ঢাকায় আমির সম্মেলনে রাষ্ট্র সংস্কারের যে প্রস্তাবনা দিল হেযবুত তওহীদ
রাষ্ট্রসংস্কারের মূলনীতি হোক কোর’আন। কারণ মানুষের তৈরি বিধান, সিস্টেম ত্রুটিযুক্ত। এই ত্রুটিযুক্ত সিস্টেম সংস্কার করেও লাভ নেই। এতে বৈষম্য দূর হবে না, ন্যায়, সুবিচার, শান্তি প্রতিষ্ঠিত হবে না বলে মন্তব্য করেছেন হেযবুত তওহীদের সর্বোচ্চ নেতা ইমাম হোসাইন মোহাম্মদ সেলিম। শনিবার (২৩ নভেম্বর) সকাল ৯টায় রাজধানীর যাত্রাবাড়ীর গেন্ডারিয়ায় জহির রায়হান সাংস্কৃতিক কেন্দ্রে হেযবুত তওহীদের আমির সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এই মন্তব্য করেন।
অনুষ্ঠানে হোসাইন মোহাম্মদ সেলিম রাষ্ট্রব্যবস্থা সংস্কারে ইসলামের একটি পূর্ণাঙ্গ রূপরেখা তুলে ধরেন। এই রূপরেখায় আল্লার বিধানকে মানদণ্ড করে রসুল (সা.) এর প্রতিষ্ঠিত রাষ্ট্রব্যবস্থাকে স্ট্যান্ডার্ড ধরে আধুনিক বাংলাদেশের শাসনব্যবস্থা, রাষ্ট্রপ্রধান ও চেইন অব কমান্ড, প্রশাসনিক কাঠামো, রাজনৈতিক দল, বিচার বিভাগ, শিক্ষাব্যবস্থা, সামরিক বাহিনী, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, অর্থব্যবস্থা, বিভিন্ন ধর্মের মানুষের প্রতি আচরণ, নারী অধিকার, শাসকের সমালোচনা ও জবাবদিহিতা, পররাষ্ট্রনীতি, প্রকৃতি পুনরুদ্ধার, কৃষি ব্যবস্থা, পরিবহন ব্যবস্থাসহ সকল বিষয় তুলে ধরেন।
এর আগে তিনি বলেন, বাংলাদেশের রাজনৈতিক বাস্তবতায় স্বাধীনতার পর থেকে বহু ধরনের সরকার ব্যবস্থা গঠন হয়েছে, বহুবার বহু সংস্কার হয়েছে কিন্তু জনগণের আশা আকাক্সক্ষার প্রতিফলন আমরা দেখি নি। ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে সরকার পতনের পর অন্তর্বর্তীকালীন সরকার অধীনে বিভিন্ন দিক থেকে রাষ্ট্রব্যবস্থা সংস্কারের প্রস্তাব আসছে। সাধারণ মানুষের মধ্যেও একটা বৈষম্যহীন, অন্যায়, অবিচার, দুর্নীতি, অপরাজনীতিমুক্ত একটি রাষ্ট্রব্যবস্থা কায়েমের চেতনা সৃষ্টি হয়েছে।
একটি রাষ্ট্রে শান্তি-শৃঙ্খলা বিরাজ করবে কি না তা নির্ভর করে ঐ রাষ্ট্রে গৃহীত ব্যবস্থা, নিয়ম-কানুন বা সিস্টেমের উপরে। সিস্টেমটা যদি ত্রুটিযুক্ত হয় তাহলে কখনোই সেখানে শান্তি আসবে না। এজন্য প্রয়োজন একটা নির্ভুল ব্যবস্থা বা সিস্টেম। যা মানুষের পক্ষে তৈরি করা সম্ভব নয়। একমাত্র আল্লার দেওয়া জীবনব্যবস্থা, আল্লার দেওয়া সিস্টেম ইসলামই পারে ন্যায়, সাম্য, সুবিচার প্রতিষ্ঠা করে বৈষম্যহীন, অসাম্প্রদায়িক শান্তিপূর্ণ সমাজ উপহার দিতে -মন্তব্য করেন তিনি।
হোসাইন মোহাম্মদ সেলিম বলেন, যদি আমরা বাস্তবিক অর্থে শান্তি পেতে চাই তাহলে আমাদেরকে এই সিদ্ধান্তে আসতে হবে যে, আমরা সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে, চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের প্রশ্নে আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো হুকুম-বিধান মানবো না। যদি না মানি তাহলে ভিন্ন কথা। কিন্তু শান্তিতে বসবাস করতে হলে আল্লার তওহীদের, সার্বভৌমত্বের বিকল্প নাই।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় সমন্বয়কারী নিজাম উদ্দিন, প্রধান উপদেষ্টা খাদিজা খাতুন, হেযবুত তওহীদের মুখপাত্র ও আন্তুর্জাতিক প্রচার সম্পাদক মশিউর রহমান, নারী বিষয়ক সম্পাদক রুফায়দাহ পন্নী, তথ্য সম্পাদক এস এম সামছুল হুদা, সাহিত সম্পাদক রিয়াদুল হাসান প্রমুখ। এছাড়াও হেযবুত তওহীদের কেন্দ্রীয় সম্পাদক ও সকল পর্যায়ের আমিরগণ উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানের এক পর্যায়ে সকল ধরনের বৈষম্যহীন, অন্যায়, অবিচার, দুর্নীতি, অপরাজনীতিমুক্ত এবং ন্যায়, সুবিচার, শান্তিপূর্ণ সমাজ ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠায় আল্লাহর দেওয়া জীবনব্যবস্থা ইসলামকে প্রস্তাব করেন হেযবুত তওহীদের ইমাম হোসাইন মোহাম্মদ সেলিম। প্রস্তাবনায় আল্লাহর হুকুম ও রসুল (সা.) এর নীতি অনুযায়ী শাসনব্যবস্থা, অর্থব্যবস্থা, বিচারব্যবস্থা, শিক্ষাব্যবস্থা, চিকিৎসাব্যবস্থা, শ্রমব্যবস্থা, পরিবহন ব্যবস্থাসহ সকল বিষয়ে পূর্ণাঙ্গ রূপরেখা তুলে ধরা হয়। যেখানে সংস্কারের মূলনীতিই হচ্ছে, সকল ক্ষেত্রে আল্লাহর হুকুমকে প্রাধান্য দেয়া। হেযবুত তওহীদের ঢাকা আমির ডা. মাহবুব আলম মাহফুজ অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন এবং উপস্থাপনা করেন কার্যনির্বাহী সদস্য মোখলেছুর রহমান সুমন।
প্রস্তাবনার সার-সংক্ষেপ-
শাসনব্যবস্থা: ঔপনিবেশিক যুগের উত্তরাধিকার কর্তৃত্ববাদী শাসনব্যবস্থার পরিবর্তে আল্লাহর দেওয়া, আল্লাহর নিকট জবাবদিহিমূলক, তাকওয়াভিত্তিক একটি শাসনব্যবস্থা গঠন করতে হবে। ইমাম বা নেতা হলেন ইসলামি শাসনব্যবস্থার মূল নিয়ন্ত্রক, যিনি রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ নির্বাহী কর্তৃপক্ষ, বর্তমানে যেটাকে আমরা প্রেসিডেন্ট বা প্রধানমন্ত্রী বলছি।
যিনি শাসনব্যবস্থার মূল নিয়ন্ত্রক হবেন তিনি সর্বাবস্থায় আল্লাহর দেওয়া মানদণ্ডের ভিত্তিতে ন্যায়ের দণ্ড ধারণ করবেন। তার কাছে ধর্ম-বর্ণ, দল-মত, নারী-পুরুষ সবাই সমান। তিনি স্বজনপ্রীতি করবেন না। রাগ-অনুরাগের বশবর্তী হয়ে কারো প্রতি পক্ষপাতমূলক আচরণ করবেন না। তিনি বিশ্বাসীদের নেতা হিসাবে একাধারে তাদের আধ্যাত্মিক ও জাগতিক উভয় ক্ষেত্রের নেতৃত্ব দিবেন এবং সর্বশক্তিমান আল্লাহর কাছে দায়বদ্ধ থাকবেন।
ইমাম তাঁর কার্যাবলী সম্পাদনের জন্য তাঁর পক্ষ থেকে বিভিন্ন স্তরে প্রতিনিধি নিয়োগ দিবেন। তারা যার যার এলাকার আমির হিসাবে পরিগণিত হবে। আমির হচ্ছে ইমামের পক্ষ থেকে নিযুক্ত আদেশদাতা বা কমান্ডার।
শাসনব্যবস্থা হবে মসজিদ কেন্দ্রিক: মসজিদগুলোতে আমিরগণ নামাজের ইমামতি করবেন। জুমার দিনে জাতির ইমামের প্রতিনিধি হিসাবে খোতবা দিবেন, অভিযোগ নিষ্পত্তি করবেন, বিচার সালিশ করবেন, নিজ এলাকার জনগণের নেতৃত্ব দিবেন। প্রশাসনিক কার্যালয়, অর্থনৈতিক কার্যালয়, বিচারালয়, নৈতিক শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা ও সামরিক কার্যক্রম হবে মসজিদ কেন্দ্রিক। মসজিদ কেন্দ্রিক এ সকল কার্যক্রমে পুরুষের পাশাপাশি নারীদেরও অংশগ্রহণের সমান সুযোগ থাকবে। এসব কাজ পরিচালনা করবেন রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ অথরিটি ইমামের পক্ষ থেকে নিযুক্ত স্ব-স্ব এলাকার আমিরগণ।
রাষ্ট্রপ্রধান ও চেইন অব কমান্ড: চেইন অব কমান্ড একটি জাতির মেরুদণ্ডের মত, এটি জাতিকে একটি সুদৃঢ় আকৃতি কাঠামো দান করে। এই শিক্ষাটা জাতিকে দিতে হবে যেন কেউ চেইন অব কমান্ড ভাঙতে সচেষ্ট না হয়। কারণ এটা করলে জাতি অল্প সময়ের মধ্যে ধ্বংস হয়ে যাবে। যে কোনো সেনাবাহিনীতে চেইন অব কমান্ডকে সর্বোচ্চ গুরুত্বের সাথে মান্য করা হয়।
আমাদের প্রস্তাবিত রাষ্ট্রকাঠামোর অর্গানোগ্রামে সবার উপরে থাকবেন একজন ইমাম বা রাষ্ট্রপতি। তাঁকে কেন্দ্র করে জাতির সকল কার্যক্রম পরিচালিত হবে। তিনি জাতির ইহজাগতিক ও আধ্যাত্মিক উভয় জগতের নেতৃত্ব দিবেন। তিনি আল্লাহর দেওয়া সীমারেখা মেনে চলার ক্ষেত্রে জাতির কাছে ও আল্লাহর কাছে দায়বদ্ধ থাকবেন। তিনি রাজতন্ত্রের রাজার মত সকল আইনের ঊর্ধ্বে নন, তাঁর কথাই আইন এমন নয়। অথবা তিনি একনায়কতন্ত্রের শাসকের মত স্বেচ্ছাচারী নন।
ইমাম হবেন জনগণের কাছে ন্যায় ও সুবিচারের প্রতীক, তাদের চূড়ান্ত আশা ভরসার স্থল। তিনি তাঁর যাবতীয় কর্মকাণ্ডের জন্য একদিকে মহান আল্লাহ তা’আলার কাছে জবাবদিহিতার জন্য সদা-সতর্ক (মুত্তাকি) থাকবেন, অন্যদিকে তিনি রাষ্ট্রের জনগণের কাছে জবাবদিহি করবেন।
ইমাম তাঁর কার্যাবলি সম্পাদনের জন্য তাঁর পক্ষ থেকে বিভিন্ন স্তরে তিনি প্রতিনিধি নিয়োগ দিবেন। তারাও যার যার এলাকার আমির হিসাবে পরিগণিত হবে। আমির হচ্ছে ইমামের পক্ষ থেকে নিযুক্ত আদেশদাতা বা কমান্ডার।
প্রশাসনিক কাঠামো: রাষ্ট্রীয় কার্যনির্বাহের জন্য ইমামের অধীনে বিভিন্ন প্রশাসনিক বিভাগ থাকবে। দেশের সবচেয়ে যোগ্য, শিক্ষিত, বিশ্বস্ত, আমানতদার, বিনয়ী, ভদ্র, সাহসী ও তাকওয়ার মানদণ্ডে পরীক্ষিত ব্যক্তিগণ বিভিন্ন মন্ত্রণালয় বা ডিপার্টমেন্টের দায়িত্বে নিয়োজিত থাকবেন। যেখানে ঘুষ বা দুর্নীতির কোনো সুযোগই থাকবে না, কারণ দুর্নীতি করলে তাকে আল্লাহর আইন মোতাবেক দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি ভোগ করতে হবে। কাউকে তার সামাজিক অবস্থান বিবেচনা করে বিন্দুমাত্রও ছাড় দেওয়া হবে না। দ্বিতীয় কারণ আল্লাহর দেওয়া দীনে ব্যক্তিগত সততার মূল স্পিরিট বা চেতনা থাকবে তাকওয়া। জাতির প্রত্যেকে এই কথার উপর প্রতিষ্ঠিত থাকবে যে, আল্লাহ যেটা হালাল করেছেন আমরাও সেটা হালাল করব, আল্লাহ যেটা হারাম করেছেন আমরাও সেটা হারাম (নিষিদ্ধ) করব। ফলে প্রত্যেকটি মানুষ দুর্নীতির বিরুদ্ধে অবস্থান নেবে। তারা বিশ্বাস করবে যে, আল্লাহ সর্বত্র বিরাজমান, তিনি সব দেখেন, সব শোনেন। তাই অতি সংগোপনেও যদি দুর্নীতি বা অপরাধ করা হয়, সেটার পরিণতি তাকে পরকালে হলেও অবশ্যই ভোগ করা লাগবে। মানুষের চোখ ফাঁকি দেওয়া গেলেও আল্লাহর চোখ ফাঁকি দেওয়া যাবে না। তাই একদিকে শরিয়াহর শাস্তি, অপরদিকে আল্লাহর কাছে জবাবদিহিতার ভয়, এই দুই দিক বিবেচনা করে মানুষ সৎ থাকবে।
কাজেই শাসক সর্বাবস্থায় একজন সর্বশক্তিমান মহাপ্রভুর কাছে দায়বদ্ধ থাকবে। ফলে কোনোদিন কোনো শাসক স্বৈরাচার, উদ্ধত একনায়কে পরিণত হতে পারবে না। তারা সবাই কোর’আনে দেওয়া রাষ্ট্রপরিচালনা সংক্রান্ত নীতিমালা মেনে চলতে বাধ্য থাকবে।
রাজনৈতিক দল: এখন যদি আধুনিক ও শান্তিপূর্ণ রাষ্ট্রব্যবস্থা প্রবর্তন করার চিন্তা করা হয় তবে বিভিন্ন আদর্শের ভিত্তিতে তৈরি হওয়া রাজনৈতিক দলগুলোর যা খুশি তা করার লাইসেন্স দেওয়া যাবে না। রাজনৈতিক অধিকারের নামে দেশের ক্ষতি করার সুযোগ কাউকে দেওয়া যাবে না। আমাদের রাজনৈতিক দলগুলো কোনোটা ভারতপ্রেমী, কোনোটা ভারতবিদ্বেষী, কোনোটা ধর্মনিরপেক্ষ, কোনোটা বামপন্থী, কোনোটা ধর্মভিত্তিক। কিন্তু ইসলামের রাষ্ট্রব্যবস্থায় এমন কোনো সুযোগ নেই, যেখানে বিভিন্ন আদর্শের দল গঠন করা যাবে এবং বিভিন্ন মতবাদের ভিত্তিতে রাষ্ট্র পরিচালনা করা যাবে। রাসূলুল্লাহ (সা.) ও তাঁর সাহাবিরা কখনওই নানামুখী আদর্শের উপর রাজনৈতিক দল গঠন করেননি। বরং মদিনা সনদের মাধ্যমে মুসলিম, আউস, খাজরাজের আটটি গোত্র, সেগুলোর অধীনে আরো তেত্রিশটি গোত্র এবং তিনটি ইহুদি গোত্র বনি কুরায়জা, বনি নাজির, বনি কাইনুকা ও তাদের অধীনে আরো বিশটি ছোট গোত্রকেও এক জাতিভুক্ত করেছিলেন। অর্থাৎ ইসলামের লক্ষ্য হচ্ছে ধর্ম, বর্ণ, জাতি, ভাষা, অর্থনৈতিক অবস্থা, বাদ-মতবাদ, সামাজিক অবস্থা এবং রাজনৈতিক মতাদর্শসহ সকল বিভেদের প্রাচীর ভেঙে মানুষকে এক জাতিভুক্ত হিসাবে ঐক্যবদ্ধ করা।
বিচার বিভাগ: প্রথমত বিচারব্যবস্থা হতে হবে জনগোষ্ঠীর ধর্মীয় বিশ্বাস, আশা আকাক্সক্ষা, চিন্তা চেতনা, ইতিহাস ঐতিহ্যের সঙ্গে সঙ্গতিশীল।
দ্বিতীয়ত ইসলামে বিচার বিভাগ হবে সম্পূর্ণ স্বাধীন এবং বিচার প্রক্রিয়ার মানদণ্ড হবে আল্লাহর দেওয়া বিধান। আল্লাহ যে হুকুম দিয়েছেন সে হুকুম বিচার বিভাগে বাস্তবায়ন করা হবে। বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে ধনী-দরিদ্র, ধর্ম-বর্ণ, গোত্র নির্বিশেষে সকলে ন্যায়বিচার পাবে।
বিচার প্রক্রিয়ার কোনো ধাপে বিচারপ্রার্থীকে কোনো অর্থ ব্যয় করতে হবে না। বিচার পাওয়া জনগণের অধিকার আর ন্যায় প্রদান করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব। কাজেই উকিলের পেছনে অর্থ ব্যয়সহ বিভিন্ন ঘাটে ঘাটে যেভাবে এখন কাড়ি কাড়ি অর্থ ব্যয় করতে হয় তার কিছুই করতে হবে না। কেবল কারও রায়ে যদি শাস্তিস্বরূপ অর্থদণ্ড দেওয়া হয় তখন তাকে সেই অর্থ পরিশোধ করতে হবে, আর সেই অর্থ পাবে বাদি।
ইসলামের বিচারব্যবস্থায় পুরো দেশকে যত বেশি সম্ভব প্রশাসনিক ইউনিটে ভাগ করা হবে এবং বিকেন্দ্রিকরণ করা হতে পারে। যেমন বর্তমানের প্রতিটি ইউনিয়ন একটি ইউনিট। প্রতিটি ইউনিটে জুমা মসজিদ থাকবে এবং আদালত থাকবে। সেই মসজিদগুলো বর্তমানের মত সংকীর্ণ কোনো ভবন নয়। সেটা হবে বড় একটি মসজিদ কমপ্লেক্স। আদালতে সপ্তাহজুড়ে কাজিরা বিচারকার্য পরিচালনা করবেন। গুরুতর অপরাধের শাস্তি কার্যকর করা হবে জুমার দিন। এভাবে অধিকাংশ মামলা স্থানীয় পর্যায়ে সালিশি পদ্ধতিতে নিষ্পত্তি হয়ে যাবে, যার ঐতিহ্য ভারতবর্ষে সুপ্রাচীন। তাই কেন্দ্রীয় পর্যায়ে লক্ষ লক্ষ মামলা আসার কোনো প্রয়োজনই হবে না। সেখানে যাবে কেবল রাষ্ট্রীয় পর্যায়ের ও গুরুতর মামলাগুলো। শত্রু সম্প্রদায়ের প্রতিও পক্ষপাতমুক্তভাবে ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে হবে।
স্থানীয় সরকারের এই ব্যবস্থাকে স্থানীয় জামে মসজিদের কার্যক্রমের সাথে সম্পৃক্ত, যার চেয়ারম্যান বা ইমাম বা আমির স্থানীয় জনগণের পছন্দনীয় ব্যক্তি হওয়ার পাশাপাশি কেন্দ্রীয় সরকার কর্তৃক নিয়োজিত হতে হবে। তার বেতন ভাতা সম্পূর্ণরূপে সরকার বহন করবে।
অর্থব্যবস্থা: বর্তমানে প্রচলিত সুদভিত্তিক অর্থব্যবস্থা চিরতরে বন্ধ করতে হবে। সুদি অর্থনীতির কারণে গুটিকয় পুঁজিপতির কাছে জাতির অধিকাংশ সম্পদ জমা হয়ে যাচ্ছে আর অপরদিকে বৃহত্তর জনগোষ্ঠী বঞ্চিত হচ্ছে। পুঁজিবাদ, ধনতন্ত্রের নীতি হল জনসাধারণের সম্পদ সাপটে এনে এক বা একাধিক স্থানে জড়ো করা। সমাজতন্ত্রের নীতি হল জনসাধারণের সম্পদ রাষ্ট্রের হাতে তুলে নেওয়া। মূলে একই কথা, দু’টোই জনসাধারণকে বঞ্চিত করা।
ইসলামের অর্থনীতি পুঁজিবাদী অর্থনীতির ঠিক বিপরীত। একটায় সঞ্চয় কর অন্যটায় ব্যয় কর। অন্যদিকে সমাজতন্ত্রী সাম্যবাদী অর্থনীতি ব্যক্তিগত মালিকানা নিষিদ্ধ করে জাতির সমস্ত সম্পদ রাষ্ট্রের হাতে পুঞ্জীভূত করে। এটাও ইসলামের বিপরীত। কারণ, ইসলাম ব্যক্তিগত মালিকানা সম্পূর্ণ স্বীকার করে এবং রাষ্ট্রের হাতে সম্পদ পুঞ্জীভূত করে না।
এককথায় বললে বলতে হয় সেটা হচ্ছে সম্পদকে যত দ্রুত সম্ভব চালিত করা, কোথাও যেন সেটা স্থবির-অনঢ় না হতে পারে। এই জন্যই কোর’আনে এই অর্থনীতির বিধাতা, বিধানদাতা বহুবার তাগিদ দিয়েছেন খরচ কর, ব্যয় কর, যাকাত দাও, ফিতরাহ দাও, কাফফারা দাও, ওশর দাও, মানত করো, ধার দাও কিন্তু বোধহয় একবারও বলেন নি যে, সঞ্চয় কর। এতে মানুষ দানশীল হয়, আত্মা পরিশুদ্ধ হয়, নৈতিকভাবে বলিয়ান হয়। সৎ ও শান্তিপ্রিয় হয়। অর্থনৈতিক ভারসাম্য বজায় থাকে, বৈষম্য দূর হয়। সমাজে অন্যায়, অপরাধ কমে যায়। ফলে শান্তি ও নিরাপত্তা নিশ্চিত হয়।
একটা জাতির এবং পরবর্তীতে সমগ্র পৃথিবীতে অর্থাৎ যে কোন পরিধিতে সম্পদ যথাযথ বণ্টনের জন্য প্রয়োজন ব্যয়, সঞ্চয় নয়। একজনের হাতে থেকে অন্য জনের হাতে হস্তান্তর, অর্থাৎ গতিশীলতা। প্রতিটি হস্তান্তর যত দ্রুত হতে থাকবে তত বেশি সংখ্যক লোক ঐ একই সম্পদ থেকে লাভবান হতে থাকবে। সম্পদের ঐ দ্রুত গতিই কোথাও সম্পদকে অস্বাভাবিকভাবে পুঞ্জিভূত হতে দেবে না। পানির প্রবল স্রোত যেমন বালির বাঁধ ভেঙ্গে দেয়, সম্পদের স্রোত তেমনি কোথাও সম্পদকে স্তুপীকৃত হতে দেবে না।
বর্তমানে দেখা যায়, ব্যাংকের কাছে যথেষ্ট পরিমাণ সম্পদ বন্ধক দিতে না পারলে ব্যাংক কখনো পুঁজি ধার দেয় না, দেবে না। এক কথায় তৈলাক্ত মাথায় আরও তেল দেয়া, ধনীকে আরো ধনী করা, গরীবকে আরও গরীব করা। সুতরাং ঐ পুঁজিবাদী ব্যবস্থায় সম্পদের সুষ্ঠু বণ্টন অসম্ভব।
বর্তমান অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় ধনী-গরিব সকলকে ভ্যাট ট্যাক্সের আওতায় আনা হয়। ইসলামি অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় নির্দিষ্ট পরিমাণ সম্পদেও মালিককে যাকাত দিতে হয়। আর রাষ্ট্র ধনীদের সেই যাকাত থেকে গরীবদের সহযোগিতা করে।
শিক্ষাব্যবস্থা: শিক্ষাব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন করতে হবে। ব্রিটিশরা ভারতবর্ষকে যখন সামরিকভাবে পদানত করল তারা এই জনগোষ্ঠীকে চিরস্থায়ীভাবে তাদের দাসে পরিণত করার জন্য পাশাপাশি দুটো ষড়যন্ত্রমূলক শিক্ষাব্যবস্থা চালু করল। একটি হল মাদ্রাসা শিক্ষা, আরেকটি হল সাধারণ শিক্ষা। এই শিক্ষাব্যবস্থা দ্বারা জাতিকে মানসিকভাবে ভাগ করে ফেলা হয়েছে। তারা হাজার চেষ্টা করেও ঐক্যবদ্ধ জাতিতে পরিণত হতে পারবে না।
- সাধারণ শিক্ষা: প্রশাসনিক দপ্তরগুলোতে উচ্চপদস্থ ব্রিটিশ কর্মকর্তাদের ফাইফরমাস খাটার জন্য, তাদের কেরানি ও দোভাষীর কাজ করার জন্য একদল দেশীয় লোককে ইংরেজি ভাষাসহ ইতিহাস, ভূগোল, গণিত ইত্যাদি বিষয়গুলো শেখাতে তারা এই সাধারণ শিক্ষাব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করেছিল। এই শিক্ষাব্যবস্থার সিলেবাসে ধর্মকে পুরোপুরি উপেক্ষা করা হয়েছে। কেবল তা-ই নয়, এখানে ইসলামের ব্যাপারে সন্দেহ, অবজ্ঞা, হীনম্মন্যতা ও বিদ্বেষের ভাব ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে প্রবেশ করিয়ে দেওয়া হয়েছে। এই শিক্ষিত শ্রেণিটির হাতে জাতির রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামরিক ক্ষমতা তুলে দিয়ে যায়, যে শিক্ষিত গোষ্ঠীটি চামড়ার রঙে ভারতীয় হলেও মনে মগজে, চিন্তা ভাবনায় খাঁটি ইংরেজ।
- মাদ্রাসা শিক্ষা: মাদ্রাসা শিক্ষাব্যবস্থায় জীবন-জীবিকা নির্বাহের জন্য কোনো প্রকার কর্মমুখী শিক্ষা দেওয়া হয় না। মাদ্রাসা থেকে শিক্ষিতরা ধর্মকেই তাদের জীবন জীবিকার মাধ্যম হিসাবে ব্যবহার করতে বাধ্য হয়। মাদ্রাসা থেকে যারা পড়াশুনা করে বেরিয়ে আসছেন তাদের কর্মসংস্থানের জন্য আজও তেমন কোনো কার্যকর বন্দোবস্ত হয়নি। ফল দাঁড়িয়েছে এটাই- আমাদের ধর্মীয় অঙ্গনে নেতৃত্ব দিচ্ছে যারা ব্রিটিশদের তৈরি ইসলামে শিক্ষিত। আর আমাদের জাতীয় জীবনে নেতৃত্ব দিচ্ছে যারা পশ্চিমা বস্তুবাদী সভ্যতার সৃষ্টি বিভিন্ন তন্ত্র ও মতবাদের পূজারী। এভাবে আমরা এখনও প্রত্যক্ষভাবে ঔপনিবেশিক প্রভুদেরই দাসত্ব করে যাচ্ছি।
আমাদের প্রস্তাব হচ্ছে, এই দ্বিমুখী শিক্ষাব্যবস্থাকে পরিবর্তন করে একমুখী শিক্ষাব্যবস্থা প্রবর্তন করতে হবে। যেটা হবে ইহকাল এবং পরকালের ভারসাম্যপূর্ণ। যেখানে নীতি-নৈতিকতা সংবলিত দীনের জ্ঞানের পাশাপাশি বিজ্ঞান-প্রযুক্তির সম্মিলন থাকবে। যে শিক্ষাব্যবস্থায় একজন শিক্ষিত লোক মো’মেন হবে, দেশপ্রেমিক হবে এবং মানবতার কল্যাণকামী হবে। একদিকে সে অত্যন্ত সাহসী হবে আর একদিকে সে মানবদরদী হবে। জীবন গেলেও, না খেয়ে থাকলেও সে ঘুষ খাবে না, মৃত্যুর হুমকি আসলেও অর্থপাচার করবে না, দেশের বা মানুষের ক্ষতি হয় এমন কিছু করবে না এমন মহানুভব শিক্ষিত লোক তৈরি হবে।
আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী: আমাদের প্রস্তাবিত রাষ্ট্রব্যবস্থায়ও পুলিশ বাহিনী থাকবে, যাদের মূলনীতি হবে সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজে বাধাদান। কেবল অপরাধীকে পাকড়াও করা পুলিশ বাহিনীর কাজ হবে না, বরং যারা ভালো কাজ করবে তাদেরকে সহযোগিতা করাও তাদের দায়িত্বের অন্তর্ভুক্ত হবে। তারা কখনোই নির্দিষ্ট গোষ্ঠীর দ্বারা প্রভাবিত হবে না, কোনো মিথ্যা মামলা কখনই তারা গ্রহণ করবে না, মামলার এজাহারে একটা বানোয়াট শব্দ তারা লিখতে পারবে না। তারা সব সময় তার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট জবাবদিহি করবে।
তারা কেবল কোনো ফৌজদারি অপরাধ সংঘটিত হলে সে বিষয়ে হস্তক্ষেপ করবে। যেমন তারা খুন বা খুনের চেষ্টা, কাউকে আঘাত করা, চাঁদাবাজি, ভুয়া তথ্য প্রচার, হুজুগ ও গুজব সৃষ্টি, ধর্মীয় উন্মাদনা সৃষ্টি, ডাকাতি, চুরি, ধর্ষণ, অপহরণ ও পাচার, অগ্নিসংযোগ, প্রতারণা, ঘুষ ও দুর্নীতি, অর্থপাচার, নারী ও শিশু নির্যাতন, অন্যের মানহানি, নাশকতা, আদালতের আদেশ অমান্য, মিথ্যা সাক্ষ্যদান, আত্মহত্যার প্ররোচনা, অবৈধ অস্ত্র রাখা বা ব্যবহার, মাদকদ্রব্যের অপরাধ, সাইবার ক্রাইম, আতঙ্ক সৃষ্টি, গোপনীয়তা লঙ্ঘন, পরিচয় জালিয়াতি, বে-আইনী সমাবেশ ইত্যাদিসহ যে ফৌজদারি অপরাধগুলো অন্যের অধিকার লংঘন করে, মানুষের সমাজে অশান্তি সৃষ্টি করে সেগুলো নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করবে। তারা অপরাধীদের গ্রেফতার করে আদালতে সোপর্দ করবে। সুনির্দিষ্ট অভিযোগ ছাড়া শুধু সন্দেহের বশবর্তী হয়ে গ্রেফতার, রিমান্ডের নামে নির্যাতন ইত্যাদি অমানবিক আচরণ করবে না।
সামরিক বাহিনী: ইসলামের সিস্টেম হল জাতির প্রতিরক্ষা নিশ্চিতে সমগ্র জাতিকেই জীবনভর সামরিক প্রশিক্ষণ ও কর্মকাণ্ডের সঙ্গে সম্পৃক্ত রাখা ও যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত রাখা। আল্লাহর রসুল সমগ্র জাতির নিরাপত্তা রক্ষায় জাতির সকল সক্ষম সদস্যকে একটি ন্যূনতম সামরিক শৃঙ্খলা ও প্রশিক্ষণ দিয়েছিলেন। আধুনিক যুগে একে গণবাহিনী (Paramilitary force) বলা হয়।
বর্তমানে সামরিক ব্যবস্থাপনা বহুলাংশে প্রযুক্তিনির্ভর এবং অত্যাধুনিক, কাজেই বাছাই করা একটি নিয়মিত বাহিনী থাকতে হবে যারা যুদ্ধবিদ্যা ও আধুনিক অস্ত্রশস্ত্রের জ্ঞান হাসিল করবে। তারা পুরো জাতির সামরিক নেতৃত্ব দেবে। কিন্তু সমগ্র জাতির সক্ষম নারী পুরুষকেও মৌলিক সামরিক প্রশিক্ষণ অর্থাৎ সামরিক শৃঙ্খলা, শারীরিক প্রশিক্ষণ, যোগাযোগ প্রযুক্তি ব্যবহার, অস্ত্রচালনা প্রশিক্ষণ, প্রাথমিক চিকিৎসা ও আত্মরক্ষার কৌশলে প্রশিক্ষিত হতে হবে। তারা বহিঃশত্রুর হাত থেকে নিজ জাতিকে যেমন রক্ষা করবে, তেমনি বিশ্বের যেখানেই দুর্বলের উপর সবলের অত্যাচার হবে, মানবাধিকার লংঘিত হবে, সেখানেই তারা শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য সাধ্যমত ভূমিকা রাখবে।
প্রয়োজনে সামরিক বাহিনীর বিভিন্ন শাখা থাকতে পারে যেমন স্থল বাহিনী, নৌ বাহিনী, বিমান বাহিনী, স্পেশাল অপারেশন ফোর্স, সাইবার ফোর্স ইত্যাদি।
চিকিৎসা নীতি: ইসলাম মানুষের চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করার ব্যাপারে বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছে এবং এই সেবাকে মানবাধিকার ও ইবাদত হিসেবে বিবেচনা করেছে। আমাদের প্রস্তাবিত চিকিৎসা নীতিতে একজন রোগীকে চিকিৎসা দেওয়ার সময় তার শরীর, মন, আত্মিক অবস্থা, আর্থিক অবস্থা ও আবেগ অনুভূতি সবকিছুকেই বিবেচনায় নেওয়া হবে। এ লক্ষ্যে আমাদের প্রস্তাব হচ্ছে:
- বিনামূল্যে চিকিৎসাসেবা: স্বাস্থ্যসেবা একজন নাগরিকের মৌলিক অধিকার। তার এই মৌলিক অধিকার রাষ্ট্র নিশ্চিত করবে। সরকারি হাসপাতালগুলোতে সকল নাগরিককে বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা প্রদান করা হবে।
- বেসরকারি খাতের অংশগ্রহণ: বেসরকারি হাসপাতালের চিকিৎসা ব্যয় নির্ধারণের জন্য একটি কঠোর সরকারি নীতিমালা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করা হবে। চিকিৎসা খাতকে নিছক বাণিজ্যিক খাত হিসেবে ব্যবহার করা যাবে না।
- জাতীয় ঔষধ নীতি: এই নীতির মাধ্যমে ওষুধ প্রস্তুতকরণ ও বাজারজাতকরণ প্রক্রিয়া কঠোরভাবে তদারকি করা হবে এবং মানহীন ওষুধ বাজার থেকে সরিয়ে দেওয়া হবে। যারা নকল ওষুধ বিক্রি করবে, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে।
- অ্যালোপ্যাথি ও বিকল্প চিকিৎসা পদ্ধতি: প্রচলিত অ্যালোপ্যাথিক চিকিৎসা ব্যবস্থার পাশাপাশি গবেষণার মাধ্যমে বিকল্প চিকিৎসা পদ্ধতিগুলোর মান উন্নয়ন করা হবে। হোমিওপ্যাথি, আয়ুর্বেদ, ইউনানি, চীনা চিকিৎসা, নেচারোপ্যাথি, আর্কটিভ থেরাপি এবং অন্যান্য বিকল্প চিকিৎসা পদ্ধতিগুলোকে মেডিক্যাল শিক্ষা পদ্ধতির অংশ হিসেবে গ্রহণ করা হবে।
- এছাড়াও চিকিৎসকদের প্রশিক্ষণ ও নৈতিক শিক্ষা, নার্সিং সেবা উন্নয়ন, গ্রামাঞ্চলে চিকিৎসা সেবা সহজীকরণ, মেডিকেল কলেজের উন্নয়ন, চিকিৎসার সরঞ্জাম এবং ঔষধের কাঁচামাল সহজলভ্যকরণ, চিকিৎসাখাতে গবেষণা ও উন্নয়নে রাষ্ট্র যথাযথ গুরুত্ব দিবে যা দেশের জনগণের স্বাস্থ্যসেবা আরও কার্যকর এবং উন্নত করবে।
শাসকের সমালোচনা ও জবাবদিহিতা: যে কারো সমালোচনার ক্ষেত্রে ইসলামের নীতি হচ্ছে তার আড়ালে কিছু না বলে তার সামনে বলা। আড়ালে সমালোচনা করা হচ্ছে গীবত আর গীবতকে আল্লাহ মৃত ভাইয়ের গোশত খাওয়ার সমতুল্য বলেছেন।
শাসকের সমালোচনার জন্য সুশৃঙ্খল পন্থা ইসলামে রাখা হয়েছে। শাসক প্রতি জুমায় মসজিদে প্রকাশ্যে খোতবা দিবেন এবং জুমার ইমামতি করবেন। সেখানে যে কেউ তাকে সরাসরি প্রশ্ন করতে পারবেন। এছাড়া দেশের সকল মসজিদেই ইমামের নিয়োজিত প্রতিনিধি (আমির) জুমার দিন উপস্থিত থাকবেন। জনগণের দ্বারা নির্বাচিত শুরা পরিষদের সদস্যরা শাসকের সামনে তার ভুল-ত্রুটি নিয়ে সমালোচনা করতে পারবেন। যে কেউ গণমাধ্যমে তাদের নিজের মতামত অবাধে প্রকাশ করতে পারবে এবং তার আপত্তির বিষয়গুলো ইমামের কাছে পৌঁছে দিতে পারবে। কিন্তু কেউ আইনভঙ্গ করতে পারবে না, বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে পারবে না। তবে রাষ্ট্রপ্রধান যদি আল্লাহর হুকুমের সুস্পষ্ট বিরোধিতায় লিপ্ত হয় তখন তাকে সতর্ক করার অধিকার যে কোনো নাগরিকের রয়েছে।
গণমাধ্যম ও বাক স্বাধীনতা: আল্লাহ পবিত্র কোর’আনে যেসব নীতিমালা দিয়েছেন সেগুলোই গণমাধ্যম ও বাকস্বাধীনতার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। যেমন: যে কোনো তথ্য প্রচারের আগে সেটা যাচাই করা (সুরা হুজরাত ৬), সত্য ও মিথ্যার মিশ্রণ না করা (সুরা বাকারা ৪২), কারো বিরুদ্ধে মানহানিকর ও উপহাসমূলক উক্তি না করা (সুরা হুজরাত ১১), পরনিন্দা না করা (সুরা হুজরাত ১২), কারো উপর মিথ্যা অপবাদ না দেওয়া (সুরা তোয়াহা ৫৫), অনুমান প্রসূত কথা না বলা (সুরা হুজরাত ১২), অন্যের ত্রুটি সন্ধানের জন্য গোয়েন্দাগিরি করা (সুরা হুজরাত ১২)। এগুলোই একাধারে জনগণের বাক-স্বাধীনতা ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতার বুনিয়াদি নীতি।
আল্লাহর দেওয়া জীবনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হলে গণমাধ্যম এতটা স্বাধীনতা পাবে যাকে বলে অবাধ স্বাধীনতা। কিন্তু স্বাধীনতা পেয়ে স্বেচ্ছাচার করা, যা খুশি তা বলা, অন্যের মানহানি করা, মিথ্যা প্রচারণা করা, গুজব ও হুজুগ সৃষ্টি করা, অসঙ্গত বিরোধিতা করা, সত্য মিথ্যা মিশ্রিত আজগুবি সংবাদ, তথ্য প্রমাণ দলিল ছাড়া সংবাদ প্রচার করা, অন্যকে ব্লাকমেইল বা মানহানি করার উদ্দেশে সংবাদ পরিবেশন করা ইত্যাদি কোনোভাবেই বাকস্বাধীনতার আওতায় পড়বে না। কেবল আল্লাহর দেওয়া উপযুক্ত নীতিমালা তাকে মানতে হবে যার মূল কথা একটাই- কেউ কোনো মিথ্যা তথ্য প্রচার করতে পারবে না।
নারীর অধিকার: আমাদের প্রস্তাবিত রাষ্ট্রব্যবস্থায় নারীদের প্রতিভা, জ্ঞান ও যোগ্যতা বিকাশের ক্ষেত্রে পূর্ণ সহায়তা ও পৃষ্ঠপোষকতা করা হবে। ইসলামের রাষ্ট্রব্যবস্থা প্রতিটি মানুষের সামাজিক ও মানসিক বিকাশে পূর্ণ সহযোগিতা করে।
- নারীর পোশাক: নারী পুরুষ উভয়েই শালীন পোশাক পরিধান করবে যেন তাদের লজ্জাস্থান আবৃত থাকে। আর নারীর জন্য অতিরিক্ত হচ্ছে তাদের বক্ষদেশ যা আবৃত রাখা বাধ্যতামূলক।
- পেশাগত ক্ষেত্রে নারী: আধুনিক রাষ্ট্রব্যবস্থার অনেক চ্যালেঞ্জিং কর্মক্ষেত্র যেমন মিডিয়া, সেনাবাহিনী, পুলিশ, আদালত, পোশাক শিল্প, কলকারখানা ইত্যাদি অঙ্গনে পুরুষের পাশাপাশি নারীরাও প্রতিযোগিতামূলকভাবে তাদের যোগ্যতা মোতাবেক অংশগ্রহণের সমান সুযোগ পাবে।
- সামষ্টিক কর্মকাণ্ডে নারীদের অংশগ্রহণ: ইসলামের প্রাথমিক যুগের মতো নারীরা পুরুষের সাথে সকল প্রকার শিক্ষা অর্জনের সুযোগ পাবে। তাদের যোগ্যতা অনুযায়ী যেকোনো কাজে অংশগ্রহণ করতে পারবে।
- নারী নেতৃত্ব: যেহেতু সারা বিশ্বের মুসলিম একটি উম্মাহ। এই বিশ্বজনীন উম্মাহর একটি মাত্র জায়গা কোনো নারী পাবে না। সেটা হল সমগ্র মুসলিম উম্মাহর ইমামের পদ। এর অনেক যৌক্তিক কারণ আছে। যেমন আল্লাহ লক্ষ লক্ষ নবী প্রেরণ করেছেন কিন্তু একজন নারীকেও নবী হিসাবে পাঠাননি। খোলাফায়ে রাশেদার সময় কোনো নারী খলিফা হননি। এক্ষেত্রে নারীদের কিছু শারীরিক সীমাবদ্ধতাও রয়েছে। যেমন তাদেরকে সন্তানধারণ করতে হয়, সন্তান লালনপালন করতে হয়। সমগ্র বিশ্বময় একটি উম্মাহকে পরিচালনা করার মত শারীরিক সক্ষমতা, মানসিক স্থিরতা, চাপ নেওয়ার ক্ষমতা, দূরদর্শিতা, প্রজ্ঞা, আবেগের ঊর্ধ্বে উঠে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা ইত্যাদি সৃষ্টিগতভাবে পুরুষ এগিয়ে থাকে। তবে যোগ্যতা ও কর্মক্ষমতা অনুযায়ী নারীরা স্থানীয় সরকার পরিচালনা থেকে শুরু করে মন্ত্রীপরিষদ চালাতে পারবেন।
বিভিন্ন ধর্মের মানুষের প্রতি আচরণ: আমাদের প্রস্তাবিত রাষ্ট্র ব্যবস্থায় সকল প্রকার সাম্প্রদায়িক বৈষম্য ও সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ প্রচার নিষিদ্ধ করা হবে। রাষ্ট্রীয় বিবেচনায় সংখ্যাগুরু সংখ্যালঘু বলে কিছু থাকবে না। মনে রাখতে হবে রাষ্ট্রপরিচালনার ক্ষেত্রে আমাদের সিদ্ধান্তসূত্র হচ্ছে- সকল মানুষ এক স্রষ্টার সৃষ্টি। আর স্রষ্টার বিধানই হচ্ছে ন্যায় ও অন্যায়ের মাপকাঠি। রাষ্ট্র সেই মাপকাঠি মোতাবেক পরিচালিত হবে। ন্যায়ধর্মই হবে রাষ্ট্রের একমাত্র ধর্ম, অন্য কোনো রাষ্ট্রধর্ম থাকবে না। রাষ্ট্র ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে হিন্দু, মুসলমান, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান, আদিবাসীসহ ধর্মের বিভিন্ন উপদলের নাগরিককে স্রষ্টাপ্রদত্ত ন্যায়-অন্যায়ের মাপকাঠিতে মূল্যায়ন করবে, নিরপেক্ষতা বজায় রেখে ন্যায়সঙ্গতভাবে পরিচালনা করতে বদ্ধপরিকর থাকবে। ধর্মপরিচয়ের কারণে কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠী সুযোগ সুবিধা পাবে না বা তা থেকে বঞ্চিত হবে না।
কাজেই আমাদের প্রস্তাবিত রাষ্ট্রব্যবস্থায় সরকারি চাকরি ও যে কোনো দায়িত্ব প্রদানের ক্ষেত্রে ব্যক্তির ধর্ম বর্ণ বিবেচনা না করে তার কর্মদক্ষতার মূল্যায়ন করা হবে। পাশাপাশি তার সততা, বিশ্বস্ততা, আমানতদারি ও রাষ্ট্রের প্রতি একনিষ্ঠ আনুগত্যকে গুরুত্ব দেওয়া হবে। প্রত্যেকে যার যার ধর্মবিশ্বাস সংরক্ষণ, প্রকাশ, প্রচার ও ধর্মীয় রীতি পালনে পূর্ণ স্বাধীনতা ও নিরাপত্তা লাভ করবে। কিন্তু কেউ অন্য ধর্মের বিরুদ্ধে বিদ্বেষপ্রচার করলে তাকে শাস্তি পেতে হবে। আর আইনের দৃষ্টিতে সকলেই সমান থাকবে।
সংস্কৃতি ও ক্রীড়া অঙ্গন: সংস্কৃতি চর্চার ক্ষেত্র থাকবে উন্মুক্ত। প্রতিটি মানুষের নৈতিক অধিকার রয়েছে, তার মানবাধিকার রয়েছে তার নিজেকে প্রকাশ করার। তার জ্ঞানকে সামাজিক, পারিবারিক, রাষ্ট্রীয় অঙ্গনে তার নিজের বুদ্ধিবৃত্তিকে বিকশিত করার। সে হিসেবে গান, নাটক, কবিতা, শিল্প চর্চা, অভিনয়, চলচ্চিত্র ইত্যাদির ক্ষেত্রে মানুষের পূর্ণ স্বাধীনতা থাকবে। আমরা শুধু একটি বিষয় প্রস্তাব করবো- আল্লাহ তায়ালা যে নীতি দিয়েছেন তা হলো- অশ্লীলতা, বেহায়াপনা করা যাবে না এবং যে কথা বা কাজে মানুষে মানুষে বিভাজন তৈরি করে, বর্ণবাদের সৃষ্টি করে, স্রষ্টার নাফরমানি হয়, অন্যকে আঘাত করে এ ধরনের কোনো বক্তব্য, কবিতা, অভিনয়, গান কিছুই করতে দেওয়া হবে না। সংস্কৃতির নামে ঘৃণা সৃষ্টি বা বর্ণবাদের সৃষ্টি করতে দেওয়া হবে না। খেলার নামে জুয়া, অসুস্থ প্রতিযোগিতা থাকবে না।
শ্রমব্যবস্থা: ইসলামের নীতি হচ্ছে- শ্রমিকের ঘাম শুকিয়ে যাওয়ার আগেই তার মজুরি দিয়ে দেওয়া। আমাদের প্রস্তাবিত রাষ্ট্রব্যবস্থায় শ্রমজীবী মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য যে সকল বন্দোবস্ত করা হবে সেগুলো হচ্ছে:
- ডাটাবেইজ প্রতিষ্ঠা: শ্রমিকের সংজ্ঞা নির্ধারণ করে সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার স্বার্থে দেশের সকল শ্রমিককে একটি কেন্দ্রীয় ডাটাবেইজের অধীনে আনা হবে, যা নিয়মিত হালনাগাদ করা হবে। শ্রমিকরা তাদের সুবিধা বা অসুবিধার বিষয়ে সরাসরি অ্যাপের মাধ্যমে সরকারি কর্তৃপক্ষকে জানাতে সক্ষম হবেন।
- শ্রমিকদের পারিবারিক সহায়তা: শ্রমিকের পরিবারের জন্য স্বাস্থ্য, শিক্ষা এবং অন্যান্য মৌলিক সেবা নিশ্চিত করতে হবে।
- গৃহকর্মীদের স্বাধীনতা ও মর্যাদা: ইসলামের শ্রমব্যবস্থার অধীনে গৃহকর্মীরাও পূর্ণ স্বাধীনতা, অধিকার ও মর্যাদা পাবে।
- মজুরি ও পারিশ্রমিকের স্বচ্ছতা: শ্রমিকদের পারিশ্রমিকের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে হবে। মজুরি নির্ধারণের সময় বৈষম্য পরিহার করতে হবে এবং একই ধরনের কাজের জন্য সমান মজুরি প্রদান করতে হবে। দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পেলে পারিশ্রমিক বৃদ্ধির ব্যবস্থা থাকবে।
- শ্রমিকদের কর্মের নিরাপত্তা: কর্মস্থলে শ্রমিকদের শারীরিক ও মানসিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। তাদেরকে চাকরি হারানোর আতঙ্ক থেকে মুক্ত রাখার উদ্যোগ নিতে হবে।
- নারী শ্রমিকদের অধিকার সুরক্ষা: নারী শ্রমিকদের কর্মস্থলে নিরাপত্তা, সমান সুযোগ এবং সমান বেতন নিশ্চিত করতে হবে। বিশেষ করে গৃহকর্মী এবং অন্যান্য শ্রমিকদের জন্য কর্মস্থলে শোষণ, যৌন হয়রানি বা বৈষম্য রোধে কঠোর আইন এবং পলিসি গ্রহণ করা হবে।
- প্রশিক্ষণ ও দক্ষতা উন্নয়ন: শ্রমিকদের দক্ষতা উন্নয়নের জন্য প্রশিক্ষণ কেন্দ্র ও কর্মশালা গঠন করা হবে, যাতে তারা তাদের কর্মসংস্থানে উন্নতি করতে পারে।
- শ্রমিকের কাজের সময়ের সীমা: শ্রমিকদের জন্য দৈনিক কাজের সময় নির্ধারণ করতে হবে এবং অতিরিক্ত কাজের ক্ষেত্রে ন্যায্য পারিশ্রমিক বা অতিরিক্ত সুবিধা প্রদান করতে হবে।
- আইনি সহায়তা এবং সুরক্ষা: শ্রমিকদের অধিকার লঙ্ঘন হলে তারা সহজে আইনি সহায়তা পাবে এবং শ্রম আদালত তৈরি করা হবে যেখানে দ্রুত শ্রমিকদের অভিযোগ শুনানি হবে।
- জীবনধারণ ভাতা: প্রয়োজনে তাদের জন্য জীবনধারণ ভাতা, বয়স্কভাতা ইত্যাদি বরাদ্দ করা হবে।
পরিবহন ব্যবস্থা: এই অধিদপ্তরের আওতায় থাকবে আধুনিক যানবাহনের নিবন্ধন ও নিয়ন্ত্রণ, নতুন প্রযুক্তির সংযুক্তি ও সমন্বয় করা, সড়ক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং বিদ্যমান সড়কগুলোর রক্ষণাবেক্ষণ ও সংস্কার করা। তারা যানজট নিয়ন্ত্রণ এবং সমাধানের উদ্যোগ গ্রহণ করবে, পরিবেশ বান্ধব নীতি অনুসরণ করবে, সংশ্লিষ্টদের প্রশিক্ষণ প্রদানের ব্যবস্থা করবে, যানবাহন সংক্রান্ত দুর্ঘটনা বা আইন লঙ্ঘনের তদন্ত করবে এবং সড়ক ব্যবস্থাপনা ও যানবাহন মান নিশ্চিতকরণে তদারকি করবে।
- কোনো আনফিট গাড়ি কোনোভাবে রাস্তায় চলার লাইসেন্স পাবে না। মাদকের সাথে সম্পৃক্ত এবং যথোপযুক্ত আধুনিক প্রশিক্ষণ ছাড়া কোনো ব্যক্তি গাড়ি চালাতে পারবে না।
- পরিবেশবান্ধব গাড়ি: নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহারকারী গাড়ি তৈরি ও আমদানি করা হবে। কোনোভাবেই উন্নত দেশ থেকে রিজেক্টেড ও পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর গাড়ি আমদানির সুযোগ রাখা হবে না।
- রাস্তা ব্যবহারের সমান সুযোগ: রাস্তার ব্যবহারের ক্ষেত্রে সবার জন্য সমান সুযোগ এবং সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে।
- পরিবহন শ্রমিকদের অধিকার: কোনো পরিবহন শ্রমিক তার ন্যায্য দাবি ও পাওনা থেকে বঞ্চিত হবে না। কোনো পরিবহন শ্রমিককে তার সাধ্যের অতিরিক্ত ভার চাপিয়ে দেওয়া যাবে না।
- ভাড়া নির্ধারণ: অতিরিক্ত মুনাফার জন্য পরিবহন মালিকরা অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করতে পারবে না। পরিবহন ব্যয় ও গন্তব্যের দূরত্বের পাশাপাশি জনগণের আয় ও অর্থনৈতিক সক্ষমতা বিবেচনায় প্রতিটি পরিবহনের ভাড়া নির্ধারণ করা হবে।
- টোল-ট্যাক্স ও রাস্তা ব্যবহার: রাস্তায় চলাচলের ক্ষেত্রে অধিকমাত্রায় টোল-ট্যাক্স ইত্যাদি বসিয়ে মানুষের জীবনযাত্রাকে কঠিন করা যাবে না। সরকারি বাজেটের মাধ্যমে সড়ক উন্নয়ন, নির্মাণ ও ব্যবস্থাপনা কার্যকর করে টোলমুক্ত পরিবহন ব্যবস্থা চালু করতে হবে।
- রাস্তা সংস্কার এবং উন্নয়ন: উন্নয়নের নামে রাস্তা নির্মাণ কিংবা সংস্কার কার্যক্রম বছরের পর বছর ধরে ঝুলিয়ে রেখে মানুষকে কষ্ট দেওয়া যাবে না।
- গাড়ির গতি নিয়ন্ত্রণ: কেউ ইচ্ছেমতো গতিতে গাড়ি চালাতে পারবে না। গতি নিয়ন্ত্রণের জন্য নির্দিষ্ট জায়গায় গতি সীমা ও দ্রুতগতির সিগন্যাল সিস্টেম তৈরি করতে হবে।
- সড়ক পুলিশ প্রটোকল: সুনির্দিষ্ট কারণ ও তথ্যপ্রমাণ ছাড়া সড়ক পুলিশ যাকে ইচ্ছা সড়কে থামিয়ে নাগরিক অধিকার বিঘ্নিত করতে পারবে না। এজন্য কর্তৃপক্ষ প্রয়োজনীয় প্রটোকল ও প্রযুক্তিগত সরঞ্জাম ব্যবহার করবে।
- ব্যক্তিগত যানবাহন নিয়ন্ত্রণ: যানজট, গাড়ির সংখ্যা, পরিবহন খরচ এবং পরিবেশ দূষণ কমানোর জন্য ব্যক্তিগত যানবাহনের ব্যবহার হ্রাস করা হবে।
কৃষিব্যবস্থা: কৃষি ব্যবস্থাপনা নিয়ে আমাদের প্রস্তাব হচ্ছে:
- উৎপাদনের যোগ্য এক ইঞ্চি মাটিও উৎপাদনের বাইরে থাকবে না। হয় জমির মালিক চাষাবাদ করবে, অথবা সেটা রাষ্ট্র অধিগ্রহণ করবে। জমিদারি প্রথার মত একক মালিকানায় কেউ হাজার হাজার একর জমি করায়ত্ত করে রাখতে পারবে না।
- নগরায়ণের নামে হাজার হাজার একর কৃষিজমি ধ্বংস করা যাবে না। কৃষিজমি কৃষিকাজেই ব্যবহার করতে হবে।
- যারা কৃষি উৎপাদন করবে তারা ফসলের একটি নির্দিষ্ট অংশ দরিদ্র মানুষের মধ্যে বিতরণ করবে। কৃষক যা কিছু চাষ করে তা ফল বা ফসল যাই হোক, সেটা কাটার দিন (ইয়াওমুল হাসাদ) এর হক আদায় করতে হবে। সেই হক হচ্ছে- এর এক একটি নির্দিষ্ট অংশ হিসাব করে গরিব মানুষকে বিলিয়ে দিতে হবে। সমাজে সাম্য ও খাদ্য নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠার জন্য এই পদ্ধতি ইসলামে বাধ্যতামূলক করা হয়েছে যার নাম ওশর।
কেউ অন্যের জমি দখল করতে পারবে না। করলে সেই জমি ফেরত দিতে হবে এবং জরিমানা দিতে হবে। - কৃষকদেরকে আধুনিক কৃষি বিজ্ঞানের জ্ঞান প্রদান করতে হবে এবং কৃষিবিদদের দাপ্তরিক কাজের পরিবর্তে মাঠভিত্তিক কাজে নিযুক্ত করতে হবে। কৃষকদের আর্থিক অবস্থার উন্নতি সাধনের জন্য এবং কৃষিকাজে উৎসাহিত করার জন্য ফসলের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করা হবে। এজন্য কৃষকদেরকে সরাসরি বাজারে প্রবেশের ব্যবস্থা করে দিতে হবে এবং কৃষক ও ভোক্তার মাঝখানে দালালচক্রের দৌরাত্ম বন্ধ করতে হবে।
- অতিরিক্ত কৃষিপণ্য মজুদ করে বাজারে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টির সুযোগ দেওয়া হবে না।
- কৃষকদেরকে সহজ শর্তে এবং অবশ্যই বিনাসুদে ঋণ দিতে হবে। তাদেরকে সরকার বিনামূল্যে বীজ ও সার প্রদান করবে এবং এক্ষেত্রে রাষ্ট্র ভর্তুকি দিবে।
পররাষ্ট্রনীতি: আমার জাতির স্বার্থ রক্ষার জন্য অন্য জাতি ও রাষ্ট্রসমূহে অন্যায়ভাবে হামলা করা, বঞ্চিত করা, শোষণ করা ইসলামের নীতি নয়। অন্য জাতিগুলো যদি শান্তি কামনা করে তাহলে আমাদেরকেও শান্তির দিকে ঝুঁকতে হবে। (আয়াত)। বাণিজ্যনীতি, আমদানি-রপ্তানি ইত্যাদি ক্ষেত্রে ভারসাম্যপূর্ণ অবস্থা বজায় রাখতে হবে। অন্য জাতির চাপের মুখে নিজের দেশকে উন্মুক্ত বাজারে পরিণত করতে দেওয়া যাবে না। বাহিরের জাতিরাষ্ট্রসমূহের মধ্যে আমাদের অবস্থার উন্নয়ন, মানবাধিকার, বার্তা ইত্যাদি অবস্থা তুলে ধরার জন্য চৌকস, বুদ্ধিমান, ভাষাজ্ঞানসম্পন্ন কূটনীতিকগণ নিয়োজিত থাকবেন।