নদী ভাঙ্গা মানুষ ভূমিহীন ও গৃহহীন থাকবে না: লক্ষীপুরের জনসভায় প্রধানমন্ত্রী
লক্ষীপুর প্রতিনিধি : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, এ বাংলাদেশের মানুষ যারা গৃহহারা, নদী ভাঙ্গা তারা ভূমিহীন ও গৃহহীন থাকবে না। প্রত্যেককে আমরা বিনামূল্যে বাসস্থান তৈরি করে দেব। একটি মানুষও যাতে কষ্ট না পায় সেজন্য আমরা ব্যবস্থা করছি। বাংলার মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন করে খুদা মুক্ত, দারিদ্র মুক্ত, উন্নত সমৃদ্ধ সোনার বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে তুলবো। ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ হবে মধ্যম আয়ের দেশ। ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ হবে উন্নত সমৃদ্ধ দেশ। আপনাদের দোয়া চাই, ভালোবাসা চাই, আগামি প্রতিটি নির্বাচনে নৌকা মার্কায় ভোট চাই।
মঙ্গলবার (১৪ মার্চ) দুপুরে লক্ষীপুর জেলা স্টেডিয়ামে আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। জনসভায় তিনি লক্ষীপুরে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের ঘোষণা দেন।
আওয়ামী লীগের সভাপতি আরো বলেন, বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য, বাংলাদেশের মানুষের স্বাধীনতার জন্য, বাংলাদেশের মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তি আনতে গিয়ে আমার বাবা তার জীবন দিয়ে গেছেন, মা জীবন দিয়ে গেছেন, ভাইয়েরা জীবন দিয়ে গেছেন। আমিও আমার জীবন বিলিয়ে দিয়েছি আপনাদের স্বার্থে, আপনাদের কল্যাণে, আপনাদের উন্নয়নে। যদি প্রয়োজন হয় বাবার মত জীবন দিয়ে আপনাদের ভাগ্যের পরিবর্তন করে বাংলাদেশকে উন্নত-সমৃদ্ধ করে দেব এটাই আমার প্রতিজ্ঞা। ল²ীপুরের উন্নয়নের জন্য আপনাদের দাবি-দাওয়া করতে হবে না, কিছু বলতে হবে না, বাংলাদেশকে আমি চিনি, আমি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের কন্যা। আমি এ দেশকে চিনি, আমি এ দেশের মাঠ-ঘাট, নদী-নালা, খাল-বিল সবই আমার পরিচিত।
মেঘনা নদী ভাঙন প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, রামগতি ও কমলনগরের মেঘনা নদীর তীর রক্ষা বাঁধের (১ম পর্যায়) উদ্বোধন করেছি খুব শীঘ্রই ২য় পর্যায় শুরু করবো। আমরা নদী ভাঙন থেকে ল²ীপুরকে রক্ষা করবো।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৭৫ এর ১৫ আগস্ট জাতির পিতাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে। মা-বাবা, ভাইসহ পরিবারের ১৮ জন সদস্যকে নির্মমভাবে হত্যা করেছিল। এরপর বাংলাদেশ কি হয়েছে হত্যা ও কু’র রাজনীতি। অবৈভাবে ক্ষমতা দখলের রাজনীতি। একেরপর এক খুন হয়েছে। মানুষকে হত্যা করা হয়েছে। নিরীহ নেতাকর্মীর ওপর জেল-জুলুম অত্যাচার শুরু হয়েছে। দেশ পিছিয়ে গেছে। গরীব আরো গরীব হয়েছে। বৃহত্তর নোয়াখালী অঞ্চলে জাতির পিতা আদর্শ গ্রাম শুরু করে ছিলেন, গুচ্ছ গ্রাম শুরু করেছিলেন, নদী ভাঙ্গা মানুষের পুনর্বাসন করতে শুরু করেছিলেন। বাংলাদেশের মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা দেয়ার ব্যবস্থা করেছিলেন। কিন্তু জাতির পিতাকে হত্যার পর প্রায় সব কাজই স্থবির হয়ে যায়। ২১ টা বছর এদেশের মানুষ কষ্ট পেয়েছে। ২১টি বছর এদেশের মানুষ শোষিত বঞ্চিত ছিল। ২১ বছর পর আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করে। আমরা ৯৬ সালে সরকার গঠন করে বাংলার মানুষের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের কাজ শুরু করি। আমরা দেশের মানুষের জন্য কাজ করি। কৃষক ভাইয়েরা বর্গাচাষীরা ঋণ পেত না; আওয়ামী লীগ সরকার তাদের ঋণের ব্যবস্থা করেছে।
আমাদের লক্ষ্য দেশকে উন্নত করা কিন্তু বিএনপি কি করেছে এদেশে। এ লক্ষীপুরে যেভাবে তারা অত্যাচার করেছে আমাদের আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীরা ঘরে থাকতে পারে নি। বিএনপি আসা মানেই জঙ্গিবাদ সন্ত্রাস সৃষ্টি করা। তারা ক্ষমতায় আসা মানেই দেশের মানুষের জীবনের নাভিঃশ্বাস উঠা। জোট সরকার যখন ক্ষমতায় ছিল এ ল²ীপুরে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছিল। আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের ১৩ নেতাকর্মীকে নির্মমভাবে তারা হত্যা করেছিল। বিএনপি ধর্মে বিশ্বাস করে না। ২০১৫ সালে বায়তুল মোকররমে শত শত কোরআন শরীফ পুড়িয়েছে। মসজিদে আগুন দিয়েছে। কৃষকলীগ নেতা আযম কোরআন শরীফ পড়তেছিল সেখানে তাকে খুন করা হয়েছে। যারা এভাবে মানুষ খুন করে, যারা কোরআন শরীফ পোড়ায়, যারা মসজিদের আগুন দেয় তারা কিসের জনকল্যাণে কাজ করবে। ওই বিএনপির নেত্রী হুকুম হুকুম দিয়ে দিয়ে এ ঘটনা ঘটিয়েছে। আমরা দেশের মানুষের কল্যাণ চায়। ইসলাম ধর্ম শান্তির ধর্ম। আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি প্রতিটি উপজেলায় এবং জেলায় একটি করে মসজিদ এবং ইসলামিক কালচার সেন্টার তৈরি করে দেব। যেটায় ইসলামের সত্যিকারের শিক্ষা মানুষ পেতে পারে।
এর আগে তিনি জনসভাস্থল থেকে বিশেষ ব্যবস্থায় ল²ীপুরের ২৭টি উন্নয়নমূলক কাজের উদ্বোধন ও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ওবায়েদুল কাদের বলেন, লক্ষীপুরে ফিরে এসেছে। লক্ষীপুরে বিএনপির মিছিল করার এখন আর ক্ষমতা নেই। বিএনপি এখন নালিশ পার্টিতে পরিণত হয়েছে। বিএনপিকে ইঙ্গিত করে বলেন মরা গাঙ্গে জোয়ার আসে না। দলীয় নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন আগামি নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নেন। পকেট কমিটি করবেন না। ত্যাগি নেতাকর্মীদের নিয়ে কমিটি করেন। প্রধানমন্ত্রী অন্যায় পছন্দ করেন না। অন্যায় করলে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের কাজ জনগণকে খুশি করা ও জনগণের জন্য কাজ করা ।
লক্ষীপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি গোলাম ফারুকের সভাপতিত্ব ও সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট নুর উদ্দিন চৌধুরী নয়নের সঞ্চালনায় জনসভায় বক্তব্য রাখেন, সড়ক পরিবহণ ও সেতু মন্ত্রী ওবায়েদুল কাদের, যুব ও ক্রীড়া উপ-মন্ত্রী আরিফ খাঁন জয়, লক্ষীপুর-৩ সদর আসনের সংসদ সদস্য একে এম শাহজাহান কামাল, লক্ষীপুর-৪ (রামগতি ও কমলনগর) আসনের সংসদ সদস্য আবদুল্লাহ আল মামুন, লক্ষীপুর-২ (রায়পুর ও সদরের একাংশ) আসনের সাংসদ মোহাম্মদ নোমান, লক্ষীপুর-১ (রামগঞ্জ) আসনের সাংসদ লায়ন এম এ আউয়াল, কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক একেএম এনামুল হক শামীম, যুব ও ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক সাবেক এমপি হারুনুর রশিদ, কৃষি ও সমবায় বিষয়ক সম্পাদক সাবেক এমপি ফরিদুন নাহার লায়লি, কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক পক্সকজ দেবনাথ, লক্ষীপুর জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শামছুল ইসলাম, লক্ষীপুর পৌরসভার মেয়র আবু তাহের, আওয়ামী লীগ নেতা এমএ মমিন পাটোয়ারী।
এসময় বক্তারা, কমলনগর মেঘনা নদীর ভাঙন রোধে তীর রক্ষায় আরো সাড়ে ৫ কিলোমিটার বাঁধ নির্মাণ, কৃষি খামার, কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল কলেজ স্থাপন, চন্দ্রগঞ্জ উপজেলা বাস্তবায়ন, লক্ষীপুর-ঢাকা-লক্ষীপুর-চট্টগ্রাম চার লেনে উন্নিত করণ, নার্সিং ইনস্টিটিউট স্থাপনসহ বেশ কয়েকটি দাবি জানান।
উদ্বোধনের তালিকায় রয়েছে- রামগতি ও কমলনগর মেঘনা নদীর তীর সংরক্ষণ প্রকল্প (১ম পর্যায়), চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত ভবন, যুব প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, লক্ষীপুর সদর উপজেলা পরিষদ ভবন, সদর উপজেলা পরিষদ অডিটোরিয়াম, কমলনগর উপজেলা পরিষদ ভবন, কমলনগর উপজেলা অডিটোরিয়াম, লক্ষীপুর পৌর আইডিয়াল কলেজ ভবন, মোহাম্মদিয়া বাজার পুলিশ তদন্ত কেন্দ্র নির্মাণ (৩য় ও ৪র্থ), কমলনগর উপজেলা প্রাণীসম্পদ দপ্তর ও প্রাণী হাসপাতাল।
এছাড়াও ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতাল, প্রশাসনিক ভবন ও নাবিক নিবাস-কোস্টগার্ড মজু চৌধুরীর হাট, পুলিশ অফিসার্স মেস লক্ষীপুর সদর পুলিশ ফাঁড়ি, আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস ভবন, ল²ীপুর খাদ্যগুদামে ৫০০ মে.টন ধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন নতুন গুদাম নির্মাণ, রামগঞ্জ উপজেলায় ১৩২/৩৩ কেবি গ্রিড উপ-কেন্দ্র নির্মাণ, পিয়ারাপুর সেতু, চেউয়াখালী সেতু, মজু চৌধুরীর হাটে নৌ-বন্দর, লক্ষীপুর পৌর আধুনিক বিপনী বিতান, রামগঞ্জে আনসার ও ভিডিপি ব্যাটালিয়ন সদর দপ্তর কমপ্লেক্স, লক্ষীপুর পৌর আজিম শাহ (রা.) হকার্স মার্কেট, লক্ষীপুর সরকারি কলেজ একাডেমিক ভবন কাম পরীক্ষা কেন্দ্র, লক্ষীপুর পুলিশ লাইন্স মহিলা ব্যারাক নির্মাণ, লক্ষীপুর শহর সংযোগ সড়কে পিসি গার্ডার সেতু নির্মাণ, রায়পুর ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স স্টেশন ও কমলনগর ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স স্টেশন ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করবেন।
এসময় উপস্থিত ছিলেন, ফেনী-২ আসনের সংসদ সদস্য নিজাম হাজারী, লক্ষীপুর জেলা প্রশাসক মো. জিল্লুর রহমান চৌধুরী, জেলা পুলিশ সুপার আ স ম মাহাতাব উদ্দিন, সদর উপজেলার চেয়ারম্যান একেএম সালাহ উদ্দিন টিপু, কেন্দ্রীয় যুবলীগ নেতা শামছুল ইসলাম পাটোয়ারী, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাইফুর রহমান সোহাগ, স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা অ্যাডভোকেট রাসেল মাহমুদ মান্না, নজরুল ইসলাম ভুলু।