নবাবগঞ্জে আগাম জাতের ধানে ভালো ফলন: দাম পেয়ে খুশি কৃষকরা
এম রুহুল আমিন প্রধান,নবাবগঞ্জ: শষ্যভান্ডার খ্যাত দিনাজপুর জেলার নবাবগঞ্জ উপজেলায় শুরু হয়েছে আগাম জাতের ধান কাটা ও মাড়াইয়ের কাজ। মৌসুমের আগেই ঘরে নতুন জাতের এই হাইব্রিড ধান তুলতে পেরে এবং তুলনামুলক কম খরচে ধানের ভালো ফলন পাওয়ায় ও বাজারে ভালো দাম পাওয়ায় খুশি এসব এলাকার কৃষকরা। অপরদিকে ধানের পাশাপাশি খড় বিক্রি করেও বাড়তি লাভবান হচ্ছেন কৃষকরা। এতে করে এসব এলাকায় হাইব্রিড জাতের আগামধান আবাদের দিকে ঝুকছেন কৃষকরা।
দিনাজপুর জেলার নবাবগঞ্জ উপজেলার দাউদপুর, বিনোদনগর, কুশদহ, গোলাপগঞ্জ, জয়পুর ও ভাদুড়িয়া এলাকায় আগাম জাতের টিয়া, হিরা, ধানী গোল্ড, ও এসি আই জাতের হাইব্রিড ধান লাগানো হয়েছে। নবাবগঞ্জ উপজেলায় ১১৫০ হেক্টর জমিতে হাইব্রিড জাতের ধান রোপন করা হয়েছিল। এখন চলছে সেসব এলাকায় ধান কাটা ও মাড়াইয়ের কাজ।
কৃষক নেপাল চন্দ্র সরকার বলেন, প্রতিবছরই তিনি আগাম জাতের ধান লাগিয়ে থাকেন। জমিতে এই ধান রোপনের পরে ধানে তেমন কোন রোগ বালাইয়ের আক্রমন দেখা যায়না। এর ফলে অণ্যান্য ধানের তুলনায় এই ধান আবাদে সার ও কিটনাশক খরচও কম লাগে। এছাড়াও এই ধানের ফলও বেশ ভালো। বর্তমানে বিঘা প্রতি ধানের উৎপাদন হচ্ছে ১৩ থেকে ১৪ মন করে, আর প্রতি মন ধান বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার থেকে এক হাজার পঞ্চাশ টাকায়। আর এই জাতের ধান এমন সময় আসে যে সময়টা আমাদের কৃষকদের কাছে অভাবের সময় সেই সময় আগাম জাতের ধান পাওয়ার ফলে কৃষকের ঘরে ভাতের অভাব থাকে তা দুর হয়ে যায়। এছাড়াও আগাম ধান হওয়াতে বাজারে দামও ভালো পাওয়া যায়। এছাড়াও এবার বন্যার কারনে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে গোখাদ্যের তিব্র সংকট দেখা দিয়েছিল, আগাম জাতের ধান আসার ফলে নিজেদের গরুর খাবারের যে চাহীদা রয়েছে সে চাহীদা পুরন হচ্ছে। এছাড়াও বাড়তি খড় ভালো দামে বিক্রি হচ্ছে। বর্তমানে প্রতি বোঝা খড় বিক্রি হচ্ছে ৭ টাকা করে যা বিক্রি করে বাড়তি টাকা পাওয়া যাচ্ছে। সাধারনত আমন মৌসুমের অনেক আগেই এই জাতের ধান পেকে যায় এর ফলে জমি থেকে ধান কেটে আবার একই জমিতে তিনি আগাম জাতের আলু লাগাতে পারেন। সেই আলুও তিনি আগাম পেয়ে থাকেন। তারপর জমি থেকে আলু তোলার পর একই জমিতে তিনি ভুট্টা লাগান সেই ভুট্টারও আগাম ফলন হয়। এইভাবে তিনি এক জমি থেকে সর্বমোট তিনটি ফসলের ফলন নেন। আর সব ফসলই আগাম হওয়াতে বাজারে ভালো দাম পেয়ে থাকেন এর ফলে আগাম জাতের ধান আবাদ করে ভালো লাভবান হন তিনি। এতে করে তার মতো অনেক কৃষকই আগাম জাতের ধান চাষের দিকে ঝুকছেন।
কৃষক মতিয়ার রহমান জানান, তার ৪৬ শতক জমিতে আগাম জাতের হাইব্রিড ধান রোপন করতে খরচ হয়েছে ৬ হাজার টাকার মতো। আর জমি থেকে উৎপাদিত ধান বিক্রি করেছি ২০ হাজার টাকা। আর ধানের খড় বিক্রি করে পেয়েছি ১০ হাজার টাকা। এতে করে ৪৬ শতক জমিতে ধান লাগানো থেকে শুরু করে সব খরচ বাদ দিয়ে ২৪ হাজার টাকার মতো লাভ হয়েছে। জমিতে ধান কাটা শেষ হয়ে গেছে বর্তমানে একই জমিতে আবার আগাম জাতের ফসল নেওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিয়েছি। আগামীতে আরো জমিতে আমি আগাম জাতের এই হাইব্রিড ধান রোপন করবো।
নবাবগঞ্জ উপজেলা কৃষি অফিসের উপসসহকারী কৃষি কর্মকর্তা ফাত্তাহ উজ্জামান বলেন, এলাকার উচু পতিত জমিতে কৃষি অফিসের পক্ষ থেকে কৃষকদের হাইব্রিড জাতের আগাম ধান লাগানোর পরামর্শ দেওয়া হয়ে থাকে। আগাম জাতের এই ধান আবাদ করে কৃষকরা মৌসুমের অনেক আগেই ধান পেয়ে থাকেন। বিশেষ করে এই মৌসুমে কৃষকদের হাতে সাধারনত তেমন কোন টাকা পয়সা থাকেনা পরবর্তী রবি ফসল আবাদের জন্য। একারনেই আগাম জাতের এই ধান আবাদের ফলে অসময়ে ধান পেয়ে কৃষকরা যেমন ধানে বেশি লাভবান হয় এবং তেমনি অর্থনৈতিকভাবে উন্নতি হয়। এছাড়াও হাইব্রিড জাতের এই ধানের ফলনও বেশ ভালো। এছাড়াও বন্যার কারনে দেশে গোখাদ্যের সংকট দেখা দেওয়ার ফলে আগাম জাতের এই ধান আসার ফলে ধানের খড় দিয়ে গো খাদ্যের চাহিদা মেটানো হচ্ছে। এছাড়াও এই ধানে রোগের পরিমান কম থাকে ধান লাগানোর পর থেকেই আমরা কৃষি অফিসের পক্ষ থেকে কৃষকদের সুষম মাত্রার সার ব্যবহারের পরামর্শ দিয়েছি। আর এই ধান কাটার পরে এমন একটা সময় পাওয়া যায় যা রবিশষ্য বিশেষ করে আলু, বেগুনসহ অন্য যে কোন ফসল লাগাতে চায় কৃষকরা তা পারবে।
নবাবগঞ্জ উপজেলা কৃষি অফিসার আবু রেজা মো, আসাদুজ্জামান জানান, দিনাজপুর জেলা শষ্যভান্ডার খ্যাত একটি জেলা। এই জেলার নবাবগঞ্জ উপজেলায় চলতি মৌসুমে ১১৫০ হেক্টর জমিতে আগাম জাতের হাইব্রিড ধান আবাদ হয়েছে। ইতোমধ্যেই ধান কাটা ও মাড়াইয়ের কাজ শুরু হয়ে গেছে। ধানের ফলন ও বেশ ভালো হয়েছে, প্রতি হেক্টরে প্রায় সাড়ে ৩ মেট্রিকটন করে গড়ে এই ধানের ফলন হচ্ছে। কৃষকরা এতে খুবি খুশি হয়েছে। একদিকে তারা যেমন ধানের ভালো দাম পাচ্ছে, নায্যমুল্য পাচ্ছে, অপরদিকে গবাদিপশুর জন্য তারা খড়ও পাচ্ছে। যেটি তাদের নিজের চাহীদা মিটিয়ে সেই খড় অন্যত্র বিক্রি করতে পাচ্ছে। ইতোমধ্যে এসব খড় বিভিন্ন এলাকায় বিক্রি হতেও দেখতে পাচ্ছি। আর এই খড় বিক্রি করে কৃষকরা ভালো অর্থ পাচ্ছে। সুতরাং আমাদের এই এলাকার কৃষকরা এই আগাম জাতের ধান চাষ করে সুবিধা পাচ্ছে এদিক থেকে যে আগাম চাষ করে যে ধান পাচ্ছে সেটি তার একদিক লাভ। আবার একই জমিতে তারা আবার নতুন করে আগাম জাতের রবি শষ্য আবাদ করতে শুরু করেছে।