Connecting You with the Truth

ঠাকুরগাঁওয়ে ইএসডিও’র প্রধান কার্যালয়ে ‘গরুর গাড়ির’ শিল্পকর্ম

গরুর গাড়ি হলো দুই চাকাবিশিষ্ট গরু বা বলদে টানা একপ্রকার যান বিশেষ। এই যানে সাধারণত একটি মাত্র অক্ষের সাথে চাকা দুটি যুক্ত থাকে। সামনের দিকে একটি জোয়ালের সাথে দুটি গরু বা বলদ জুতে এই গাড়ি টানা হয়। সাধারণত চালক বসেন গাড়ির সামনের দিকে। গ্রাম বাংলার এক সময়ের যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম গরুর গাড়ি। নতুন প্রযুক্তির ফলে মানুষের জীবনযাত্রার উন্নয়ন ঘটছে, হারিয়ে যাচ্ছে অতীতের এই ঐতিহ্যবাহী গরুর গাড়ি, ধরতে গেলে বর্তমানে এটি বিলুপ্তির পথে।

তবে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য ধরে রাখতে উন্নয়ন সংস্থা ইএসডিও নিয়েছে ব্যতিক্রমি উদ্যোগ। সংস্থার প্রধান কার্যালয়ের সামনে গরুর গাড়িতে মাল পরিবহনের একটি শিল্পকর্ম বানানো হয়েছে। এছাড়াও কার্যালয়ের দেয়ালে বাঙ্গালীর ইতিহাঁস-ঐতিহ্যের আরও হাজারও শিল্পকর্ম ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। একসময় কৃষি ফসল ও মানুষ বহনের জনপ্রিয় বাহন ছিল এটি। মালপত্র পরিবহনে গরুর গাড়ি ছিল একামাত্র পরিবহন। গরুর গাড়ির ইতিহাস সুপ্রাচীন। নব্যপ্রস্তর যুগের সময় থেকেই মানুষ এই যানটি ব্যবহারে করে আসছে। সিন্ধু অববাহিকা ও ভারতীয় উপমহাদেশের উত্তর-পশ্চিম অঞ্চলে গরুর গাড়ির প্রচলন শুরু হয় খ্রিস্টর জন্মের ১ হাজার ৬শ থেকে ১ হাজার ৫শ বছর আগে। সেখান থেকে ক্রমে ক্রমে ছড়িয়ে পড়ে।

বর্তমানে প্রত্যন্ত এলাকায় দু-একটি গাড়ি চোঁখে পড়লেও শহরাঞ্চলে একেবারেই দেখা যায় না। সে কারনে শহরের ছেলে মেয়েরা দূরের কথা, বর্তমানে গ্রামের ছেলে-মেয়েরাও গরুর গাড়ি শব্দটির সঙ্গে পরিচিত নয়। ২ যুগ আগেও গ্রামাঞ্চলে গরুর গাড়ি ছাড়া বিয়ে কল্পনা করা যেত না। বরপক্ষের লোকজন ১০ থেকে ১২টি গরুর গাড়ি সাজিয়ে বরযাত্রী যেত। সে সময় যেসব পরিবারে গরুর গাড়ি ছিল, তাদের কদর ছিল বেশি। গরুর গাড়ির চালককে বলা হয় গাড়িয়াল। সেই চালককে উদ্দেশ্য করে রচিত হয়েছে “ওকি গাড়িয়াল ভাই” কিংবা ‘আস্তে বোলাও গাড়ি. আরেক নজর দেখিয়া ন্যাও, মুই দয়ার বাপের বাড়িরে গাড়িয়াল” এরকম যুগান্তকারী সব ভাওয়াইয়া গান।

সাংস্কৃতিক কর্মী অনুপম মনি বলেন, শহরের গোবিন্দরস্থ ইএসডিও’র প্রধান কার্যালয়ে গরুর গাড়ির শিল্পকর্মটি প্রশংসার দাবিদার। কারণ বর্তমানে নানা ধরনের মোটরযানের কারনে অপেক্ষাকৃত ধীর গতির এই যানটির ব্যবহার অনেক কমে এসেছে। তাই এখন আর তেমন চোখে পড়ে না। এখন মানুষ ট্রাক, পাওয়ার টিলার, লরি, নসিমন-করিমনসহ বিভিন্ন মালগাড়ি ব্যবহার করছে। ফলে গ্রামাঞ্চলেও আর চোখে পরে না গরুর গাড়ি। যুগের পরিবর্তনে আমাদের এই প্রিয় গরুরগাড়ি প্রচলণ আজ হারিয়ে যাচ্ছে কালের অতল গর্ভে। এ জাতীয় শিল্পকর্মের মাধ্যমে বর্তমান তরুন প্রজন্ম এই যানটির কথা স্মরনে রাখবে বলে মনে করি।

ইএসডিও’র নির্বাহী পরিচালক ড. মুহম্মদ শহীদ উজ জামান বলেন, ঠাকুরগাঁও হলো একটি কৃষি নির্ভর জেলা। আমরা চাইছি কৃষির সাথে গরুর একটা গভীর সম্পর্ক, গরুর গাড়ি এবং গরুর। এটা আমরা প্রতিনিধিত্ব করার চেষ্টা করছি ঠাকুরগাঁও জেলাকে। এটার একটা মাত্র দিক দেখলে হবে না। এটার সাথে অফিসের দেয়ালের কারুকার্য দেখতে হবে। সেখানে উপরে যা দেখা যাচ্ছে সেটা হচ্ছে আদিবাসী। আদিবাসী সংস্কৃতি। কৃষিভিত্তিক অর্থনীতি বোঝাতে গরুর গাড়ি। কৃষির সাথে গড়–র গাড়ির পাশাপাশি অন্যান্য যে সংস্কৃতি সেটা ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। গরু থাকে কোথায়, যেখানে কৃষি থাকে। আমাদের ঠাকুরগাঁও জেলা কৃষিভিত্তিক জেলা। অতএব এখানে কৃষির প্রতিনিধিত্ব করা হয়েছে। এর সাথে গরুর গাড়িকে বাহন হিসেবে আমরা সব স্থানেই ব্যবহার করি। তাই এই শিল্পকর্মটির সাহায্যে মূলত আমাদের জেলাকে কৃষিভিত্তিক জেলা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার ক্ষুদ্র প্রচেষ্টামাত্র।

Comments
Loading...