Connecting You with the Truth

দঃ এশিয়ায় ঘাঁটি গাড়ার ঘোষণা জাওয়াহিরির ভারতে রেড এলার্ট জারি, ভিডিওবার্তা পরীক্ষা করা হবে -স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী

ডেস্ক রিপোর্ট :
বাংলাদেশ-ভারতসহ দঃ এশিয়ার বিভিন্ন দেশে ঘাঁটি গাড়তে চাইছে জঙ্গিবাদী সংগঠন আল-কায়েদা। এরই মধ্যে ভারতে এই সংগঠনের আÍপ্রকাশের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা এসেছে। আল-কায়েদার প্রধান আয়মান আল জাওয়াহিরি বুধবার একটি ভিডিওবার্তায় এই ঘোষণা দেন। প্রতিক্রিয়ায় ভারতের গোয়েন্দা ব্যুরো (আইবি) সমগ্র ভারতে রেড অ্যালার্ট জারি করেছে। বাংলাদেশ ও মায়ানমারসহ ভারতের গুজরাট, আহমেদাবাদ, কাশ্মীর ও আসামে সংগঠনটির শাখা স্থাপনের কথা বলা হয়েছে ওই ভিডিও বার্তায়। ভিডিওবার্তাটি পরীক্ষা করে দেখা হবে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। এদিকে লিবিয়ার একটি বিমানবন্দর থেকে ১১ টি বিমান ছিনতাই করে নিয়ে গেছে আল কায়দা সংশ্লিষ্ট একটি জঙ্গিগোষ্ঠী। এই ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।
ভারতের গোয়েন্দা সূত্রগুলো জানিয়েছে, আল কায়েদা প্রধানের এ ঘোষণা অপ্রত্যাশিত নয়। কারণ আল কায়েদা ইসলামিক স্টেটের সাথে পাল্লা দিতে পারছে না। সুতরাং আন্তর্জাতিক ইসলামী জঙ্গিবাদের নেতৃত্ব টিকিয়ে রাখা আল কায়েদার জন্য এখন চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাই তারা নতুন নতুন এলাকা শাখা খুলে তাদের আওতা বৃদ্ধি করতে চাইছে। ভিডিও বার্তায় জাওয়াহিরি জানিয়েছে, ভারতীয় উপমহাদেশের মায়ানমার, বাংলাদেশ, আসাম, গুজরাট, আহমেদাবাদ এবং কাশ্মিরের মুসলিমদের ঐক্যবদ্ধ করতে এবং মুসলমানদের উপর অবিচার ও নিপীড়ন থেকে উদ্ধার করতে এসব এলাকায় আল কায়েদার শাখা খোলা হবে। গোয়েন্দা সূত্রগুলো বলছে, ভিডিও বার্তায় উল্লেখিত বাংলাদেশ, আসাম, গুজরাট, আহমেদাবাদ এবং মায়ানমার এলাকা সাম্প্রদায়িকভাবে খুবই স্পর্শকাতর। আর এ এলাকার প্রগতিবাদী যুবকদের ওপর আক্রমণ করতেই আলকায়েদা এ নকশা করেছে। বিশেষ করে যাদের ইসলামিক স্টেটের সাথে সম্পৃক্ততা রয়েছে। ২০১৩ সালে আল কায়েদা ভেঙেই ইসলামিক স্টেটের জন্ম হয়। যাদের অনুসারী প্রধাণত বিভিন্ন দেশের যুবকরা। এছাড়া ইসলামিক স্টেটের প্রধান আবু আবু বকর আল বাগদাদি নিজেকে মুসলমানদের একজন ‘খলিফা’ হিসেবে দাবি করে। ২০১৩ সালে সিরিয়ায় আল কায়েদার বিস্তার নিয়ে জাওয়াহিরির সাথে ভিন্ন মত থাকায় একদল যুবক আল কায়েদা থেকে বের হয়ে ইসলামিক স্টেট প্রতিষ্ঠা করে। জাওয়াহিরি তার বক্তব্যে বলেছে, ভারতীয় উপমহাদেশে ইসলামী আইনের প্রসার এবং মুসলামান অধ্যুষিত এলাকার কৃত্রিম সীমানা ভেঙে মুসলমানদের একই পতাকাতলে আনতেই এ উদ্যোগ গ্রহণ করেছে আল কায়েদা। তবে এই ভিডিওবার্তার ব্যাপারে এখনো কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানায় নি বাংলাদেশ সরকার। তবে শীঘ্রই ভিডিওবার্তাটি পরীক্ষা করে দেখা হবে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। গতকাল দুপুরে রমনা রেস্টুরেন্টে আসন্ন ঈদুল আযহা উপলক্ষে আন্তঃমন্ত্রণালয়ের এক সভা শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা জানান। স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেন, আমরা কখনো জঙ্গিবাদকে প্রশ্রয় দেবোনা। সেজন্য আমরা সব ধরনের চেষ্টা অব্যাহত রেখেছি।ভিডিও বার্তা সম্পর্কে তিনি বলেন, “বিষয়টি আমরা আরেকটু দেখি। এটা কোন জায়গা থেকে, কিভাবে এসেছে তা দেখতে হবে। ভিডিওটি পরীক্ষা করে পরবর্তীতে আপনাদের (সাংবাদিক) সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলবো।”
ত্রিপোলি বিমানবন্দর থেকে ১১টি বিমান উধাও হয়ে গেছে। লিবিয়ার আল-কায়েদা সংশ্লিষ্ট একটি গোষ্ঠী এসব বিমান দখলে রেখেছে বলে জানা গেছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছিনতাইকৃত বিমানের পাশে বা বিমানের ডানার উপরে দাঁড়িয়ে তারা তোলা ছবিও পোস্ট দিয়েছে লিবিয়ান ডন নামক আল কায়দা সংশ্লিষ্ট গোষ্ঠীটির সদস্যরা। বিমান দখলের এই ঘটনায় গভীরভাবে উদ্বিগ্ন আমেরিকা। মার্কিন প্রতিরক্ষা দপ্তরের কর্মকর্তাদের আশঙ্কা, লিবিয়া থেকে দখল করা ওই বিমান নিয়ে তেরো বছর আগের ৯/১১-র ধাঁচে হামলার পরিকল্পনা করছে জঙ্গিরা। ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর ওসামা বিন লাদেনের পরিকল্পনায় ওয়াশিংটন ডিসির পেন্টাগন এবং নিউ ইয়র্কের ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারে মারণ হামলা চালায় আল-কায়েদা। দু’বছর আগে এই দিনেই লিবিয়ার বেনগাজিতে মার্কিন রাষ্ট্রদূত ক্রিস্টোফার স্টিভেনসের বাসভবনে হামলা করে তাকে হত্যা করেছিল জঙ্গিরা। গত কয়েক মাস ধরে সিরিয়া ও ইরাকে জঙ্গি বিরোধী অভিযানে আমেরিকা তৎপর হওয়ার পর থেকেই বদলা নেওয়ার হুমকি দিচ্ছে ইসলামিক স্টেট বা আইএস। ৯/১১-র তেরো বছর পূর্তিতে জঙ্গিরা যে নতুন করে অস্ত্রে শান দেবে তা আঁচ করেই দু’সপ্তাহ ধরে লিবিয়ার প্রশাসনকে সতর্কবার্তা দিয়েছিল আমেরিকা। গত আগস্টে ত্রিপোলির আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরটি দখল করে নেয় লিবিয়ান ডন। রাজধানী ত্রিপোলি সর্বতোভাবে সরকারের নিয়ন্ত্রণের বাইরে বেরিয়ে যাচ্ছে বলে গত রবিবার ঘোষণা করে লিবিয়া প্রশাসন। আরো জানানো হয়, ডন এবং আইএসের শরিক জঙ্গিগোষ্ঠী আনসার আল-শাহরিয়ার হাতেই নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে দেশের রাজধানী। সেই বিবৃতিতেই বিমান লোপাটের কথাও জানানো হয়।
মার্কিন প্রশাসনের আশঙ্কা যে অমূলক নয়, তা জানিয়ে আল জাজিরাকে দেওয়া একটি সাক্ষাৎকারে মরক্কোর সেনা বিশেষজ্ঞ আব্দের রহমানে মেক্কাউই বলেন, জঙ্গিরা যে ফন্দি আঁটছে সেটা পরিষ্কার। তবে গোয়েন্দা সূত্রে যা খবর পাওয়া যাচ্ছে, তাতে মনে হচ্ছে দখল করা বিমান ইতিমধ্যেই অন্য একটি জঙ্গিগোষ্ঠীকে হস্তান্তর করেছে ডন। তিনি বলেন, তারা কারা, তা বলা যাচ্ছে না। তবে মাস্কড মেন ব্রিগেডের কাছে ওই বিমানগুলি থাকতে আছে। হামলার আশঙ্কা প্রবল আরবের তেলসমৃদ্ধ এলাকাগুলিতে। আর এক জঙ্গি বিশেষজ্ঞ সেবাস্টিয়ান গোরকার মতে, দু’ভাবে হামলা চালাতে পারে জঙ্গিরা। এক, একেবারে ৯/১১ ধাঁচে যাত্রীবাহী বিমানকে ক্ষেপণাস্ত্রে পরিণত করবে। দুই, ফাঁকা বিমানে জঙ্গিদের নিয়ে এমন কোনো জায়গায় পৌঁছে নাশকতা চালাতে পারে যা তাদের ধরাছোঁয়ার বাইরে।” আমেরিকার তরফে আনুষ্ঠানিকভাবে বিমান লোপাট নিয়ে কোনো মন্তব্য না করা হলেও সূত্রের খবর, বিমানের সন্ধান চালাতে শুরু করেছে প্রতিরক্ষা দপ্তর। প্রসঙ্গত, লিবিয়ার সাবেক শাসক গাদ্দাফির পতনের করার পর থেকেই উত্তপ্ত রয়েছে লিবিয়া। এই পরিস্থিতিতে সিরিয়া বা ইরাকের মতো লিবিয়াও যাতে জঙ্গিদের স্বর্গরাজ্যে পরিণত না হতে পারে সে দিকেও নজর দিচ্ছে আমেরিকা।

Comments
Loading...