Connecting You with the Truth

টি-টুয়েন্টিতেও সিরিজ হাতছাড়া বাংলাদেশের

মাউন্ট মঙ্গুনুইয়ে নিউজিল্যান্ডের কাছে দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টিতে ৪৭ রানে হেরে সিরিজও খোয়াল মাশরাফি বিন মুর্তজার দল। শুক্রবার ৮টায় শুরু হওয়া ম্যাচে নির্ধারিত ২০ ওভারে ৭ উইকেটে ১৯৫ রানের পুঁজি পায় স্বাগতিক দল। জবাবে ১৪৮ রানে সবকটি উইকেট হারায় বাংলাদেশ।

৪৭ রানে হারায় তিন ম্যাচ সিরিজে ০-২ তে পিছিয়ে থেকে সিরিজ হারও নিশ্চিত হল বাংলাদেশের।

ওয়ানডে সিরিজের পর প্রথম টি-টোয়েন্টিতে ব্যাটসম্যানদের বাজে পারফরম্যান্সে যা হয়েছিলো সেই একই চিত্রনাট্যের পুনঃরাবৃত্তি ঘটল আজও। বোলিংয়ের পর ব্যাটিংয়ে কোনো প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারেনি টাইগাররা। ১০৪ রানে চতুর্থ উইকেট হারানোর পর পরবর্তী ৪৪ রান তুলতে ৬ উইকেট হারায় বাংলাদেশ।

কলিন মুনরোর ঝোড়ো সেঞ্চুরি ও টম ব্রুসের দুর্দান্ত ফিফটিতে রানের পাহাড় গড়েছিল নিউজিল্যান্ড। নির্ধারিত ওভারে ৭ উইকেট হারিয়ে ১৯৫ রান তোলে স্বাগতিকরা। মুনরো ৫৪ বলে ১০১ ও ব্রুস ৩৯ বলে অপরাজিত ৫৯ রানের অবদান রেখেছেন। রান তাড়া করতে হলে নিজেদের নতুন রেকর্ডই গড়তে হতো বাংলাদেশকে। তাতে শুরু থেকেই উইকেট হারিয়ে ১৮.১ ওভারে গুটিয়ে যাওয়ার পথে ১৪৮ রানের বেশি এগোতে পারেনি সফরকারীরা।

টি-টুয়েন্টিতে প্রথমে ব্যাট করে ১৭৪ বা এর বেশি রান তুলে কখনো হারেনি নিউজিল্যান্ড। সেখানে বাংলাদেশ কখনো ১৬৪-এর বেশি তাড়া করে জেতেনি। কঠিন পরীক্ষা, কঠিন সমীকরণ। ইনিংস শুরু হতে না হতেই তিন শীর্ষ ব্যাটসম্যান সাজঘরে। শুরুটা তাই বিবর্ণই হলো। মাঝে অবশ্য সাব্বির রহমান ও সৌম্য সরকারের ব্যাটে প্রতিরোধের গল্প থাকল। তাতেও পরাজয়টা সম্মানজনক হলো না!

সৌম্যকে নিয়ে সাব্বিরের প্রতিরোধের গল্পটি ৬৮ রানের। এই জুটির সময় হয়তো জয়ের স্বপ্নই জাগছিল। আরেকটি সুযোগ অপচয় না করে আস্থার প্রতিদান দিচ্ছিলেন সৌম্য। কিন্তু ইনিংসটাকে লম্বা করতে পারলেন না। রানে ফেরার আভাস দেওয়া ইনিংসটি ৩৯ রানে থেমেছে তার। ফেরার আগে ৩ চার ও ২ ছয়ে ২৬ বলে আত্মবিশ্বাসী সৌম্যর দেখা মিলল অবশ্য।

এরপর ভরসা হয়ে থাকা সাব্বিরও ফিরে গেলে আবারো বিপদে পড়ে বাংলাদেশ। ইশ শোধির বলে বোল্টকে ক্যাচ দিয়ে দারুণ ইনিংসটির সমাপ্তি টেনেছেন সাব্বির। ৩টি করে চার-ছয়ে ৩২ বলে ৪৮ রানে থেমেছেন তিনি।

দুই তরুণের আগে-পিছে কেবল আসা যাওয়ার গল্প। শুরুটা ইমরুল কায়েসকে দিয়ে। এদিন রানের খাতাই খুলতে পারেননি তিনি। মিচেল স্যান্টনারের করা ইনিংসের প্রথম ওভারে টম ব্রুসকে ক্যাচ দিয়েছেন বাঁহাতি উদ্বোধনী।

পরে তামিম ইকবাল ২ চারে ৭ বলে ১৩ রানে ফিরেছেন। সাব্বিরের সঙ্গে ভুল বোঝাবুঝিতে রান আউটে উইকেট বিসর্জন দিয়ে এসেছেন পুরো সিরিজেই নামের প্রতি সুবিচার করতে না পারা এই মারকুটে ব্যাটসম্যান।

দ্রুত দুই উদ্বোধনীকে হারিয়ে তখন এমনিতেই বিপদে বাংলাদেশ। সেটি আরো বাড়িয়ে যান সাকিব আল হাসান। মাত্র ১ রান করে বেন হুইলারের বলে দায়িত্ব জ্ঞানহীন শটে উইকেট ছুঁড়ে এসেছেন বিশ্বের অন্যতম সেরা এই অলরাউন্ডার। এরপর সৌম্য-সাব্বিরের বীরত্ব।

পরের অংশে ব্যাটসম্যানদের আবারো সেই আসা যাওয়ার মিছিল। সাব্বির ফেরার পরই মোসাদ্দেক হোসেন নেই। উলিয়ামসনের বলে স্যান্টনারকে ক্যাচ দিয়েছেন ১ রানে। মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ যা একটু আভাস দিচ্ছিলেন। সেটিও ১ ছয়ে ১৯ রানের বেশি বাড়ল না। মাশরাফি বিন মুর্তজা (১) এলেন আর গেলেন।

উইকেটে তখন ব্যাটসম্যান কেবল নুরুল হাসান। সঙ্গী পেসার রুবেল হোসেন। পরাজয় ততক্ষণে ঘাড়ে নিঃশ্বাস ফেলছে। নুরুলের (১০) বিদায়ে তা সময়ের ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায়। রুবেল হুইলারের বলে ব্রুসকে ক্যাচ দিলে সেই সময়টুকুও এসে যায়!

নিউজিল্যান্ডের হয়ে বল হাতে অবদান রেখেছেন হাত ঘোরানো প্রায় সকলেই। কেবল কলিন গ্র্যান্ডহোমেই ২ ওভারে ৩৩ রান খরচ করে উইকেট শূন্য থেকেছেন। ইশ শোধি সেখানে ৩ উইকেট নিয়ে সেরা। বেন হুইলার ও কেন উইলিয়ামসনের দখলে গেছে ২টি করে উইকেট। ১টি করে মিচেল স্যান্টনার ও ট্রিন্ট বোল্টের দখলে।

এর আগে কলিন মুনরোর ঝোড়ো সেঞ্চুরি ও টম ব্রুসের দুর্দান্ত ফিফটিতে রানের পাহাড় গড়ে নিউজিল্যান্ড। মুনরো ৫৪ বলে ১০১ ও ব্রুস ৩৯ বলে অপরাজিত ৫৯ রানের অবদান রেখেছেন।

টস হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে অথচ শুরুটা হয়েছিল মাশরাফির উল্লাসের মধ্য দিয়ে। ইনিংসের প্রথম বলেই লুক রনকিকে মোসাদ্দেকের ক্যাচ বানিয়েছেন টাইগার অধিনায়ক। ঘুরে দাঁড়ানোর আগেই স্বাগতিকদের আরো দুটি উইকেট তুলে নেন টাইগার বোলাররা। কিন্তু এরপরই পথ হারাতে হয় কলিন মুনরোর ঝড়ে!

একসময় ৪৬ রানে স্বাগতিকদের ৩ উইকেট তুলে নিয়েছেন লাল-সবুজরা। রনকির পর ঘরের ছেলে উইলিয়ামসনকে (১২) ফেরান সাকিব। ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠার আগেই কোরি অ্যান্ডারসনের (৪) স্টাম্প ভাঙেন মোসাদ্দেক।

সুবিধাজনক অবস্থানে থেকেও মুনরোর সাথে আর পেরে ওঠেনি সফরকারীরা। টি-টুয়েন্টি ক্যারিয়ারে প্রথম সেঞ্চুরি তুলে নিয়েছেন এই কিউই। ৫২ বলে সেঞ্চুরি পূর্ণ করার কিছুক্ষণ পরই অবশ্য আউট হয়েছেন। ততক্ষণে যা সর্বনাশ হওয়ার হয়ে গেছে! ফেরার আগে ৫৪ বলে ৭টি করে চার-ছয়ে ১০১ রান করেছেন ২৯ বর্ষী মুনরো। এই কিউই ব্যাটসম্যান বড় শাস্তিটা দিয়েছেন মাহমুদউল্লাহকে। টাইগার অলরাউন্ডারের করা ১৩তম ওভারে ৩টি ছয় ও ২টি চারে ২৮ রান নেন স্বাগতিক তারকা।

আন্তর্জাতিক টি-টুয়েন্টিতে মুনরোর ইনিংসটি দশম দ্রুততম সেঞ্চুরি। নিউজিল্যান্ডের কোনো ব্যাটসম্যানের টি-টুয়েন্টিতে চতুর্থ সেঞ্চুরি। ব্রেন্ডন ম্যাককালাম একাই করেছিলেন দুটি শতক। অন্যটি মার্টিন গাপটিলের। ম্যাককালাম ৫০ ও ৫১ বলে দুটি সেঞ্চুরি করেছিলেন। গাপটিলের একমাত্র সেঞ্চুরিটি ৬৯ বলে।

মুনরোকে যোগ্য সঙ্গ দেন টিম ব্রুস। ৩৯ বলে ১টি ছয় ও ৫টি চারে ৫৯ রানের হার না মানা ইনিংস খেলেন তিনি। অন্যদের মধ্যে কলিন ডি গ্র্যান্ডহোম (২), জেমস নিশাম (৫) ও মিচেল স্যান্টনার (৪) রানে ফিরেছেন।

বাংলাদেশের সফলতম বোলার রুবেল হোসেন; ৩৭ রান দিয়ে ৩ উইকেট নিয়েছেন তিনি। এছাড়া একটি করে উইকেট নিয়েছেন মাশরাফি, সাকিব আল হাসান ও মোসাদ্দেক হোসেন। মোস্তাফিজুর রহমান ৪ ওভারের স্পেলে ৩০ রান দিয়ে উইকেটশূন্য ছিলেন।

তিন ম্যাচ ওয়ানডে সিরিজে হোয়াইটওয়াশ হওয়ার পর টি-টুয়েন্টিতেও হার দিয়ে শুরু করেছিল বাংলাদেশ। শুক্রবার এক ম্যাচ হাতে রেখেই টি-টুয়েন্টি সিরিজ হারল। হোয়াইটওয়াশ এড়াতে আগামী রোববার তৃতীয় ও শেষ টি-টুয়েন্টিতে আরেকটি পরীক্ষা মাশরাফিদের।

Comments
Loading...