জাহেলিয়াতের অন্ধকারে নিমজ্জিত সারা পৃথিবী- হোসাইন মোহাম্মদ সেলিম
বিডিপত্র ডেস্ক: সারা পৃথিবী জাহেলিয়াতে নিমজ্জিত হয়ে আছে বলে মন্তব্য করেছেন হেযবুত তওহীদের এমাম হোসাইন মোহাম্মদ সেলিম। শুক্রবার বিকেলে রাজধানীর উত্তরায় আয়োজিত এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন। তিনি বলেন, ‘আইয়্যামে জাহেলিয়াতের অন্ধকার বিদীর্ণ করে সূর্যের উদয় ঘটাতে এসেছিলেন আল্লাহর শেষ রসুল মোহাম্মদ (সা.)। আল্লাহ কোর’আনে আমাদেরকে দোয়া করতে শিখিয়েছেন, হে আল্লাহ, আমাদের দুনিয়ার জীবনকে সুন্দর করে দাও এবং আখেরাতের জীবনকেও সুন্দর করে দাও। আল্লাহর রসুল বলেছেন, দুনিয়া আখেরাতের শস্যক্ষেত্র। এরপরও আমরা কীভাবে দুনিয়াকে অবজ্ঞা করে, দুনিয়াকে সুন্দর না করেই সুন্দর পরকাল আশা করি?
তিনি মুসলমানদেরকে দুনিয়াবিমুখকতা ত্যাগ করার আহবান জানিয়ে বলেন, ‘হে মুসলমান, দুনিয়াকে কুৎসিত করে রেখে সুন্দর পরকাল তোমরা কখনই পাবে না। দুনিয়াকে আগে সুন্দর কর। কেমন সুন্দর? অন্যায় নেই অবিচার নেই, দুর্নীতি নেই, রক্তপাত নেই, খুন নেই, শোষণ নেই, বঞ্ছনা নেই- এরকম সুন্দর কর। আজকে আমাদের দুনিয়া সুন্দর নয়, অসুন্দর। হাসান নয়, আইয়ামে জাহেলিয়াত। এই জাহেলিয়াত থেকে মানুষকে মুক্তি দিতে আপনারা নিজেদেরকে উৎসর্গ করুন। তবেই হবেন মো’মেন। আসবে আল্লাহর সাহায্য।’
হেযবুত তওহীদের এমাম বিশ্বনবীর কয়েকটি ভবিষ্যদ্বাণী তুলে ধরে বলেন, ‘আজ আমরা মুসলমানরা যেই দুর্দশার মধ্যে পড়েছি তা গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করতে হবে। আল্লাহর রসুল বলেছিলেন, এমন সময় আসবে ইসলাম শুধু নাম থাকবে। আজকে ইসলাম শুধু নামেই আছে। বাস্তবে শান্তি নাই। তিনি বলেছিলেন, কোর’আন শুধু অক্ষর থাকবে। বাস্তবেই কোর’আন কেবল অক্ষরের মধ্য সীমাবদ্ধ হয়ে আছে, কোর’আনের হুকুম কোথাও চলে না। আবার তিনি বলেছেন, মসজিদসমূহ লোকে লোকারণ্য হবে কিন্তু হেদায়াহ থাকবে না। আজকে আমরা দেখি মসজিদের ভেতরে জায়গা পাওয়া যায় না বলে বাইরে রাস্তায় দাঁড়িয়ে মানুষ নামাজ পড়ে- কিন্তু হেদায়াহ নেই, সঠিক রাস্তা নেই। একেক জন একেক রাস্তায় জান্নাতের আশায় ছুটছে। আল্লাহর রসুল আরেক হাদিসে বলেন, এমন সময় আসবে মানুষ তাহাজ্জুদ পড়বে কিন্তু সেটা হবে কেবল ঘুম নষ্ট করা অর্থাৎ কবুল হবে না এবং রোজা রাখবে কিন্তু সেটা হবে কেবল না খেয়ে থাকা অর্থাৎ রোজা কবুল হবে না। এখন সেই সময়। কারণ আমরা আমলে পরিপাটি হলেও ঈমানে নেই। ঈমান হচ্ছে- আল্লাহ ছাড়া কোনো হুকুমদাতা নেই এই সাক্ষ্য দেওয়া। আমরা কি আল্লাহর হুকুম মেনে নিয়েছি? নেইনি। আল্লাহর অস্তিত্বে বিশ্বাস করা এক জিনিস, আর আল্লাহর হুকুম মানা অন্য জিনিস। আমরা বিশ্বাস করি আল্লাহ আছেন, তিনি পালনকর্তা, রিজিকদাতা ইত্যাদি। কিন্তু হুকুম মানি দাজ্জালের। তারপরও কীভাবে আমরা মো’মেন থাকি?’
মুসলমানদের দুর্দশার চিত্র তুলে ধরে তিনি আরও বলেন, ‘আল্লাহর রসুল বলেছিলেন আখেরী জামানায় এমন সময় আসবে মানুষ যেভাবে খাবার খাওয়ার জন্য একে অপরকে ডাকে সেভাবে অন্যান্য জাতি একে অপরকে ডাকবে মুসলমানদের ধ্বংস করার জন্য। আজ আমরা দেখতে পাচ্ছি সিরিয়া, ইরাকে, আফগানিস্তানে, লিবিয়ায়, ইয়েমেনে কী হচ্ছে। সিরিয়া আজ গণকবর। একজন হামলা চালায় আরেকজন জবাব দেয়। আমেরিকাও জবাব দেয়, রাশিয়াও জবাব দেয়, ব্রিটেনও জবাব দেয়, ফ্রান্সও জবাব দেয়, সিরিয়ার সরকারও জবাব দেয়। আমার কথা হচ্ছে- বোমাটা পড়ে কোথায়? মুসলমানদের বুকে। দেশ ধ্বংস হয় কার? মুসলমানের। উদ্বাস্তু হয় কারা? মুসলমান। আল্লাহর রসুল যখন ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন তখন সাহাবীরা তাঁকে প্রশ্ন করলেন, এই অবস্থা কেন হবে? আমরা কি সংখ্যায় এতই কমে যাব? আল্লাহর রসুল বললেন, সংখ্যায় তোমরা হবে অসংখ্য, কিন্তু তোমাদের অবস্থা হবে ¯্রােতে ভেসে যাওয়া আবর্জনার মত। আল্লাহর রসুল যাদেরকে স্রোতে ভেসে যাওয়া আবর্জনা বলেন তারা কি মো’মেন হতে পারে? কখনই না। আজকের এই অবস্থাই প্রমাণ করে আমরা এখন মো’মেন নেই। আল্লাহ আমাদেরকে মো’মেন হিসেবে কবুল করছেন না। আমাদের সমস্ত আমল নিষ্ফল হচ্ছে। এখন একমাত্র উপায় মো’মেন হওয়া। আল্লাহর হুকুম ছাড়া কারো হুকুম মানব না- এই কথার ভিত্তিতে ঐক্যবদ্ধ হওয়া। হেযবুত তওহীদের এটাই আহবান।’