দেশপ্রেমিক ও মো’মেন জাতি গঠনের প্রত্যয়ে রাজধানীতে হেযবুত তওহীদের বিশাল জনসভা
বিডিপত্র ডেস্ক: ‘‘সারা দুনিয়ায় আজকে মুসলমানদেরকে টার্গেট করা হয়েছে। মুসলমানদের মধ্যে ইসলামের ভুল ব্যাখ্যা দেওয়ার কারণে, আল্লাহ-রসুলের প্রকৃত ইসলামের আদর্শ থেকে সরে যাবার কারণে এবং ইসলামের শিক্ষা নয় এমন মানবতা বিরোধী কর্মকান্ডর কারণে দুনিয়াজুড়ে ইসলামের বিরুদ্ধে একটা নেতিবাচক ধারণা প্রচারিত হচ্ছে। আর সেই ওসিলা ধরে দুনিয়াময় মুসলমানদের বিরুদ্ধে ঘৃণার বিস্তার করা হচ্ছে, সাম্রাজ্যবাদী আগ্রাসনের পথ প্রশস্ত করা হচ্ছে।’’ রাজধানীতে সন্ত্রাস জঙ্গিবাদ ও সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে হেযবুত তওহীদের উদ্যোগে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন। শনিবার বিকেল তিনটায় রাজধানীর খিলগাঁও থানার জোড়পুকুর মাঠে ‘ধর্মের অপব্যবহার প্রগতির অন্তরায়’ শীর্ষক সভাটি অনুষ্ঠিত হয়। হেযবুত তওহীদের সাধারণ সম্পাদক মশিউর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এই সভায় প্রধান বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন হেযবুত তওহীদের এমাম হোসাইন মোহাম্মদ সেলিম। হেযবুত তওহীদের এমাম মানবজাতির মধ্যে বিরাজিত বিভিন্ন ধর্মীয় বিভক্তির প্রসঙ্গ তুলে বলেন, ‘পৃথিবীর ৮০০ কোটি মানুষের মধ্যে একটি ভাগ আল্লাহকে বিশ্বাস করে, নবী-রসুলদের বিশ্বাস করে, ধর্মগ্রন্থকে বিশ্বাস করে অর্থাৎ ধর্মপ্রাণ মানুষ। আরেকটা ভাগ আল্লাহকে ও পরকালকে বিশ্বাস করে না, বস্তুবাদী দুনিয়াকেই সর্বশেষ ও চূড়ান্ত মনে করে। এই অবিশ্বাসীদের মোট সংখ্যা একশ’ কোটির বেশি হবে না। কিন্তু বিশ্বাসীর সংখ্যা আছে অন্তত সাতশ’ কোটির উপরে। এই ধর্মবিশ্বাসী মানুষ আজকে আল্লাহকে ঈশ্বরকে পাবার জন্য, পরকালে জান্নাতে যাবার জন্য কত কিছুই না করছে! আল্লাহকে পাবার জন্য কেউ মসজিদে যাচ্ছে, নামাজ পড়ছে, কেউ মন্দিরে যাচ্ছে, গীতাপাঠ করছে, কেউ গীর্জায় যাচ্ছে, বাইবেল পাঠ করছে, কেউ প্যাগোডায় যাচ্ছে, বুদ্ধং শরণং গচ্ছামি পাঠ করছে। সবাই ভাবছেন একমাত্র তারাই জান্নাতে স্বর্গে বা হ্যাভেনে যাবে, অন্যরা সবাই নরকে যাবে। আমার প্রশ্ন হচ্ছে, জান্নাতে যাবার, স্বর্গে যাবার রাস্তা কি এতগুলো? এত জায়গায় যাওয়া হচ্ছে আল্লাহকে পাবার জন্য, আল্লাহকে পাবার রাস্তা কি এতগুলো? কখনই হতে পারে না। তাছাড়া যে মানুষ তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের দামামা বাজাচ্ছে দুনিয়াকে বিনাশ করে দেওয়ার জন্য, তারা আল্লাহকে পাবার আশা করে কীভাবে? জান্নাতে যাবার আশা করে কীভাবে? না, তারা দুনিয়াতে তো শান্তি পাচ্ছেই না, জান্নাতেও যেতে পারবে না। একমাত্র জান্নাত মিলবে যদি সবাই মিলে সিদ্ধান্ত নেয়া হয় যে, আমরা মানুষ, আমরা এক আদম হাওয়ার সন্তান, আমরা সবাই ভাই ভাই। আমরা সবাই মিলে এই সিদ্ধান্ত নিলাম যে, আমরা আল্লাহর হুকুম ছাড়া কারো হুকুম মানব না।’
তিনি মুসলিম জাতির হৃদয়বিদারক চিত্র তুলে ধরে বলেন, ‘এক আল্লাহ, এক রসুল, এক কিতাবের অনুসারী ছিলাম আমরা। আল্লাহর রসুল কঠোর পরিশ্রম করে, পেটে পাথর বেঁধে, গাছের লতাপাতা খেয়ে, নির্যাতিত নিপীড়িত হয়ে যে উম্মতে মোহাম্মদী তৈরি করলেন সেটা কয় খন্ড ছিল? সেটা ছিল অখন্ড জাতি। কোনো ভাগ ছিল না, ফেরকা ছিল না, মাজহাব ছিল না, মতভেদ ছিল না। কিন্তু আজ আমরা খন্ড-বিখন্ড হয়েছি হাজার হাজার দল, উপদল, ফেরকা, তরিকায়। শিয়া মানে না সুন্নিকে, সুন্নি মানে না শিয়াকে। এক পীর মানে না অন্য পীরকে। ধর্মের নামে রাজনৈতিক দল হাজার হাজার তৈরি করা হয়েছে। একেক দলের একেক কর্মসূচি, একেক আকীদা, একেক ইসতেহার। বামপন্থীরা যদি পঞ্চাশটি দল হয়ে থাকে, ইসলামের নামে আছে শতাধিক দল। আবার পাড়ায় পাড়ায়, জেলায় জেলায়, থানায় থানায় বিভিন্ন রকম মাদ্রাসা, মক্তব ইত্যাদি। একটার সাথে আরেকটার বনিবনা হয় না। আমার প্রশ্ন হচ্ছে, জান্নাতে যাবার কি এত পথ হতে পারে? আল্লাহর রসুল কি এতগুলো পথ নিয়ে এসেছেন? হেদায়াহ কি এতগুলো? কখনই না। জান্নাতের রাস্তা কেবল একটি। আল্লাহর রসুল একদিন বললেন, ইহুদিরা বাহাত্তর ভাগে বিভক্ত হয়েছিল, আমার উম্মাহ তিহাত্তর ভাগে বিভক্ত হবে। কিন্তু তারমধ্যে এক ভাগ ছাড়া বাকি সবাই জাহান্নামী হবে। সাহাবীরা জিজ্ঞেস করলেন, সেই একমাত্র জান্নাতি ভাগ কোনটি? রসুল বললেন, ‘‘যার উপর আমি ও আমার সাহাবীরা আছি।’’ তাহলে জান্নাতের পথ কয়টি? অবশ্যই একটি। সেই পথ আমরা হারিয়ে ফেলেছি বলেই চারদিকে আজ এত মত, এত পথ, এত তরিকা। ইসলামের ব্যাখ্যা একেকজন একেকভাবে দিচ্ছে। একই আয়াত ব্যবহার করে একেকজন একেকদিকে টানছে। মানুষের বুকে বোমা মারা হচ্ছে, ভোটের রাজনীতি হচ্ছে। আল্লাহর আইন, কোর’আনের আইন, শরীয়তের আইন ইত্যাদি বলে মানুষকে বিভ্রান্ত করা হচ্ছে। এখন সবাইকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে- ঐ ধর্মব্যবসায়ী, ঐ সাম্প্রদায়িক, ঐ স্বার্থবাজ, ঐ অপরাজনীতিকারী, ঐ জঙ্গিবাদীরা কে কী বলল সেটাকে বাদ দিয়ে দেখতে হবে আল্লাহ কী বলেছেন, এটাই তওহীদ- আল্লাহ ছাড়া অন্য কাউকে হুকুমদাতা হিসেবে গ্রহণ না করা।’
এছাড়া তিনি সাম্রাজ্যবাদী আগ্রাসন ও ইসলামের বিরুদ্ধে চলা বৈশ্বিক প্রোপাগান্ডার বিষয়ে আলোকপাত করে বলেন, ‘আজকে সারা বিশ্বে ইসলাম ও মুসলিমদের বিরুদ্ধে অজ¯্র প্রোপাগান্ডা চালানো হচ্ছে, বলা হচ্ছে মুসলমানরা জঙ্গি, মুসলমানরা অসভ্য, বর্বর, সভ্য দেশে বসবাস করতে পারে না, বিশৃঙ্খল, আইন-আদালত মানে না ইত্যাদি। এই যে প্রোপাগান্ডা তারা চালু করল, এর ফল কী হলো? গতকালকের বিবিসির সংবাদ আপনারা নিশ্চয়ই শুনেছেন বা পড়েছেন। একটি প্রতিবেদনে বলা হলো- মিয়ানমারে মুসলমানদের উপরে অত্যাচারের কারণ হচ্ছে দীর্ঘদিন ধরে মুসলমানদের বিরুদ্ধে প্রোপাগান্ডা চালানো হচ্ছিল। ফলে প্রত্যেকটি মুসলমানের বিরুদ্ধে ধীরে ধীরে বিদ্বেষ চালু হয়েছে। আজকে ইউরোপে, আমেরিকাতেও মুসলমানরা আক্রান্ত হচ্ছে কারণ মুসলমানদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রমূলক বিদ্বেষ প্রচার করা হয়েছে। হায়রে মুসলমান! এই অবস্থায় তোমরা ঘরের দরজা বন্ধ করে তসবিহ জপে জান্নাতে যাবার আশা কর? তোমাদের এই প্রচেষ্টা ব্যর্থ হবে। তোমার জাতি আজ সবচাইতে বড় বিপদে পড়েছে, তোমার জাতি নিয়ে ভাবো, কীভাবে তোমার পরিবার বাঁচবে, তোমার জনগণ বাঁচবে, তোমার মাটি রক্ষা হবে সেটা নিয়ে চিন্তা কর, নইলে কিছুই থাকবে না। হে মুসলমান, তোমাদের দুনিয়ার জীবনকে দাজ্জালের হাতে তুলে দিয়ে, মা বোনদের ইজ্জত লুণ্ঠন করার সুযোগ করে দিয়ে, তোমরা কোন জান্নাতে যাবে? যেতে পারবে না।
বর্তমান মানবজাতির সবচাইতে বড় সঙ্কট কোনটা- এই প্রশ্ন তুলে তিনি বলেন, ‘আমি যখন বিভিন্ন জনসভায় কথা বলি, অনেকে বলেন ভাই আপনি নির্বাচনের অধিকার, ভোটের অধিকার, চাল ডালের মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে কথা বলুন, এখন তো জঙ্গিবাদ, সাম্রাজ্যবাদের সঙ্কট এক নম্বর সঙ্কট নয়। আমরা বলতে চাই, সুধীবৃন্দ! হয় আপনারা মূল সঙ্কট চিনতে ভুল করেছেন, নয়তবা সমাধান করতে পারবেন না বলে বাদ এড়িয়ে যেতে চাইছেন। না, চালডালের সঙ্কট নয়, ভোটের সঙ্কট নয়, অস্তিত্বের সঙ্কট এখন এক নম্বর সঙ্কট। ভোটের অধিকার দিয়ে দেশ রক্ষা করতে পারবেন? পারবেন না। দ্রব্যমূলের নিয়ন্ত্রণ করে দেশ রক্ষা করতে পারবেন? পারবেন না। সাদ্দাম পারে নাই, বাসার আল আসাদ পারে নাই, মুয়াম্মার গাদ্দাফি পারে নাই। যদি একদল মানুষ যাবতীয় স্বার্থচিন্তা ছেড়ে যাবতীয় অন্যায়ের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ না হয় তাহলে পারবেন না। আপনাদেরকে এই সঙ্কট বুঝতে দেওয়া হয় নাই। অনেক ছোটখাটো সঙ্কটকে গুরুত্ব দিয়ে প্রচার করা হয়, কিন্তু আসল সঙ্কটকে আড়াল করে রাখা হয়।’
আলোচনা সভার শুরুতে সংক্ষিপ্ত বক্তব্য প্রদান করেন অনুষ্ঠানের সভাপতি হেযবুত তওহীদের সাধারণ সম্পাদক মশিউর রহমান। তিনি বলেন, ‘আজকে আমাদের দেশ যে সঙ্কটে পড়েছে, মুসলিম জাতি যে নির্যাতনের মুখে পড়েছে, মানবজাতি যে বিপর্যয়ের মধ্যে পড়েছে সেগুলো আজকে আপনাদের সামনে তুলে ধরা হচ্ছে এবং কীভাবে সেটা থেকে মুক্তি মিলবে সেই উপায় তুলে ধরা হচ্ছে। আমাদের এই অনুষ্ঠান কোনো রাজনৈতিক অনুষ্ঠান নয়, সুতরাং আমাদের মাননীয় এমাম কোনো গতানুগতিক রাজনৈতিক বক্তব্য প্রদান করেন না। কাজেই আমি আশা করব পৃথিবীর এই ক্রান্তিলগ্নে মাননীয় এমাম যে সমাধান তুলে ধরছেন তা গভীরভাবে বিবেচনা করবেন।
এছাড়া অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা মহানগরী হেযবুত তওহীদের সভাপতি মো. আলী হোসেন, নারায়ণগঞ্জ মহানগর আ’লীগের সহ সভাপতি রোকন উদ্দিন আহমেদ, দৈনিক বজ্রশক্তির সাহিত্য সম্পাদক রিয়াদুল হাসান, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী নুরে আলম, দৈনিক বজ্রশক্তির প্রকাশক ও সম্পাদক এস.এম. সামসুল হুদা, হেযবুত তওহীদের কেন্দ্রীয় কমিটির দপ্তর সম্পাদক আইনুল হক, হেযবুত তওহীদের ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি মো. শরিফুল ইসলাম, মতিঝিল থানা হেযবুত তওহীদের সভাপতি মো. আব্দুস সালাম প্রমুখ। বিশেষ অতিথির বক্তব্যে জনাব মোহাম্মদ আলী হোসেন সবাইকে যাবতীয় অন্যায় ও অসত্যের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর আহবান জানান। এজন্য তিনি আল্লাহর তওহীদের ভিত্তিতে ঐক্যের গুরুত্ব তুলে ধরেন।
বিকেল তিনটায় সভা শুরু হয়। এসময় বিশেষ অতিথিবৃন্দ শুভেচ্ছা বক্তব্য প্রদান করেন। সাড়ে তিনটায় হেযবুত তওহীদের এমাম সভাস্থলে প্রবেশ করলে শত শত মানুষ মুহুর্মুহু করতালি ও শ্লোগান দিয়ে তাঁকে বরণ করে নেন। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন মো. রফিকুল ইসলাম।