ঠাকুরগাঁও রাণীশংকৈলে বিরঙ্গণা শরিফার রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি মিলেনি
আনোয়ার হোসেন, রাণীশংকৈল প্রতিনিধি: ঠাকুরগাওয়ের রাণীশংকৈল উপজেলায় বিরঙ্গণা শরিফা বেগম (৫৭) দেশ স্বাধীনতার ৪৪ বছরে পাড়ি জমার পরেও রাষ্ট্রীয়ভাবে স্বীকৃতি পায়নি। মুক্তিযুদ্ধ কালীন সময়ে শরিফা বেগম ১১ বছরের শিশু কন্যা। যে সময় আম জাম কাঁঠাল গাছের ছায়ায় বসে বান্ধবিদের সাথে ধুলো বালি দিয়ে ঘর বানিয়ে নানা রকম খেলায় সময় কাটানোর কথা। সে সময় পাকিস্থানী বাহিনীর হাতে ধরা পড়ে শুরু হয় তার জীবনে লোম হর্ষক ঘটনার। মা চাঁনমনি বাবা গোধু চৈকা (চকিদার)। শরিফার মা চাঁনমনিকে স্থাণীয় দালালদের সহযোগিতায় ধরে আনে বড় ব্রীজ এলাকার পচকটুর বাড়িতে সাথে শরিফাকেও। নাবালিকা শরিফা ১১ বছরের মেয়ে হয়েও রেহাই পায়নি পাকিস্থানী হায়েনাদের হাত থেকে। মা মেয়েকে পালাক্রমে চালাতে থাকে সম্ভ্রমহানি। উপজেলার রাজোর গ্রামের আইনুদ্দিন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে শরিফাকে পাক বাহিনীর চোখের আড়াল করে। শরিফা পাক ক্যাম্প থেকে পালিয়ে যাওয়ায় তার মা চাঁনমনির উপর ক্ষিপ্ত হয় হায়েনার দল। শেষ পর্যন্ত চাঁনমনিকে পাকস্থানী ক্যাম্প (পচকটুর বাড়ি) থেকে উদ্ধার করে আইনুদ্দিন নিয়ে যায়। গোধু চকিদার যুদ্ধকালিন সময় মারা যায়। পরবর্তীতে আইনুদ্দিন চাঁনমনিকে বিয়ে করে। ঘর সংসার কিছুদিন করার পর চাঁনমনি মারা যায়। তার ভাগ্যে জোটেনি বিরঙ্গণার রাষ্ট্রীয় মর্যাদা। শরিফার বিয়ে হয় পীরগঞ্জ উপজেলার সেতরায় গ্রামের এজাবুদ্দিনে ছেলে ইয়াসিন আলীর সাথে। পাক বাহিনীর দ্বারা শরিফার স¤ভ্রমহানির কথা জানতে পেরে তাকে স্বামীর সংসার থেকে ছিটকে পড়তে হয়। বর্তমানে শরিফা মাধবপুর গ্রামের অব্দার খাস জমিতে বসবাস করে। মাঝে মধ্যে স্থাণীয় প্রভাবশালীদের চক্রান্তের শিকার হয়ে হয়রাণী হতে হয় তাকে। শরিফা পাক বাহিনীর হাতে ধর্ষিত হওয়ার ঘটনা এলাকার বাসির নখ দর্পনে থাকা সত্তেও আজ পর্যন্ত বিরঙ্গণা হিসেবে রাষ্ট্রীয় মর্যাদা পায়নি। তাছাড়া কোন প্রকার সাহায্য সহযোগিতা থেকে অদ্যাবধি বঞ্চিত রয়েছে। ক্ষেতে খামারে কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করে সে। শরিফা অভিযোগ করে বলে, উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার সিরাজুল ইসলাম আমার সাথে খারাপ আচরণ করে। আমার নামে আসা টাকা পয়সার কথা বললে বিভিন্ন টালবাহান করে।
অভিযোগের ব্যাপারে মোঃ সিরাজুল ইসলাম এড়িয়ে গিয়ে বলেন, শরিফার বিষয়টি আমার মাথায় আছে দেখব। সংরক্ষিত ৩০১ আসনের সংসদ সদস্য সেলিনা জাহান লিটা বলেন, আমার বাবা মুক্তিযোদ্ধাদের সংগঠিত করে দেশ স্বাধীনতার পক্ষে কাজ করে গেছেন। আমিও বিরঙ্গণা ও মুক্তিযোদ্ধাদের ব্যাপারে আন্তরিক। তাদের হয়ে আমি কাজ করতে চায়। শরিফার বিষয়টি সঠিকতা নিরূপন করে ব্যবস্থা নিব।