”চুড়ি কিনতে যাওয়া হলো না হাসানের”
খুলনার রূপসা উপজেলার বাগমারা গ্রামের জাহাঙ্গীর শেখ এর ছেলে হাসান। প্রতিদিনের মত সকালে ভাড়ায় চালিত মোটর সাইকেল নিয়ে বের হয় সে। রূপসা বাসস্টান্ড থেকে খুলনার খৈল-কুড়া ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান এম দেওয়ান স্টোর এর ম্যানেজার প্রদিপ সাহা ও কর্মচারি রফিক তাদের পাওনা আদায়ের জন্য হাসানকে তার ডিসকভার মোটর সাইকেলসহ নিয়ে যায় রামপাল ও ফয়লা এলাকায়।
দিনভর পাওনা আদায় শেষে রাতে ফেরার পথে চুলকাঠির নবাবপুর চালতেতলা এলাকায় পৌছালে দুটি মোটর সাইকেলে থাকা ৪/৫ জন ছিনতাইকারী তাদের গতিরোধ করে। আরোহীদের কথামত হাসান ছিনাইকারীদের সিগনাল অমান্য করে বিপদমুক্ত হওয়ার চেষ্টা করলে ছিনতাইকারীরা পিছন দিক থেকে গুলি বর্ষণ করতে থাকে। এসময় পর পর তিনটি গুলি পিছন দিক থেকে হাছানের ডান পাজড় ভেদ করলে ঘটনাস্থলে তার মৃত্যু হয়। গুলিবিদ্ধ হয়ে মারাত্মক আহত হয় প্রদিপ ও রফিক। ঘটনার সাথে সাথে গুলির শব্দ শুনে আশ-পাশ এলাকার লোকজন ও পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌছে গুলিবিদ্ধ প্রদীপ ও রফিককে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ও হাসানের মৃত দেহ বাগেরহাট সদর হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করে।
ঘটনার দিন ছিলো হাসানের বিবাহ বার্ষিকী। বাড়ী ফিরে স্ত্রী ও সন্তানকে নিয়ে মার্কেটে যাওয়ার কথা থাকলেও সে আশা পুরণ হয়নি মোটর সাইকেল চালক হাসানের। ছিনতাইকারীদের কবল থেকে মোটর সাইকেলে থাকা আরোহীর টাকা রক্ষা করতে গিয়ে বন্দুকের বুলেটে জীবন দিতে হলো তাকে।
ঘটনাটি ঘটেছে ২১ সেপ্টেম্বর রাত ৯টায় খুলনা-মংলা মহাসড়কের চুলকাঠির নবাবপুর চালতেতলা এলাকায়। পরদিন ২২ সেপ্টেম্বর শনিবার দুপুরে ময়না তদন্ত শেষে হাসানের মরদেহ বাড়ীতে আনলে এক হৃদয় বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়। হাসানের মা হাসিনা বেগম ও স্ত্রী শানুর আহাজারীতে আকাশ বাতাস ভারী হয়ে ওঠে। নির্বাক হয়ে পড়ে ৫ বছরের একমাত্র শিশু কণা ফারিয়া। হাসানকে শেষবারের মত একনজর দেখার জন্য ভিড় বাড়তে থাকে নিহত হাসানের বাড়িতে। হাসানের স্ত্রী জানায় ওই দিন তাদের বিবাহ বার্ষিকী ছিলো। হত্যাকান্ডের কিছু সময় আগেও তারা স্বামী-স্ত্রী ফোনে আলাপ করে। হাসান তার স্ত্রীকে বলে তুমি রেডি হয়ে থেকো, বাড়ী ফিরে তোমার জন্য চুড়ি কিনতে যাবো। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাস। জীবন্ত হাসানের আর বাড়ী ফেরা হয়নি।
এদিকে হাসানকে নির্মমভাবে গুলি করে হত্যার প্রতিবাদ ও হত্যাকারীদের গ্রেফতারের দাবিতে ২২ সেপ্টেম্বর বিকেলে পূর্ব রূপসা বাসস্টান্ডে মানববন্ধন করে ভাড়ায় চালিত মোটর সাইকেল চালক সমিতির নেতৃবৃন্দ। মানববন্ধনে অবিলম্বে খুনিদের গ্রেফতারপূর্বক দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানানো হয়।