নারায়ণগঞ্জে ৭ খুন: ঢাকার বিভাগীয় কমিশনারকে জিজ্ঞাসাবাদ
স্টাফ রিপোর্টার:
নারায়ণগঞ্জের চাঞ্চল্যকর সাত খুনের ঘটনায় ঢাকা বিভাগীয় কমিশনার জিল্লার রহমানকে সোয়া এক ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদ করেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের তদন্ত কমিটি। সচিবালয়ে কমিটির প্রধান শাহজাহান আলী মোল্লার কক্ষে গতকাল সকাল সাড়ে ১০টা থেকে বেলা পৌনে ১২টা পর্যন্ত তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। শাহজাহান বলেন, “সাত খুনের ঘটনার সময়ও তিনি ঢাকার বিভাগীয় কমিশনার ছিলেন। তাই এ ঘটনা সম্পর্কে তিনি যেসব বিষয় জানেন আমরা তা শুনেছি।” তদন্তে বেশ অগ্রগতি হয়েছে উল্লেখ করে কমিটির প্রধান বলেন, চারশর মতো মানুষকে তারা জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন। অনেক নথিও সংরক্ষণ করা হয়েছে। “আগামী ৯ সেপ্টেম্বর আদালতে অগ্রগতিমূলক প্রতিবেদন দেব। চূড়ান্ত প্রতিবেদনও শিগগিরই দেয়ার চেষ্টা করব।” তদন্ত কমিটিতে জবানবন্দি দেয়ার পর জিল্লার রহমান সাংবাদিকদের বলেন, “আইন-শৃঙ্খলার সঙ্গে আমার সরাসরি সম্পর্ক নেই। তবে সাত খুনের ঘটনায় আমার যা জানা ছিল- তদন্ত কমিটিকে তাই বলেছি।”
সাত খুনের ঘটনায় র্যাব ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীসহ অন্যদের জড়িত থাকার অভিযোগ তদন্তে হাই কোর্টের নির্দেশে গত ৭ মে এই তদন্ত কমিটি করে সরকার। নারায়ণগঞ্জে অপহরণ ও হত্যার ওই ঘটনায় প্রশাসনের কেউ বা আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কোনো সদস্যের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভূমিকা বা সংশ্লিষ্টতা ছিল কি না- গণতদন্তের মাধ্যমে তা উদঘাটন করবে কমিটি। অপহৃত ব্যক্তিদের জীবিত উদ্ধারে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কোনো অবহেলা বা গাফিলতি ছিল কি না- কমিটিকে তাও খতিয়ে দেখতে বলেছে আদালত। নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের প্যানেল মেয়র নজরুল ইসলাম, তার বন্ধু মনিরুজ্জামান স্বপন, তাজুল ইসলাম, লিটন, গাড়িচালক জাহাঙ্গীর আলম, আইনজীবী চন্দন কুমার সরকার ও তার গাড়িচালক ইব্রাহীম গত ২৭ এপ্রিল অপহৃত হন। পরে শীতলক্ষ্যা নদী থেকে তাদের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। অপহরণের ঘটনার পরপরই নজরুলের পরিবারের পক্ষ থেকে আওয়ামী লীগ নেতা নূর হোসেনকে প্রধান আসামি করে একটি মামলা করা হয়। নূর হোসেন র্যাবকে ছয় কোটি টাকা দিয়ে হত্যা করিয়েছেন বলে নজরুলের শ্বশুর শহীদুল ইসলাম অভিযোগ করেন। শুরুতে অভিযোগ অস্বীকার করে সংবাদ মাধ্যমে বক্তব্য দিলেও অপহৃতদের লাশ উদ্ধারের পর লোকচক্ষুর আড়ালে চলে যান নূর হোসেন। পরে দুই সহযোগীসহ তিনি পশ্চিমবঙ্গে গ্রেপ্তার হন। র্যাবের বিরুদ্ধে হত্যাকাণ্ডে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ ওঠার পর র্যাব-১১ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল তারেক সাঈদ মোহাম্মদ, মেজর আরিফ হোসেন এবং লেফটেন্যান্ট কমান্ডার এমএম রানাকে বাধ্যতামূলক অবসর দেয়া হয়। গ্রেপ্তার হওয়ার পর কয়েক দফায় জিজ্ঞাসাবাদে হত্যাকাণ্ডে নিজেদের ‘দোষ স্বীকার’ করে আদালতে তারা জবানবন্দিও দেন। এই সাত খুনের ঘটনায় নারায়ণগঞ্জের আলোচিত সাংসদ শামীম ওসমান ও মেয়র সেলিনা হায়াত আইভীকেও জিজ্ঞাসাবাদ করেছে তদন্ত কমিটি।