...