‘নির্বাচন নয় আগে জঙ্গি-সন্ত্রাসমুক্ত রাজনীতির ফর্মুলায় ঐকমত্য দরকার’
তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু বলেছেন, নির্বাচন নয় আগে জঙ্গি-সন্ত্রাসমুক্ত রাজনীতির ফর্মুলায় ঐকমত্য দরকার। তিনি বলেন, অন্তর্ঘাত-নাশকতা-আগুনসন্ত্রাস আর জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাসবাদের বিপদ মোকাবেলা করে সাংবিধানিক প্রক্রিয়াকে নিরাপদ রাখা এবং স্বস্তি-শান্তি-উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখাই যখন জাতীয় জীবনে এ মুহূর্তে সবচেয়ে জরুরি তখন সংবিধান সংশোধনের দাবি কিছুটা বেমানান।
তথ্যমন্ত্রী বলেন, সংবিধান সংশোধনের বিষয়ে কথা বলার আগে জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাসবাদের বিপদ মোকাবেলায় জাতীয় ঐক্যমত এবং জাতীয় প্রচেষ্টা আরো জোরদার করাই আজ সকল গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক শক্তি এবং শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষ এবং নাগরিক সমাজের প্রধান করণীয়।
তথ্যমন্ত্রী মঙ্গলবার দুপুরে তথ্য অধিদপ্তরের পিআইডি সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন।
‘সাম্প্রতিককালে বিএনপির পক্ষ থেকে নির্বাচনের দাবি, আগাম নির্বাচন, নির্বাচনকালীন সরকার ব্যবস্থা নিয়ে হাইকোর্টের একটি বেঞ্চের পর্যবেক্ষণ ও নাগরিক সমাজের পক্ষ থেকে সংবিধান সংশোধন’সহ বিভিন্ন প্রস্তাবনা এবং সমসাময়িক রাজনীতি নিয়ে এই সংবাদ সন্মেলনের আয়োজন করা হয় । এতে প্রধান তথ্য কর্মকর্তা তসির আহাম্মদ ও সিনিয়র উপপ্রধান তথ্য কর্মকর্তা মাহফুজুর রহমান উপস্থিত ছিলেন।সংবাদসন্মেলনে মন্ত্রী নির্বাচন নিয়ে বিএনপি ও অন্যান্যদের দাবির জবাবে সরকারের সুনির্দিষ্ট অবস্থানও জাতির সামনে তুলে ধরেন।
তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘নির্বাচন সকলের অংশগ্রহণ’- কথাটাই মতলববাজি কথা। সংবিধান ও আইনে নির্বাচনে অংশগ্রহণকারীর যোগ্যতা-অযোগ্যতা নির্ধারিত আছে। যারা অপরাধী, যারা যুদ্ধাপরাধী তারা নির্বাচনে অংশগ্রহণের যোগ্যতা রাখে না। যারা গণতন্ত্রের সুযোগ নিয়ে গণতন্ত্রের পিঠে ছোবল হানে, যারা গণতন্ত্রেই বিশ্বাস করে না, সেই জঙ্গিবাদী-সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠী গণতন্ত্র ও নির্বাচনে হালাল নয়।’
ইনু বলেন, নির্বাচনের দাবি বা আগাম নির্বাচন বা মধ্যবর্তী নির্বাচন নিয়ে আমাদের বক্তব্য পরিষ্কার। এই মুহূর্তে নতুন করে আরেকটি নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবির পেছনে কোনো যৌক্তিক ও বাস্তব কারণ নেই। দেশে আগাম বা মধ্যবর্তী নির্বাচন অনুষ্ঠানের কোনো বাস্তব কারণ বা প্রয়োজনীয়তাও নেই। সংবিধান ও আইন অনুযায়ী যথাসময়ে নির্বাচন অনুষ্ঠানের বাধ্যবাধকতা রয়েছে।
তিনি বলেন, ৫ জানুয়ারির নির্বাচনেও বিএনপিকে বলপ্রয়োগ করে নির্বাচনের বাইরে রাখেনি কেউ; বরং তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিএনপিকে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করানোর জন্য নিজেই উদ্যোগী হয়েছিলেন। কিন্তু বিএনপি-জামায়াত নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করে নির্বাচন ভন্ডুল করার জন্য সীমাহীন সন্ত্রাস ও রক্তারক্তি-খুনোখুনি-জ্বালাও-পোড়াও-অন্তর্ঘাত-নাশকতার পথে চলে যায়। তখন নির্বাচন বিএনপির এজেন্ডা ছিল না, এখনও নির্বাচন বিএনপির এজেন্ডা নয়। বিএনপির নির্বাচনের দাবির পেছনে ভিন্ন উদ্দেশ্য আছে।
হাসানুল হক ইনু বলেন, সম্প্রতি হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ তাদের পর্যবেক্ষণে নির্বাচনকালীন সরকার বিষয়ে যে দুটি ফর্মুলার কথা বলেছেন, তার প্রথমটির কাছাকাছি প্রস্তাব ২০১৩ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেই দিয়েছিলেন এবং খালেদা জিয়ার সঙ্গে এ বিষয়ে আলোচনায় উদ্যোগী হয়েছিলেন। কিন্তু বেগম খালেদা জিয়া সেদিন শেখ হাসিনার বিনীত আহ্বানকে কী সভ্যতাবিবর্জিত কায়দায় প্রত্যাখান করে অন্তর্ঘাত-নাশকতা-সন্ত্রাসের পথে ধাবিত হয়েছিলেন তা জাতি দেখেছে।
ইনু বলেন, এ মুহূর্তে নির্বাচনের দাবি বা সংবিধান সংশোধনের দাবির আড়ালে তাদের উদ্দেশ্য হচ্ছে সাংবিধানিক প্রক্রিয়া ব্যাহত করা, দেশকে সংবিধানের বাইরে ঠেলে দিয়ে অস্বাভাবিক পরিস্থিতি তৈরি করা। তাই এই অস্বাভাবিক সরকার আনার ষড়যন্ত্র-চক্রান্তের বিষয়ে দেশবাসীকে সজাগ থাকতে হবে।
বাংলাদেশেরপত্র/এডি/আর